Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

জমজমাট দেশের সর্ববৃহৎ তৈরি পোশাকের পাইকারি বাজার

ক্রেতাদের পদচারণায় উসবমুখর কেরানীগঞ্জ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

করোনা মহামারির স্থবিরতা কাটিয়ে আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে জমে উঠেছে দেশের সর্ববৃহৎ তৈরি পোশাকের মার্কেট কেরানীগঞ্জের পাইকারি বাজার। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে প্রায় দুই বছর পর এবারই অনেকটা স্বাভাবিক পরিবেশে ঈদ কেন্দ্রিক বেচাকেনা চলছে। আর তাই হাসি ফুটেছে ব্যবসায়ীদের মুখে।
কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ, আগানগর এখন সারাদেশের ব্যবসায়ীদের পদচারণায় মুখর। প্রতিটি দোকানে বিরাজ করছে ঈদ উৎসবের আমেজ। মার্কেটে ঢুকলেই যেদিকে চোখ যায় কেবলই বাহারি পোশাকের সমাহার। নানা ডিজাইনের প্যান্ট, শার্ট, পাঞ্জাবি, গেঞ্জি, থ্রি-পিসের জমজমাট বেচাকেনা। দিন-রাত কারখানায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। রাজধানীর অদূরে বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে কেরানীগঞ্জ এলাকায় এমন দৃশ্য এখন চোখে পড়ার মতো। পছন্দসই পোশাক কিনে কার্টন ও পিকআপভ্যানে ভরে চলে যাচ্ছেন নিজ গন্তব্যে।

ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্য মতে, কেরানীগঞ্জে ৬ হাজারের অধিক ছোট-বড় পোশাক কারখানা আছে। কাজ করে প্রায় ৮ লাখ শ্রমিক। উপজেলার শুভাঢ্যা ও আগানগর ইউনিয়নে তিন শতাধিক বিপণিবিতানে শো-রুম ওকারখানা রয়েছে ছোট-বড় ১৫ হাজারের অধিক। ঈদের বেচাকেনা প্রায় শেষের পথে। তবে এখনও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতা আর কুলিদের হাঁকডাক কানে আসছে।

সারা দেশের ক্রেতারা পোশাক কিনে নিয়ে যায় এখান থেকে। ব্যবসায়ীদের দাবি, দেশের তৈরি পোশাকের ৬০ শতাংশ চাহিদা মেটায় কেরানীগঞ্জের এই গার্মেন্টস পল্লী। এখানকার ৭০ শতাংশ ব্যবসায়ী নিজেদের তৈরি উৎপাদিত পোশাক বিক্রি করেন। বাকি ৩০ শতাংশ চীন, ভারত, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এনে বিক্রি করেন।

ঈদ বাজার সামনে রেখে জিন্স প্যান্ট তৈরি ও বিক্রির ধুম পড়েছে কেরানীগঞ্জের কারখানাগুলোতে। ব্যবসায়ীদের মতে, পাঁচ সহস্রাধিক কারখানায় তৈরি হচ্ছে জিন্স প্যান্ট। কাজের চাপে শ্রমিকরা ঘুম, খাওয়া-দাওয়া ও গোসলের সময় পাচ্ছে না। কেরানীগঞ্জ উপজেলা শুভাঢ্যা ও আগানগর ইউনিয়নে তৈরি হচ্ছে জিন্স প্যান্ট। ইতিমধ্যে ঢাকাসহ সারাদেশের অভিজাত মার্কেট, সুপার মার্কেট, শপিং মল, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতে শোভা পাচ্ছে।
জিন্স প্যান্ট ছাড়াও এখানকার কারখানায় তৈরি হচ্ছে পায়জামা-পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজ, টি-শার্ট, শার্ট, ফতুয়া, এবং বোরখা। এছাড়াও এখানে তৈরি হয় আমেরিকান লি লেভিজ, ডিজেল ও ব্লু-কালেকশন, ইতালির তৈরি হচ্ছে ভারসেস ও আরমানি। আর চীন দেশের তৈরি হচ্ছে ভিকিং জেএসবি, এফওয়াইআর, এমিলি জোলা।

করোনার পর অর্থনৈতিক মন্দার কিছুটা প্রভাব বেচাকেনায় পড়ছে। তবে এ বছর দেশীয় পণ্যের অবস্থান খুবই ভালো বলে জানিয়েছেন অধিকাংশ ব্যবসায়ী। একই সঙ্গে অন্যান্যবারের তুলনায় এবার এসব এলাকায় শতভাগ বিদ্যুৎ ব্যবস্থা থাকায় খুশি ব্যবসায়ীরা।

গতকাল সরেজমিন কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি দোকানে পাইকারদের প্রচুর আনাগোনা। ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য বিক্রি করার জন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন। একটু দম ফেলার ফুরসত নেই যেন তাদের। যে যার মতো পণ্য বিক্রি করতে ব্যস্ত। অধিকাংশ ব্যবসায়ীর চোখে মুখে খুশির ঝিলিক। দীর্ঘ সময় পর কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস পল্লীর ব্যবসায়ীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছেন। তবে গার্মেন্টস পল্লীর ব্যবসায়ীরা বেচা বিক্রি নিয়ে সন্তুষ্ট হলেও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ক্রেতারা নাখোশ।

অধিকাংশ ক্রেতার অভিযোগ, তারা তাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য নিতে পারছে না, রোজার শুরু হতেই পণ্যের সঙ্কট। সারা মৌসুমে তারা কী বিক্রি করবেন এ ভাবনায় তাদের চোখে মুখে চিন্তার ছাপ। কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, এবার আরও ভালো ব্যবসা করা সম্ভব ছিল। কিন্তু গত দুই বছরের অভিজ্ঞতায় অনেক ব্যবসায়ী ঝুঁকি নিতে চাননি। এছাড়া মূলধন সঙ্কট, কাপড় ও সুতার বাড়তি দামের কারণেও ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতি ব্যাহত হয়েছে।
শহীদুল আলম সুপার মার্কেটের নিচতলার সিয়াম গার্মেন্টসে পাওয়া গেল বেশ কয়েকজন পাইকারি ক্রেতা। তাদের মধ্যে কুমিল্লা থেকে আসা দেলোয়ার হোসেন বলেন, কম মূল্যে ভালো মানের পোশাক পাওয়া যায় বলে এখানে আসি। একসময় ব্যবসায়ীরা দল বেঁধে আসতাম। ট্রাকে করে পণ্য নিয়ে ফিরতাম। এখন সবাই সবার মতো আসে। পণ্য যায় কুরিয়ারে।

ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন আমু জানান, এখানকার ব্যবসায়ীদের জন্য বড় সমস্যা বাবু বাজার ব্রীজের যানজট এবং দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ব্রীজের উপর পুলিশের চাঁদাবাজি।
এম আর কাইয়ুম নামে অপর এক ব্যবসায়ী বলেন, ব্রীজে যেমন পুলিশ চাঁদাবাজি করে। তেমনি নৌকায় আসলে খেয়াঘাটে চাঁদাবাজদের স্বীকার হতে হয়। তিনি জানান, টোল আদায়ের নামে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হয়। এ এলাকার ব্যবসায়ীদের স্বার্থে খেয়াঘাটের টোল ফ্রি করার তাগিদ দেন তিনি।

মামুন হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, এবার অন্যান্যবারের চেয়ে পণ্যের দাম তুলনামূলক কিছুটা বেশি। কারণ হিসেবে তারা বলেন, সুতা, রংসহ যাবতীয় কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় ঈদ পোশাকের দাম বেড়েছে কিছুটা।

পূর্ব আগানগরের দি শাহীন গার্মেন্টস এর স্বত্বাধিকারী ও আমদানীকারক শহীদুল ইসলাম শাহীন বলেন, দেশীয় পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। টেকসই ও গুণে মানে ভালো হওয়ায় এর চাহিদা বেশি।
মুসলিম কালেকশন এক্্রক্লুসিভের প্রধান ফ্যাশন ডিজাইনার ও প্রপাইটার এবং কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মুসলিম ঢালি বলেন, এ বছর ব্যবসা খুবই ভালো। তবে আরও ভালো হতে পারত। সুতার দাম বেশি হওয়ায় পণ্যের দাম বেড়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে চাহিদামাফিক ঋণও পায়নি। পুঁজি সংগ্রহ করতে না পেরে অনেক ছোট ব্যবসায়ী এ বছর তাদের কারখানাই চালু করতে পারেনি। যে কারণে পণ্য কম উৎপাদন হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদুল ফিতর


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ