Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

জমি বাঁচাতে হবে, সঞ্চালন লাইন মাটির নিচ দিয়ে নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২১ মার্চ, ২০২২, ১২:০৭ এএম

পটুয়াখালীতে দেশের বৃহৎ পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন আজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন করবেন। একই সঙ্গে তিনি দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এটা অবশ্যই একটা মাইলফলক অর্জন যে, দেশের তাবৎ গ্রাম, জনপদের কোথাও আর এখন বিদ্যুতের আলোবিহীন নেই। বিদ্যুৎখাতে দেড় দশকে এই বিশাল সাফল্য লাভ সম্ভব হয়েছে। এই সময়ে বিদ্যুতের উৎপাদন যেমন চাহিদার তুলনায় বেড়েছে, তেমনি দেশের প্রত্যন্ত এলাকা পর্যন্ত বিদ্যুতের সঞ্চলন লাইন স্থাপন করা হয়েছে। এর আগে চাহিদানুপাতে বিদ্যুৎ ছিল না; অথচ বিদ্যুৎ লাইন টানা হয়েছিল। তখন বিদ্যুতের অভাবে তারসহ খাম্বা দাঁড়িয়েছিল দিনের পর দিন, মাসের পর মাস। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যায় উল্টোচিত্র। বিদ্যুৎ উৎপাদন পর্যাপ্ত; কিন্তু বিদ্যুৎ দেয়ার মতো সঞ্চালন লাইনের অভাব। একারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমাতে হয়েছে; অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রাখতে হয়েছে। অত্যন্ত দুঃখজনক, এই সময়ে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে হয়েছে। রেন্টাল-কুইক রেন্টাল কেন্দ্রের কাছ থেকে বিদ্যুৎ না কিনেও চুক্তি অনুযায়ী টাকা গুনতে হয়েছে। এভাবে বিদ্যুৎখাতে বিপুল লোকসান বা ভর্তুকি দিতে হয়েছে, এমনকি এখনো দিতে হচ্ছে। আর এ লোকসান-ভর্তুকি কমাতে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে ও হচ্ছে। পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় এরকম আনাড়িপনার নজির খুব বেশি দেখা যায় না। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেয়ার প্রতিজ্ঞা করলেই চলবে না, তা সর্বক্ষণের জন্য নিশ্চিতও করতে হবে। এ জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে সঞ্চালন লাইনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। জানা গেছে, এ পর্যন্ত ৬ লাখ ১৪ হাজার কিলোমিটারের মতো সঞ্চালন লাইন তৈরি করা হয়েছে। ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎখাতের এই অর্জনের পেছনে বড়রকমের বিসর্জনও দিতে হয়েছে। লাখ লাখ কিলোমিটার বিদ্যুতের তার, উচুঁ টাওয়ার ও খুঁটির নিচে পড়ে অকেজো হয়ে গেছে মানুষের সোনার টুকরো জমি। ফসল, গাছপালা ও বসত-বাড়ি খোয়াতে হয়েছে অনেককে। জমির জন্য কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি। ফসল ও গাছপালার জন্য ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিধান থাকলেও কম লোকই তা পেয়েছে।

এত দীর্ঘ লাইন, টাওয়ার ও খুঁটির জন্য কী পরিমাণ ফসলী ও অন্যান্য জমি বেরিয়ে গেছে, তার সঠিক হিসাব জানা না গেলেও আন্দাজ করা যায়, সেটা কতটা হতে পারে। এই জমির বেশির ভাগই সুফলা, এমনকি দু’ফসলী-তিন ফসলীও হতে পারে। কত রকমের কী বিপুল পরিমাণ ফসল এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সে সম্পর্কেও একটা ধারণা করা যায় বৈকি! এর ওপর রয়েছে মানুষের বাড়িঘরের ক্ষতি। গ্রাম-জনপদের ভেতর দিয়ে লাইন টানার সময় টাওয়ারসহ যেসব খুঁটি নির্মাণ করা হয়েছে, তাতে অনেক ক্ষেত্রে মানুষের বসতবাড়ি পড়ে আছে। এজন্য ঘর বা বাড়ি সরাতে হয়েছে। এরও ক্ষতিপূরণ মেলেনি। বলা বাহুল্য, আমাদের দেশে জমির পরিমাণ বেশি নয়। অধিকাংশ মানুষের জমির-পরিমাণ অতি সামান্য। প্রতি বছর বাড়িঘর নির্মাণে সেই জমির একাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে। মোট ফসলী জমি প্রতিবছর এক শতাংশ হারে কমে যাচ্ছে বলে জানা যায়। জমির পরিমাণ কমায় উৎপাদনও কমছে। এতে খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়ছে। এটা সত্য যে, গত ৫ দশকের মধ্যে ফসলের উৎপাদন কয়েক গুণ বেড়েছে জমির পরিমাণ ক্রমাগতভাবে কমে যাওয়ার পরও। এর কারণ উচ্চ ফসলশীলজাতের বীজ ব্যবহার, সার ও বালাইনাশক প্রয়োগ, সেচসুবিধা সম্প্রসারণ, উন্নত প্রযুক্তির সহায়তাগ্রহণ ইত্যাদি। বিশেষজ্ঞদের মতে, কম জমিতে আমরা যে বেশি ফসল পাচ্ছি, তারও একটা প্রান্তিক পর্যায় আছে। তখন শত চেষ্টা করেও আর উৎপাদন বাড়ানো যাবে না। খাদ্যের সংকট প্রকট আকার নেবে। এমতাবস্থায়, জমি সুরক্ষা করতে হবে, বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। জমির পরিকল্পিত ব্যবহার যেমন করতে হবে, তেমনি নিশ্চিত করতে হবে সর্বোচ্চ ব্যবহার। অন্যদিকে জমি নদী ও সাগর থেকে উদ্ধার করে ফসল উৎপাদনের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। অনাবাদী জমি আবাদী করার পদক্ষেপও জোরদার করতে হবে। যে কোনো মূল্যে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। খাদ্যনিরাপত্তার নিশ্চিত ও নির্ভরযোগ্য উপায় হলো, উৎপাদন বাড়িয়ে সমম্ভবতা অর্জন।

উন্নয়ন কার্যক্রম, বসতবাড়ি করা, বনায়ন, শিল্প-কারখানা স্থাপন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট তৈরিতে জমির ওপর হাত পড়বেই। এসব কাজে যাতে কম জমি ব্যবহার করা যায়, সেদিকে সর্বদা দৃষ্টি রাখতে হবে। সরকারের প্রয়োজনে জমি অধিগ্রহণ করার বিধান রয়েছে। এদিকে সরকারকেও খেয়াল রাখতে হবে, যাতে প্রয়োজনাতিরিক্ত জমি কোনো প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা না হয়। যেহেতু মানুষের জমিই সাধারণত অধিগ্রহণ করা হয়, সেক্ষেত্রে অধিগ্রহণ করার আগেই জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিতে হবে। পরিতাপের হলেও বলতে হচ্ছে, অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণ সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মালিকদের দিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয় না বলে অভিযোগ আছে। এনিয়ে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং বিভিন্ন সময় তাকিদ দিয়েছেন। আর বিদ্যুতের তার, টাওয়ার, খুঁটি অর্থাৎ সঞ্চালন লাইন তৈরির জন্য যে জমি নেয়া হয়েছে, তার জন্য ক্ষতিপূরণ দেয়ার কোনো বিধানই নেই। এ বিধান অবিলম্বে বিদ্যুৎ আইনের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। জানা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সঞ্চালন লাইন মাটির ওপর দিয়ে নয়, বরং নিচ দিয়ে নেয়া হয়ে থেকে। আমাদের দেশেও মাটির নিচ দিয়ে নিতে হবে। এতে জমি বাঁচবে, মানুষের বাড়িঘর, বৃক্ষ-বাগান রেহাই পাবে। অবস্থার পরিবর্তনে ব্যবস্থারও পরিবর্তন করতে হবে। জমির স্বল্পতায় জমির ব্যবহার কমাতে হবে, বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হবে।

 



 

Show all comments
  • jack ali ২১ মার্চ, ২০২২, ১২:১৩ পিএম says : 0
    আজ আমাদের দেশ 50 বছর ধরে স্বাধীন হয়েছে যারা দেশ চালিয়েছে তারা কি জানে কীভাবে দেশ চালাতে হয় তারা জানে কিভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হয় আমাদের কষ্টের অর্জিত ট্যাক্সের টাকা কিভাবে করতে হয় ঘুষ খেতে হয় মানুষকে হত্যা করতে হয় গুম করতে হয় মিথ্যা কেস দিয়ে মানুষকে বছরের পর বছর জেল খাটানো হয় মিথ্যা কেস দিয়ে মানুষকে ফাঁসি দেওয়া হয় প্রতিদিন হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজি করা হয় ধর্ষণ করা হয় যত ধরনের অপরাধ করা হয়
    Total Reply(0) Reply
  • jack ali ২১ মার্চ, ২০২২, ১২:১৫ পিএম says : 0
    একটা বাচ্চা কেউ যদি এই কাজটাও করানো হতো তাহলে সে বাচ্চাটা মাটির নিচে দিয়ে লাইন নিত মাটির উপরে যেসব টাওয়ার বানিয়ে লাইন নেওয়া হয়েছে ঝড় হলে ওগুলো সব ভেঙে পড়বে কত হাজার কোটি টাকা খরচ হবে আরেকটু বেশি খরচ হচ্ছে উপরে লাইন দেওয়ার জন্য মাটির নিচে দিয়ে লাইন খরচ অনেক কম হতো
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সঞ্চালন লাইন
আরও পড়ুন