Inqilab Logo

রোববার ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ কার্তিক ১৪৩১, ৩০ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতে রফতানি বেড়েছে ৫৮ শতাংশ

তবুও বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি

কূটনৈতিক সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৮ মার্চ, ২০২২, ১২:৪৮ এএম

ভারতের বাজারে পণ্য রফতানিতে চমক দেখিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশের রফতানিকারকরা ভারতে ১৩৬ কোটি ১০ লাখ (১ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রফতানি করেছে। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের পুরো সময়ের (১২ মাস, জুলাই-জুন) চেয়েও ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি। আর একই সময়ের চেয়ে বেশি ৫৮ শতাংশ। এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছরে শেষে ভারতের বাজারে বাংলাদেশের রফতানি প্রথমবারের মতো ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন রফতানিকারক ও অর্থনীতিবিদরা।

মহামারি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের পণ্য রফতানির পালে হাওয়া লেগেছে। জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে সব মিলিয়ে প্রায় ৩৪ বিলিয়ন (৩ হাজার ৩৮৪ কোটি ৩৪ লাখ) ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেশি। এই সময়ে প্রায় দেশেই ভালো রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে, ভারতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সবচেয়ে বেশি।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সবশেষ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, একক দেশ হিসেবে পাশের দেশ ভারত এখন বাংলাদেশের ষষ্ঠ রফতানি বাজারের তালিকায় উঠে এসেছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের রফতানি আয়ের শীর্ষ ১০ বাজারের একটি এখন ভারত। অথচ গত অর্থবছরেও বাংলাদেশের শীর্ষ ১০ রফতানি বাজারের তালিকায় ভারতের স্থান ছিল না। আগের বছরগুলোতে ভারতের অবস্থান ছিল ১৪-১৫তম স্থানে।

সবার ওপরে বরাবরের মতোই যুক্তরাষ্ট্র অবস্থান করছে। দ্বিতীয় স্থানে জার্মানি। তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে যথাক্রমে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও স্পেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে মাত্র তিনটি অর্থবছরে ভারতে পণ্য রফতানি ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলারের বেশি হয়েছে। তাও সেটা গত তিন বছরে। তার আগের বছরগুলোয় ভারতে বাংলাদেশের রফতানি ছিল ১ বিলিয়নের নিচে। তবে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ছয় মাসেই অর্থাৎ জুলাই-জানুয়ারি সময়ে সেই রফতানি ১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে ১০৬ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। সাত মাসে তা বেড়ে ১২১ কোটি ২৪ লাখ ডলারে দাঁড়ায়। আট মাসে অর্থাৎ জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে তা আরও বেড়েছে ১৩৬ কোটি ১০ ডলারে উঠেছে।

২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের রফতানিকারকরা ভারতে ১২৮ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেন, যা ছিল এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে এ আয় বেশি ছিল প্রায় ১৭ শতাংশ।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভারতের বাজারে ১২৫ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছিল বাংলাদেশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা কমে ১০৯ কোটি ৬১ লাখ ৬০ হাজার ডলারে নেমে আসে।
বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ২০ পয়সা) চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে বাংলাদেশ ভারতে ১১ হাজার ৭৩২ কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের পণ্য রফতানি করেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে রফতানির পরিমাণ ছিল ৮৬ কোটি ১৭ লাখ ডলার।

এ হিসাবেই এই আট মাসে ভারতে বাংলাদেশের রফতানি বেড়েছে ৫৮ শতাংশ। আগামী দিনগুলোতে ভারতে বাংলাদেশের রফতানি আরও বাড়বে বলে সুখবর দিয়েছেন ভারতে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী।

ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ভারতে মোট রফতানির মধ্যে ২৬ কোটি ৩২ লাখ ডলারের ওভেন পোশাক রফতানি হয়েছে। নিট পোশাক রফতাানি হয়েছে ২০ কোটি ৩৪ লাখ ডলারের।
অন্যান্য পণ্যের মধ্যে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি হয়েছে ১২ কোটি ৭৩ লাখ ডলারের। ৫ কোটি ১৮ লাখ ডলার এসেছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে। কটন ও কটন প্রোডাক্টস থেকে এসেছে ২ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। প্লাস্টিক পণ্য রফতানি থেকে এসেছে ১ কোটি ৩৬ লাখ ডলার।

এদিকে শক্তিশালী চীনকে হটিয়ে ভারতে তৈরি পোশাক রফতানিতে শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ২০২১ সালে ভারত মোট ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন (১১৫ কোটি) ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছে। এর মধ্যে ৪৭ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করেছে তারা বাংলাদেশ থেকে। চীন থেকে আমদানি করেছে ২৮ কোটি ডলারের পোশাক।

বাংলাদেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ভারতে বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের কদর বাড়ছে। ভৌগোলিক কারণেই ভারতে বাংলাদেশের রফতানি বাড়ছে। এখন থেকে তা বাড়তেই থাকবে বলে মনে হচ্ছে আমার কাছে। প্রায় দেড় শ কোটি লোকের চাহিদা মেটাতে ভারতকে বাংলাদেশ থেকে পোশাক কিনতেই হবে। ভারতে পোশাক তৈরি করতে যে খরচ হয়, বাংলাদেশ থেকে আমদানি করলে তার থেকে অনেক কম পড়ে। সে কারণে সব হিসাব-নিকাশ করেই তারা এখন বাংলাদেশ থেকে বেশি বেশি পোশাক কিনছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এখন ভারতে আমাদের রফতানি বাড়ছে। সেটা কিন্তু ভারতের দেড় শ কোটি লোকের বিশাল বাজারের তুলনায় একেবারেই নগণ্য। এখন যে অনুকূল পরিবেশ দেখা দিয়েছে, সেটাকে কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্যে নতুন মাত্রা যোগ হবে।

তবে রফতানি বাড়লেও ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতির অঙ্ক এখনও বিশাল। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে দুই দেশের মধ্যে মোট ১০ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ভারতের বাজারে মাত্র ১ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করেছে। এ হিসাবে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৮ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার।

তার আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারতে ১০৯ কোটি ৬৩ লাখ ৮০ হাজার ডলারের পণ্য রফতানি করে। আর বিপরীতে আমদানি করা হয় ৫৭৯ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের পণ্য। এ হিসাবে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৫৬৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭৬৫ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল বাংলাদেশ। বিপরীতে রফতানি করেছিল ১২৫ কোটি ডলারের পণ্য। বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৬৪০ কোটি ডলার।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে ভারত থেকে আমদানির পরিমাণ ছিল ৫৪৫ কোটি ২৯ হাজার ডলার। রফতানির অঙ্ক ছিল ৬৯ লাখ ডলার। বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৪৭৬ কোটি টাকা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ