পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ইস্টার্ণ ব্যাংক লিমিটেডের এটিএম বুথ থেকে অভিনব কায়দায় জালিয়াতির মাধ্যমে গ্রাহকদের টাকা তুলে নেয়ার ঘটনা আবারও ঘটেছে। গত শুক্রবার একদিনেই ২১ জন গ্রাহকের টাকা তুলে নিয়েছে জালিয়াত চক্র। এর আগে ২০১৩ সালে একই ঘটনা ঘটে। গোয়েন্দা সূত্র উদ্ধৃত করে দৈনিক ইনকিলাবের খবরে বলা হয়েছে, এটিএম বুথের সিপিইউ থেকে পেনড্রাইভের মাধ্যমে কাস্টমার তথ্য চুরি করে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ক্যামেরার মাধ্যমে কাস্টমারের পাসওয়ার্ড-পিনকোড চুরি, কার্ড রিডার অ্যান্ড রাইটারের মাধ্যমে ল্যাপটপের সহায়তায় সংগৃহীত তথ্য ব্যাংকিং কার্ডের ম্যাগনেটিক স্ট্রিপে ধারন করার মাধ্যমে নতুন কার্ড তৈরি করে এই জালিয়াতি কাজ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তৈরি করা ক্লোন কার্ড ও গোপন ক্যামেরায় ধারনকৃত পাসওয়ার্ড দিয়ে টাকা উত্তোলন করে জালিয়াত চক্র। ইবিএ-এর আলোচ্য ঘটনা সাইবার সন্ত্রাস, নাকি প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে ঘটেছে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক এটিকে ‘স্কিমিং জালিয়াতি’ বলে মনে করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর জানিয়েছেন, গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা চুরির ঘটনা কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদন্ত করছে। তিনি বলেছেন, তদন্তের মাধ্যমে যদি ব্যাংকের নিরাপত্তাজনিত কোন দুর্বলতা পাওয়া যায় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। একইসঙ্গে কোন ব্যাংকের নিরাপত্তাজনিত ঘাটতি খুঁজে পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিশেজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তি নির্ভর ব্যাংকিং সেবায় গ্রাহকের ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে। এক্ষেত্রে অবকাঠামো কার্ড ও তথ্যভা-ার নিরাপত্তায় উপযুক্ত প্রযুক্তির অনুপস্থিতির পাশাপাশি রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পর্যাপ্ত প্রযুক্তি জ্ঞানের অভাব। তারা মনে করছেন, এ বিষয়ে ব্যাংকের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা পরিষদও সচেতন নয়।
ইস্টার্ণ ব্যংকের এটিএম বুথ থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে গ্রাহকের টাকা তুলে নেয়ার বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। যারা টাকা খুইয়েছেন তাদের অনেকেই ব্যাংক কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যেভাবে জালিয়াত চক্র কাজ করছে তাতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের চরম গাফিলতির বিষয়টিই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এতে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজস থাকা অসম্ভব কিছু নয়। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, একই দিন ব্যাংকের বুথ থেকে ২১ জন গ্রাহকের গচ্ছিত টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে তুলে নেয়া হলেও ব্যাংক কর্মকর্তারা এ জালিয়াতির ঘটনা টের পায়নি। এমনকি এর আগে একই ব্যাংকে একই ঘটনা ঘটার পরও কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি এবং ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর ব্যবস্থাও নেয়নি। এ থেকে প্রতীয়মান হওয়া অস্বাভাবিক নয়, ব্যাংকটি গ্রাহকদের টাকা নিয়ে এক ধরনের ছিনিমিনি খেলছে। একথাও ঠিক যে, মোবাইল ব্যাংকিং, এটিএম বুথ পদ্ধতি সময় এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে অনেক সহজ করেছে। তার অর্থ এই নয় যে এর নিরাপত্তার কোন সুদৃঢ় ব্যবস্থা থাকবে না। দেখা গেছে প্রায় প্রতিটি জালিয়াতির সাথেই কোন না কোনভাবে প্রভাবশালীদের সম্পর্ক থাকে। ব্যাংক ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণসহ প্রায় সব ধরনের অপরাধের সাথেই বিশেষ মহলের সম্পর্ক থাকার কারণে পরিস্থিতির কোন উন্নতি হচ্ছে না। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের দায় এড়াবার কোন সুযোগ নেই।
দেশে অপরাধের ধরন বদলেছে। অপরাধ সংগঠনে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। ছিনতাইকারিরা মুক্তিপণ আদায়ে মোবাইল ব্যংকিংকে কাজে লাগাচ্ছে। এসব অভিযোগ নিয়ে কথা বলতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অনীহা প্রকাশ করে। ইস্টার্ন ব্যাংকের এটিএম বুথে যে জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে, তা গভীরভাবে তদন্ত করতে হবে। বাংলাদেশে ব্যাংকিং কার্ডের ব্যবহারের খুব বেশি নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, বিভিন্ন ব্যাংকের গ্রাহকদের নামে ৯০ লাখের বেশি ব্যাংক কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮৫ লাখ ডেভিট আর ৫ লাখ ক্রেডিট কার্ড। দেশজুড়ে বিভিন্ন ব্যাংকের প্রায় ৭ হাজার এটিএম বুথ রয়েছে। এহেন বাস্তবতায় যদি ব্যাংক কার্ডের নিরাপত্তা বিধান করা না যায় অথবা নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই এ ধরনের প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। একথা সবারই জানা, এক ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার পাল্টা প্রযুক্তি দিয়ে মোকাবেলা করা যায়। তাই প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির আপগ্রেড করতে হয়। ধরন বদলাতে হয়। ইস্টার্ণ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যদি এ কাজটি করতো তা হলে জালিয়াতির ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতনা। এ ক্ষেত্রে তার চরম উদাসীনতা রয়েছে। এর সাথে ব্যাংকের কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জড়িত থাকার বিষয়টিও উড়িয়ে দেয়া যায় না। কাজেই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। গ্রাহক স্বার্থ নিশ্চিত করতে হবে যে কোনো মূল্যে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।