Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হাওরে কৃষকের কান্না

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালি বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে প্রায় ১২০ হেক্টর জমির বোরো ধান হবিগঞ্জে তলিয়ে গেছে ৯০ হেক্টর জমির ধান, কাটা হয়েছে ২৪ শতাংশ : শ্রমিক সঙ্

ইনকিলাব রিপোর্ট | প্রকাশের সময় : ২১ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০২ এএম

ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে হাওর অঞ্চলের নদ-নদীর পানি বেড়েই চলছে। একের পর এক বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যাচ্ছে হাওরের আধাপাকা ধান। ঢলের পানিতে ডুবছে হাওর, সেই সাথে ডুবছে কৃষকের স্বপ্ন-আশা। অনেক স্থানে কৃষক ফসল বাঁচাতে আধাপাকা ধান কোমর পানিতে নেমে কাটছে। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে হাওরের ধান দ্রুত কেটে নেয়ার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। কিন্তু ধান কাটবে কি করে অনেক স্থানে ধান এখনো কাঁচা। এ ছাড়া রয়েছে শ্রমিক সঙ্কট। সব মিলিয়ে হাওর অঞ্চলে চলছে কৃষকের হাহাকার। তাদের বুকফাটা কান্নায় হাওরের বাতাস ভারী হচ্ছে। কৃষক চেয়ে চেয়ে দেখছে তাদের চোখের সামনে তলিয়ে যাচ্ছে স্বপ্নের সোনালি ফসল।
সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনার হাওর অঞ্চল থেকে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন নিম্নে তুলে ধরা হলো।

সুনামগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা মো. হাসান চৌধুরী জানান, ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালি বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে প্রায় ১২০ হেক্টর জমির বোরো ধান। উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের স্থানীয় কৃষকদের উদ্যোগে নির্মিত নজরখালি বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় স্থানীয় কৃষকেরা দিশেহারা।

স্থানীয় কৃষক মোহাম্মদ আলী শেখ (৬৫) জানান, তিনি এ হাওরে ২ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছিলেন। গত শনিবার নজরখালি মুখের বাঁধ ভেঙে তার সমস্ত জমির ধান তলিয়ে গেছে। কাঁচা ধানগুলো পাকা হওয়ার আগেই তাদের সব শেষ হয়ে গেল।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শিমুল আহমেদ বলেন, নদীতে অস্বাভিক পানি বৃদ্ধির ফলে হঠাৎ করে নজরখালি মুখের বাঁধটি ভেঙে আট-দশটি গ্রামের কৃষকের শত শত বিঘা জমির ধান পানিতে ডুবে গেছে।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: রায়হান কবির বলেন, উপজেলার একমাত্র নজরখালির বাঁধ ভেঙে টাঙগুয়ার হাওরে পানিতে ফসল তলিয়ে গেছে। এছাড়া আনন্দনগর একটি বাঁধে বড় ফাটল দেখা দিলে এ বাঁধ ফাটল দ্রুত মেরামত করা হয়। এছাড়া উপজেলার সব কয়টি বাঁধের অবস্থা এখন পর্যন্ত ভালো আছে।
কৃষকরা জানান, সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় চাষ করা ধান এখনো সবুজ, কাঁচা। পাকতে আরো ১০-১২ দিন সময় নেবে। এর মধ্যেই ভারী বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে কৃষকের শ্রমে-ঘামে ফলানো এসব ‘সোনার ধান’ ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এতে চরম আতঙ্ক আর উদ্বেগে আছেন কৃষকেরা। তবে জেলার নদ-নদী ও হাওরে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তাহিরপুর উপজেলার মাটিয়ান হাওর, শনির হাওর, সমসার হাওরসহ সব ক’টি হাওরের ফসলই এখন ঝুঁকিতে আছে। একইভাবে জেলার জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, দিরাই ও শাল্লায় উপজেলার নদ-নদীতে পানি বাড়ছে। বিভিন্ন স্থানে ফসল রক্ষা বাঁধে ধস ও ফাটল দেখা দিয়েছে।

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সুনামগঞ্জের ছোট-বড় ১৫৪টি হাওরে এবার ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এতে ৩ হাজার ২২০ কোটি টাকার বোরো ধান উৎপাদিত হওয়ার কথা।
হবিগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, দু’দিন স্থিতিশীল থাকার পর ফের বাড়ছে ধলেশ্বরী নদীর পানি। ভারত থেকে আসা ঢলে বাড়তে থাকা পানি হাওরেও প্রবেশ করছে। ফলে হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার ৯০ হেক্টর জমির আধাপাকা বোরো ধান পুরোপুরি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় কাঁচা ও আধাপাকা মিলিয়ে জেলায় মাত্র ২৪ শতাংশ ধান কাটতে পেরেছেন কৃষকরা। এখনো ৭৬ শতাংশ ধান জমিতেই আছে। আবার পানি বাড়তে থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলায় ১ লাখ ২২ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে লাখাইয়ে হয়েছে ১১ হাজার ২২০ হেক্টর জমির আবাদ। শুধু লাখাই সদর ইউনিয়নে হয়েছে ৩ হাজার ৪০০ হেক্টর জমি আবাদ। কিছু কিছু জমিতে প্রায় ৬০ শতাংশ ধান পেকেছে। তবে বেশিরভাগ জমির ধান অর্ধেকও পাকেনি।

এদিকে ভারতের আসাম, চেরাপুঞ্জি ও মেঘালয়ে বৃষ্টিপাতের কারণে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ধলেশ্বরী ও কালনী নদীতে পানি বেড়েছে। এতে লাখাই উপজেলার হাওরে পানি প্রবেশ করে বোরো ধান তলিয়ে যেতে থাকে। দু’দিন পানি স্থিতিশীল থাকলেও গতকাল ফের বাড়তে থাকলে আরো ২৫ হেক্টর জমি প্লাবিত হয়। উপজেলায় মোট ৯০ হেক্টর জমির ধান পুরোপুরি পানিতে তলিয়ে গেছে।

কৃষকরা জানান, শ্রমিক সঙ্কটে তারা ধান কাটতেও পারছেন না। যে শ্রমিক ১ হাজার টাকায় পাওয়া যেত, এ বছর সে শ্রমিককে দিতে হচ্ছে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা।
নেত্রকোনা জেলা সংবাদদাতা জানান, ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে আসা ঢল আর ঝড়বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুরীর ধনুসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে জেলার খালিয়াজুড়ি উপজেলার তলার হাওরের বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত জানান, গতকাল সকালে বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে ধনুসহ সব ক’টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল ধনু নদের পানি বিপদ সীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় কীর্তনখোলা, চর হাইজদা, রসুলপুর বাঁধসহ হাওরের বেশির ভাগ ফসল রক্ষা বাঁধ উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে যে কোনো সময় বাঁধ ভেঙে তাদের সারা বছরের একমাত্র স্বপ্নের ফসল হারানোর আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
জেলা প্রশাসক কাজি মো: আবদুর রহমান জানান, ইতোমধ্যে ব্রি-২৮ ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে আর ব্রি-২৯ জাতের ধান কাটা শুরু হয়েছে। আগাম বন্যার হাত থেকে ফসল রক্ষায় সরকারের নির্দেশে শত শত কৃষক ও হারভেস্টার মেশিন দিয়ে আধাপাকা ধান কাটা হচ্ছে।

এদিকে কিশোরগঞ্জ জেলায়ও ধনু নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ইটনা উপজেলার জিউলের বাঁধ হুমকিতে রয়েছে। যে কোনো সময় বাঁধ ভেঙে হাওরের ফসল তলিয়ে যাবে।
এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে অন্তত ২০০ হেক্টর ধানি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। তিন দিন ধরে নদ-নদীগুলোর পানি বাড়ার ফলে নাসিরনগর সদর, ভলাকুট, বুড়িশ্বর, গোয়ালনগর, পূর্বভাগসহ অন্তত ৬টি ইউনিয়নের হাওর এলাকার জমিগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। এর ফলে কৃষকরা তাদের আধাপাকা ধান কেটে ফেলছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জ থেকে নেমে আসা ঢলে নাসিরনগরের নদ-নদীগুলোতে অন্তত ২ ফুট পানি বেড়েছে। এতে করে নদী ও বিল এলাকা সংলগ্ন জমিগুলো তলিয়ে গেছে। এতে করে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। ভলাকুটের কৃষকরা জনান, কয়েক দিন আগে শিলাবৃষ্টিতে ধানের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এবার সুনামগঞ্জের পানি এসে সব ধান ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হাওর

২৭ এপ্রিল, ২০২২
২৫ এপ্রিল, ২০২২
২২ এপ্রিল, ২০২২
২১ এপ্রিল, ২০২২
২০ এপ্রিল, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->