পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের নেপথ্য কারণ এখন অনেকটাই পরিষ্কার। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের আভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং একে অপরকে ঘায়েল করার অপরাজনীতিই যে হিন্দুদের বাড়ি-ঘরে আক্রমণের মূল কারণ তা পত্র-পত্রিকার বিভিন্ন প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে। গতকাল একটি দৈনিকে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর সাথে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দ্বন্দ্বের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ঘটনার শুরু থেকেই ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ এবং ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের তিন নেতাকে বহিষ্কার করা হলেও পুরো ঘটনার দায় বিএনপি-জামায়াতের উপর চাপানো হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিরোধীদলকে নির্যাতন করতেই সরকার ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। দলটির নেতৃবৃন্দ বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন। পরিস্থিতি এখন এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, পুরো বিষয়টি পারস্পরিক দোষারোপের অপরাজনীতিতে রূপ দেয়া হয়েছে। তবে পত্র-পত্রিকায় যেসব অনুসন্ধানী ও সরেজমিন প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে, তাতে এটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, ঘটনার কারণ ও মূল হোতা ক্ষমতাসীন দলেরই লোকজন। প্রধানমন্ত্রীও এ ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
নাসিরনগরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে ব্লেম গেম চলছে, তা অনাকাক্সিক্ষত এবং অনভিপ্রেত। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, পুলিশ যে গ্রেফতার অভিযান চালাচ্ছে, তাতে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত খুব কম লোকই গ্রেফতার হয়েছে। সরকারী দলের লোকজন যা বলছেন পুলিশও সেই অনুযায়ী বিরোধী দলের নেতা-কর্মীসহ নিরীহ মানুষদের নির্বিচারে গ্রেফতার করছে। হামলার পরিকল্পনা এবং এর পেছনে যারা মাস্টারমাইন্ড, তাদের টিকিটি পর্যন্ত ধরতে পারছে না। নাসিরনগরের ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় যে তিন নেতাকে অভিযুক্ত করে বহিষ্কার করা হয়েছে, তারা প্রকাশ্যে চলাফেরা করলেও গ্রেফতার করা হয়নি। এর বিপরীতে সাঁড়াশি অভিযানের নামে নিরীহ চা দোকানদার, খেটে খাওয়া শ্রমিক, পাগল, বিয়ের দাওয়াত খেতে যাওয়া মেহমানসহ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত নয়, এমন অতি সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। গতকাল প্রকাশিত একটি ইংরেজি দৈনিকের প্রতিবেদনে এ ধরনের যে তথ্য উঠে এসেছে, তাতে স্তম্ভিত না হয়ে পারা যায় না। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পুলিশ সাধারণ মানুষকে ধরে ঘটনার সাথে জড়িয়ে দিচ্ছে। টিভি ফুটেজে দেখা গেছে বলে ঢালাওভাবে গ্রেফতার করছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এ পর্যন্ত যে ৭৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের অধিকাংশই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত নয় বলে স্থানীয় লোকজন দাবি করেছেন। পুলিশ হামলার প্রকৃত মদদদাতা ও নেপথ্যের মূল হোতাদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। বলা বাহুল্য, পুলিশ ঘটনার নেপথ্য কারণ ও কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তা যে জানে না, এমন মনে করার কারণ নেই। ঘটনার নেপথ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের আভ্যন্তরীণ কোন্দল ও তাদেরই লোকজন যে জড়িত, তা নিশ্চয়ই পুলিশ জানে। তবে তাদের গ্রেফতার করতে পারছে না, ক্ষমতাসীন দলের লোকজন বলে। ক্ষমতাসীন দলের লোকজনকে ধরার ক্ষেত্রে পুলিশের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সবাই অবহিত। তার অর্থ এই হতে পারে না, গ্রেফতার দেখানোর জন্য গ্রেফতার করতে হবে। কোনো ধরনের বাছ-বিচার না করে অতি সাধারণ ও নির্দোষ মানুষকে গ্রেফতার করে নিয়ে যেতে হবে। পুলিশের এই গ্রেফতার অভিযানের ফলে নাসিরনগরে এখন পুরুষ মানুষ রাতে ঘরে ঘুমাতে পারছে না। তারা আতঙ্কে কাঁথা-বালিশ নিয়ে ক্ষেত-খামারে গিয়ে ঘুমাচ্ছে। অনেকে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। এ পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে বিভীষিকাময়। যারা ঘটনার নেপথ্যের নায়ক এবং প্রকৃত দোষী তারা ঘুরে বেড়াবে, আর নিরীহ মানুষকে গ্রেফতার ও ঘরছাড়া করা হবে, এটা কেমন বিচার! ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের অন্তর্কলহে নিরীহ মানুষ ‘বলির পাঁঠা’ হওয়া কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
কয়েক মাস আগে উচ্চ আদালত ৫৪ ধারায় গ্রেফতার ও রিমান্ড নেয়ার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিক নির্দেশনা দিয়ে এক যুগান্তকারী রায় দিয়েছে। দুঃখের বিষয়, নাসিরনগরে যেভাবে গণগ্রেফতার চলছে, তাতে এ দিক-নির্দেশনা অনুসরণের কোনো বালাই দেখা যাচ্ছে না। আমরা মনে করি, আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও তদন্ত ছাড়া এভাবে নিরীহ মানুষদের গ্রেফতার করা উচিত নয়। গ্রেফতারের ক্ষেত্রে পুলিশের সতর্কতা ও সংযম প্রদর্শন করা জরুরি। ক্ষমতাসীন দলের ব্লেম গেম-এর পথ অনুসরণ না করে এবং তাদের দিকে না তাকিয়ে প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতারের উদ্যোগ নেয়া বাঞ্ছনীয়। ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন দলের আভ্যন্তরীণ কোন্দলের যে সুস্পষ্ট কারণ প্রকাশিত হয়েছে, এ দিকটি পুলিশকে বিবেচনায় নিতে হবে। একের দোষে অন্যকে দোষী সাব্যস্ত করে গ্রেফতার করা কোনোভাবেই ন্যায্য ও আইনসঙ্গত হতে পারে না। ক্ষমতাসীন দলেরও দায়িত্বশীল বক্তব্য দেয়া অপরিহার্য। ব্লেম গেমে না গিয়ে নিজের দলের মধ্যকার অন্তর্কোন্দলের দিকে নজর দেয়া বাঞ্ছনীয়। দলের নেতা-কর্মী অপরাধী হলে কোনোভাবে ছাড় দেয়া উচিত হবে না। অপরাধী যত প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবান হোক না কেন, তাকে রেহাই দেয়া যাবে না। স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল কোনো ঘটনায় পুলিশকে তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের সুযোগ দিতে হবে। ঘটনার প্রকৃত কারণ ভিন্ন দিকে প্রবাহিত হয়, এমন কোনো বক্তব্য ও দিক-নির্দেশনা দেয়াও উচিৎ নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।