Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ব্লু ইকোনমির সুফল পেতে তেল গ্যাস অনুসন্ধানকে অগ্রাধিকার দিতে হবে

চট্টগ্রামে সেমিনারে প্রফেসর ড. মইনুল ইসলাম ভারত আমাদের শান্তিতে থাকতে দেবে না

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২১ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০২ এএম

একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি প্রফেসর ড. মইনুল ইসলাম বলেছেন, ব্লু ইকোনমির সুফল ঘরে তুলতে হলে সোনাদিয়াকে কেন্দ্র করেই এ সম্পর্কিত যাবতীয় কার্যক্রম দ্রুত শুরু করতে হবে। এক্ষেত্রে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানকে প্রাধান্য দিতে হবে। ভারত আমাদের শান্তিতে থাকতে দেবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নিয়ে ২০২০ সালে জাতিসংঘে আপত্তি উত্থাপন করেছে। যার মাধ্যমে ভারত কয়েক হাজার বর্গ কিলোমিটার সমুদ্র এলাকাকে ভারতের অর্থনৈতিক জোনে অন্তর্ভুক্ত করতে চাইছে। বাংলাদেশ ২০২১ সালে ওই আপত্তির ব্যাখ্যা পেশ করেছে। বিষয়টি এখন জাতিসংঘে বিচারাধীন। এই ঘটনা থেকে প্রমাণ মিলেছে যে সমুদ্রসীমা সম্পর্কিত ২০১৪ সালের আন্তর্জাতিক আদালতের রায়কে বিতর্কিত করার প্রয়াস ভারত ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখবে। এ প্রেক্ষাপটে একটি স্বতন্ত্র ‘সমুদ্র-সম্পদ মন্ত্রণালয়’ প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবী। ভারত মিয়ানমারকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আইনজীবী দিয়েও আন্তর্জাতিক আদালতে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়েছে।

গতকাল বুধবার নগরীর আগ্রাবাদের একটি অভিজাত রেস্তোরাঁয় ‘সমুদ্র অর্থনীতি বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সী (বিএনএ) আয়োজিত এ সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. শিরীণ আকতার। চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম সমুদ্র জয়ের ১০ বছর অতিক্রান্ত হলেও ব্লু ইকোনমির সুফল পেতে কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এর দায় কাউকে না কাউকে নিতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্থলভাগের আয়তন যেখানে মাত্র এক লাখ ৪৪ হাজার বর্গ কিলোমিটারের সামান্য বেশি সেখানে এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার সমুদ্রসীমার উপর অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ অর্জন যে দেশের জন্য কত বড় সৌভাগ্য সেটা সংশ্লিষ্টরা উপলব্ধি করতে পারছেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জনের ১০ বছর এবং ভারতের বিরুদ্ধে বিজয়ের আট বছর অতিক্রান্ত হলেও সরকারের কর্তা ব্যক্তিরা এ মহা সুযোগের সত্যিকার তাৎপর্য উপলব্ধি করে অগ্রাধিকার দিয়ে অবিলম্বে এ বিশাল সমুদ্রসীমা থেকে সম্পদ আহরণ জোরদার করাকে যথাযথ গুরুত্ব দিচ্ছে কিনা তা নিয়ে আমি সন্দ্বিগ্ধ।

মিয়ানমারে নিয়ন্ত্রণাধীন সমুদ্রে ২০০৪ সালে প্রায় চার ট্রিলিয়ন কিউবিক ফিড গ্যাস আবিষ্কৃত হয়েছে। ওই গ্যাস এখন পুরোটাই তারা চীনে রফতানি করছে। কিন্তু একই এলাকায় বাংলাদেশ সীমান্তে এখনও তেল, গ্যাস অনুসন্ধান শুরুই করা যায়নি। অথচ বাংলাদেশ সীমানায়ও এ ধরনের তেল, গ্যাস রয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় গ্যাস অনুসন্ধান শুরু করতে গেলে মিয়ানমার নৌবাহিনীর বাধায় ফিরে আসতে হয়। ২০১২ সালে বাংলাদেশ সমুদ্রসীমা লাভ করে। কিন্তু ১০ বছরেও সেখানে কোন কাজ শুরু করা যায়নি।

বিএনপি-জামায়াত জোটের সময় মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের উপর দিয়ে পাইপলাইনে গ্যাস আমদানি করতে চায় ভারত। ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে তখন ওই সুবিধা দেয়ার বদলে কমদামে গ্যাস দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু জোট সরকারের অন্ধ ভারত বিরোধিতার কারণে সেই সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে। আর তার মাশুল হিসাবে এখন বাংলাদেশকে ১০ গুণ দামে গ্যাস কিনতে হচ্ছে। সমুদ্রসীমা অর্জনের দীর্ঘ ১০ বছর পরেও গ্যাস উত্তোলন করতে না পারার দায় জ¦ালানি মন্ত্রণালয়কে নিতে হবে বলে জানান তিনি।

ভারতের বাধা এবং চাপের মুখে সোনাদিয়ায় চীনের সহযোগিতায় গভীর সমুদ্রবন্দর করা যায়নি উল্লেখ করে ড. মইনুল ইসলাম বলেন, এর পেছনে প্রধান কারণ হলো ভারত চীনকে বঙ্গোপসাগরে সহজে প্রবেশাধিকার দিতে নারাজ, এটি তাদের ভূরাজনৈতিক স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে। তারা এ বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে এবং এর ফলে শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বিষয়টি শেষ মুহূর্তে ভন্ডুল হয়ে যায়। তিনি বলেন, আমি এখনও দৃঢ়ভাবে বলছি যদি আমরা সত্যি সত্যিই ব্লু ইকোনমির সুফল পেতে চাই তাহলে সোনাদিয়াকে কেন্দ্র করে এ সম্পর্কিত নানা ডায়মেনশনের ভবিষ্যত কর্মযজ্ঞ পরিচালিত হলে সেটাই যৌক্তিক হবে।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে তেল ও এলএনজির দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলেছে। এর ফলে বর্ধিত আমদানি ব্যয়ের ধাক্কায় বাংলাদেশের বাণিজ্য ভারসাম্য এবং ব্যালেন্স অব পেমেন্টসের কারেন্ট একাউন্ডে বড়সড় ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে তেল, গ্যাস অনুসন্ধানকে প্রাধান্য দিয়ে ব্লু ইকোনমির প্রতি যথাযথ অগ্রাধিকার প্রধান এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
বিএনএর প্রকাশক মো. জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে সেমিনার ও ইফতার মাহফিলে আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. শফিকুল ইসলাম, সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের পরিচালক ডা. মো. শরিফ উদ্দিন। মূল বিষয়ের উপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মো. মিজানুর রহমান মজুমদার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ