Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাকা নগরীর বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১ এপ্রিল, ২০২২, ১২:১২ এএম

যে কোনো আধুনিক নগরী বা অথবা জনপদে নাগরিকদের উন্নত জীবনধারা নিশ্চিত করার আগে সাধারণ বাসযোগ্যতার প্রাথমিক মানদন্ড হচ্ছে নিরাপদ সুপেয় পানির নিশ্চয়তা, দূষণমুক্ত নির্মল বায়ু, নিরাপদ যোগাযোগ ও যাতায়াত ব্যবস্থা, উন্নত চিকিৎসা এবং পর্যাপ্ত ও সহজলভ্য খাদ্য সরবরাহের নিশ্চয়তা। প্রযুক্তি ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের ধারায় আধুনিক সভ্যতায় মেগাসিটিগুলোতে বাসযোগ্যতার মানদন্ড নিরূপণে আরো অনেক কিছুই যুক্ত হয়েছে। সে সব বিবেচনায় গত বেশ কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ে ঢাকা শহর বাসযোগ্যতার তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। আমরা যতই অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা শুনছি, দেশ ও জনপদগুলো ততই যেন বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলছে। ঢাকার পাশাপাশি দেশের অন্যান্ন বিভাগীয় শহরগুলোও নানাভাবে জনদুর্ভোগ ও বাসযোগ্যতা হারানোর তালিকায় স্থান পেতে শুরু করেছে। ইউএনইপি বা ইউনাইটেড ন্যাশনস এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন ‘অ্যানুয়েল ফ্রন্টিয়ার্স রিপোর্ট-২০২২’ অনুসারে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি শব্দদূষণের শিকার। আবাসিক এলাকায় যেখানে সর্বোচ্য ৫৫ ডিবি(ডেসিবেল) মাত্রার শব্দদূষণকে গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়, সেখানে ঢাকার শব্দদূষণের মাত্রা ১১৯ ডিবি। শব্দদূষণের শিকার বিশ্বের প্রথম ৫টি শহরের মধ্যে ৪টিই দক্ষিণ এশিয়ার। এর মধ্যে প্রথম ঢাকা এবং চতুর্থ রাজশাহী। দ্বিতীয় ভারতের উত্তর প্রদেশের মুরাদাবাদ, তৃতীয় পাকিস্তানের ইসলামাবাদ এবং পঞ্চম ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটি।

ঢাকার পানি এবং বায়ুদূষণের মাত্রা সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছুই নেই। গত এক দশকে বিভিন্ন সময়ে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার তরফ থেকে এ নিয়ে বেশ কিছু রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। গতকাল ঢাকার একটি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা ঢাকা শহরের নানামাত্রিক দূষণ ও বাসযোগ্যতার অবস্থান নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেখানে ঢাকা শহরের নাগরিক দুর্ভোগ এবং শহর একটি ভাগাড়ে পরিনত হওয়ার বাস্তবতা ফুটে উঠেছে। শহরের যানজট, বায়ুর মান, পানিদূষণ ও নিরাপদ পানি সরবরাহে ঢাকা ওয়াসার সীমাহীন ব্যর্থতা ইত্যাদি বিষয়গুলো উঠে এসেছে। গত বছরের(২০২১) র‌্যাংকিংয়ে বিশ্বের ১৪০টি বাসযোগ্য শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ছিল ১৩৭তম। যুদ্ধবিদ্ধস্ত কয়েকটি শহরের বিপর্যয়কর পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করলে স্বাভাবিক বসবাসযোগ্যতার ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্বের সর্বনি¤œ অবস্থানে রয়েছে। পানিদূষণ, এয়ার কোয়ালিটি, শব্দদূষণের ক্ষেত্রে সর্বনি¤œ অবস্থান এবং গত ১০ বছরে ঢাকার যানজটে যানবাহন চলাচলের গড় গতি ঘন্টায় ২১ কিলোমিটার থেকে ৭ কিলোমিটারে নেমে আসার বাস্তবতা থেকেই অনুমান করা যায়, ঢাকার বসবাসযোগ্যতা কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে। প্রায় দুই কোটি অধিবাসির জন্য প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ করতে পারছেনা ঢাকা ওয়াসা। কোটি কোটি গ্যালন ঘাটতি নিয়ে যে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে, ত্রæটিপূর্ণ পাইপলাইনের কারণে তাও দূষিত ও তীব্র গন্ধযুক্ত। নগরীর উন্নয়ন কর্মকান্ড ও বর্জ্যব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা, অস্বাভাবিক সময়ক্ষেপন ও দুর্নীতির বিষয়গুলো দেখার যেন কেউ নেই।

ঢাকার চারপাশে অন্তত পাঁচটি নদী প্রবাহমান থাকলেও মাত্রাহীন, বল্গাহীন দূষণ ও দখলের কারণে এসব নদীর পানির উপযোগিতা হারিয়েছে বহু আগেই। ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টগুলো এসব নদীর পানিকে পানযোগ্য-নিরাপদ করতে পারছেনা। ফলে নিরাপদ পানির জন্য ভ‚-গর্ভস্থ পানির উপর অতি নির্ভরশীলতার কারণে ঢাকায় ভ‚-গর্ভের পানির স্তর গত চার দশকে প্রায় ৬০ মিটারের বেশি নিচে নেমে গেছে বলে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়। ঢাকাকে যানজট, পানিবদ্ধতা, নদী-খাল দখলমুক্ত করাসহ আধুনিক, পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য করে তুলতে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে অনেক প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। একদিকে আমরা সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের মুখে উন্নয়নের তুব্ড়ি ছোটানো বক্তব্য শুনছি, অন্যদিকে কিছুদিন পর পর আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রকাশিত রিপোর্টে ঢাকার বাসযোগ্যতা, বাংলাদেশের বায়ু, পানি ও শব্দদূষণের বিপজ্জনক মাত্রা এবং পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির নানাবিধ তথ্য-উপাত্ত উঠে আসছে। এ থেকে সহজেই বোঝা যাচ্ছে, আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে দেশ। দখল ও দূষণের হাত থেকে নদী ও খালগুলো রক্ষা করতে না পারলে, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, আবাসন, শিল্পায়ণের কারণে ঘটিত বায়ু ও পানিদূষণ ঠেকাতে না পারলে, ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও ব্যাপক বায়ুদূষণের উৎস ইটভাটাগুলো বন্ধ করতে না পারলে পরিসংখ্যানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উন্নয়ন দেশবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে কোনো কাজে আসবে না। দেশ ও শহরগুলোকে বাসযোগ্য করার স্থায়ী ও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। শিল্পায়ন ও প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের পাশাপাশি দূষণ ও দখলবাজদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।

 



 

Show all comments
  • Imam Hossain ১ এপ্রিল, ২০২২, ১০:৪৬ এএম says : 0
    সবকিছু ঢাকা কেন্দ্রিক,বিকেন্দ্রীকরণ করা উচিত, ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিভাগীয় শহরে এমনকি জেলা সদরে ও করা গেলে ভালো একটা রেজাল্ট আশা করা যায়।
    Total Reply(0) Reply
  • Arif Mahmud ১ এপ্রিল, ২০২২, ১০:৪৬ এএম says : 0
    মেট্রোরেল,পাতালরেল, ফ্লাইওভার না করে দির্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিয়ে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান,মন্ত্রণালয় বিশেষ করে ইন্ডাস্ট্রি ঢাকার বাইরে স্থানান্তর করলেই মিলবে সুফল..
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Ashikur Rahaman ১ এপ্রিল, ২০২২, ১০:৪৭ এএম says : 0
    যে যে অঞ্চল যে সবের জন্য পরিচিত বা যে অঞ্চলে যে সব বোর্ড থাকা দরকার , সেখানেই সেসব স্থাপন করা দরকার। ঢাকায় আর কোন ধরনের এমন ভবন করা কোন ক্রমেই উচিত না। যে সব আছে সেগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে স্ব স্ব এলাকায় নতুন করে এসব ভবন নির্মাণ করা উচিত । ঢাকায় আর কোন উন্নয়নের দরকার নেই ।
    Total Reply(0) Reply
  • Samsuddin Bablu ১ এপ্রিল, ২০২২, ১০:৪৭ এএম says : 0
    বাস্তব চিত্র তুলে দরার জন্য ধন্যবাদ জানাই,,,, সব কিছু কেন ঢাকা কেন্দ্রিক হতে হবে,,,এ জন্য ঢাকার এ অবস্থা
    Total Reply(0) Reply
  • Imran Ahamed ১ এপ্রিল, ২০২২, ১০:৪৭ এএম says : 0
    একটাই সমাধান দেশের সব বিভাগীয় শহর কে প্রদেশ করে দিতে হবে। যাতে সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা থাকে।
    Total Reply(0) Reply
  • Tanjib Saruar ১ এপ্রিল, ২০২২, ১০:৪৮ এএম says : 0
    অনেক দিন পর মনের মতো একটা নিউজ দেখলাম।
    Total Reply(0) Reply
  • HR Jahed ১ এপ্রিল, ২০২২, ১০:৪৮ এএম says : 0
    সময় উপযোগী এবং সঠিক একটি বিষয় উপস্থাপন করার জন্য ধন্যবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • Mukut Osman ১ এপ্রিল, ২০২২, ১০:৪৯ এএম says : 0
    ঢাকাকে যানযট মুক্ত করার উপায়ঃ ঢাকার সাথে সংশ্লিষ্টতা নেই এমন প্রতিষ্ঠান গুলো ঢাকা থেকে সরিয়ে অন্যান্য বিভাগীয় শহর বা যুক্তিসংগত জেলায় স্থাপন করন।যেমনঃ পানি উন্নয়ন বোর্ড,সেচ ভবন, বন গবেষণা ভবন, বীজ উন্নয়ন করপোরেশন, নৌ বাহিনীর সদর দপ্তর,খামার বাড়ি ভবন, নদী গবেষণা বোর্ড,পাট গবেষণা কেন্দ্র, চা গবেষণা কেন্দ্র,পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, মৎস ভবন সহ আরো অনেক অপ্রয়োজনীয় দপ্তর। ২. প্রথম সারির ২ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বাদে বাকি সব গুলো অন্য বিভাগে স্থানান্তর করন। ৩.গার্মেন্টস এবং ফ্যাক্টরিগুলো যথা সম্ভব ঢাকাপার্শ্ববর্তী জেলায় স্থানান্তর করন। ৪.ব্যাংক এবং বিমার অধিকাংশ অফিস অন্যান্য বিভাগীয় শহরে স্থানান্তর করন। ৫.বড় বড় নিয়োগ পরীক্ষাগুলো সব বিভাগীয় শহরে নেয়া।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঢাকা

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন