Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নদী রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

প্রকাশের সময় : ১১ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ঢাকার চারপাশের নদীগুলো অবৈধ দখল, ভরাট ও দূষণের ভয়াবহ শিকার হয়েছে। বিপন্ন এসব নদী দখল ও দূষণমুক্ত করার লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে গত দেড় দশকে নানাবিধ উদ্যোগ ও প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। বুড়িগঙ্গা নদী বিশ্বের অন্যতম দূষিত নদীর তালিকায় স্থান পাওয়ার সাথে সাথে ঢাকা নগরী বিশ্বের অন্যতম বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় স্থান পেয়েছে গত তিন বছর ধরে। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালুনদী বেষ্টিত ঢাকার বিশ্বের অন্যতম সুন্দর ও প্রকৃতির অপার দানে নিরাপদ আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব নগরী হয়ে উঠার সব সম্ভাবনাই রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের অব্যবস্থাপনা, অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়ন এবং প্রভাবশালী দখলবাজদের প্রতি সরকারের নিস্পৃহ থাকার কারণে এসব নদী বহু আগেই উপযোগিতা হারিয়েছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, একদিকে সরকার নদী রক্ষায় শত শত কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করছে, অন্যদিকে একই সময়ে সরকারের ছত্রছায়া প্রাপ্ত প্রভাবশালীরা নির্বিঘেœ দখল ও ভরাট করে নদীগুলোকে মৃত্যুর প্রান্তসীমায় নিয়ে যাচ্ছে। কয়েকদিন আগে ঢাকার একটি ইংরেজী দৈনিকের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত সচিত্র প্রতিবেদনে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত চারবছরে তুরাগ নদীতে দখলবাজির একটি ধারাবাহিক চিত্র তুলে ধরা হয়। বছরের পর বছর ধরে চলা নদী দখলের এই ঘৃণ্য মহোৎসবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা বিস্ময়কর।
তুরাগ নদীতে প্রকাশ্য দখলবাজি বন্ধে সরকারের প্রতি একটি রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। হিউম্যান রাইটস এন্ড পিচ ফর বাংলাদেশ নামের একটি সংস্থার পক্ষ থেকে দায়ের করা একটি রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি কাজী রেজাউল হক এবং বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহ্র বেঞ্চ বুধবার রুল জারির ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তুরাগ নদীতে বাঁধ দিয়ে মাটি ভরাট ও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও দফতরগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের এই আদেশ বাস্তবায়ন করে তার প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে এবং ২৭ নভেম্বর আদালত পরবর্তী নির্দেশনার জন্য দিন ধার্য করেছেন। নৌপরিবহন সচিব, বাংলাদেশ আভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, রাজউক চেয়ারম্যান, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক, গাজীপুরের ডিসি, এসপি এবং তুরাগ ও টঙ্গি থানার ওসিদের এই রুলের রেসপনডেন্ট হিসেবে জবাবদিহি করতে বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চার নদীকে দখল ও দূষণমুক্ত করতে ইতিপূর্বেও উচ্চ আদালত একাধিকবার নির্দেশনা জারি করেছেন। এসব নির্দেশনা যথাযথভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে না বলেও তখন গণমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। একটি রীট আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ২৫ জুন বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালুনদী রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি ১২ দফা নির্দেশনা জারি করেন হাইকোর্ট। আদালতের নির্দেশনা অনুসারে চার নদীর সীমানা নির্ধারণে ৬ হাজার ৮৪৩টি পিলার স্থাপনের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ৪ হাজার ৬৩টি পিলার স্থাপন করা হয় যার ৩৫ শতাংশই বসানো হয় ভুল জায়গায়। বিভিন্ন সময়ে আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা এবং সরকারের একাধিক কমিটি ও টাস্কফোর্স নদীগুলোকে বেদখল ও দূষণমুক্ত করতে পারেনি।
বুড়িগঙ্গায় বিপজ্জনক মাত্রায় দূষণের জন্য অন্যতম দায়ী হাজারিবাগের টেনারি শিল্প গত ১০ বছরেও সাভারে নির্ধারিত টেনারি শিল্পাঞ্চলে সরিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। প্রায় চারদশক ধরে নদীগুলোর উপর দখলবাজি ও দূষণের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তেমন কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করেনি। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হলেও নদীর উপর দীর্ঘদিনে গড়ে তোলা স্থাপনার খুব সামান্যই উচ্ছেদ হয়েছে, এমনকি নদীর পাড় সংরক্ষণের পরিকল্পিত উদ্যোগ না থাকায় উদ্ধারকৃত ভূমি পুনরায় বেদখল হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা নদী দখলের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির কথা বললেও অবস্থার ক্রমাবনতি ঘটেছে। এ থেকে সরকারের সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা এবং কথা ও কাজের মধ্যে বিস্তর ফারাক ধরা পড়েছে। ঢাকার চারনদী দখল মুক্ত করতে গত মাসের প্রথমদিকে নৌবাহিনীর নেতৃত্বে একটি নতুন টাস্কফোর্স গঠনের ঘোষণা দিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টরা শীঘ্রই কাক্সিক্ষত সাফল্যের আশাবাদ প্রকাশ করলেও দেড়মাসে তেমন কোন পরিবর্তন দেখা যায়নি। এ সময়ে তুরাগ নদী বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। এহেন বাস্তবতায় উচ্চ আদালতের নতুন রুল জারি হল। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদফতর, স্থানীয় প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং টাস্কফোর্স নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে নদী রক্ষায় একটি মাইলফলক পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন, এই মুহূর্তে এটাই সকলের একান্ত প্রত্যাশা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নদী রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে
আরও পড়ুন