Inqilab Logo

শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ভারতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে বাংলাদেশির কিডনি হাওয়া

অবৈধভাবে কিডনিসহ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রির অভিযোগে একজন গ্রেফতার

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০১ এএম

ভারতে গেলে স্বল্প খরচে ভালো চিকিৎসা পাওয়া যাবে খবর পান আব্দুল কাশেম (৩৪) মেলে। ভারতে যেতে তিনি এক দালালের শরণাপন্ন হন। দালাল চক্রের সহযোগিতায় গত বছরের ৪ নভেম্বর ভোরে স্ত্রী ববিতাকে নিয়ে যশোর বর্ডার দিয়ে ভারতে যান কাশেম। সেখানে গিয়ে কলকাতায় জিম্মি হন কাশেম ও তার স্ত্রী ববিতা। এরপর কলকাতার একটি হাসপাতালে নিয়ে কাশেমের কিডনি রেখে দেয়া হয়। পরে চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি ভুক্তভোগী কাশেম ও তার স্ত্রীকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ভারতে নিয়ে চিকিৎসার নামে জিম্মি করে অবৈধভাবে কিডনিসহ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রির অভিযোগে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে র‌্যাব। র‌্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ এর একটি দল আশুলিয়া এলাকা থেকে মোছা. বিউটি বেগম নামে চক্রের ওই নারী সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। তার বাড়ি নাটোর জেলা সদরের কালীবাড়ীতে। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে একটি মেডিকেল ডকুমেন্ট ফাইল ও একটি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়।
র‌্যাব-৩ এর ফ্লাইট লে. (স্কোয়াড কমান্ডার) ফাতিন সাদাব অরণ্য জানান, গ্রেপ্তার ওই নারী মানব দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিক্রয়কারী প্রতারক চক্রের সদস্য। আশুলিয়া থানায় দায়ের করা একটি মামলা সূত্রে ভুক্তভোগী আব্দুল কাশেমের (৩৪) তথ্য মেলে। জানা যায় তার বাড়ি জয়পুরহাটে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি পেটের ব্যথায় ভুগছিলেন। গ্রামে ও শহরে বেশ কবার চিকিৎসা করিয়ে সুফল পাননি। ভারতে ভালো চিকিৎসা হয়, সেখানে গেলে ভাল হয়ে যাবেন, এমন খবরে গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর রাতে আব্দুল কাশেম ও স্ত্রী ববিতা বেগম দালাল চক্রের সদস্য মোছা. বিউটি বেগমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন। তখন বিউটি তাদের নিজ বাসায় ডাকেন।
পরদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিউটির বাসায় যান কাশেম ও তার স্ত্রী। আলাপ-আলোচনার এক পর্যায়ে ভুক্তভোগী কাশেমকে ভারতে নিয়ে সুচিকিৎসা দেয়ার প্রলোভন দেখান বিউটি। ভারতে কয়েকবার আসা-যাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বিউটি তাদের জানান, বিভিন্ন লোককে ভারতে নিয়ে কম খরচে চিকিৎসা করিয়ে সাহায্য করেছেন। তার পাসপোর্ট ও বিভিন্ন কাগজপত্রও তিনি দেখান। বিউটির কথামতো কাশেম ও ববিতা পাসপোর্ট ও ভিসা করে গত বছরের ৪ নভেম্বর যশোর বর্ডার দিয়ে ভারত যান। সেখানে আগে থেকে অবস্থান করা চক্রের পলাতক সদস্য মো. শহীদ (৪৫) ও শেখ ফরিদ (৪২) তাদের নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে আটকে রাখেন। সেখানে থেকেই কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে কাশেমকে নিয়ে ডাক্তার দেখানো হয়।
তিনি আরো বলেন, চিকিৎসার নামে কৌশলে কাশেমের কাছ থেকে স্বেচ্ছায় কিডনি দানের সম্মতিপত্রে সই নেন চক্রের পলাতক সদস্যরা। পরে কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর কথা বলে তাকে ভর্তি করানো হয়। সেখানে বিভিন্ন তারিখে আব্দুল কাশেমের শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর অপারেশন করতে হবে বলে জানানো হয়। এর কয়েকদিন পর ওই হাসপাতালের একটি রুমে তাকে একা নিয়ে অজ্ঞান করে অপারেশন করা হয়। অপারেশন শেষে জ্ঞান ফেরার পর পেটের বাম পার্শ্বে কাটা দেখে ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করে কাশেম জানতে পারেন, তিনি তার কিডনি স্বেচ্ছায় দান করেছেন। পরে তিনি চক্রের সদস্যদের কাছে কিডনি বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তারা ভয়ভীতি দেখান। ২১ ফেব্রুয়ারি কাশেম ও স্ত্রী ববিতাকে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
তিনি জানান, পরস্পর যোগসাজশে ভুক্তভোগী কাশেমকে চিকিৎসার নামে ভারতে নিয়ে অনুমতি ছাড়া তার বাম পার্শ্বের কিডনি বিক্রি করে দিয়েছে চক্রটি। তিনি বাংলাদেশে এসে সুচিকিৎসা না পেয়ে অসহায় জীবনযাপন করছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ