Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্লু-ইকোনমির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ২৮ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৩ এএম

বঙ্গোপসাগরে ১,১৮,৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি টেরিটোরিয়াল সমুদ্র, ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে অবস্থিত সব সম্পদের ওপর বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের মাধ্যমে।২০১২ সালে মিয়ানমারের সাথে ও ২০১৪ সালে ভারতের সাথে এ রায় হয়েছে। বর্তমানে দেশের ৯৪% পণ্য বঙ্গোপসাগরের মাধ্যমে পরিবহণ হচ্ছে।এছাড়া, সমুদ্র থেকে কিছু সম্পদ আহরিত হচ্ছে, যার পরিমাণ বার্ষিক ৯৬০ কোটি ডলার, যা জিডিপির ৫ শতাংশের মতো। অবশ্য, দেশের সমুদ্র এলাকা মৎস্য, গ্যাস, তেল, সি-উইড ইত্যাদিতে ভরপুর। দেশের সমুদ্র সৈকতও বিশ্বের মধ্যে দীর্ঘতম, যা পর্যটনের প্রাণকেন্দ্র। এছাড়া, দেশের সমুদ্র এলাকায় গভীর সমুদ্র বন্দর, নৌ যোগাযোগ, উপকূলে বায়ু, সৌর ও বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়াও ভাসমান পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও শহর-মার্কেট করার সুযোগ রয়েছে। অর্থাৎ দেশের সমুদ্রকেন্দ্রিক ব্যাপক উন্নতি ও কর্মসংস্থানের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এ ব্যাপারে প্রাপ্ত তথ্য হচ্ছে: বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ৫ জানুয়ারি জানিয়েছে, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় বিপুল পরিমাণ তথা ০.১১ থেকে ০.৬৩ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফুট গ্যাস হাইড্রেট পাওয়া গেছে, যা ১৭-১০৩ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফুট প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদের সমান। এছাড়া, ২২০ প্রজাতির সি-উইড, ৩৪৭ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৪৯৮ প্রজাতির ঝিনুক, ৫২ প্রজাতির চিংড়ি, ৫ প্রজাতির লবস্টার, ৬ প্রজাতির কাঁকড়া এবং ৬১ প্রজাতির সি-গ্রাস চিহ্নিত করা হয়েছে। অর্থাৎ দেশের সমুদ্র সীমায় অফুরন্ত সম্পদ রয়েছে।

কিন্তু সমুদ্র বিজয়ের পর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও বিজয়ের সুফল তেমন পাওয়া যায়নি। সমুদ্র সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে অগ্রগতি নগন্য! এ পর্যন্ত তেল-গ্যাস উত্তোলনের টেন্ডারই ওপেন করা সম্ভব হয়নি। শুধুমাত্র সমুদ্র অঞ্চলকে নতুনভাবে বিন্যস্ত করে ২৬টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। তার মধ্যে অগভীর সাগরে ১১টি এবং গভীর সাগরে ১৫টি।বাপেক্স জানিয়েছে, গভীর সমুদ্র বন্দরে অনুসন্ধান চালানোর মতো সামর্থ্য নেই সংস্থাটির। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও সেভাবে আগ্রহ দেখাচ্ছে না! মাল্টি ক্লায়েন্ট সার্ভের মাধ্যমে পর্যাপ্ত ও নির্ভরযোগ্য তথ্য দিতে না পারায় এটা হয়েছে! অথচ একই সময়ে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের পর দেশ মিয়ানমার ও ভারত আমাদের সমুদ্র অঞ্চলের পাশের অঞ্চল থেকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান করে তাতে সফল হয়েছে এবং তেল-গ্যাস উত্তোলন করে ব্যবহার করছে। অন্যদিকে, ২০২০সালে ভারত আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়ে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কয়েক হাজার কিলোমিটার এলাকাকে নিজেদের অর্থনৈতিক এলাকার অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করেছে।যদিও ভারতের এ অন্যায়-অযৌক্তিক দাবিকে প্রত্যাখান করেছে বাংলাদেশ। বিষয়টি এখনো অমীমাংসিত রয়েছে। অপরদিকে, দেশে প্রয়োজনীয় সমুদ্র বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞ নেই। তাই কয়েক বছর আগে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম মেরিন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শিক্ষক পাওয়া যায়নি দেশে। বিদেশ থেকে শিক্ষক আনতে হয়েছে!

তথ্য মতে, দেশের সমুদ্রসীমায় ব্যাপক সি-উইড রয়েছে। সি-উইড হচ্ছে, এক ধরনের শৈবাল, যা বিশ্বব্যাপী খুবই গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পুষ্টিগুণের বিচারে বিভিন্ন দেশে এটি খাদ্য হিসাবে ব্যবহ্নত হয়। এছাড়া, সি-উইড শিল্পের কাঁচামাল, জমির সার, প্রাণীখাদ্য ও লবণ উৎপাদনেও ব্যবহৃত হয়। তাই সরকারি উদ্যোগে বর্তমানে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, কুয়াকাটাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে চাষ হচ্ছে সি-উইড। বর্তমানে যার পরিমাণ পাঁচ হাজার টনের অধিক। এছাড়া, পটুয়াখালীতে সি-উইডের একটি গবেষণা ল্যাবও স্থাপন করা হয়েছে। দেশে ব্যবহার হওয়া ছাড়াও খাদ্য ও শিল্প উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে সি-উইড রপ্তানির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে, উপকূলব্যাপী ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ তটরেখা থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত ১.৬৬ লাখ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত বিশাল সামুদ্রিক এলাকায় অফুরন্ত মৎস্য ও অন্য প্রাণীজ সম্পদ রয়েছে। কিন্তু তা আহরণের পরিমাণ সামান্য। বড় ট্রলারের অভাব এবং গভীর সমুদ্রে মাছ ধরায় দক্ষতা না থাকায় পর্যাপ্ত মাছ আহরণ করা যাচ্ছে না। শুধুমাত্র উপকুল এলাকায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার ছোট নৌকা ব্যবহার করে জেলেরা মাছ ধরছে। তাতে দেশের চাহিদা পূরণ করে কিছু রফতানি হচ্ছে।এছাড়া,এ কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৩০ লাখ মানুষের জীবিকা চলছে। অথচ বিশ্বব্যাপী সামুদ্রিক টোনা মাছের চাহিদা ব্যাপক। মূল্যও অত্যধিক। এই টোনা মাছ গভীর সমুদ্র থেকে আহরণ করতে হয়। এছাড়া, আরো অনেক বড় জাতের মাছ রয়েছে। সম্প্রতি সেন্টমার্টিনে ধরা পড়েছে দেড়শ কেজি ওজনের একটি বোল পোয়া মাছ, যা ১.৪০ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এসবসহ অন্যসব মাছ আহরণ করতে পারলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করার পর রপ্তানি থেকে ১০-১২ হাজার কোটি টাকা করে বার্ষিক আয় করা সম্ভব বলে মৎস্য বিশেষজ্ঞদের অভিমত। কিন্তু আমরা সে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারছি না। এমনকি কিছুদিন আগে একটি বিদেশি কোম্পানী গভীর সমুদ্রের মাছ ধরে অর্ধেক ভাগাভাগির এবং ৫ বছর পর নেট ও বোট দিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু সে প্রস্তাব আমরা গ্রহণ করিনি। আমাদের মানসিকতা হচ্ছে, নিজেও করবো না, অন্যকেও করতে দেব না। যা’হোক, উপকূল এলাকায় জেলেরা যে মাছ ধরছে, তারও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেওয়া যাচ্ছে না। তাই প্রায়ই ভারতীয় ও মিয়ানমারের জলদস্যুরা আমাদের জেলেদের উপর আক্রমণ চালিয়ে মাছ ও জাল নিয়ে যায়। জেলেদেরও ধরে নিয়ে যায় কখনো কখনো! অবশ্য,সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ আহরণের জন্য ইতোমধ্যে ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। এই প্রকল্প পূর্ণ ও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে অনেক কল্যাণ হবে।

দেশের মূল ভূখন্ডের (১.৪৪ লাখ বর্গ কিলোমিটারের সামান্য বেশি) প্রায় সমান সমুদ্র এলাকা হলেও দেশে কোনো গভীর সমুদ্র বন্দর নেই। তাই বহির্নোঙ্গর থেকে পণ্য লাইটারের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দের আনা-নেয়া করা হয়। এতে সময় ও ব্যয় হয় বেশি। দুর্ঘটনাও প্রায়ই। এ অবস্থায় সোনাদিয়াই গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করার জন্য চীনের সাথে একটি সমঝোতা চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু ভারতের প্রবল আপত্তির কারণে সেটা বাস্তবায়ন না করে পায়রায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়। তাতে কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ও করা হয়।তারপর সেটা বাতিল করে এখন মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জাপানের সহায়তায়। এরও ভাগ্যে কি আছে তা বলা কঠিন। উল্লেখ্য যে, জাপানের কিয়াসু দ্বীপের ন্যায় মাতারবাড়িতে ২ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় সম্বলিত একটি সমন্বিত উন্নয়ন প্রস্তাব দিয়েছে জাইকা, যাতে থাকবে সর্বোচ্চ গভীরতার গভীর সমুদ্র বন্দর, ২১,৭০০ মেগাওয়াটের আলট্রা সুপার ক্রিটিকাল কোল পাওয়ারড বিদ্যুৎ কেন্দ্র, তেল পরিশোধন ও পেট্রোকেমিক্যাল কারখানা নির্মাণ হবে। এছাড়া, রেললাইনে যোগাযোগ স্থাপন হবে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের সঙ্গে। জাইকার এ প্রস্তাব নিয়ে গত ১৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক পর্যালোচনা সভা হয়। তাতে উপস্থাপিত তথ্য অনুসারে সমন্বিত উদ্যোগে মোট ৩৭টি প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়। তন্মধ্যে ১৫টি প্রকল্প জাপান সরকারের বিনিয়োগে বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশের অর্থনীতি নতুন মাত্রা পাবে। সবকিছু ঠিকমতো চললে ২০২৬ সালের মধ্যে মাতারবাড়ি গভীর বন্দরের কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। এটি ৮ হাজার টিইইউস জাহাজ ধারণ করতে সক্ষম হবে এবং এর বার্ষিক কনটেইনার হ্যান্ডলিং ক্ষমতা ৬ লাখ থেকে ১.১ মিলিয়ন টিইইউস। পরে কনটেইনার টার্মিনাল প্রসারিত করা হবে ৭০ হেক্টর জমিতে। এ পর্যায়ে একটি ১ হাজার ৮৫০-মিটার বার্থ থাকবে এবং এর বার্ষিক ক্ষমতা হবে ২.৮ মিলিয়ন-টন।

বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক হাইড্রোগ্রাফিক সংস্থার সদস্য। ৯৪টি দেশ এই সংস্থার সদস্য। প্রতি বছর ২১ জুন ‘বিশ্ব হাইড্রোগ্রাফি দিবস’ পালিত হয়। হাইড্রোগ্রাফি হলো, সমুদ্র, সমুদ্র তলদেশ ও উপকূলীয় অঞ্চলের ভৌত বৈশিষ্ট্যাবলী পরিমাপ করা। বাংলাদেশের সমুদ্র পানিসীমার হাইড্রোগ্রাফি কর্মকাণ্ড বাংলাদেশ নৌবাহিনী সম্পন্ন করে থাকে। জাতিসংঘের এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা ১৪ হচ্ছে, ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য মহাসাগর, সাগর এবং সামুদ্রিক সম্পদ সংরক্ষণ এবং টেকসই ব্যবহার’।

গত ১০ জুন এক দৈনিকে প্রকাশ, বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী অঞ্চল থেকে প্রচুর লবণ উৎপাদন করা সম্ভব। উপরন্তু সমুদ্র সৈকতে প্রাপ্ত জিরকন, ইলেমেনোইট, ম্যাগনেটাইট, রিউটাইলসহ বিভিন্ন মূল্যবান খনিজ সম্পদ পাওয়া গেছে। এছাড়া, সমগ্র সৈকতে রয়েছে অফুরন্ত বালি। যা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সিলিকন, ক্রোমিয়ান, প্লাটিনাম ইত্যাদি মহামূল্যবান কাজে ব্যবহৃত হয়। তাই এই বালি ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড’ নামে খ্যাত। সমগ্র উপকূলে বিপুল পরিমাণে বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগও রয়েছে। এটি চালু করেছে চীন। দক্ষিণ চীনের ইয়াংজিয়াং সমুদ্র তীরবর্তী বিশাল পানিরাশির ওপর স্থাপন করা হয়েছে চীনের প্রথম বায়ুচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ২৬৯টি টারবাইনের মাধ্যমে কেন্দ্রটি বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে, যার মোট ক্ষমতা ১৭ লাখ কিলোওয়াটের মতো। আর বার্ষিক প্রায় ৫০০ কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। এছাড়া, দেশের উপকূলে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করারও সুযোগ রয়েছে। এমনকি উপকূলে কয়েকটি ভাসমান পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রও নির্মাণ করা সম্ভব। চীন ও রাশিয়া সমুদ্র উপকূলে ভাসমান পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করে অনেক বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় সমুদ্র উপকূলে ভাসমান আবাসস্থল ও মার্কেট নির্মাণ করে ব্যবহার করছে, যা আমাদের উপকুলেও করা সম্ভব। দেশের বিশাল সৈকত পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণীয় স্থান হতে পারে। কিন্তু সেখানে নানা আবর্জনা, নিরাপত্তাহীনতা ও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবে কাঙ্ক্ষিত পর্যটক হচ্ছে না। মিরসরাই-টেকনাফ ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের কাজ চলছে। এটি যুক্ত হবে এশিয়ান হাইওয়ে সঙ্গে। মেরিন ড্রাইভের কল্যাণে সমুদ্র থেকে আহরিত সম্পদ দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশের যে কোনো এলাকায় পৌঁছানো যাবে। উপরন্তু মহেশখালীতে ৩ লাখ কোটি টাকার বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোকেও বিশেষ সুবিধা দেবে। এছাড়া, বহির্নোঙ্গর থেকে সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে পতেঙ্গার অয়েল বেল্টের প্রদান ডিপোতে তেল সরবরাহের ডাবল পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ চলছে।এটা সম্পন্ন হলে বিপিসির তেল সরবরাহ দ্রুততর হবে এবং লাইটারিং ব্যয় বাবদ বিপুল অর্থের সাশ্রয় হবে। অপরদিক,জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই বাংলাদেশসহ বহু দেশ চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। কারণ, সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে গেলে উপকুল তলিয়ে যাবে। তাতে জীবন ও জীবিকা চরম হুমকির মধ্যে পড়বে। বাংলাদেশে ২ কোটির অধিক মানুষের বাস উপকুল এলাকায়। অন্যদিকে, প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন কারণে সমুদ্র দুষিত হচ্ছে। এছাড়া, সামুদ্রিক মাছের মধ্যে প্লাস্টিকের কণা পাওয়া গেছে, যা খাদ্যচক্রের সাথে মিশে মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশে ব্লু-ইকোনমির সম্ভাবনা ব্যাপক। অবিলম্বে একে কাজে লাগাতে হবে। সে জন্য এর বাধাগুলো দূর ও সম্ভাবনাগুলো সম্পন্ন করতে হবে দ্রুত। সম্ভাবনার অন্যতম হচ্ছে, তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান। কারণ, বর্তমানে তেল-গ্যাসের মূল্য আকাশচুম্বী হয়েছে, যা সহসাই হ্রাস পাবে না। দেশে গ্যাসের মজুদও শেষ হয়ে আসছে। তাই চাহিদা মাফিক গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। ফলে অত্যন্ত ব্যয়বহুল এলএনজিনির্ভর হচ্ছে দেশ। অবিলম্বে নতুন গ্যাসকুপ সন্ধান, আবিষ্কার ও উত্তোলনের ব্যবস্থা করতে হবে সমুদ্র ও মূল ভূখন্ডে। আর সেটা করতে হবে প্রধানত বাপেক্সের মাধ্যমে। সে জন্য সংস্থাটির সক্ষমতা, জনবল ও লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়িয়ে প্রয়োজন মোতাবেক করতে হবে। এই সঙ্গে মৎস্য আহরণ ও পর্যটনের উন্নতির দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। দেশে সমুদ্র বিষয়ক প্রয়োজনীয় দক্ষ লোক তৈরি করে কাজে লাগাতে হবে। তবেই ব্লু-ইকোনমির যে স্বপ্ন দেখা হচ্ছে, তা বাস্তবে রূপ পাবে। সমুদ্র বিজয় সার্থক হবে। দেশের উন্নতি ত্বরান্বিত ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
[email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্লু-ইকোনমির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে
আরও পড়ুন