মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
২০১৮ সালে যখন পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা ইমরান খানকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আসীন হতে সাহায্য করেছিল, তখন পাকিস্তানীরা এই প্রাক্তন ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নকে একজন আদর্শ নেতা হিসেবে গ্রহণ করেছিল। ইমরান একজন ক্রিকেট হিরো, সুদর্শন এবং আধুনিক। সেইসাথে তিনি একজন অমায়িক ও ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিখাদ দেশপ্রেমের একটি ধারা গড়ে তুলেছেন, যা একটি সমাবেশে জাতীয়তাবাদের আগুন ধরিয়ে দিতে পারে। ইমরানের দল পাকিস্তানের একপেষে দুুর্নীতিগ্রস্ত পুরানো রাজনৈতিক বংশ থেকে ভিন্ন।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, পাক সেনারা ঠিক যা খুঁজছিল, ইমরানের মধ্যে তাই পেয়ে গিয়েছিল: প্রদর্শনীর জন্য একজন যুক্তিসঙ্গত অথচ সহজবশ্য আজ্ঞাবাহক, যাকে পাশ কাটিয়ে সেনাবাহিনী যে কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে, কিন্তু ভুল-চুক হলে সমস্ত দায় তার ঘাড়ে চাপাবে। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী যা চেয়েছিল, ইমরান খান তা খুশির সাথেই করেছিলেন, তা চীন এবং ধনী আরব রাষ্ট্রগুলোর সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা হোক, বা পশ্চিমাদের সাথে কৌশলগত খেলা হোক। কারণ পাকিস্তানী সেনাবাহিনী গোপনে আফগানিস্তানে তালেবানদের ক্ষমতায় ফিরে আসতে সহায়তা করেছিল।
তবুও ইমরান খান গত শরতে দেশের সবচেয়ে সিনিয়র জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়াকে গোয়েন্দা পরিষেবার দায়িত্বে একজন নতুন ব্যক্তিকে নিয়োগ করা থেকে আটকানোর চেষ্টা করেন। এরফলে, যেসব রাজনৈতিক রাঘব-বোয়ালরা ইমরানকে ক্ষমতাসীন হতে সাহায্য করেছিল, রাতারাতি তারাই আবার হঠাৎ করে তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে এবং শরীফ পরিবারের প্রতি আনুগত্য দেখাতে শুরু করে। এবং ১০ এপ্রিল একটি অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ইমরান খানকে বহিষ্কার করা হয়।
পাকিস্তানের জেনারেলরা ইমরানের পশ্চিমা বিরোধী মনোভাব থেকে এবং চীনের ছায়া থেকে পাকিস্তানকে সরিয়ে নিতে আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু তারা যেটাকে সফল বলে মনে করেন সেটা আসলে পরাজয়। এটি দেখায় যে, তারা দেশটিতে যে শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছেন, তা সহজাতভাবে অস্থিতিশীল। একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়া এবং সেনাপ্রধানের দ্বারা ‘বস’ বলে সম্ভোধিত হওয়ার পরেও দেশ কীভাবে পরিচালিত হয়, সে সম্পর্কে কিছু বলার এখতিয়ার নেই, এটা ভাবতে শুরু না করাটা সত্যিই বড় কঠিন।
পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নাওয়াজ শরীফও তার সত্যিকারের অবস্থানের উপরে ধারণা পাওয়ার আগে দেশটির জেনারেলদের পুতুল হিসাবে রাজনীতিতে শুরু করেছিলেন। এখন, নতুন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের কতটা স্বাধীনতা আছে, বা তিনিও যদি আজ্ঞার বাইরে পা ফেলেন, তাহলে জেনারেলরা পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাকে বেছে নেবেন, তা স্পষ্ট নয়।
এদিকে, ইমরান খানের জনসমর্থন কমেনি। তার ক্ষমতা হারানোর প্রতিবাদে প্রচুর ক্ষুব্ধ মানুষ তার সাথে একটি সমাবেশে অংশ নিয়েছে। এছাড়া, পাকিস্তানের অর্থনীতি এখনো চরম মন্দায় রয়ে গেছে এবং নির্বাচন ২০২৩ সালে সঙ্ঘটিত হতে হবে। অতএব, আরো অস্থিতিশীলতা অনিবার্য।
পাকিস্তান চালানো সহজ নয়, সেনাবাহিনী ভালো করেই জানে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণের পরিণতি মোটেই ভালো হয়নি। তাই তারা পর্দার আড়াল থেকে রাজনীতি পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু এ ব্যবস্থাটিও ব্যর্থ ধ্বংস হতে চলেছে। সেনাবাহিনীর অপ্রতিরোধ্য হস্তক্ষেপ মানেই হ’ল: রাজনীতি একটি প্রহসনে পরিণত হয়েছে, পাকিস্তানে সরকারের নিজস্ব নীতি প্রণয়নের কোনো ক্ষমতা নেই এবং রাজনৈতিক বক্তৃতাগুলিকে ফাঁকা বুলি হিসেবে বুঝে নেয়া যাচ্ছে। জেনারেলরা বিশ্বাস করতেই পারেন যে, তারা রাজনীতির নোংরা ব্যবসাতে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। কিন্তু আসলে তারাই মূল নাশকতাকারী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।