Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রমজানে বাগেরহাটে তীব্র পানির সংকট, চলছে হাহাকার

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৯ এপ্রিল, ২০২২, ১১:৪৩ এএম

বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী গ্রাম জিলবুনিয়া। ইটের সোলিং দেওয়া রাস্তার ধারে আবু গাজীর বাড়িতে একটি পিএসএফ (পন্ড স্যান্ড ফিল্টার) রয়েছে। সকাল থেকেই এই পিএসএফের কাছে দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। কারণ এই একটি পিএসএফ আংশিক ভালো আছে। এখানে ৫০ কলস পানি ঢালতে হয় পাঁচ কলস বিশুদ্ধ পানি তুলতে।

পিএসএফের টিউবওয়েলের মাথা নাই, পাশের পুকুর থেকে ৫০ কলস পানি ঢাইল্ল্যা দিয়া এরপর ৫ কলস পানি নেওয়া লাগে। এই কষ্টের চেয়ে মরণ ভালো। গত বুধবার সকালে পিএসএফের সামনে দাঁড়িয়ে এভাবেই কষ্টের কথা জানাচ্ছিলেন শরণখোলা উপজেলার দক্ষিণ জিলবুনিয়া গ্রামের খাদিজা বেগম।
নাজমা বেগম নামে অপর এক নারী বলেন, সাপ্লাই নেই, টিউবওয়েল নেই, ট্যাংক নেই, কিছুই নেই। শুধু আছে পানির জন্য হাহাকার। এক কলস পানির জন্য রোজা রেখে আধা কিলোমিটার দূর থেকে এসে দাঁড়িয়ে আছি তিন ঘণ্টা। বর্ষার পানি সারা বছর ধরে রেখে খাওয়ার জন্য সরকারের কাছে একটি বড় ট্যাংকের দাবি জানান তিনি।

পার্শ্ববর্তী রায়েন্দা গ্রামের ফরিদ হোসেন বলেন, আমাদের এলাকায় কোনো টিউবওয়েল বসে না। পুকুর ও বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু প্রচণ্ড গরমের কারণে পুকুরের পানি শুকিয়ে গেছে। আশপাশের খালে লবণাক্ত পানি। বাধ্য হয়ে লবণ পানিতে গোসল, রান্না ও খাওয়ার কাজে ব্যবহার করতে হয়। এই পানি খেয়ে মাঝে মাঝে পেটে ব্যথা ও অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমরা খুব সমস্যায় আছি।
একই চিত্র দেখা যায় সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের রামপাল, মোংলা, মোরেলগঞ্জ ও কচুয়া উপজেলায়। শুষ্ক মৌসুমে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। এক দিকে উপজেলাগুলোতে গভীর ও অগভীর নলকূপ বসে না, অপরদিকে পিএসএফগুলো নষ্ট ও শুষ্ক মৌসুমে পুকুরের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় দূষিত পানি পান করে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন কয়েক লাখ মানুষ।

মোরেলগঞ্জ উপজেলার চালিতাবুনিয়া গ্রামের মোতালেব সরদার বলেন, বিভিন্ন সময় বেসরকারি এবং সরকারিভাবে সুপেয় পানির জন্য পিএসএফ তৈরি করে দেয়। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে পুকুরে পানি থাকে না বিধায় পিএসএফগুলো কোনো কাজে আসে না। আমরা সরকারের কাছে প্রতি বাড়িতে একটি করে ট্যাংকের দাবি জানাই।

চার মাইল হেঁটে পানি নিতে আসেন মোংলা উপজেলার চাঁদপাই ইউনিয়নের কানাইনগর গ্রামের শিউলী বেগম। যেতে-আসতে এক ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিদিন রান্না করতে ও খেতে চার কলস পানি লাগে। সকালে দুই বার পানি আনতে যাই। বিকেলে দুই বার যাই। সারা দিনে পানির জন্য চার ঘণ্টা সময় যায়, আমাদের কষ্টের কোনো শেষ নেই।

কচুয়া উপজেলার বারুইখালী গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, কয়েক দিন ধরেই তীব্র পানির সংকটে ভুগছি আমরা। দূর-দূরান্তের পুকুর থেকে অনেক কষ্ট করে খাবার পানি আনতে হয়। এই অবস্থায় শুষ্ক মৌসুমে বিশুদ্ধ পানি সংরক্ষণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।
শরণখোলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিলন বলেন, আমাদের উপজেলার চারটি ইউনিয়নে লবনাক্ততার কারণে অগভীর নলকূপ স্থাপন হয় না। দেড় লক্ষাধিক মানুষ পুকুর ও বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করে তৃষ্ণা মেটায়। কিন্তু এবার একদিকে প্রচণ্ড গরম, অন্যদিকে বৃষ্টি না হওয়ায় পানির উৎসগুলোতে কোনো পানি নেই। ফলে মানুষের মাঝে খাবার পানির জন্য হাহাকার চলছে। পানি সংকট নিরসনে নতুন পরিকল্পনা, মজা পুকুর পুনঃখনন, পিএসএফগুলো সংস্কার করে ব্যবহার উপযোগী এবং পরিবার ভিত্তিক ট্যাংক সরবরাহের দাবি জানান তিনি।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী জয়ন্ত মল্লিক বলেন, বাগেরহাটের উপকূলীয় উপজেলাগুলোতে তীব্র পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এই সংকট নিরসনে পিএসএফ সংস্কার, পুকুর খননসহ আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মোবাইল ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে আমরা মানুষের সুপেয় পানির চাহিদা নিশ্চিত করে থাকি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ