Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিনা বিচারে বন্দি থাকা কাম্য হতে পারে না

প্রকাশের সময় : ১০ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিনা বিচারে ১৬ বছর ধরে কারাজীবন কাটিয়েছে তরুণ শিপন। ২২ বছর আগের অনিষ্পন্ন একটি হত্যা মামলায় সে কারাগারে বন্দি ছিল। বিষয়টি উচ্চ আদালতের নজরে এলে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন এবং জামিন পায় শিপন। গত ২৬ অক্টোবর গণমাধ্যমে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হলে সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন। এরপর মামলার নথি তলব করেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। শুনানি শেষে বিচারপতি এনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ শিপনকে জামিন দেন। এছাড়াও ঢাকার বিচারিক আদালতকে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। এ প্রসঙ্গে আদালত আরো বলেছেন, দ্রুত ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আলোচ্য ঘটনা ন্যায় বিচারের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। একই সঙ্গে এর দায় তদন্তকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্টরা এড়াতে পারেন না। আদালত বলেছেন, একটি সভ্যদেশ এভাবে চলতে পারে না।
বিনা বিচারে আটক থাকা বন্দির জামিনের ঘটনা মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এধরনের ঘটনা এই প্রথম নয়। এর আগেও মানবাধিকার সংস্থার উদ্যোগে বিভিন্ন কারাগার থেকে এ রকম অনেককে মুক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই গণমাধ্যম সহায়ক ভূমিকা হিসেবে কাজ করেছে। সর্বশেষ ঘটনাটি একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আলোচ্য ঘটনাতে দেখা যাচ্ছে, ১৯৯৪ সালে পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে দুই মহল্লার মধ্যে মারামারিতে মাহতাব নামে একজন খুন হয়। এ খুনের ঘটনায় শিপন ছিলেন দুই নম্বর আসামি। এজাহারে পিতার নাম ছিল অজ্ঞাত। পরে ১৯৯৫ সালে দেয়া অভিযোগপত্রে পিতার নাম উল্লেখ করা হয়েছিল, মোঃ রফিক। শিপনকে গ্রেফতারের পর ২০০১ সালে মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত করা হয়, সেই থেকে তিনি কারাগারে বন্দি থাকেন। বিনা বিচারে ৯ বছর জেলে থাকার পর এবছর জুলাইতে মুক্তি পেয়েছিলেন রাজধানীর খিলগাঁয়ের বাসিন্দা দিনমজুর ফরিদ। পুলিশ তাকে সন্দেহজনকভাবে আটক করেছিল। গত ১৯ জুলাই প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার অনুকম্পায় কারা মুক্তিলাভ করেছিলো যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বৃদ্ধা অহিদুন্নেছা। সাধারণত পুলিশের সন্দেহজনক গ্রেফতার, ভুল আসামি গ্রেফতারসহ নানাবিধ কারণে বিনাবিচারে আটক থাকার ঘটনা ঘটে থাকে। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বা ঘটতে পারছে? বাস্তবতা হচ্ছে, প্রতিটি মামলারই নথি থাকছে। কে কোথায় কি কারণে আটক তার বিবরণও সংশ্লিষ্টদের কাছেই থাকার কথা। তা সত্ত্বেও বারবার কেন এ ধরনের ঘটনায় আদালতকেই মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হচ্ছে, সেটি সত্যিই যেমনি ভাববার, তেমনি এ ধরনের ঘটনা সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতাকেই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, একশ্রেণীর পুলিশের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দায়িত্বে অবহেলার কারণেই এধরনের অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটতে পারছে। ঘটনা ঘটলে মামলা মোকাদ্দমা হবে, এটাই স্বাভাবিক। এর অর্থ এই নয় যে, বছরের পর বছর তা ঝুলে থাকবে। সরকারে যারা পিপি রয়েছেন তাদের ভূমিকাও এড়িয়ে যাবার নয়। বিনা বিচারে আটক থাকার ঘটনায় যে গুরুতর নাগরিক অধিকার ক্ষুণœ হয় তাতে কোন সন্দেহ নেই। এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
এ পর্যন্ত এ ধরনের যেক’টি ঘটনার সন্ধান পাওয়া গেছে তার বাইরে আর কেউ এভাবে বিনা বিচারে যে আটক নেই তা জোর দিয়ে বলা যাবে না। সে কারণে প্রতিটি কারাগারে বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার কেন এবং কিভাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বা ঘটতে পারছে তার কারণও অনুসন্ধান করা জরুরি। সেই সাথে যাদের জীবন থেকে সময় হারিয়ে গেছে তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দেয়া দরকার। দেশে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার বিবেচনায় প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার উপর জোর দিয়েছেন। মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা গেলে হয়ত এধরনের পরিস্থিতির অবসান হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সকলে এ ব্যাপারে আন্তরিক হবেন, এটাই দেশবাসী প্রত্যাশা করে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিনা বিচারে বন্দি থাকা কাম্য হতে পারে না
আরও পড়ুন