পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সংবিধান সংশোধন করে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দেয়ার ইচ্ছা সরকার বা আওয়ামী লীগের নেই। তিনি আরো বলেছেন, ‘সংবিধানে রাষ্ট্রধর্মের বিষয়টি একটি মীমাংসিত বিষয়। মীমাংসিত বিষয়টি নিয়ে কেউ কোনো মন্তব্য করে থাকলে এটি তার একান্ত নিজস্ব বিষয়।’ উল্লেখ করা যেতে পারে, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক গত শনিবার সার্ক কালচারাল সোসাইটি আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় অপ্রাসঙ্গিকভাবে রাষ্ট্রধর্মের বিষয়ে অনাকাক্সিক্ষত মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘আমি বিভিন্ন জায়গায় বলেছি, বিবিসিতে বলেছি, আমি কখনোই বিশ্বাস করি না ইসলাম ধর্ম বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম থাকা উচিত। এটা আমাদের কৌশল। আমরা সুযোগ পেলে, সময় পেলে ইনশাআল্লাহ সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম তুলে দেবো।’ ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম, এই মীমাংসিত বিষয়ে ড. রাজ্জাকের এহেন মন্তব্যে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে সঙ্গত কারণেই উদ্বেগ ও বিচলন দেখা দেয়। তার মন্তব্যে সরকারে ও আওয়ামী লীগের অভিমতের প্রতিফলন আছে বা রয়েছে কি না, সে প্রশ্নও ওঠে। ওবায়দুল কাদেরকে অকুণ্ঠ ধন্যবাদ। তিনি এই উদ্বেগ ও বিচলনের বিষয়টি দ্রুতই উপলব্ধি করেছেন এবং বিভ্রান্তি বিস্তারিত হওয়ার আগেই এ সম্পর্কে সাফ বক্তব্য দিয়েছেন। তিনিই সরকার ও দলের যথার্থ মুখপাত্র। তিনি সরকার ও দশের পক্ষ থেকে ড. রাজ্জাকের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং সরকার ও দলের অবস্থান সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। এর ফলে জনমনে যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছিল কিংবা বিভ্রান্তি বিস্তারের যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, তার অবসান ঘটেছে। এই আশ্বস্ততাও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, সংবিধানে ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম আছে এবং থাকবে।
নন-ইস্যুকে ইস্যু বানিয়ে অহেতুক-অপ্রয়োজনীয় বক্তব্য দিয়ে লাইম লাইটে বা আলোচনায় আসার প্রবণতা একশ্রেণীর মানুষের মধ্যে দেখা যায়। ড. রাজ্জাক রাষ্ট্রধর্ম সম্পর্কে কথিত মন্তব্য করে নিজেকে সেই শ্রেণীর মানুষের অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছেন। তার উদ্দেশ্য যা-ই থাক, ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে তা মাঠে মারা গেছে। লক্ষ্য করার বিষয়, ড. রাজ্জাক তার বক্তব্যের মাধ্যমে সরকার ও দলকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন। সরকার ও দল সম্পর্কে একটা খারাপ ধারণা জনমনে সৃষ্টি হওয়ার সমূহ আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য কেবল সেই আশঙ্কাই দূরীভূত হয়ে যায়নি, একই সঙ্গে সরকার ও দলের ভাবমর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ব্যাপারে আওয়ামী ওলামা লীগ ও অন্যান্য ইসলামী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন, তাতে জনমত ও জনআকাক্সক্ষার প্রতিফলন রয়েছে। রাষ্ট্রধর্ম ও আদালত অবমাননার দায়ে তারা ড. রাজ্জাকের বিচার ও শাস্তি দাবি করেছেন। আওয়ামী ওলামা লীগ ইসলামের প্রশ্নে, ইসলামের আচার-সংস্কৃতির প্রশ্নে, ইসলামী শিক্ষার প্রশ্নে প্রহরীর ভূমিকা পালন করে আসছে। পাঠ্যপুস্তকে ইসলামী বিষয়াদি বাদ দিয়ে বিজাতীয় ধর্ম-সংস্কৃতিজাত বিষয়াদি অন্তর্ভুক্ত করার ঘটনায় আওয়ামী ওলামা লীগের প্রতিবাদী ভূমিকার কথা কারো অজানা নেই। এ কথাও কে না জানে, এই সময়টা সারাদেশে ধর্মীয় সমাবেশ ও ওয়াজ মাহফিলের সময়। এ রকম সময়ে ড. রাজ্জাকের বক্তব্যের সমালোচনা হতে থাকলে সরকার ও আওয়ামী লীগ সম্পর্কে জনগণের মধ্যে বিরূপ ধারণা বিস্তার লাভ করত এবং সরকার ও দল একটা বেকায়দা অবস্থায় পতিত হতো। ওবায়দুল কাদেরের সময়োচিত বক্তব্যে সেটাও দূর হয়ে গেছে।
ওবায়দুল কাদের যথার্থই বলেছেন, রাষ্ট্রধর্মের বিষয়টি একটি মীমাংসিত বিষয়। এই মীমাংসটা যুগপৎ রাজনৈতিকভাবে ও আইনগতভাবে হয়েছে। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর সংবিধান সংশোধনের জন্য যে বিশেষ সংসদীয় কমিটি গঠন করে সেই কমিটি রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রেখে সংশোধনের সুপারিশ পেশ করে। অর্থাৎ রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতেই রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখা হয়। অন্যদিকে ১৯৮৮ সালে যখন সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা হয় তখনই এর বিরুদ্ধে হাইকোর্ট একটি রিট আবেদন করা হয়। ২৮ বছর পর ওই রিট আবেদনের নিষ্পত্তি হয়েছে ২০১৫ সালের মার্চে। আদালত রিট আবেদন খারিজ করে দেন। অতঃপর এ নিয়ে প্রশ্ন তোলার আর কোনো সুযোগ ও অবকাশ নেই। এটি যদি সবাই স্মরণে রাখে তবে মীমাংসিত বিষয়টি নিয়ে নাড়াচাড়া বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা আশা করতে চাই, এ সম্পর্কে অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক পরিহার করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।