Inqilab Logo

শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

১০ বছর ধরে ভুয়া এনআইডি-ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি, গ্রেফতার ৫

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২২ মার্চ, ২০২২, ৪:৪৮ পিএম

গত আট থেকে ১০ বছর ধরে সঙ্গীদের নিয়ে ভুয়া জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) ও ড্রাইভিং লাইসেন্স (ডিএল) তৈরি করে আসছিলেন মো. গোলাম মোস্তফা। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে অনলাইনে চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ দুটি জরুরি ডকুমেন্টেরও ব্যবসা শুরু করেন তারা। বিজ্ঞাপনটি র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সামনে আসলে শুরু হয় কড়া নজরদারি। তারই ধারবাহিকতায় গতকাল সোমবার রাজধানীর মালিবাগ, বাসাবো, শাহজাহানপুর ও কোতয়ালী থানা এলাকায় অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাটি। গ্রেফতার হন গোলাম মোস্তফা ও তার সহযোগীরা।
আজ মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় র‌্যাব। সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারের সহকারী পরিচালক এএসপি আ ন ম ইমরান খান। তিনি জানান, ভুয়া এনআইডি ও ডিএল তৈরি চক্রের মূলহোতাসহ গ্রেফতার পাঁচজনের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ভুয়া এনআইডি কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও এসব তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে।
চক্রের মূল হোতা মো. গোলাম মোস্তফাসহ গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মো. জালাল বাশার, মো. মুসলিম উদ্দিন, মিনারুল ইসলাম (মিন্নি) এবং তারেক মৃধা। তাদের কাছ থেকে দুটি কম্পিউটার, দুই হাজার ৪৬০টি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের জাল প্রাপ্তি স্বীকার রশিদ, ২৬টি ভুয়া এনআইডি, ১৮টি ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স, ৮০টি সাদা রঙের প্লাস্টিকের ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরির ব্ল্যাঙ্ক কার্ড, ৫০টি স্বচ্ছ কার্ড হোল্ডার, দুই রিল সিকিউরিটি লেমিনেটিং পেপার (যা দিয়ে জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ও জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করা যায়), একটি করে ল্যাপটপ ও ডিজিটাল ক্যামেরা, একটি কার্ড প্রিন্টার, চারটি করে সফ্টওয়্যারের সিডি ও পেনড্রাইভ, পাঁচটি মোবাইল ফোন ও নগদ ২৮০০ টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানায়, সম্প্রতি বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা এক শ্রেণীর অসাধু চক্রের মাধ্যমে ভুয়া এনআইডি কার্ড পায়। এছাড়া কয়েকজন জঙ্গি সদস্য আত্মগোপন করতে ভুয়া এনআইডির মাধ্যমে পাসপোর্ট বানিয়ে বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যায়। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকজন আসামিকে গ্রেফতারও করে র‌্যাব, যারা দীর্ঘ সময় ধরে অপরাধী ও পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন।
এএসপি আ ন ম ইমরান খান বলেন, আমরা দেখেছি এসব আসামি নিজেদেরকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ থেকে ফাঁকি দেয়ার জন্য ভিন্ন নামে ভুয়া এনআইডি কার্ড তৈরি করে আত্মগোপন করতো। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময় রাজধানীতে বেশ কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। আমরা ঘাতক পরিবহনের চালকদের গ্রেফতারের পর দেখেছি, তারা অনেকেই অপরিপক্ক এবং ভুয়া লাইসেন্সধারী।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে অনলাইনে চটকদার বিজ্ঞাপণের মাধ্যমে বিভিন্ন দ্রব্য বেচাকেনার পাশাপাশি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ভুয়া এনআইডি কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, বিভিন্ন প্রকার জাল সনদ তৈরির বিষয়টিও র‌্যাবের নজরে আসে। পরবর্তীতে র‌্যাবের সাইবার মনিটরিং সেল বিজ্ঞাপনটি আমলে নিয়ে ভুয়া এনআইডি-ডিএল তৈরি চক্রের সন্ধানে নামে, পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। তারই ধারাবাহিকতায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে চক্রটির পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।
র‌্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃতরাসহ ৫-৭ জনের একটি দল গত আট থেকে দশ বছর ধরে ভুয়া এনআইডি-ডিএলসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জাল সার্টিফিকেট ও অন্যান্য জাল নথিপত্র তৈরি করে আসছে। চক্রের মূলহোতা গোলাম মোস্তফা ও বাকিরা তার সহযোগী। চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন নির্বাচনী কার্যালয় ও বিআরটিএ অফিসের সামনে অবস্থান করে গ্রাহকদের টার্গেট করত। পরবর্তীতে তাদেরকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এনআইডি ও ডিএল পাইয়ে দেয়ার কথা বলে প্রতারণা করতো। বিশ্বাস অর্জনে তারা হুবহু জাল প্রাপ্তি স্বীকার পত্র ও মানি রিসিট বিআরটিএ ও বিভিন্ন ব্যাংকের ভুয়া সিল ও স্বাক্ষর ব্যবহার করে গ্রাহককে দিত। একইভাবে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপে চটকদার বিজ্ঞাপন পোস্ট করত। পরবর্তীতে কোনো গ্রাহক তাদের সঙ্গে এনআইডি-ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য যোগাযোগ করলে চক্রের কোনো সদস্য ওই গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ করত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করার ক্ষেত্রে ফেক আইডি ব্যবহার করত।
চক্রটি প্রতিটি ডিএল’র জন্য গ্রাহকদের কাছে তিন-চার হাজার টাকা দাবি করত। গ্রাহক রাজি হলে পরবর্তীতে দ্রুত সময় গুরুম্বপূর্ণ এসব ডকুমেন্টস হস্তান্তরের জন্য ৮ থেকে দশ হাজার টাকা দাবি করত। র‌্যাব আরো জানায়, এসব ক্ষেত্রে প্রতারক এ চক্রটি বাইক রাইডার, লাইসেন্সবিহীন বিভিন্ন গাড়ির চালক- যারা দ্রুত সময়ের মধ্যে এনআইডি-ডিএল পেতে আগ্রহী বা অবৈধভাবে লাইসেন্স-এনআইডি চায় তাদের টার্গেট করতো। তাদের বিশ্বাস অর্জনে প্রতারক দলের সদস্যরা বিভিন্ন বিআরটিএ কার্যালয়, নির্বাচন কমিশন ও সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের আশপাশে দেখা করতো। গ্রাহকের সঙ্গে বনিবনা হওয়ার পর তারা তিন থেকে ৭ দিনের মধ্যে এনআইডি-ডিএল সরবরাহ করত। জরুরি ক্ষেত্রে অর্থের বিনিময়ে চক্রের সদস্যরা এক দিনের মধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ এসব ডকুমেন্ট সরবরাহ করত। চক্রটি মোবাইল ব্যাংকিং বা সরাসরি অর্থ লেনদেনের মাধ্যমেও এসব কাজ পরিচালনা করে আসছিল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গ্রেফতার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ