পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে জিয়া পরিবারের সদস্য এবং বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া পুরোনো মামলা। এর মধ্যে বর্তমান সরকার আমলে দায়ের হওয়া মামলা যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছেÑ ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী সরকার আমলে দায়ের হওয়া মামলাও। প্রায় সবগুলো মামলাই বিচার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এসব মামলার অধিকাংশই উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ, রুল শুনানি পেন্ডিং এবং চার্জগঠন প্রক্রিয়ায় ঠেকেছিল। কিন্তু গত এক মাসে প্রায় সবগুলো মামলাই স্ব স্ব পর্যায় থেকে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। মামলাগুলো ফের সক্রিয় হয়ে ওঠা প্রশ্নে ‘আইন তার নিজস্ব গতিতে চলছে’ জাতীয় গৎবাঁধা বক্তব্য সরকার পক্ষের।
কিন্তু জিয়াউর রহমানের গড়া ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল’ (বিএনপি) বলছে ভিন্নকথা। তাদের মতে, সামনেই নির্বাচন। এটিকে সামনে রেখে দানা বাঁধছে সরকারবিরোধী আন্দোলন। আন্দোলন ঠেকাতেই সরকার জিয়া পরিবারের সদস্য এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে বিচারাধীন মামলাগুলো সক্রিয় করা হয়েছে। যদিও মামলা হঠাৎ সক্রিয় হয়ে ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত অঙ্গনে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।
আদালত সূত্র জানায়, ক্ষমতা ছাড়া হওয়ার পর বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধেই বিভিন্ন অভিযোগে দায়ের করা হয়েছে ৩৭টি মামলা। এর মধ্যে ২টি মামলায় ‘দোষী সাব্যস্ত’ হয়ে কারাভোগ করছেন। তার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে দায়ের হয় ২৬টি মামলা। তবে কোকো ইন্তেকাল করায় মামলাগুলো থেকে তার নাম বাদ দেয়া হয়।
জিয়া পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে করা মামলার মধ্যে অন্তত ৭টি মামলা বর্তমান সরকারের আমলে করা। বাকিগুলো ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী সরকারের সময় করা। মামলাগুলোর মধ্যে একটিতে তারেক রহমান খালাস পেয়েছেন। অন্য একটি মামলায় আরাফাত রহমান কোকোর সাজা হয়েছিল। এ দণ্ডাদেশ নিয়েই তিনি ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। এ কারণে ৭টি মামলা থেকেই কোকোর নাম বাদ দেয়া হয়েছে। তবে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২টি মামলার সাজা তিনি ভোগ করছেন। বাকিগুলো এখনও বিচারাধীন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের করা বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা, নাইকো দুর্নীতি মামলা, গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা, ‘ভুয়া জন্মদিন’ পালন, ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটাক্ষ’ করার মামলাও এখন বিচারাধীন।
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ১৭টি মামলার মধ্যে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় ২টি মামলার হয়েছে। একটি মামলায় যাবজ্জীবন, আরেকটি মামলায় ১০ বছর সাজা হয়েছে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া মামলায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। অর্থপাচারের একটি মামলায় বিচারিক আদালত তাকে খালাস দেন। কিন্তু ওই মামলার আপিল হলে আপিল বিভাগ তাকে ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেয়। একই সঙ্গে ২০ কোটি টাকা জরিমানা করে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় তারেক রহমানের ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়। এ মামলায় তার বিরুদ্ধে এখন গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া একটি রাষ্ট্রদ্রোহিতা মামলা রয়েছে। ঢাকার সিএমএম আদালতে রয়েছে ৪টি মানহানি মামলা। রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায়ও তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ গঠন শুনানি আগামী ২৪ মে। গত ১২ এপ্রিল ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯ এ তারিখ নির্ধারণ করেন। ২০০৭ সালে বেগম খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে এ মামলা দেয়া হয়। ১৫ বছর পর মামলাটির অভিযোগ গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কানাডিয়ান কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ১৩ হাজার কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয় এ মামলায়।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর বেগম খালেদা জিয়াকে ৭ বছর কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল শুনানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আসামিপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৪ এপ্রিল বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি কাজী মো: ইজারুল হক আকন্দের ডিভিশন বেঞ্চ আগামী ২ মাসের মধ্যে পেপার বুক তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। পেপার বুক তৈরি হলেই শুরু হবে আপিল শুনানি।
২০০৭ সালে জরুরি আইনের আওতায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে। এ মামলায় বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা: জোবায়দা রহমান এবং শাশুড়ি ইকবালমান্দ বানুকে আসামি করা হয়। মামলার বৈধতা নিয়ে তারেক রহমান এবং ডা: জোবায়দা রহমান পৃথক রিট করেছিলেন। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ডা: জোবায়দা রহমানের পক্ষে রুল জারি করেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল মামলা বাতিল প্রশ্নে দেয়া রুল খারিজ করে দেন। সেই সঙ্গে ডা: জোবায়দা রহমানকে ৮ সপ্তাহের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণেরও নির্দেশ দেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন ডা: জোবায়দা। গত ১৩ এপ্রিল সেই আপিল খারিজ হয়ে যায়। একই মামলার বৈধতা নিয়ে ডা: জোবায়দা রহমান আরেকটি ফৌজদারি আবেদন করেছিলেন। আবেদনের শুনানি শেষে আদালত মামলার বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করেন। একই সঙ্গে মামলাটির কার্র্যক্রমও স্থগিত ঘোষণা করেন। গত ২০ এপ্রিল বিচারপতি মো: নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি কাজী মো: ইজারুল হক আকন্দের ডিভিশন বেঞ্চ এ রুল চূড়ান্ত শুনানির তারিখ ধার্য করেন। আগামী ২৯ মে রুল শুনানির কথা রয়েছে। মামলাটি দীর্ঘদিন পড়ে থাকলেও সরকারপক্ষীয় আইনজীবীরা রুল শুনানির উদ্যোগ নেয়। পরে জোবায়দা রহমানের আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানি তারিখ পুনঃনির্ধারণ করেন আদালত। এতে ১৫ বছর আগের করা মামলাটি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়।
এদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার এবং তার স্ত্রী কানিজ ফাতিমার বিরুদ্ধে দুদকের করা একটি মামলার শুনানির তারিখ ধার্য করা হয়েছে ২৯ মে। গত ১৭ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বিভাগীয় বেঞ্চ এ তারিখ ধার্য করেন। ২০০৮ সালে তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এ মামলায় তারা হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নেন। ২০১৬ সালে এ মামলাটি বাতিল চেয়ে করা শামীম ইস্কান্দারের আবেদন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। পরে আবারও মামলা বাতিল চেয়ে আপিল বিভাগে যান তারা। এই আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগ ২৯ তারিখ নির্ধারণ করেন। এর ফলে এ মামলাটিও ফের সক্রিয় হলো।
শুধু জিয়া পরিবারের সদস্যই নয়Ñ বিএনপির নীতি নীতিনির্ধারক নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া পুরোনো মামলাও সক্রিয় হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে দায়ের করা দুদকের পুরোনো মামলার বিচার চলবেÑ মর্মে আদেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। গত ১৯ এপ্রিল আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
দাখিলকৃত চার্জশিট যথাযথ হয়নিÑ মর্মে বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগ এনে মামলা পুনঃতদন্ত এবং পুনরায় সাক্ষী গ্রহণের আবেদন জানিয়েছিলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। শুনানি শেষে আবেদনটি খারিজ হয়ে যায়।
এর ফলে তার দুর্নীতি মামলায় পুনরায় সাক্ষী ডাকার সুযোগ নেই। পুনঃতদন্তেরও সুযোগ নেই। তাই মামলাটির বিচার কার্যক্রমও চলবেÑ মর্মে জানান, দুদকের কৌঁসুলি খুরশীদ আলম খান। ২০০৮ সালের ১০ জানুয়ারি বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের গোপনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। ওই বছর ১৭ সেপ্টেম্বর এ মামলাটিতে চার্জশিট দেয়া হয়।
হঠাৎ সক্রিয় হয়ে ওঠা মামলার বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে মামলার গতি বাড়ানো হয়েছে।
অন্যদিকে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, হঠাৎ মামলা সক্রিয় করার সঙ্গে সরকারের দমন-নিপীড়নের সম্পর্ক রয়েছে। এ সরকার জনবিচ্ছিন্ন। হামলা-মামলাই তাদের প্রধান হাতিয়ার। আন্দোলন করা হলে সেটি কঠোর হস্তে দমন করা হবেÑ এটি তো তারা সদম্ভেই ঘোষণা দিচ্ছেন। এটি নতুন কিছু নয়। তবে বিএনপি কোনো ফ্যাসিস্ট সরকারের কোনো হামলা-মামলাকেই আর ভয় পায় না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।