পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত, অনাবাসযোগ্য ও অসভ্য নগরী হিসেবে ঢাকার দুর্নাম পুরনো। এই দুর্নাম ঘুচানো দূরে থাক, দিন দিন পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। নগরবিদরা এখন ঢাকাকে চিহ্নিত করছেন ‘ক্যানসার রোগী’ হিসেবে। যে রোগী ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে কোনো পরিকল্পিত ও সঠিক পদক্ষেপ না নেয়ার কারণে রাজধানী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বোঝা যায়, ঢাকার কোনো অভিভাবক নেই। থাকলে নিশ্চয়ই রোগ উপশমের উদ্যোগ নেয়া হতো। নগরবিদরা উপশমের নানা ব্যবস্থাপত্র প্রতিনিয়ত দিলেও তা নগর কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করছে না। তারা নিজের মতো করেই ব্যবস্থা নিচ্ছে। এতে রোগ উপশমের পরিবর্তে বেড়ে চলেছে। ঢাকার বায়ু ও পরিবেশ দূষণ নিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। গত সপ্তাহে প্রকাশিত জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শব্দদূষণেও ঢাকা বিশ্বের শীর্ষে। বিশ্বের ৬১টি জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ শহরের মধ্যে শব্দদূষণে ঢাকা শীর্ষে রয়েছে। এটা রাজধানীর নতুন একটি উপসর্গ। নগরবিদরা ঢাকাকে চিহ্নিত করছেন, ‘শব্দবোমা’ হিসেবে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, আবাসিক এলাকায় শব্দদূষণের সহনীয় মাত্রা ৫৫ ডেসিবল, বাণিজ্যিক এলাকায় ৭০ ডেসিবল। ঢাকায় সার্বিকভাবে শব্দদূষণের মাত্রা ১১৯ ডেসিবল। তাহলে দেখা যাচ্ছে, বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, পরিবেশদূষণ, যানজটের সাথে নতুন রোগ হিসেবে যুক্ত হয়েছে শব্দদূষণ। এতে ঢাকাবাসী ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডায়বেটিস, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, বধির হওয়াসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বোমার আঘাতে যেমন মানুষের নানা ধরনের ক্ষতি হয়, তেমনি শব্দদূষণের কারণে মানসিক ও শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। ফলে শুধু ঢাকা নগর অসুস্থ হচ্ছে না, দেশের মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
দুই.
ঢাকার বাতাস এখন বিষাক্ত, এটা নতুন করে বলার কিছু নেই। নগরবাসী প্রতি নিঃশ্বাসে এই বিষাক্ত বাতাস গ্রহণ করছে। আবার নিঃশ্বাসের সাথে বিষাক্ত বাতাসও ছাড়ছে। সাধারণত মানুষ বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে, কার্বন ডাই অক্সাইড ছাড়ে। এই কার্বন ডাই অক্সাইড বৃক্ষরাজি গ্রহণ করে অক্সিজেন নিঃসরণের মাধ্যমে বাতাসকে সজীব ও নির্মল রাখে। এটি একটি চক্র বা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। দেখা যাচ্ছে, প্রকৃতির বাতাস এখন এতটাই দূষিত যে, এতে অক্সিজেনের আধিক্য দূরে থাক, কার্বন ডাই অক্সাইড, মনো অক্সাইড, শিষা, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়ামের মতো বিষাক্ত উপাদান বাতাসের অক্সিজেন শুঁষে নিচ্ছে। এসব উপাদানে বাতাস ভারি ও ঘন হয়ে গেছে। এই বাতাস নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহণ করে নগরবাসী ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সুস্থ-সবল মানুষ কর্মক্ষমতা হারাচ্ছে। এই ক্ষতির পরিমাপ করা সম্ভব নয়। দূষণ শুধু রাজধানীতেই নয়, সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আমরা একটি অসুস্থ জাতিতে পরিণত হচ্ছি। চিকিৎসা করাতে গিয়ে অসংখ্য পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। এসব বিষয় সরকার আমলে নিচ্ছে না। আমলে যে নেয় না, তা দূষণ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়া থেকেই বোঝা যায়। সরকার ব্যস্ত স্থাপত্যগত উন্নয়ন নিয়ে। উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে বলছে, আমরা উন্নতির রোল মডেল হয়ে গেছি। এটা দেখছে না, ভয়াবহ দূষণের কারণে মানুষ যে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে গিয়ে দরিদ্র হয়ে পড়ছে। অর্থনীতিতে ক্ষত সৃষ্টি হচ্ছে। গত সপ্তাহে জাতীয় সংসদে এমপিরা রাজধানীর দূষণ নিয়ে কথা বলেছেন। তবে এতে কোনো কাজ হবে কিনা কিংবা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে কিনা, তার নিশ্চয়তা নেই। ঢাকার পরিবেশ মন্ত্রী-এমপিসহ কারো জন্যই সুস্থ্যভাবে বসবাসের উপযোগী নয়। একে তো বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ঘনবসতিপূর্ণ শহর, তার ওপর অনাবাসযোগ্য। প্রতিদিনই হু হু করে বাড়ছে এর জনসংখ্যা। সরকারি হিসেবে ঢাকায় বসবাস করে প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখের বেশি মানুষ। বেসরকারি হিসেবে আরও বেশি। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের দিকে এ জনসংখ্যা দাঁড়াবে আড়াই কোটি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঢাকা নগরীর প্রতি বর্গকিলোমিটারে সাড়ে চার হাজারের বেশি মানুষ বসবাস করে। বিশ্বে এমন ঘন বসতিপূর্ণ শহর আর একটিও নেই। একটি আদর্শ রাজধানীর সুযোগ-সুবিধা কেমন, নগরবাসীর তা জানা নেই। সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার দায়িত্বে নিয়োজিত সিটি করপোরেশনসহ যেসব সেবামূলক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলো পরিচালনার জন্য নগরবাসী ট্যাক্স দিলেও, তারা যথাযথ সেবা পাচ্ছে না। সেবা দূরে থাক, মানুষ যে বুকভরে নিঃশ্বাস নেবে, এ ব্যবস্থাটুকু করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই ঢাকার পরিবেশদূষণ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় পরিসংখ্যান প্রকাশিত হচ্ছে। পরিসংখ্যানে উঠে আসছে, পৃথিবীর দুষিত নগরীর শীর্ষে ঢাকা। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু কমেছে ৫ বছর ৪ মাস। আর ঢাকাবাসীর কমেছে ৭ বছর ৭ মাস। প্রতি বছর বায়ুদূষণে মারা যায়, ১ লাখ ২৩ হাজার মানুষ। এ চিত্র থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, কি এক বিষাক্ত ও ভয়াবহ পরিবেশে মানুষ বসবাস করছে। যে বাতাস মানুষের বেঁচে থাকার অন্যতম উপাদান, সেই বাতাসই মানুষের মৃত্যু ও দুরারোগ্য ব্যাধির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা ক্যান্সার, হৃদরোগ, শ্বাসকষ্টের মাতো রোগে আক্রান্ত, তাদের পরিবার চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন পরিবারটির কি অবস্থা হয়, তা শুধু তারাই জানে। শুধু বায়ুদূষণ, পানিদূষণ নয়, শব্দদূষণও প্রকট আকার ধারণ করেছে। সামগ্রিক পরিবেশ দূষণ এতটাই ভয়াবহ যে, এখানে সুস্থভাবে বসবাসের সুযোগ নেই। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার দায়িত্ব যে ওয়াসার, সে তা নিশ্চিত করতে পারেছে না। প্রতিষ্ঠানটির সরবরাহকৃত পানি ময়লা-আবর্জনা, ঘোলা ও দুর্গন্ধযুক্ত। এ পানি পান করা দূরে থাক ঠিকমতো রান্না-বান্না, কাপড়-চোপড় ধোয়া ও গোসল করা মুশকিল। ঢাকা শহরের কতভাগ মানুষ ওয়াসার সরবরাহকৃত পানি পান করে, তার পরিসংখ্যান আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এই দূষিত পানিই ওয়াসা বেশ চড়া দামে নগরবাসীর কাছে বিক্রি করছে। গোপনে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। অথচ আমাদের মতো অনেক দেশেই সরকারিভাবে যে পানি সরবরাহ করা হয়, তা নিঃশংসয়ে পান করে। উন্নত বিশ্বের নাগরিকরা সরাসরি ট্যাপের পানি পান করে। পরিতাপের বিষয়, মিষ্টি পানির অফুরন্ত ভাণ্ডারের দেশ হওয়া সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান নাগরিকদের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। ওয়াসার কাজ শুধু বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করাই নয়, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাও ঠিক রাখা। ঢাকার ড্রেনেজ সিস্টেমের কী করুণদশা তা বোধকরি নতুন করে বলার কিছু নেই। সামান্য বৃষ্টিতেই বেশিরভাগ সড়কে হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানি জমে যায়। রাজধানীর যে চিরায়ত যানজট, এ জট তীব্র আকার ধারণ করে বৃষ্টির সময়। রাস্তায় জমে থাকা পানি দিয়ে যানবাহন চলতে পারে না। বলা হয়, যানজটই ঢাকাকে অচল ও স্থবির একটি শহরে পরিণত করেছে। শুধু যানজটে আটকা পড়ে ঢাকা শহরে প্রতিদিন মানুষের প্রায় ৮০ লাখ শ্রমঘন্টা নষ্ট হচ্ছে। এই শ্রমঘন্টার মূল্য গড়ে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি। আমাদের মতো উন্নয়নশীল একটি দেশে যদি শুধু যানজটের কারণে এই বিপুল আর্থিক লোকসান গুণতে হয়, তবে উন্নয়নের চাকাটি সচল থাকবে কিভাবে? যদি এ অর্থ ক্ষতি না হতো, তাহলে দেশের অর্থনীতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াতোÑএ চিন্তাটি কেউ করছে বলে মনে হয় না। সরকারের নীতি-নির্ধারকদেরও যেন কোনো মাথাব্যাথা নেই। যানজটে যে শুধু আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে তা নয়, মানুষের কাজকর্মও স্থবির করে দিচ্ছে, অসুস্থ করে দিচ্ছে। যে কাজ এক ঘন্টায় শেষ হওয়ার কথা, সে কাজ করতে চার-পাঁচ ঘন্টা, এমনকি দিনও চলে যায়। এতে কর্মজীবী একজন মানুষের যে মানসিক অশান্তি ও অস্থিরতা সৃষ্টি হয়, এর দায় কেউই নেয় না। এমন চিত্র দৃশ্য কোনো দেশের রাজধানীতে দেখা যায় কিনা, জানা নেই। ঢাকায় এ চিত্র নিত্যদিনের। যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে ঢাকা শহরের রাস্তা-ঘাটের স্বল্পতার কথা বলা হয়। একটি আদর্শ নগরীতে সড়ক পথের জন্য শতকরা ২৫ ভাগ জায়গা থাকতে হয়। ঢাকায় আছে মাত্র ৭ ভাগ। এই সড়ক দিয়েই প্রতিদিন লাখ লাখ যানবাহন যাতায়াত করে। এই সড়কেরও একটি বিরাট অংশ বেদখল হয়ে আছে। পরিস্থিতি যদি এই হয়, তবে যানজট থেকে কোনো দিনই মুক্তি মিলবে না।
তিন.
পৃথিবীর প্রতিটি দেশ তা ধনী কিংবা দরিদ্র, রাজধানীকে পরিপাটি রাখতে চেষ্টার ত্রুটি করে না। রাজধানীকে সুন্দর করে বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করে থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধান থেকে শুরু করে নামী-দামী ব্যক্তিবর্গ ও পর্যটকরা রাজধানীতেই আসেন। রাজধানীর চেহারা দেখে তারা দেশটির উন্নতি, অগ্রগতি, সংস্কৃতি ও সভ্যতা সম্পর্কে জানতে পারেন। ঢাকার আয়তনের ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের রাজধানী যেভাবে পরিপাটি ও নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে সাজানো, হয়েছে তা উদাহরণ হয়ে রয়েছে। কয়েক দশক আগেও আমাদের ঢাকার এমন দুরবস্থা ছিল না। অপরিকল্পিত সম্প্রসারণ এবং নগরীর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে আজ একটি পরিত্যক্ত নগরীতে পরিণত হয়েছে। তারপরও আমরা শত কষ্ট সত্ত্বেও এ শহরেই থাকি। এটাই অনেকের কাছে বিদেশ। এখানে এলে মনে করে বিদেশ এসেছি। বিদেশ মানে প্রতিষ্ঠিত হওয়া। জীবনমানের উন্নয়ন। অথচ ঢাকা এমন এক নগরী, যেখানে জীবনযাপন খুবই কঠিন। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা নেই। যে যেভাবে পারছে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিচ্ছে। অপরিকল্পিত সম্প্রসারণের কারণে এটি প্রায় টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, সময়ের সাথে সাথে এবং নাগরিক প্রয়োজনে নগরের পরিধি বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক। তবে তা মূল নগরকে ঠিক রেখে সুষম পরিকল্পনা এবং নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে বাড়াতে হয়। ঢাকার সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না। মূল শহরের কাঠামো ভেঙ্গে যে যেভাবে পেরেছে, সেভাবে সম্প্রসারণ করছে। যানজট নিরসনের জন্য ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। এখন চলছে মেট্রোরেল ও বাস র্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) কাজ। এ কাজ করতে প্রায় এক দশক লেগে যাচ্ছে। এ কাজ করতে গিয়ে সড়ক যেমন কমেছে তেমনি ধুলোবালিতে পরিবেশের মারাত্মক দূষণ করে চলেছে। বছরের পর বছর ধরে এ কাজ চলায় রাজধানী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। অথচ পাকিস্তানে এক থেকে আড়াই বছরের মধ্যে পরপর ৩টি বিআরটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। সবচেয়ে বড় কথা মেট্রোরেল ও বিআরটি চালু হলেও রাজধানীর যানজট একেবারে কমে যাবে, এমন মনে করছেন না বিশেষজ্ঞরা। ফ্লাইওভার করেও যানজটের সমাধান করা যায়নি। বরং যানজট এখন ফ্লাইওভারের উপর উঠে গেছে। ফ্লাইওভার যে যানজট নিরসন করতে পারে না, বুঝতে পেরে অনেক দেশ তা ভেঙ্গে ফেলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ষাটের দশকের এ ধারণা রাজধানীতে গড়ে মারাত্মক ক্ষতি করা হয়েছে। মেট্রোরেলের মাধ্যমেও যে যানজট কমবে এমন নিশ্চয়তা নেই। রাজধানীতে যদি আরও ৫টি মেট্রোরেল চালু করা হয়, তাহলেও যানজট কমবে না। এই পাঁচটির মাধ্যমে পুরো পরিবহন ব্যবস্থার মাত্র ১৭ শতাংশ চাপ নিতে পারবে। যানজট কমানোর জন্য গণপরিবহনের ওপরই জোর দিতে হবে। গণপরিবহনই টেকসই সমাধান দিতে পারবে। ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমাতে হবে। আমরা প্রায়ই সিঙ্গাপুরের সাথে নিজেদের তুলনা করি। অথচ সেখানে প্রত্যেক নাগরিকের একাধিক গাড়ি কেনার সামর্থ্য থাকলেও সবাই তা কিনতে পারে না। এক পরিবারের কাছে একটির বেশি গাড়ি নেই। এর জন্য রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ বিশাল অংকের অর্থ ও ট্যাক্স খরচ করতে হয়। এটা করা হয়েছে, যাতে মানুষ গণপরিবহন বেশি ব্যবহার করে। সেখানে গণপরিবহনও আধুনিকভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। আমাদের দেশে ঘটছে উল্টো ঘটনা। এখানে সামর্থ্যবান পরিবারের একাধিক গাড়ি রয়েছে। গণপরিবহনের যাচ্ছেতাই অবস্থা। ফলে যতই মেট্রোরেল কিংবা বিআরটি নির্মাণ করা হোক না কেন, তাতে যানজট কমবে না। কারণ মেট্রোরেল তার নির্দিষ্ট লাইনের বাইরে যেতে পারবে না। অন্যদিকে গণপরিবহন একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে পারে। ফলে যানজট কমাতে হলে গণপরিবহন বাড়ানো এবং আধুনিকীকরণের ওপর জোর দিতে হবে।
চার.
এটা এখন স্পষ্ট, রাজধানীর দূষণ ও অপরিকল্পিত সম্প্রসারণ দায়িত্বরত কোনো কর্তৃপক্ষের পক্ষে সম্ভব নয়। এটা ঠেকাতে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে। একটি দেশের রাজধানীর নির্দিষ্ট আয়তন থাকা দরকার। ঢাকারও নির্দিষ্ট আয়তনে সীমাবদ্ধ করে সঠিক ও কার্যকর পরিকল্পনা অনুযায়ী সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। নির্দিষ্ট এই আয়তনকে কেন্দ্র করে অন্যান্য এলাকা স্বতন্ত্র ও পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে হবে। এক সময় রাজধানীর আশপাশে স্যাটেলাইট শহর গড়ে তোলার কথা শোনা গিয়েছিল। এখন আর শোনা যায় না। সবচেয়ে বড় বিষয়, ঢাকাকে বাসযোগ্য ও আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তুলতে হলে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। প্রশাসনিক কোনো ছোটো-খাটো কাজে যেন দেশের আনাচ-কানাচ থেকে মানুষকে রাজধানীতে ছুটে আসতে না হয়, এ ব্যবস্থা করতে হবে। রাজধানীর সুবিধা বিভিন্ন জেলা শহরে গড়ে তুলতে হবে। যদি শিল্পকারখানা ও বিভিন্ন প্রশাসনিক কেন্দ্রগুলো ঢাকার বাইরে স্থানান্তর করা হয়, তাহলে ঢাকাকে কিছুটা হলেও বাসযোগ্য করে তোলা সম্ভব।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।