পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হঠাৎ বাড়ছে দেশের হাওর অঞ্চলের নদ-নদীর পানি। ফলে হুমকিতে পড়েছে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ। অনেক এলাকায় এরই মধ্যে বাঁধ ভেঙে হাওরে ঢুকছে পানি। এতে হাওর এলাকার কৃষকের স্বপ্ন আশা বোরো ফসল তলিয়ে যাচ্ছে। হাওরে চাষ করা বোরো ধান এখনো পাকেনি। সবুজ রঙের কাঁচা ধান পেকে সোনালী আভা ধারণ করতে আরও ১০ থেকে ১২ দিন সময় লাগবে। কিন্তু এর মধ্যেই বৃষ্টি ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে কৃষকের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের ‘সোনার ধান’ ডুবতে বসেছে। এতে চরম উদ্বেগ আর আতঙ্কে দিন কাটছে হওর এলাকার কৃষকের। এরই মধ্যে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার নজরখালী বাঁধ ভেঙে টাংগুয়ার হাওরে ডুকছে পানি। এতে করে তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলার প্রায় ৫ হাজার হেক্টর বোরো জমি পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। শ্রমে-ঘামে ফলানো জমির ফসল তলিয়ে যেতে দেখে বোবা কন্নায় ফেটে যাচ্ছে কৃষকের হৃদয়। সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা ও কিশোরগঞ্জ এলাকার কৃষকের খাওয়া নেই, নাওয়া নেই, দু’চোখে ঘুম নেই। এসব জেলার প্রায় ৩ লাখ হেক্টর জমির ধান ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। হাওরের পানি যদি আরও বাড়ে তাহলে তাদের সব শেষ হয়ে যাবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, ভারতের মেঘালয়, চেরাপুঞ্জিতে অতিবৃষ্টি হলেই ঢল নামে সুনামগঞ্জে। সেখানে গত ৪ দিনে ৫৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এতে করে ব্যাপক পরিমাণে পাহাড়ি ঢল নামছে সুনামগঞ্জে। জেলার নদ-নদী ও হাওরে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তাহিরপুর উপজেলার মাটিয়ান হাওর, শনির হাওর, সমসার হাওরসহ সব কটি হাওরের ফসলই এখন ঝুঁকিতে আছে। একইভাবে জেলার জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, দিরাই ও শাল্লা উপজেলায় নদ-নদীতে পানি বাড়ছে। বিভিন্ন স্থানে ফসল রক্ষা বাঁধে ধস ও ফাটল দেখা দিয়েছে। তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের টাংগুয়ার হাওরে নজরখালী বাঁধ ভেঙে এরই মধ্যে হু হু করে হাওরে ঢুকছে পানি। নজরখালী বাঁধে গত সাপ্তাহে ফাটল দেখা দেয় ও পানি বাঁধের সমান হলে স্থানীয় লোকজন ও কৃষকেরা বাঁধে মাটি দিয়ে বাঁশ ও পাঠি দিয়ে বাঁধ ঠিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করে। কিন্তু পাহাড়ি ঢালের পানির চাপে বাঁধ ভেঙে যায়।
‘হাওর বাঁচাও আন্দোলনের’ নেতা আতিকুর রহমান বলেন, শুধু উজানের ঢলের দোহাই দিলে হবে না। ফসল ঝুঁকিতে পড়ার মূল কারণ হচ্ছে বাঁধ নির্মাণে কতৃপক্ষের অনিয়ম ও গাফিলতি। নির্ধারিত সময়ের এক মাস পরও বাঁধের কাজ শেষ হয়নি। মূল কাজ শেষ না করে প্রশাসন, পাউবোর কর্মকর্তারা কীভাবে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো যায়, সেটিতেই গুরুত্ব দিয়েছেন বেশি। তাদের লুটপাট ও অতি লোভের কারণে হাওরবাসী আজ সর্বশান্ত হতে বসেছেন।
সুনামগঞ্জের মাটিয়ান হাওরের আনন্দনগর পঙ্খির খালের ফসলরক্ষা বাঁধটি রোববার পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক ও তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার। এসময় জেলা প্রশাসকের কাছে কৃষকরা অভিযোগ করে জানান, ফসলরক্ষা বাঁধে যথাসময়ে মাটির কাজ না করা, মাটি ধুরমোজ, বাঁশ, বস্তা না দেয়ার কারণে সামান্য বৃষ্টিতে বাঁধের মাটি ধসে পড়ছে। আর এক এক করে হুমকিতে পড়ছে বৃহৎ মাটিয়ান, শনি সহ সবক’টি হাওরের বোরো ফসলরক্ষা বাঁধ।
কিশোরগঞ্জের স্টাফ রিপোর্টার: এ কে নাছিম খান জানান, পাহাড়ি ঢলে এ অঞ্চলের নদী ও খাল সংলগ্ন হাওরের অপেক্ষাকৃত নিচু জমির আধাপাকা বোরো ধান তলিয়ে গেছে। কোনো উপায় না পেয়ে নিজেরাই পানির নিচ থেকে আধাপাকা ধান কেটে কৃষক বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। তবে কিছুটা আশার বিষয় হচ্ছে গতকাল নদ-নদীর পানি বাড়েনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুকনো মৌসুমে নদীর তীর ও খালের নিচু জমিতে বোরো ধান লাগায় কৃষকরা। পানি বেড়ে গেলে নিচু ধানী জমিগুলো তলিয়ে যায়। আগাম পানি আসায় নদীর অববাহিকা ও নিম্ন চরাঞ্চলে জমিগুলো তলিয়ে গেছে। ইটনা উপজেলার বাদলা হাওর, এরশাদনগর, আলালের বন, ধনপুর, বেতেগাসহ এলংজুরী ইউনিয়নের বিভিন্ন হাওর ও করিমগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন হাওরে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি ঢুকে পড়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম জানান, উজান থেকে পাহাড়ি ঢলে হাওরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। মূলত ধনু নদী পলি পড়ে ভরাট হওয়ায় পাহাড়ী ঢলের পানি নিম্নাঞ্চলসহ নদীর মোহনায় ছড়িয়ে পড়ছে। নদী ড্রেজিং ব্যতিত অকাল বন্যা রোধ সম্ভব নয়।
এ বছর জেলার ১৩টি উপজেলায় ১ লাখ ৬৪ হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি, এখনও মূল হাওরগুলোতে পানি ওঠেনি। শুধুমাত্র নদী ও খালের মধ্যে অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে পানি ঢুকেছে। এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান জানান, প্রকল্প এলাকার বাহিরে, নদী ও খালের মধ্যে এ পানি ঢুকেছে। সেখানে আমাদের বাঁধ নেই। মূল হাওরে পানি ঢোকেনি।
অপরদিকে জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, ইটনার হাওরের নদী ও খালের মধ্যে অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে লাগানো বোরো ধানের ক্ষেতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি ঢুকেছে। তবে বৃষ্টিপাত না হলে ফসলের তেমন ক্ষতি হবে না। যে সমস্ত জমির বোরো ধান ৮০ ভাগ পেকেছে, তা দ্রুত কৃষকদের কেটে ফেলার অনুরোধ জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
সুনামগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা : মো. হাসান চৌধুরী জানান, ভারতের পাহাড়ি ঢলে এ জেলার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে তাহিরপুর উপজেলার টাংগুয়ার হাওরের নজরখালি বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে প্রায় ১২০ হেক্টর জমির বোরো ধান। গত শনিবার সকাল ১০ টায় হঠাৎ করে উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের স্থানীয় কৃষকদের উদ্যোগে নির্মিত নজর খালি বাঁধটি ভেঙে যায়। বাঁধটি ভেঙ্গে যাওয়ায় স্থানীয় কৃষকেরা দিশেহারা।
স্থানীয় কৃষক মোহাম্মদ আলী শেখ (৬৫) জানান, তিনি এ হাওরে ২ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছিলেন। শনিবার নজর খালি মুখের বাঁধ ভেঙে তার সমস্ত জমির ধান তলিয়ে গেছে। কাঁচা ধানগুলো পাকা হওয়ার আগেই আমাদের সব শেষ হয়ে গেল।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শিমুল আহমেদ বলেন, নদীতে অস্বাভিক পানি বৃদ্বির ফলে শনিবার সকালে হঠাৎ করে নজর খালি মুখের বাঁধটি ভেঙ্গে আট-দশটি গ্রামের কৃষকের জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রায়হান কবির বলেন, উপজেলার একমাত্র নজর খালীর বাঁধ ভেঙে টাংগুয়ার হাওরে পানিতে ফসল তলিয়ে গেছে। এছাড়া আনন্দ নগর একটি বাঁধে বড় ফাটল দেখা দিলে তা দ্রুত মেরামত করা হয়। এছাড়া উপজেলার সব কয়টি বাঁধের অবস্থা এখন প্রর্যন্ত ভাল আছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় চাষ করা ধান এখনো সবুজ, কাঁচা। পাকতে আরও ১০/১২ দিন সময় নেবে। এর মধ্যেই ভারি বৃষ্টি ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে কৃষকের স্বপ্নের সোনার ধান তলিয়ে যাচ্ছে। এতে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় দিন যাচ্ছে কৃষকের।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সুনামগঞ্জের ছোট-বড় ১৫৪টি হাওরে এবার ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এতে ৩ হাজার ২২০ কোটি টাকার বোরো ধান উৎপাদিত হওয়ার কথা।
নেত্রকোনা জেলা সংবাদদাতা : এ কে এম আব্দুল্লাহ্ জানান, ভারতের পাহাড়ি ঢলের পানিতে ধনু নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নেত্রকোণা জেলার খালিয়াজুরী সদর ইউনিয়নের কয়েকটি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের বাইরে নিচু এলাকার প্রায় ৫শ’ একর জমির বোরো ফসল তলিয়ে গেছে। স্থানীয় কৃষকদের আশঙ্কা, এভাবে পাহাড়ি ঢলের পানি আসতে থাকলে নদীর পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে ফসল রক্ষা বাঁধ তলিয়ে খালিয়াজুরী উপজেলার ২১ হাজার হেক্টর জমির ফসল যে কোন সময় তলিয়ে যেতে পারে।
খালিয়াজুরী উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মওসুমে খালিয়াজুরী উপজেলায় ২১ হাজার ১ শ’ ২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। হাওরাঞ্চলে বেশিরভাগ জমিতে বোরো ধানের তোর বের হয়ে দুধ ও দানা বাঁধতে শুরু করেছে। আগামী ১৪/১৬ দিনের মধ্যেই ধান পাকতে শুরু করবে। আর ২০/২৫ দিন পরই ধান কাটা শুরু হবে।
স্থানীয় কৃষক, উপজেলা প্রশাসন, কৃষি বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোণার খালিয়াজুরী, মোহনগঞ্জ, মদন মূলত হাওরাঞ্চল। হাওরের একমাত্র ফসল বোরোর ওপরই নির্ভর করে কৃষকদের সারা বছরের সংসার খরচ, চিকিৎসা, সন্তানদের পড়ালেখা ও আচার-অনুষ্ঠান। জেলায় ছোট-বড় মোট ১৩৪টি হাওরের মধ্যে খালিয়াজুরীতে ৮৯টি হাওর আছে। হাওরাঞ্চলে ৩০০ কিলোমিটার ডুবন্ত (অস্থায়ী) বাঁধের মধ্যে খালিয়াজুরীতে ১৮১ কিলোমিটার, মোহনগঞ্জে ৬১ কিলোমিটার ও মদনে ৪৬ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার ডুবন্ত বাঁধ আছে। ওই বাঁধের ওপর স্থানীয় কৃষকদের প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল নির্ভর করে। হাওরের ফসল রক্ষায় এ বছর পাউবো উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রায় ৩৩ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণ করেছে।
হাওর অঞ্চলে কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় গঠিত হয় হাওর বাঁচাও আন্দোলন। ২০১৭ সালের চৈত্র মাসে অতিবৃষ্টির ফলে হাওর রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে যায় সুনামগঞ্জ জেলার সকল হাওরের বোরো ধান। তৎকালীন পিআইসি কমিটির বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগের সূত্র ধরেই গঠিত হয় হাওর বাঁচাও আন্দোলন। মূলত কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের পিআইসির সঠিক কাজের তদারকিসহ জনস্বার্থে গড়ে ওঠা এ সংগঠন জেলাব্যাপি ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু বর্তমানে এ সংগঠনের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।