পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বিশ্বের সাথে দেশের প্রধান গেইটওয়ে বা প্রবেশ তোরণ হিসেবে পরিগণিত। অন্যদিকে দেশের পতাকাবাহী একমাত্র বাণিজ্যিক বিমান সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ বিমান বিশ্বে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে। বিমান ও বিমানবন্দরের কার্যক্রম ও সেবার মানের উপর দেশের সভ্যতা, সংস্কৃতি ও ভাব-মর্যাদা অনেকাংশেই ফুটে উঠে। সেইসাথে বৈদেশিক বাণিজ্য এবং প্রবাসী কর্মীদের রেমিটেন্স আয়ের উপর দেশের অর্থনীতির ভিত্তি অনেকাংশে নির্ভরশীল। এক কোটির বেশি প্রবাসী শ্রমিকের ঘামঝরানো আয় দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীল ও এগিয়ে যাওয়ার পথ রচনা করেছে। এক সময় সরকারের পক্ষ থেকে প্রবাসী শ্রমিকদের দেশের প্রতিনিধি বা অ্যাম্বাসেডরের মর্যাদা দেয়া হয়েছিল। বিদেশে বছরের পর বছর পরিশ্রম করে রেমিটেন্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখার সৈনিক সেই প্রবাসী শ্রমিকরা দেশে ফিরে বিমানবন্দরে অশেষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানি, লাগেজ চুরি, ঘুষ-দুর্নীতির বল্গাহীন তৎপরতা চলছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ, অনেক লেখালেখি এবং কর্তৃপক্ষের তরফে নানা ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণের কথা শোনা গেলেও বাস্তবে অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি।
গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হযরত শাহজালাল আন্তজার্তিক বিমান বন্দরে যাত্রী হয়রানির বেশকিছু খন্ডচিত্র উঠে এসেছে। থাইল্যান্ড থেকে বিমানের ফ্লাইটে ২ ঘন্টায় ঢাকা এসে নামার পর লাগেজের জন্য ৩ ঘন্টা অপেক্ষা করে বিমানবন্দর ত্যাগ করতে ৪ ঘন্টা সময় লাগার তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন ভুক্তভোগী জনৈক ব্যবসায়ী। প্রবাসী শ্রমিকদের সাথে বিমানবন্দর কর্মকর্তাদের দুর্ব্যবহার, অস্বাভাবিক সময়ক্ষেপণ, লাগেজ নিয়ে টালবাহানা, কনভেয়ার বেল্ট থেকে লাগেজ ফেলে দেয়া, অযাচিত হয়রানি, অর্থআদায় এবং লাগেজ চুরি ও লাগেজ কেটে মালামাল লুটে নেয়ার অভিযোগ উঠে অহরহ। কিছুদিন আগে বিমানবন্দরে সবর্স্ব হারিয়ে টার্মিনালে কেঁদে গড়াগড়ি করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রবাসী কর্মীরা বিদেশি বিমানবন্দরের সাথে নিজদেশের বিমানবন্দরের কর্মী ও কর্মকর্তাদের আচরণ ও সেবার মান তুলনা করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিভিন্ন সেক্টরে ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া লাগলেও দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এনালগ সিস্টেমে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রীর ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে সময়ক্ষেপণ ও দুর্ভোগের শিকার হওয়ার কোনো প্রতিকার হয়নি।
সিভিল এভিয়েশনের কেনাকাটা,বিমান লিজ গহণ থেকে শুরু করে বিমানের টিকিট বিক্রিতে অপতৎপরতা, অস্বচ্ছতা, দুর্নীতি ও শত শত কোটি টাকা লোকসান দেয়ার ধারাবাহিক ঘটনাক্রম সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছুই নেই। বিমানবন্দর ও বাংলাদেশ বিমানের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে বেবিচক চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে ভুক্তভোগী প্রবাসী শ্রমিকরা বিমানবন্দরে তাদের হয়রানি ও নাজেহাল হওয়ার অভিজ্ঞতা, ইমিগ্রেশনে অনেক বেশি সময় নেয়া, বিমানের ফ্লাইট বিলম্ব, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অস্বাভাবিক উচ্চ মূল্যে টিকিট বিক্রয়সহ বেশ কিছু অভিযোগ তুলে ধরেন। গণশুনানিতে বিদেশি বিমান সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকলেও বিমানের প্রতিনিধিকে তলব করে ডেকে আনা এবং অভিযোগের কোনো সদুত্তোর না দিয়ে তিনি দু:খপ্রকাশ ও ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। প্রবাসী কর্মী ও দেশি-বিদেশী যাত্রীদের হয়রানি ছাড়াও বিমানবন্দরকে মানব পাচার, স্বর্ণ পাচার, অর্থ ও মাদক পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগও নতুন নয়। গত বছর গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়, বিমানবন্দরে এধরনের অপরাধের সাথে জড়িত ৯০ জন কর্মকর্তা -কর্মচারীর তালিকাসম্বলিত একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পেশ করা হয়। বেবিচক ও বিমানবন্দরে কর্মরত দুর্নীতিবাজদের কারণে দেশের অর্থনীতি এবং দেশের ভাবমর্যাদা হুমকির মুখে পড়েছে। মানবপাচার ও চোরাচালানের ঘটনাগুলো বিদেশি এভিয়েশন কর্তৃপক্ষকে বাংলাদেশে কার্গো নিষেধাজ্ঞা আরোপের মত মানহানিকর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের অভ্যন্তরে থাকা দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের কার্যক্রমে ডিজিটালাইজেশন, শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিমানবন্দরে অহেতুক সময়ক্ষেপণ, লাগেজ ও শুল্ক নিয়ে হয়রানি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে কঠোর নজরদারি করতে হবে। দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক মানের সেবা, ব্যবস্থাপনা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।