Inqilab Logo

বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসরাইলে আজান বন্ধের উদ্যোগ

প্রকাশের সময় : ১৬ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

প্যালেস্টাইনের হাজার বছরের মুসলিম ঐতিহ্য ধ্বংস করে, সংখ্যাগরিষ্ঠ আরব মুসলমানদের শত শত গ্রাম বুলডোজারের ধ্বংস্তূপে গড়ে তোলা জায়নবাদি ইসরাইলি রাষ্ট্রশক্তি শত চেষ্টায়ও সেখানকার আজানের ধ্বনি স্তব্ধ করে দিতে পারেনি। যে ভূমি এক সময় একচ্ছত্রভাবে আরব মুসলমানের ছিল, সেখানে কিছু মুসলমানের আবাস এখনো আছে। অতএব সেখানে মসজিদ থাকবে, থাকবে আজানের ধ্বনি। ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রায় ৭০ বছর পর এখন ইসরাইল লাউড স্পিকারে আজান দেয়া বন্ধ করে দেয়ার পাঁয়তারা করছে বলে জানা যায়। গতকাল প্রকাশিত একটি খবরে জানা যায়, সম্প্রতি ইসরাইলি মন্ত্রিসভায় সেখানকার মসজিদগুলোতে আজান সীমিত করার একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। প্রস্তাবটি উত্থাপনকালে নেতানিয়াহু অকারণে বিভেদ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে এটি একটি পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে ইসরাইল সরকারের এই উদ্যোগকে ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর নগ্ন হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্ট পর্যবেক্ষক মহল। এমনিতে নানা ধরনের বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার ইসরাইলের আরব মুসলমানরা। জায়নবাদি সরকারের এই পদক্ষেপ শুধুমাত্র ইসরাইলি মুসলমানদেরকেই বিক্ষুব্ধ করবে না, পুরো মধ্যপ্রাচ্য এবং ইসলামী দুনিয়ায় ইসরাইলি এই পদক্ষেপের বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। আমরা ইসরাইলিদের এ ধরনের মুসলিমবিদ্বেষী ও উস্কানিমূলক পদক্ষেপের নিন্দা জানাই।
ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পশ্চিমা দুনিয়া ইসলাম-বিদ্বেষী আইন-কানুন ও নিয়ন্ত্রণ নিবর্তনের আশ্রয় নিলেও দ্রুত বর্ধিষ্ণু ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসেবে মুসলমানদের অগ্রযাত্রা রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। মুসলমানদের প্রতি পশ্চিমা রাষ্ট্রযন্ত্র ও গণমাধ্যমের অসহিষ্ণুতা ও বৈরিতার শিকার হচ্ছে মুসলমানরা। নবী-রাসূলদের অবমাননাকর কার্টুন প্রকাশ, মসজিদের মিনার নির্মাণে বাধা, মুসলিম নারীদের হিজাব পরিধান বা মসজিদে আজান প্রচারে বিধি-নিষেধ আরোপের মাধ্যমে মুসলমানদের নাগরিক অধিকার বঞ্চিত করে সংক্ষুব্ধ করে তোলা হয়েছে। এসব ঘটনায় একশ্রেণীর মুসলমানের বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সুযোগ নিয়ে মুসলিম-বিদ্বেষী স্বার্থান্বেষী মহল ও সন্ত্রাসী জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী ইউরোপের প্যারিস, ব্রাসেলস’র মতো শহরে বড় ধরনের নাশকতারও জন্ম দিয়েছে। যেখানে শত শত বছর ধরে মসজিদের মিনারে আজানের ধ্বনি প্রচারিত হচ্ছে, সেখানে হঠাৎ করে শব্দদূষণ বা অন্যকোনো অজুহাত তুলে আজান বন্ধ করে দেয়ার পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে উস্কানিমূলক। বিশেষত: ইসরাইলের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে মসজিদের মাইকে আজান প্রচারের বিরুদ্ধে যে কোনো সরকারি উদ্যোগ ধর্মীয় স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পরিবেশকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
আরব মুসলমানদের জমি দখল করে গড়ে ওঠা এবং আরব মুসলমান প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর দ্বারা পরিবেষ্টিত ইসরাইলের মসজিদ থেকে আজান বন্ধের উদ্যোগ উস্কানিমূল আচরণ হিসেবেই বিবেচিত হবে। বহুত্ববাদী রাজনৈতিক সংস্কৃতি, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং নাগরিক অধিকারের প্রশ্নে যেখানে পশ্চিমা শহরগুলোতেও নতুন নতুন মসজিদ গড়ে ওঠার পাশাপাশি মসজিদের মিনার থেকে আজান প্রচারিত হচ্ছে, সেখানে ইসরাইলের মতো রাষ্ট্রে আজান নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ অনৈতিক ও অনভিপ্রেত। অনিয়ন্ত্রিত ভোগবাদী জীবনধারা ও অপসংস্কৃতির জোয়ারে ভেসে যাওয়া আকাশ সংস্কৃতির কারণে বিশ্বব্যাপী সাধারণ মানুষ নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের শিকার হয়েছে। এর ফলে নানা ধরনের সামাজিক সঙ্কটও তৈরি হচ্ছে। ধর্মীয় নৈতিকতা এবং সামাজিক মূল্যবোধ পুনঃপ্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এসব সমস্যা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব বলে সমাজতাত্ত্বিকরা মনে করেন। ইসলামের সাম্য, শৃঙ্খলা ও পরমতসহিষ্ণুতার নীতি এবং শান্তির বার্তায় আকৃষ্ট হয়ে পশ্চিমা দুনিয়ার অনেক তরুণী ইসলাম গ্রহণ করছে। এটা ইসলামের অন্তর্নিহিত শক্তির ফল। কোনো বিরূপ আইন তৈরি করে নতুন প্রজন্মের এই আত্মজাগরণকে রুদ্ধ করা সম্ভব নয়। ইসরাইলি ও পশ্চিমাদের অনুকরণে আমাদের মতো শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশেও একশ্রেণীর সেক্যুলার বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদ প্রায়ই ইসলামবিরোধী বক্তব্য দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ঘৃণা কুড়াচ্ছেন। সম্প্রতি ইউনেস্কোর একটি প্রস্তাবে আল আকসা মসজিদের উপর ইহুদিদের যে কোনো দাবি বা অধিকার নাকচ করে দিয়ে একটি ঐতিহাসিক রায় প্রকাশ করা হয়েছে। ইসরাইল সে রায়ের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছিল। মসজিদের আজান বন্ধ করতে ইসরাইলি প্রস্তাব যেন সে রায়েরই আরেকটি বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া। আল আকসা মসজিদের উপর ইহুদিদের দাবি নাকচ হওয়ার মতো একদিন হয়তো প্যালেস্টাইনি ভূ-খ-ে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের অধিকারও বিশ্ব সম্প্রদায় নাকচ করে দেবে। বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষ সে দিনটিরই অপেক্ষায় রয়েছে।



 

Show all comments
  • saki ১৬ নভেম্বর, ২০১৬, ৭:১৪ পিএম says : 0
    ইস্রায়েলের পূর্বে প্রিথীবির কিছু দেশে মাইকে অাজান নিশিদ্ধ অথবা আওয়াজ নিয়ন্ত্রন করা হয়েছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসরাইলে আজান বন্ধের উদ্যোগ
আরও পড়ুন