পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট দুর্গ সেঞ্চুরিয়নে ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে দুর্দান্ত এক বিজয় ছিনিয়ে আনল তামিম-তাসকিন বাহিনী। এর ফলে সিরিজ জয়ও সম্ভব হলো। সিরিজের প্রথম খেলায় সহজ জয়ের পর আত্মবিশ্বাসী টাইগাররা জোহানেসবার্গে দ্বিতীয় খেলায় বড় ব্যবধানে হেরে যাওয়ার পর বাংলাদেশি ক্রিকেট ফ্যানরা হয়তো শেষদিনে যে কোনোকিছুর জন্যই প্রস্তুত ছিল । তামিম ইকবালের বিচক্ষণ নেতৃত্বে খেলার শুরুতেই র্দুদান্ত বোলিংয়ে প্রোটিয়দের শিবিরে ধস নামিয়ে শিরোপা নির্ধারণী বিজয়কে সহজ করে তোলেন তাসকিন আহমদ। নিজের ৯ ওভারের খেলায় মাত্র ৩৫ রান দিয়ে ৫ উইকেট তুলে নেন তিনি। মাত্র ১৫৪ রানে দক্ষিণ আফ্রিকা গুটিয়ে যায়। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিপক্ষে অনবরত পরাজয় আর ব্যর্থতার ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে প্রথম সিরিজ জয়ের স্বাদ নিল টীম টাইগার এবং ক্রিকেটানুরাগী বাংলাদেশীরা। যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার ক্রিকেট পরাশক্তি ভারত এবং শ্রীলঙ্কার মত দল প্রোটিয়াদের হাতে ধবল ধোলাই হয়ে বিদায় নিতে হয়েছে, সেখানে এ সময়ে সেঞ্চরিয়নে এমন ৯ উইকেটের বিশাল জয় প্রত্যাশিত ছিলনা। তারা যেন অসম্ভবকে সম্ভব করে বিশ্বের সামনে আবারো ক্রিকেটের গৌরবময় অনিশ্চয়তার ইতিহাসই মেলে ধরলেন। সাবাশ টীম টাইগার্স। এই অবিষ্মরণীয় ঐতিহাসিক জয়ের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট টীমের সব খেলোয়ার ও কর্মকর্তাদের প্রতি আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সামনে কোনো সুখবর নেই। করোনা অতিমারীর আতঙ্ক পেরিয়ে একদিকে দেশে নানাবিধ সামাজিক-অর্থনৈতিক সংকট, অন্যদিকে ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘিরে নতুন আশঙ্কা যখন আমাদের চারপাশকে গ্রাস করে চলেছে, তখন দক্ষিণ আফ্রিকায় স্বাগতিকদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশী ক্রিকটারদের এমন সিরিজ জয় আমাদের জন্য স্বস্তি ও আনন্দদায়ক বিষয়। এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে দেশের ক্রিকেট অঙ্গণে হতাশার কালোমেঘ দূর হয়ে নতুন উদ্দীপনার আলো ছড়াচ্ছে। বিশেষত তামিম ইকবালের অধিনায়কত্ব এবং তাসকিন আহমেদের ক্রিকেট পারফর্মেন্স নিয়ে যে কানাঘুষা-বিবমিষা দেখা দিয়েছিল, এই সিরিজ জয়ের মধ্য দিয়ে তারা উভয়ে এবং চমৎকার বোঝাপড়ায় উপযুক্ত জবাব দিতে সক্ষম হল টীম টাইগার। স্বাধীনতার এই মাসে গত ১৪ মার্চ নিউজিল্যান্ডের হ্যামিল্টনে আইসিসি নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে নিগার সুলতানা জ্যোতির নেতৃত্বাধীন আমাদের নারী ক্রিকেট টীম ইতিহাস সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। থাইল্যান্ডের ফুকেতে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপ ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিং আর্চারি প্রতিযোগিতায় তিনটি স্বর্ণ এবং একটি রূপা জিতে চমৎকার সাফল্য এনে দিয়েছেন দেশের নারী তীরন্দাজরা। দেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক ব্যর্থতা ও হতাশার মধ্যেও বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের নারী ও পুরুষ ক্রিকেট দল ও জাতীয় ক্রীড়াবিদদের এই সাফল্য জাতিকে উদ্দীপ্ত করছে। সাফল্যের এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। এটাই দেশবাসির প্রত্যাশা।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ও ক’টনৈতিক উদ্যোগ ও বোঝাপড়ার বিষয়গুলো ব্যর্থ হয়ে দেশে দেশে উত্তেজনা ও আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়ছে। ইউক্রেন যুদ্ধের উত্তাপ ইউরেশিয়ার দেশগুলোতেও লাগছে। সেখানে ক্রীড়াঙ্গণই হতে পারে বৈশ্বিক মেলবন্ধনের নির্মল প্লাটফর্ম। ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময়ে ভারত-পাকিস্তানের মত পরস্পর বৈরী দেশও নিজেদের মধ্যকার উত্তেজনা কমিয়ে আনতে ক্রিকেট ক’টনীতি কাজে লাগিয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শুধুমাত্র খেলাধুলার সাফল্যকে পুঁজি করেও কোনো কোনো জাতি বিশ্বে স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে। ফিফা ফুটবলের ক্ষেত্রে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল ও ইতালির নাম উল্লেখ করা যায়। ক্রিকেটের পাশাপাশি দেশের ফুটবলকেও এগিয়ে নেয়ার কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। স্কুল-কলেজে খেলাধুলার পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা ও প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে। শুধুমাত্র অ্যাকাডেমিক কারিকুলাম বা আর্থিক উন্নয়ন দিয়ে কোনো জাতির টেকসই উন্নয়ন অগ্রগতি নিশ্চিত হয়না। সেই সাথে খেলাধুলা, বিনোদন, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ও উদ্ভাবনী প্রতিভা বিকাশে কার্যকর পথরেখা নির্দেশ করতে হয়। এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সাফল্য জাতিকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। ক্রিকেটের বিশ্ব শিরোপা তুলে আনতে জাতীয় ক্রিকেটদলকে আরো লক্ষ্যভেদী ও সুপরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের জন্য আমরা আবারো দলের ক্রিকেটার ও কলাকুশলীবৃন্দের প্রতি আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।