পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
যে কোনো আধুনিক নগরী বা অথবা জনপদে নাগরিকদের উন্নত জীবনধারা নিশ্চিত করার আগে সাধারণ বাসযোগ্যতার প্রাথমিক মানদন্ড হচ্ছে নিরাপদ সুপেয় পানির নিশ্চয়তা, দূষণমুক্ত নির্মল বায়ু, নিরাপদ যোগাযোগ ও যাতায়াত ব্যবস্থা, উন্নত চিকিৎসা এবং পর্যাপ্ত ও সহজলভ্য খাদ্য সরবরাহের নিশ্চয়তা। প্রযুক্তি ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের ধারায় আধুনিক সভ্যতায় মেগাসিটিগুলোতে বাসযোগ্যতার মানদন্ড নিরূপণে আরো অনেক কিছুই যুক্ত হয়েছে। সে সব বিবেচনায় গত বেশ কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে ঢাকা শহর বাসযোগ্যতার তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। আমরা যতই অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা শুনছি, দেশ ও জনপদগুলো ততই যেন বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলছে। ঢাকার পাশাপাশি দেশের অন্যান্ন বিভাগীয় শহরগুলোও নানাভাবে জনদুর্ভোগ ও বাসযোগ্যতা হারানোর তালিকায় স্থান পেতে শুরু করেছে। ইউএনইপি বা ইউনাইটেড ন্যাশনস এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন ‘অ্যানুয়েল ফ্রন্টিয়ার্স রিপোর্ট-২০২২’ অনুসারে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি শব্দদূষণের শিকার। আবাসিক এলাকায় যেখানে সর্বোচ্য ৫৫ ডিবি(ডেসিবেল) মাত্রার শব্দদূষণকে গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়, সেখানে ঢাকার শব্দদূষণের মাত্রা ১১৯ ডিবি। শব্দদূষণের শিকার বিশ্বের প্রথম ৫টি শহরের মধ্যে ৪টিই দক্ষিণ এশিয়ার। এর মধ্যে প্রথম ঢাকা এবং চতুর্থ রাজশাহী। দ্বিতীয় ভারতের উত্তর প্রদেশের মুরাদাবাদ, তৃতীয় পাকিস্তানের ইসলামাবাদ এবং পঞ্চম ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটি।
ঢাকার পানি এবং বায়ুদূষণের মাত্রা সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছুই নেই। গত এক দশকে বিভিন্ন সময়ে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার তরফ থেকে এ নিয়ে বেশ কিছু রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। গতকাল ঢাকার একটি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা ঢাকা শহরের নানামাত্রিক দূষণ ও বাসযোগ্যতার অবস্থান নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেখানে ঢাকা শহরের নাগরিক দুর্ভোগ এবং শহর একটি ভাগাড়ে পরিনত হওয়ার বাস্তবতা ফুটে উঠেছে। শহরের যানজট, বায়ুর মান, পানিদূষণ ও নিরাপদ পানি সরবরাহে ঢাকা ওয়াসার সীমাহীন ব্যর্থতা ইত্যাদি বিষয়গুলো উঠে এসেছে। গত বছরের(২০২১) র্যাংকিংয়ে বিশ্বের ১৪০টি বাসযোগ্য শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ছিল ১৩৭তম। যুদ্ধবিদ্ধস্ত কয়েকটি শহরের বিপর্যয়কর পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করলে স্বাভাবিক বসবাসযোগ্যতার ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্বের সর্বনি¤œ অবস্থানে রয়েছে। পানিদূষণ, এয়ার কোয়ালিটি, শব্দদূষণের ক্ষেত্রে সর্বনি¤œ অবস্থান এবং গত ১০ বছরে ঢাকার যানজটে যানবাহন চলাচলের গড় গতি ঘন্টায় ২১ কিলোমিটার থেকে ৭ কিলোমিটারে নেমে আসার বাস্তবতা থেকেই অনুমান করা যায়, ঢাকার বসবাসযোগ্যতা কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে। প্রায় দুই কোটি অধিবাসির জন্য প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ করতে পারছেনা ঢাকা ওয়াসা। কোটি কোটি গ্যালন ঘাটতি নিয়ে যে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে, ত্রæটিপূর্ণ পাইপলাইনের কারণে তাও দূষিত ও তীব্র গন্ধযুক্ত। নগরীর উন্নয়ন কর্মকান্ড ও বর্জ্যব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা, অস্বাভাবিক সময়ক্ষেপন ও দুর্নীতির বিষয়গুলো দেখার যেন কেউ নেই।
ঢাকার চারপাশে অন্তত পাঁচটি নদী প্রবাহমান থাকলেও মাত্রাহীন, বল্গাহীন দূষণ ও দখলের কারণে এসব নদীর পানির উপযোগিতা হারিয়েছে বহু আগেই। ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টগুলো এসব নদীর পানিকে পানযোগ্য-নিরাপদ করতে পারছেনা। ফলে নিরাপদ পানির জন্য ভ‚-গর্ভস্থ পানির উপর অতি নির্ভরশীলতার কারণে ঢাকায় ভ‚-গর্ভের পানির স্তর গত চার দশকে প্রায় ৬০ মিটারের বেশি নিচে নেমে গেছে বলে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়। ঢাকাকে যানজট, পানিবদ্ধতা, নদী-খাল দখলমুক্ত করাসহ আধুনিক, পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য করে তুলতে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে অনেক প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। একদিকে আমরা সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের মুখে উন্নয়নের তুব্ড়ি ছোটানো বক্তব্য শুনছি, অন্যদিকে কিছুদিন পর পর আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রকাশিত রিপোর্টে ঢাকার বাসযোগ্যতা, বাংলাদেশের বায়ু, পানি ও শব্দদূষণের বিপজ্জনক মাত্রা এবং পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির নানাবিধ তথ্য-উপাত্ত উঠে আসছে। এ থেকে সহজেই বোঝা যাচ্ছে, আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে দেশ। দখল ও দূষণের হাত থেকে নদী ও খালগুলো রক্ষা করতে না পারলে, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, আবাসন, শিল্পায়ণের কারণে ঘটিত বায়ু ও পানিদূষণ ঠেকাতে না পারলে, ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও ব্যাপক বায়ুদূষণের উৎস ইটভাটাগুলো বন্ধ করতে না পারলে পরিসংখ্যানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উন্নয়ন দেশবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে কোনো কাজে আসবে না। দেশ ও শহরগুলোকে বাসযোগ্য করার স্থায়ী ও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। শিল্পায়ন ও প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের পাশাপাশি দূষণ ও দখলবাজদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।