পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
অনেকদিন ধরেই রাজধানী ঢাকা শহর বিশ্বের অন্যতম বসবাসের অযোগ্য নগরীগুলোর তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। নগরীর জনসংখ্যা, অবকাঠামো ও বসবাসের নানা উপযোগিতা, প্রাকৃতিক পরিবেশ, জননিরাপত্তা ইত্যাদি সূচকের ভিত্তিতে ইকোনমিস্টের ইন্টিলিজেন্স ইউনিটের বার্ষিক প্রতিবেদনে যুদ্ধবিদ্ধস্ত দামেস্ক, ত্রিপলি বা লাগোসের মত ১০টি শীর্ষ বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় ঘুরেফিরে প্রথম তিনটির মধ্যে ঢাকা শহরের নাম উঠে আসছে। ইন্ডাসট্রিয়ালাইজেশন ও বিনিয়োগে বাংলাদেশে কোনো গতি না থাকলেও এখন বায়ুদূষণে শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের নাম উঠে আসছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইকিউ এয়ারের নিয়মিত প্রতিবেদনে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহর ও দেশের তালিকায় ধারাবাহিকভাবে ঢাকা ও বাংলাদেশের নাম শীর্ষে অবস্থান করছে। বিদেশি সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন বা রিপোর্ট বাদ দিলেও প্রতিদিন দেশে যে হারে মানুষ অসুস্থ হচ্ছে, দেশে-বিদেশে হাসপাতালগুলোতে লাখ লাখ রোগির যে সমাগম, তার প্রায় সবই কোনো না কোনোভাবে বায়ু ও পানিদূষণের মত মানবসৃষ্ট দূষণ দ্বারা প্রভাবিত। বিশেষত ফুসফুসের সংক্রমণ ও ক্যান্সারসহ দূরারোগ্য স্বাস্থ্য সমস্যা এখন বিপজ্জনক হারে বেড়ে চলেছে। কোটি কোটি মানুষকে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেয়া বায়ুদূষণের দৃশ্যমান উৎসগুলোর বিরুদ্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না।
ঢাকায় চরমমাত্রায় বায়ুদূষণের উৎসগুলো নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন কিছু নয়। ইতিপূর্বে ২০০২-৩ সালে থ্রি-স্ট্রোক বেবি ট্যাক্সির সিসাযুক্ত পেট্টোলিয়াম ব্যবহার ঢাকার বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে সে সব বেবি ট্যাক্সি বন্ধ করে দিয়ে বেশ ইতিবাচক সুফল পাওয়া গিয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকাসহ সারাদেশে বায়ুদূষণ বিপজ্জনক মাত্রায় উন্নীত হওয়ার পেছনে সরকারের গৃহীত মেগাপ্রকল্পসহ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম; অব্যবস্থাপনা ও দীর্ঘসুত্রিতাকে দায়ী করা যায়। প্রায় দুই দশক আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের পরিচালিত এক গবেষণা সমীক্ষায় বলা হয়, ঢাকার বায়ু দূষণের ক্ষেত্রে ৭৭ শতাংশের জন্য দায়ী উড়ন্ত ধুলোবালি ও ফিটনেসবিহিন যানবাহন। গত দশকে গৃহীত বেশকিছু মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নে পরিবেশগত নিরাপত্তার বিষয়গুলোকে অগ্রাহ্য করা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে বছরের পর বছর ধরে সময় ক্ষেপণের কারণে প্রকল্প এলাকাগুলোতে বায়ুদূষণের মাত্রা পূর্বের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেড়েছে। মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের নামে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি-অপচয় এবং কোটি কোটি মানুষকে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেয়ার এই বাস্তবতাকে আদৌ উন্নয়ন বলা চলে কি না তা নিয়ে এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
প্রাকৃতিক পরিবেশ ও নাগরিক নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো রাষ্ট্র ও সরকারের কাছে তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না অথবা সংশ্লিষ্ট দফতর ও সংস্থাগুলো ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর দখল ও দূষণমুক্ত করতে গত এক দশকে অনেক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, অনেক অভিযান চালানো হয়েছে। এ খাতেও শত শত কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ফলে পানি ও বায়ুদূষণের মাত্রা ক্রমাগত বাড়তে বাড়তে এখন বৈশ্বিক র্যাংকে শীর্ষ অবস্থানে চলে এসেছে। সুলভ শ্রমিকসহ নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও যানজটে নাকাল, দূষিত ও বসবাসের অযোগ্য জনপদে বিদেশিরা বিনিয়োগ করতে আসতে আগ্রহী নয়। গত একযুগে এটা প্রমাণিত হয়েছে। চীনের বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি সহযোগিতায় নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন বিআরটি, মেট্টোরেল মেগা প্রকল্পের মত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো বছরের পর বছর ধরে ঢাকার যানজট এবং বায়ুদূষণের মাত্রা বহুগুণ বাড়িয়েছে। বায়ুদূষণ কমাতে পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতকরণ এবং শহরের রাস্তায় নিয়মিত পানি ছিটাতে সিটি কর্পোরেশনের প্রতি হাইকোর্টের নির্দেশনাও জারি হয়েছিল। কিন্তু তার বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। শহরের চারপাশে এবং সারাদেশে গড়ে ওঠা বৈধ-অবৈধ ইটের ভাটায় গাছ পোড়ানো, মানহীন কয়লা পুড়িয়ে কালো ধোঁয়াসহ বাতাসে বিষাক্ত কেমিক্যাল ছড়িয়ে মানুষের প্রাণধারণ ও নিঃশ্বাস গ্রহণের অক্সিজেনের মাত্রাকে ক্রমেই সঙ্কুচিত করে তোলা হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ নানাবিধ দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়া এবং পরিবেশ, প্রাণ-প্রকৃতি ও নগরীর বাসযোগ্যতা শেষ হয়ে যাওয়ার অশনি সংকেত প্রচারিত হওয়ার পরও কি আমাদের নগর কর্তৃপক্ষ ও সরকারের সংশ্লিষ্টদের ঘুম ভাঙ্গবে না? অথচ এসব বিবেচনা সামনে রেখেই ২০১৮ সালে সরকার একটি অ্যাকশন প্ল্যান গ্রহণ করেছিল। যানবাহন ও কলকারখানার দূষণ নিয়ন্ত্রণে বাস্তবে সে সব উদ্যোগের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।