পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সারাবিশ্বেই এক ধরনের অর্থনৈতিক ক্রান্তিকাল চলছে। ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় জ্বালানি ও পণ্যমূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতির কারণে যেখানে স্বল্প আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা ক্রমে কঠিন হয়ে উঠেছে। তখন আমাদের দেশে প্রায় অপ্রয়োজনীয় বিলাসদ্রব্য আমদানিতে প্রতিমাসে শত শত কোটি ডলার খরচ হয়ে যাচ্ছে। পরিবর্তিত বিশ্বঅর্থনীতিতে যেখানে দেশে দেশে অপ্রয়োজনীয় আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশে তা বেড়েই চলেছে। এমনিতেই দেশে আমদানি খাতে ব্যয়বাহুল্যের কারণে দীর্ঘদিন ধরে বাণিজ্য ঘাটতিতে নেতিবাচক ধারা চলছে। প্রবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিটেন্স এবং গার্মেন্ট রফতানি থেকে প্রাপ্ত রেমিটেন্সের উপর ভর করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ডলারের রিজার্ভ গত অর্থ বছরের আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড ছুঁয়েছিল। রেমিটেন্স আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় চলতি অর্থ বছরের মার্চ মাসে ডলারের রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। গতকাল জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর দেয়া তথ্য অনুসারে, চলতি অর্থ বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে দেশের আমদানি ব্যয়ের যে চিত্র প্রকাশিত হয়েছে তা রীতিমত উদ্বেগজনক। প্রকাশিত তথ্য মতে, শুধুমাত্র ফেব্রুয়ারি মাসে সামগ্রিক আমদানি খাতে ব্যয় হয়েছে ৮৪,১৯৭ কোটি টাকা বা ৯.৭ বিলিয়ন ডলার। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় এ অঙ্ক প্রায় দ্বিগুণ। এই বিশাল আমদানি ব্যয়ের ৫৩ শতাংশ ব্যয় হয়েছে মূলধনী যন্ত্রপাতি, জ্বালানি তেল, ভোজ্যতেল, তুলা, সার, লোহা, চাল ও গমের মতো মৌলিক প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে। অবশিষ্ট প্রায় অর্ধেক অর্থ ব্যয় করা হয়েছে অপ্রয়োজনীয় ও বিলাস দ্রব্য আমদানি খাতে।
ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কার মধ্যে জ্বালানির মূল্য বেড়েই চলেছে। জ্বালানি ও নিত্যপণ্যের মূল্য ৫০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড করতে যাচ্ছে বলে বিশ্বব্যাংকের এক সতর্ক বার্তা প্রকাশিত হয়েছে। জ্বালানি খাতে আমদানির উপর নির্ভরশীল দেশগুলো ইতোমধ্যে অপ্রয়োজনীয়, স্বল্পপ্রয়োজনীয় ও বিলাসদ্রব্য আমদানি নিয়ন্ত্রণে নানামাত্রিক প্রতিবন্ধকতা আরোপ করেছে। শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞতা সামনে রেখে বিলাস সামগ্রী আমদানিতে নেপাল সরকার শতভাগ মার্জিন ঘোষণা করেছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক যেন কুম্ভকর্ণের ভূমিকা নিয়েছে। অপ্রয়োজনীয় বিলাসদ্রব্য আমদানির অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বমুখী ব্যয় মেটাতে গিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন থেকে ৪৪ বিলিয়নে নেমে আসার পর তাদের টনক নড়লেও বিলাসদ্রব্য আমদানিতে মাত্র ২৫ ভাগ শুল্ক আরোপের নির্দেশনা কতটা কাজে আসবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। চকোলেট, পনির, মাখন, আপেল-আঙ্গুর, মসলা, সিরামিক, গ্লাসওয়্যার, কসমেটিক্স সামগ্রী ও ফ্যাশন দ্রব্য আমদানিতে ক্রমবর্ধমান হারে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রবণতা রীতিমত আত্মঘাতী। একদিকে আমদানিব্যয় বৃদ্ধির কারণে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে ফরেন রিজার্ভে টান পড়তে শুরু করেছে, অন্যদিকে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাচ্ছে। গতকাল প্রকাশিত সংবাদে বুধবার একদিনের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে ২৫ পয়সা মূল্য কমে যাওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। খোলা বাজারে এই ব্যবধান আরো বেশি বলে জানা যায়। আমাদের মতো প্রান্তিক অর্থনীতির জন্য এটি মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে খুবই বিপজ্জনক প্রবণতা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
করোনাকালীন বাস্তবতায় দেশের লাখ লাখ মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়েছে। কোটি মানুষের আয় কমে গেছে এবং ধনী-দরিদ্রের অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়েই চলেছে। নিম্ন আয়ের মানুষ কোনো রকমে খেয়ে পরে বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছে। নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতির কারণে টিসিবির পণ্যবিক্রির ট্রাকগুলোর সামনে শত শত মানুষের লম্বা লাইন দেখেই দেশের নিম্ন আয়ের মানুষের অবস্থা আঁচ করা যায়। এহেন বাস্তবতার মধ্যে আরেক শ্রেণির মানুষ বিলাসব্যসনে গা ভাসিয়ে দিচ্ছে। তাদের বিলাস সামগ্রী আমদানি করতে প্রতি মাসে শত শত কোটি ডলার খরচ হয়ে যাচ্ছে। অর্থনীতির মানদণ্ডে যা মোটেই প্রয়োজনীয় বা শোভনীয় নয়। পুষ্টিবিদরা বলছেন, যেখানে দেশে সারা বছর প্রচুর পরিমাণে উন্নত মানের পেয়ারা উৎপাদিত হচ্ছে, সেখানে শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে বিপুল পরিমাণ আপেল আমদানির কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। একইভাবে চকলেট, কফি, পনির, মাখনের মতো পণ্য সামগ্রীর পেছনে শত শত কোটি ডলার খরচের কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। অপ্রয়োজনীয় আমদানি ব্যয় মিটাতে গিয়ে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়িয়ে তোলা এবং রিজার্ভের স্থিতিশীলতা নষ্টের প্রবণতা রোধে আরো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। পণ্য আমদানির আড়ালে মিথ্যা ডক্যুমেন্টে বিদেশে অর্থ পাচারের ঘটনাও ঘটছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক, শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে আরো কার্যকর নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে। জ্বালানি আমদানি কমিয়ে আনতে জ্বালানির দেশীয় উৎসগুলোর উন্নয়নে নজর দিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।