পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘ফুলের মূল্য’ প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের গল্পের কথা মনে পড়ে? প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইংরেজ সৈনিক অ্যালিস মার্গারেট ফ্রাঙ্ক ভারতবর্ষে যুদ্ধক্ষেত্রে মারা যান। তার ছোটবোন ম্যাগি জানেন না ভাইয়ের কবর কোথায় দেয়া হয়েছে। কোনোদিন ভারতবর্ষে এসে তার পক্ষ্যে ভাইয়ের কবরে ফুল দেয়া সম্ভব হবে না। কিন্তু রক্তের বাঁধন; ভাইয়ের জন্য মন পোড়ে। ভারতবর্ষের একজন লেখককে দেখে ছোট্ট ম্যাগির মনে পড়ে যায় ৬ হাজার মাইল দূরে মৃতভাই অ্যালিসের কথা। বহু কষ্টার্জিত কিছু পয়সা ম্যাগি লেখকের হাতে তুলে দেন। অনুরোধ করেন সেই পয়সা দিয়ে একটি ফুল কিনে তিনি (লেখক) যেন ভাই অ্যালিস মার্গারেট ফ্রাঙ্কের কবরে দেন। সেই ইংরেজ বালিকা ম্যাগি মৃত ভাই অ্যালিসের কবর কোথায় দেয়া হয়েছে না জানলেও জেনেছিল তার ভাই যুদ্ধে মারা গেছে এবং ভারতবর্ষের কোথাও না কোথাও কবর আছে। সে কারণে সে এক ভারতীয় লেখকের হাতে টাকা দেন ফুল কিনে কবরে দেয়ার। কিন্তু ইলিয়াস আলীর ছেলে ব্যারিষ্টার আবরার, লাবিব সাহার, কন্যা সাইয়ারা নাওয়াল জানেন না তাদের বাবা মারা গেছেন না জীবিত আছেন। ইংরেজ বালিকা ম্যাগির মতো ভাগ্যবান নন সে তারা নিশ্চিত যে বাবার কবর কোথাও না কোথাও রয়েছে। বাবার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন বা দোয়া করবেন এমন সৌভাগ্য তাদের হয়নি।
ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিএনপির প্রভাবশালী নেতা এম ইলিয়াস আলী যখন নিখোঁজ হন, তখন তার বড় ছেলে আবরার ইলিয়াস অর্ণব স্কুলে পড়েন। সেই আবরার এখন ব্যারিস্টার। অন্য ছেলে লাবিব সাহার ও একমাত্র কন্যা সাইয়ারা নাওয়ালও বড় হয়ে গেছেন। কিন্তু বাবার আদর সোহাগ পায়নি। বিএনপির তখনকার সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী গাড়িচালক আনসার আলীসহ অন্তর্ধানের এক দশক হয়ে গেল। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে গাড়িতে করে নিজের বনানীর বাসা থেকে বের হয়েছিলেন বিএনপির তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা কমিটির সভাপতি এম ইলিয়াস আলী। তার সঙ্গে ছিলেন গাড়িচালক আনসার আলী। ১০ বছর হয়ে গেল; এখনো অজানা রয়ে গেছে তার হারিয়ে যাওয়া রহস্য।
দীর্ঘ এই দশ বছরে তার সন্ধান চেয়ে বিএনপি ও তার সুহৃদরা দেশ-বিদেশে নানা কর্মসূচি পালন করেছে। পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎসহ নানাভাবে চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু রহস্যের কোনো কিনারা হয়নি। ইলিয়াস আলীর পরিবার ও তার কর্মী-সমর্থকরা আশায় বুক বেঁধে আছেন তার ফেরার অপেক্ষায়। এ জন্য সরকারের উদ্যোগ চান তারা। শুরু থেকে ইলিয়াস আলীর ‘গুমের’ জন্য সরকারকে দায়ী করে আসছে তার অনুসারীরা এবং দলগতভাবে বিএনপি।
নিখোঁজ ইলিয়াসের স্ত্রী তাহসিনা রুশদির লুনা বলেন, আমার বাসায় কোন আনন্দ অনুষ্ঠান হয় না। ১০ বছর ধরে আমার বাসায় হাসির কোন পরিবেশ নেই। কোথাও কোন অনুষ্ঠানে গেলেই সবারই একটাই প্রশ্ন- ইলিয়াস আলীর কোন খবর আছে? সবসময় এসব প্রশ্ন আমাদের ফেস করতে হয়। প্রথম দিকে আইনশৃংখলা রক্ষা বাহিনী কোর্ট রিটের কারণে ৬ মাস পরপর তদন্তের অগ্রগতি জানিয়ে একটা রিপোর্ট দিলেও বেশ কয়েক বছর ধরে তাও আর দেওয়া হচ্ছে না।
ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের ১০ বছর পূর্তিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি। জেলা বিএনপির কর্মসূচির মধ্যে ছিল- জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান ও বাদ জোহর হযরত শাহজালালের (রহ.) মাজার মসজিদ প্রাঙ্গণে দোয়া মাহফিল। আজ সোমবার দোয়া অনুষ্ঠান ও ইফতারের আয়োজন করা হবে। এ ছাড়াও সিলেটের সব উপজেলা ও পৌর শাখার উদ্যোগে নিজ নিজ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন। সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, আমরা চাই বৃহত্তর সিলেটের সন্তান ইলিয়াস আলী আমাদের মাঝে ফিরে আসুক। তার পরিবারের মতো আমরাও এই অপেক্ষায় আছি। বিশ্বাস করি সরকার চাইলে তাকে ফেরত পাওয়া সম্ভব। নিখোঁজ হওয়ার কয়েকদিন পর ২০১২ সারের ১৭ এপ্রিল মধ্যরাতে মহাখালীর সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে ইলিয়াস আলীর গাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। পরে থানা থেকে ফোন করে ইলিয়াস আলীর পরিবারকে পরিত্যক্ত অবস্থায় গাড়ি উদ্ধারের কথা জানানো হয়।
ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের পরদিন তার স্ত্রী তাহসীনা রুশদীর লুনা বনানী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ২০১২ সালের ৩ মে স্বামীর সন্ধান চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন লুনা। সাক্ষাৎ শেষে তিনি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ইলিয়াস আলীকে উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রী তাকে আশ্বাস দিয়েছেন। ইলিয়াসের সন্ধান চেয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিটও করেন তার স্ত্রী। তার সন্ধানের দাবিতে বিএনপির নেতাকর্মী-সমর্থকরা গড়ে তোলেন ‘ইলিয়াস মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ’। শুরুর দিকে বেশ সক্রিয় থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এখন ঝিমিয়ে পড়েছে সংগঠনটির কার্যক্রম। তবে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী-সন্তানরা চেয়ে রয়েছেন তিনি হয়তো একদিন ফিরে আসবেন। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।