পবিত্র লাইলাতুল বরাত
![img_img-1720167007](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678112525_editorial-inq.jpg)
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
পোশাক শিল্প নানামুখী হুমকির মুখে পড়েছে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে খাতটি খাবি খাচ্ছে। বাণিজ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বিজিএমইএ’র সভাপতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, এই খাতের মালিকদের অহেতুক হয়রানি করা হচ্ছে। গ্যাস দিতে পারছে না সরকার। সিএনজি স্টেশন থেকে গ্যাস নেয়া হলেও সেটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কাস্টমস নানা অজুহাতে পদে পদে হয়রানি করছে। তিনি সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এসব হয়রানি বন্ধ করুন, নাহলে ৬ মাস থেকে ১ বছর সময় দিন। এর মধ্যে দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ করে দেয়া হবে। বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান আরো বলেছেন, কর্পোরেট ট্যাক্স হঠাৎ করে ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের আগে এখাতের কারো সাথে আলোচনা করা হয়নি। তিনি প্রাসঙ্গিক আলোচনায় বলেছেন, একটি ট্রেড লাইসেন্স করতে সিটি কর্পোরেশন ১০ হাজার টাকা নিচ্ছে। পরের বছর নবায়নের সময় হোল্ডিং ট্যাক্স যোগ করে ১২ লাখ টাকা নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেছেন, ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ব্যবসা করতে হচ্ছে। এ জন্য উচ্চ সুদ ও কর্মীদের বেতন দিতে হচ্ছে। বেতন দিতে না পারলে শ্রমিক অসন্তোষ হচ্ছে। কাস্টমস হয়রানির প্রসঙ্গে তিনি সুনির্দিষ্ট করে বলেছেন, কাস্টমস বন্ড কমিশনারকে কোথায় কত টাকা ঘুষ দিতে হয় তা লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এতে সমস্যার কোন সমাধান হয়নি। এভাবে চলতে পারে না। আমরা কারো দয়ায় বেঁচে থাকতে চাই না। এভাবে হয়রানি, প্রতিবন্ধকতা ও বাধা দেয়া হলে এসব টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
পোশাক শিল্প অর্থনীতিতে প্রকৃত বিবেচনায় সোনার ডিম দেয়া হাঁস। বেসরকারি উদ্যোগে বিকশিত। এই শিল্প চরম প্রতিযোগিতার মধ্যেও এখন পর্যন্ত টিকে রয়েছে। প্রথমত এই শিল্পকে এদেশ থেকে সরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক একটি চক্র সক্রিয় রয়েছে। তার উপর রয়েছে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা ও হয়রানি। দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিদেশি ক্রেতারা বহুদিন ধরেই টালবাহানা করছেন। বিভিন্ন শর্ত ও পোশাকের মূল্য কমানোর কথাও বলছেন। নিজস্ব উদ্যোগ ও শ্রমে খাতটিকে টিকিয়ে রাখতে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন এই শিল্পের মালিক-উদ্যোক্তারা। শিল্পের সাথে সরাসরি জড়িত রয়েছে দেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা ও কর্মসংস্থান। দেশের বিপুল সংখ্যক শ্রমিক কাজ করছে এই শিল্পে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেরও অন্যতম বৃহৎ খাত এটি। দীঘদিন ধরে যে অবস্থা চলছে এখন তাতে ভাটা পড়েছে। দৈনিক ইনকিলাবের খবরে বলা হয়েছে, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম চারমাসে তৈরি পোশাক খাতের পণ্য রফতানিতে আয় হয়েছে, ৮৮২ কোটি ১৪ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার যা এসময়ের রফতানি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ কম। অন্যদিকে বিজিএমইএ সভাপতি বলেছেন, চলমান অবস্থা বহাল থাকলে ২০২১ সালের মধ্যে এখাত থেকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে না। যদিও বাণিজ্যমন্ত্রী বিজিএমইএ’র সভাপতির বক্তব্যের জবাবে বলেছেন, পোশাক খাতের মালিকদের দুঃখের কথা শুনতে চাই। এখাতের সুখ-দুঃখের ভাগীদার হতে চায় সরকার। মন্ত্রী তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে বিশ্বের রোল মডেল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এ খাতটি যে দিন দিন অবনমনের দিকে এ বিষয়টি সরকার কতটা ভাবছে, তা পরিষ্কার নয়। গ্যাস সরবরাহ না থাকা খুবই দুঃখজনক।
কাস্টমস ভোগান্তির ব্যাপারে বিজিএমইএ সভাপতি যেভাবে সুনির্দিষ্ট করে বলেছেন তা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এভাবে ঘুষ খাওয়ার অলিখিত বিধিবদ্ধ ব্যবস্থা কি করে টিকে রয়েছে তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। বাংলাদেশে বিনিয়োগ অন্তরায় হিসেবে যতগুলো বিষয়কে বিবেচনায় নেয়া হয় তার মধ্যে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা অন্যতম। এটি ব্যবসার ক্ষেত্রে বড় ধরনের অন্তরায়। শিল্পের সাথে যেহেতু কর্মসংস্থানের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে সেকারণে বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া জরুরি। দেশের পোশাক শিল্পের রক্ষা এবং এর উত্তরোত্তর বিকাশে সবধরনের প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করা অপরিহার্য। এই শিল্প যাতে পূর্ণমাত্রায় বিকশিত হতে পারে তার জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ নেয়ার ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সচেতন হতে হবে। শিল্পের বিকাশে কোথায় কি সমস্যা রয়েছে তা সুনির্দিষ্ট করে শিল্প সংশ্লিষ্টদের সাথে বসে সমাধানে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার উপর অধিক নজর দিতে হবে। পাশাপাশি শিল্পবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে আন্তরিক হতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।