পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের একটি হজ। প্রতি বছর সারাবিশ্বের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান হজ পালনের উদ্দেশে মক্কা-মদিনায় হাজির হয়। বাংলাদেশ থেকেও প্রতি বছর কয়েক লাখ মানুষ ওমারাহ ও হজ পালন করতে যায়। এবার করোনা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ায় পরিপূর্ণভাবে মুসল্লিরা হজ পালনের উদ্দেশ্যে মক্কা-মদিনায় যাবেন। অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশে হজ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ধর্ম মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত কোনো প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারেনি। এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অনলাইন সার্ভারে হাজী ট্রান্সফার কার্যক্রম এবং হজযাত্রীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ শুরু করা হয়নি। অথচ আগামী ৩১ মে থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার কথা। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্যাকেজ ঘোষিত না হওয়ায় বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো নিজস্ব হজ প্যাকেজ ঘোষণা এবং মক্কা-মদিনায় হাজীদের বাড়ি ভাড়া করতে পারছে না। সউদী মোয়াল্লেমও ঠিক করা সম্ভব হচ্ছে না। হজ এজেন্সিগুলো মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেও হজ প্যাকেজের বিষয়ে কোনো সঠিক জবাব পাচ্ছে না। এমতাবস্থায়, হাবের সভাপতি বলেছেন, ৩১ মে হজ ফ্লাইট শুরু করা সম্ভব হবে না। এ পরিস্থিতিকে পর্যবেক্ষকরা ধর্ম মন্ত্রণালয় এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের চরম ব্যর্থতা বলে মনে করছেন।
করোনার কারণে বিধিনিষেধ থাকায় গত তিন বছর স্বাভাবিক পরিবেশে হজ পালন সম্ভব হয়নি। এবার পরিপূর্ণভাবে হজ পালিত হবে। স্বাভাবিক সময়ে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে প্রায় দেড় লাখ মানুষ হজ পালন করে। এবার সউদী নীতিমালা অনুযায়ী, ৫৭ হাজার হজযাত্রী বাংলাদেশ থেকে যেতে পারবে। প্রশ্ন উঠেছে, এবার স্বাভাবিক হজযাত্রীর প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ হওয়া সত্ত্বেও ধর্ম মন্ত্রণালয় যথাসময়ে প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারল না কেন? হজযাত্রা বন্ধ থাকা অবস্থায় তিন বছর ধরে মন্ত্রণালয় কি কাজ করেছে? মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থেকে শুরু করে সচিব ও কর্মকর্তারা কি দায়িত্ব পালন করেছেন? পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এটি তাদের চরম অদক্ষতা, অযোগ্যতা ও ব্যর্থতা ছাড়া কিছু নয়। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে এর পুরো দায়ভার মন্ত্রীর ওপর বর্তায়। তিনি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনে সক্ষম হননি। অভিযোগ রয়েছে, হজ মৌসুমে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কতিপয় কর্মকর্তা নিজেদের লোকজনের হজ করা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তাদের মূল কাজ হয়ে দাঁড়য় সরকারি খরচে আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে পরিচিতজনদের তালিকাভুক্ত করা। সাধারণ হজ যাত্রীদের প্যাকেজ ঘোষণার ক্ষেত্রে তারা উদাসীন। এবারও তাই দেখা যাচ্ছে। তা নাহলে, হজ ফ্লাইট শুরুর মাত্র ২৩ দিন বাকি থাকা অবস্থায় কেন প্যাকেজ ঘোষণা করা হলো না? মাঝে সউদী দূতাবাসে ভিসা নিয়ে কিছু সমস্যা সৃষ্টি হলেও তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নিরসন হয়। এক্ষেত্রে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। এতে প্রতীয়মাণ হচ্ছে, মন্ত্রণালয়টি অনেকটা কর্মহীন ও স্থবির একটি মন্ত্রণালয়ে পরিণত হয়েছে। মন্ত্রী-সচিব থেকে শুরু করে কর্মকর্তারা কার্যত কোনো কাজ না করেই বেতন-ভাতাসহ সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন। জনগণের সেবা না করে অর্থের অপচয় করছেন। বিশ্বের আর কোনো দেশের ধর্ম মন্ত্রণালয় এমন অকার্যকর অবস্থায় আছে কিনা, আমাদের জানা নেই। অথচ যেসব দেশ থেকে মুসলমানরা হজ পালন করতে যায়, তারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে। আমাদের দেশে হাজিদের নানা দুর্ভোগ ও সমস্যার মুখোমুখি হওয়া অতি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
৯২ ভাগ মুসলমানের দেশ হিসেবে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিধি ব্যাপক পরিসরের হওয়ার কথা থাকলেও তা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। হজ পালনে ইচ্ছুকদের যথাসময়ে যথাযথ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে মক্কা-মদিনায় পাঠানো এই মন্ত্রণালয়ের অন্যতম দায়িত্ব হলেও তা পালনে চরম গাফিলতি দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। আমরা এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব থেকে শুরু করে কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা কি দায়িত্ব পালন করছেন, তা খতিয়ে দেখা জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রয়োজনে পুরো মন্ত্রণালয়কে ঢেলে সাজাতে হবে। মন্ত্রণালয়কে উপযুক্ত ও কার্যকর করে তোলার পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারি খরচে হজ বহরে কারা যাচ্ছে, সেটা দেখতে হবে। প্রয়োজনে হজ বহর ছোট করতে হবে। হজযাত্রীরা যাতে কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়া হজপালন করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। অবিলম্বে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।