পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে এখন নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ হয়েছে। ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিতব্য সিডিপির ত্রিবার্ষিক মূল্যায়নে উত্তীর্ণ হলে মধ্যআয়ের দেশে পরিণত হবে। ইআরডির ‘জাতীয় মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন-২০২১’ মতে, বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যেই বিশ্বের ২৪তম বড় অর্থনীতির আর ২০৪১ সালের মধ্যে পরিপূর্ণ ডিজিটাল অর্থনীতির দেশ হবে। উপরন্তু সরকারের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে দারিদ্রমুক্ত করা। বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান ৪২তম। ২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিপির আকার ৪১৬ বিলিয়ন ডলার ও মাথাপিছু আয় ২,৫৯১ ডলার হয়েছে। কিন্তু এই উন্নতির পথে কিছু বাধা রয়েছে। যেমন: অর্থমন্ত্রী গত ৭ এপ্রিল বলেছেন, বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৪৯.৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সম্প্রতি পত্রিকান্তরে প্রকাশ, দেশ-বিদেশের মিলে বর্তমানে সরকারের ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৩.৮৬ লাখ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪৬%। গত ডিসেম্বর শেষে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বেসরকারি পর্যায়ে বিদেশি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮১ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা, যা ২০১৬ সালের ডিসেম্বর শেষে ছিল ৩৯ হাজার কোটি টাকা। বৃদ্ধির হার ১০৮%। এতে সুদে আসলে পরিশোধ করতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের ওপর চাপ বাড়বে। বর্তমানে পাইপলাইনে আটকে থাকা বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মোট বৈদেশিক ঋণের ৩৬% বিশ্ব ব্যাংকের,২৩% এডিবির, ১৮% জাপানের, ৮% চীনের, ১% দক্ষিণ কোরিয়ার, ১% আইডিবির ও ১২% অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীর। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮,৫৮৮ কোটি টাকা। অনুমেয়, আগামী অর্থবছরে বাজেটে ঋণ পরিশোধ ব্যয় প্রায় এক লাখ কোটি টাকা হবে। কারণ, ঋণের কিস্তি ও সুদের পরিমাণ বাড়বে। উপরন্তু রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ঋণের কিস্তি ও সুদ পরিশোধ শুরু হবে। অর্থাৎ সরকারের বিপুল পরিমাণে ঋণ হয়েছে ও হচ্ছে। বাজেট ঘাটতি পূরণ ও অনেকগুলো বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এটা হয়েছে। অথচ, এসব প্রকল্পের বেশিরভাগই নির্দিষ্ট সময়ে ও অর্থে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে অনেক। উপরন্তু অনেক প্রকল্প অপ্রয়োজনীয়, স্বল্প লাভজনক ও পরিবেশের ক্ষতিকারক। তাই এসব প্রকল্প ও ঋণের ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে ।উপরন্তু এই বিপুল ঋণের কারণে দেশের পরিস্থিতি শ্রীলংকার মতো ভয়াবহ হতে পারে বলে জনমনে আশংকা সৃষ্টি হয়েছে (শ্রীলংকা উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ থেকে এখন দেউলিয়া হতে চলেছে। বিপুল বিদেশি ঋণে স্বল্প লাভজনক বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন ও কিছু ভুল নীতির জন্য এটা হয়েছে। দেশটির ঋণের হার এখন জিডিপির ১১৯%। তন্মধ্যে ৩৬.৪% বন্ডের, ১৪.৬% এডিবির, ১০.৯% জাপানের ও ১০.৮% চীনের)। জাতীয় সংসদেও এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিরোধী দলীয় উপনেতা জিএম কাদের গত ৬ এপ্রিল সংসদে বলেন, ‘চরম অর্থনৈতিক সংকটে থাকা শ্রীলংকার মতো অবস্থা বাংলাদেশেও হতে পারে।’ প্রতিত্তোরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত্তি অনেক মজবুত। বাংলাদেশ কখনো ঋণ খেলাপি হয়নি, হবেও না। সরকার অত্যন্ত সতর্ক রয়েছে।’ একই দিনে এডিবি’র আবাসিক প্রতিনিধি গিনটিং বলেন, ‘বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা খুব ভালো। এ ছাড়া জিডিপির তুলনায় ঋণ-অনুপাত সহনীয় অবস্থানে আছে। সুতরাং ভয়ের কোনো কারণ নেই। শ্রীলংকার চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। শ্রীলংকার মতো বাংলাদেশ তাই সংকটে পড়বে না।’
অর্থনীতিবিদ আহসান মনসুর বলেছেন, রাজস্ব আদায়ে সরকারের ব্যর্থতার কারণেই প্রতি বছর ঘাটতি বাজেটের পরিমাণ বাড়ছে। বাংলাদেশের রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত ৮% নেমে এসেছে, যা অন্তত: ২০-২২% করতে না পারলে সরকারের ঋণ বাড়তেই থাকবে। অন্যদিকে, দেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি হচ্ছে: কৃষি, প্রবাসী আয় ও গার্মেন্ট। করোনাসৃষ্ট বৈশ্বিক মহামন্দা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক যুদ্ধ চলছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের কুপ্রভাবও রয়েছে। এসব কারণে মূল ভিত্তির যেকোন একটিতে সংকট সৃষ্টি হলেই দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে চরম সংকট সৃষ্টি হবে। এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ তো রয়েছেই। এছাড়া উন্নতির পথে আরও কিছু কাটা রয়েছে। যেমন: ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা হয়েছে বলে কিছুদিন আগে জানিয়েছে আইএমএফ। অর্থনীতিবিদ আহসান মনসুরও সম্প্রতি বলেছেন, করোনার আগে থেকেই খেলাপি ঋণ ২০-২২% ছিল। এখন তা আরও বেড়েছে। ফলে ব্যাংক খাত ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। খবরে প্রকাশ, গত ডিসেম্বর শেষে দেশের সরকারি-বেসরকারি ১০টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে আছে। দেশের জিডিপি-ব্যাংক খাতের সম্পদের অনুপাত ২০২১ সালে কমে হয়েছে ৬১%। অথচ, এটি চীনে ২০০% ও ভারতে ১০০% এর বেশি। উপরন্তু দেশের ব্যাংক খাতে রিটার্ন অন অ্যাসেটও কমে যাচ্ছে। ২০১৫ সালে ছিল ০.৮%, ২০২২ সালের প্রারম্ভে হয়েছে ০.৪%। অথচ, এটির বৈশ্বিক গড় ১.৭৫%।
বর্তমানে দেশে দারিদ্রের হার বেড়ে প্রায় ৫০% হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী গত ৩১ মার্চ বলেছেন, আমাদের সামনে অনেক কিছু করার আছে। কারণ, ৮০% মানুষের ঘরে দু-তিন দিনের বেশি খাবার নেই। সানেম গত ৩ মার্চ বলেছে, সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার এখন শহরে ১২. ৪৭% ও গ্রামে ১২.১০%। ফলে দরিদ্রতা বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে, দেশে ব্যাংকে কোটি পতির আমানতকারীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে! এমনকি করোনাকালেও প্রায় ২০ হাজার বেড়েছে। ওয়েলথ এক্স’-এর প্রতিবেদন মতে, ২০১২-২০১৭ পর্যন্ত অতি ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধির বিচারে বাংলাদেশ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। বার্ষিক বৃদ্ধি হার ১৭.৩%। বিবিএস’র তথ্য অনুযায়ী, দেশে ব্যাংকে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল: ১৯৭২ সালে ৫ জন, ১৯৭৫ সালে ৪৭ জন, ১৯৮০ সালে ৯৮টি, ১৯৯০ সালে ৯৪৩ জন, ১৯৯৬ সালে ২,৫৯৪ জন, ২০০১ সালে ৫,১৬২ জন, ২০০৬ সালে ৮,৮৮৭ জন, ২০০৮ সালে ১৯,১৬৩ জন, ২০২০ সালে ৯৩,৮৯০ জন। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সেটা হয়েছে ১,০১,৯৭৬ জন। তথা ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ব্যাংকে কোটি পতি আমানতকারীর সংখ্যা বেড়েছে ৮২,৮১৩ জন! এসবের অধিকাংশের উপার্জন অবৈধভাবে!উল্লেখ্য যে, এর বাইরেও অনেক কোটিপতি রয়েছে। যা’হোক, বর্তমানে আয় বৈষম্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ‘বৈশ্বিক অসমতা প্রতিবেদন-২০২২’ মতে, ২০২১ সালে বাংলাদেশের মোট জাতীয় আয়ের ৪৪% ছিল শীর্ষ ১০% ধনীর দখলে। তন্মধ্যে শীর্ষ ১% ধনীর আয় ছিল মোট জাতীয় আয়ের ১৬.৩%। আর পিছিয়ে থাকা ৫০% মানুষের অংশ ছিল ১৭.১%। শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী গত ১ এপ্রিল বলেছেন, শুধু স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়নি। দেশে যত উন্নতি হচ্ছে, তত বৈষম্য বাড়ছে। বিশ্ব ক্ষুধা সূচক-২০২১-এ ১১৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৭৬তম। দেশে আঞ্চলিক বৈষম্যও প্রকট!
মাথা পিছু গড় আয় ২,৫৯১ মার্কিন ডলার হয়েছে। কিন্তু মাথা পিছু সরকারি ঋণের পরিমাণ কত তা বলা হয় না। যা’হোক, মাথাপিছু আয় তো গড় হিসাব। প্রকৃতপক্ষে ধনী ও গরিবের মাথা পিছু আয়ের ব্যবধান আকাশ-পাতাল! ফাও’র অন স্টেট অব ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার রিপোর্ট-২০২১ মতে, বাংলাদেশে জনসংখ্যার ৭৩% স্বাস্থ্যকর খাদ্য কিনতে সক্ষম নয় এবং ৩১.৯% মানুষ গুরুতর খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। দ্বিতীয়ত: মাথাপিছু গড় আয় নির্ণয়ে একটা কারসাজি আছে। সেটা হচ্ছে-১৫টি খাতের ওপর ভিত্তি করে ২০০৫-০৬ অর্থবছরকে ভিত্তি বছর ধরে ২০১৩ সালে জিডিপির হিসাব শুরু হয়। এরপর ২০২১ সালে বিবিএস ২০১৫-১৬ অর্থবছরকে ভিত্তি বছর ধরে জিডিপি, প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ, মাথাপিছু আয় গণনা শুরু করে। উপরন্তু নতুন করে আরও ৯টি খাত যুক্ত হয়ে এখন ২৪টি খাতের বাজারমূল্য যোগ করে জিডিপি নির্ণয় করা হচ্ছে। ফলে জিডিপিসহ সব কিছুর আকার বাড়ছে। সর্বোপরি লোকসংখ্যা ১৬ কোটি ধরে হিসাব করা হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত লোক সংখ্যা ১৮ কোটির অধিক। এটা দিয়ে জিডিপিকে ভাগ করলে মাথা পিছু আয় অনেক কমে যাবে। এছাড়া, ২০০৫-০৬ অর্থবছরের ন্যায় জিডিপি হিসাব করা হলেও পরিমাণ কমে যাবে অনেক। সেই সাথে অন্যগুলোও। সর্বোপরি ক্রয়ক্ষমতার হিসাবে মাথাপিছু গড় আয় নির্ণয় করা হলেও অনেক কমে যাবে। এটাই আধুনিক পদ্ধতি। তাই বিশ্বব্যাপীই এই পদ্ধতি এখন অনুসরণ করা হচ্ছে।
দেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হলেও দুর্নীতি বেড়েই চলেছে। টিআই’র ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক-২০২১’ মতে, ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৩তম, যা পূর্ববর্তী বছরে ছিল ১২তম। জিএফআই’র তথ্য মতে, বাংলাদেশ থেকে বছরে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা করে পাচার হচ্ছে দীর্ঘদিন যাবত। মাদকেরও কারবার ও ব্যবহার বেড়েই চলেছে। ফলে যুব সম্প্রদায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা খুবই ভঙ্গুর। গত নভেম্বর প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন মতে, বাংলাদেশের মাত্র ২৬% মানুষ স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা পায়। দ্বিতীয়ত যারা স্বাস্থ্য সেবা পায়, তাদের সে ব্যয়ের বেশিরভাগই নির্বাহ করতে হয় নিজস্ব, সরকারি ব্যয় সামান্য! তাই স্বাস্থ্য ব্যয় মিটাতে গিয়ে বছরে অর্ধ কোটির অধিক মানুষ গরিব হচ্ছে। ল্যানসেটের বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সূচকে ১৯৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৩৩তম।
বিদ্যুৎ প্রাপ্তির দৈনিক গড় নগন্য। কারণ, উৎপাদন ক্ষমতার ৬০% বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসিয়ে রাখতে হয় প্রয়োজনীয় সরবরাহ ব্যবস্থা না থাকায়। তাই বিদ্যুতের ঘাটতি চলছে কয়েক হাজার মেগাওয়াট। এতে নানাবিধ ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। অন্যদিকে, বছরে ৯ হাজার কোটি টাকা করে গচ্চা দিতে হচ্ছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসিয়ে রাখার জন্য। চলতি অর্থবছরে এই গচ্চার পরিমাণ ২০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। নবায়যোগ্য জ্বালানির পরিমাণ মাত্র ৩%। গ্যাসের মজুদ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আশানুরূপ নয়। উপরন্তু করোনাকালে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে অনেক। অনুকূল পরিবেশ না থাকায় বিনিয়োগ হচ্ছে না। ব্যবসা সহজীকরণ বৈশ্বিক সূচকে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৭৭তম! পর্যটন খাতেও তথৈবচ! শিক্ষা ব্যবস্থা এখনো সেকেলেই রয়েছে। মানও সর্বনিম্ন। অথচ, বর্তমান বিশ্ব হচ্ছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক। দেশে কারিগরি শিক্ষার হার ১৪%, যা ধনী দেশগুলোতে প্রায় ৭০%। দেশের শিক্ষা ব্যয় অত্যধিক। গরিবের পক্ষে শিক্ষালাভ দূরহ হয়ে পড়েছে! শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও মানসম্পন্ন নয়। বৈশ্বিক/আঞ্চলিক সূচকে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান তলানিতে! আইটি খাতের উন্নতিও আশানুরূপ নয়। এখনো ৭০% মোবাইল ২-জি ভিত্তিক। ইন্টারনেটের গতি উগান্ডারও নিচে! ধান ও গম বছরে ৬০-৭০ লাখ মেট্রিকটন করে আমদানি করতে হয়। চাল আমদানিতে বিশ্বে বাংলাদেশ তৃতীয়। এছাড়া, অন্যান্য খাদ্যপণ্যের বেশিরভাগ আমদানি করতে হয়। উপরন্তু দেশের খাদ্য পণ্যের ১০%ও মানসম্পন্ন নয়। কৃষি এখনো সেকেলেই রয়েছে। তাই অপচয়, নষ্ট ও উৎপাদন ব্যয় বেশি। প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। ট্রেড গ্যাপ অনেক। দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ! খুন, গুম, দুর্ঘটনা, বিচারাধীন মামলার সংখ্যা, দখল, চাঁদাবাজি, শিশুশ্রম এবং নারী ধর্ষণ-নির্যাতন-বৈষম্য, সব ধরনের দূষণ, বেকারত্ব, যানজট, বাল্য বিবাহ, দলীয়করণ, অদক্ষতা, নদী ভাঙ্গন ব্যাপক! নদী, খাল-বিল ইত্যাদির বেশিরভাগ দখল ও মজে গিয়ে দেশ প্রায় মরুময় হয়েছে। সুশাসনের অভাবেই এসব হয়েছে। সমুদ্র সম্পদের ব্যবহার সামান্য। আবিষ্কৃত বিপুল কয়লা অব্যবহৃত রেখে আমদানিকৃত বিপুল পরিমাণে কয়লা দিয়ে কাজ চলছে।
দেশে গণতন্ত্র, বাক স্বাধীনতা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি ভালো নয়। নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। তাই প্রধান বিরোধী দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। ফলে একতরফা ও যেনতেনভাবে নির্বাচন হচ্ছে। মানুষ নির্বাচন বিমুখ হয়ে পড়ছে। জবাবদিহি নেই কোথাও। আমলাতন্ত্র শক্তিশালী হয়েছে। স্থানীয় সরকারের ভূমিকা নগন্য। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের বৈশ্বিক গণতন্ত্র সূচক-২০২১ মতে, বিশ্বের ১৬৫টি দেশ এবং দুই অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৫, পয়েন্ট ৫.৯৯, হাইব্রিড রেজিম। তাই সৎ, যোগ্য ও মেধাবীরা রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হচ্ছে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংসদ নির্বাচন নেই দীর্ঘদিন যাবত। ফলে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হচ্ছে না! এমতাবস্থায় কাক্সিক্ষত, সার্বিক ও টেকসই উন্নতি সম্ভব নয়।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।