পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ভার্চুয়াল জগতে জুয়া ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। শহর থেকে শুরু করে গ্রামের তরুণ-তরুণী, শিক্ষার্থীসহ প্রায় সব শ্রেণীর মানুষ এতে জড়িয়ে পড়ছে। এতে দেশ থেকে হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। অর্থ পাচার হয়ে যাওয়ার এখন নতুন একটি রুট হিসেবে ভার্চুয়াল জুয়া পরিগণিত হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা সক্রিয় এবং নিয়মিত তাদের টার্গেট করে জুয়া আয়োজনকারিরা গুগল-ফেসবুকে চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন দিয়ে আকৃষ্ট করছে। এতে বুঝে, না বুঝে অনেকেই এই জুয়ার ফাঁদে পড়ছে। জুয়ার নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। জুয়ার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে অনেকে নানা অপরাধে এমনকি খুনের ঘটনায়ও জড়িয়ে পড়ছে। গত ১৩ মার্চ নিজ ড্রাইভারের হাতে খুন হন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মহিলা কর্মকর্তা। গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, ড্রাইভার ভার্চুয়াল জগতে জুয়ায় আসক্ত ছিল। জুয়ার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে মহিলার স্বর্ণালঙ্কার লুট করতে সে এ খুনের ঘটনা ঘটায়। এ এক ভয়াবহ ঘটনা। শুধু খুন নয়, ভার্চুয়াল জুয়ায় আসক্তদের কারণে পারিবারিক অশান্তি ও শৃঙ্খলাও ভেঙ্গে পড়ছে। এ আসক্তির কারণে অনেক অভিভাবক নিরুপায় হয়ে পড়েছে। গত কয়েক মাসে ডিবি, সিআইডি, র্যাবসহ বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ভার্চুয়াল জুয়ার সাথে জড়িত অর্ধশতাধিক লোককে গ্রেফতার করেছে। তাদের মধ্যে বিভিন্ন ভার্চুয়াল পেজের সুপার অ্যাডমিন ও এজেন্ট রয়েছে। জানা যায়, ভারত, রাশিয়া, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বসে একটি সংঘবদ্ধ চক্র ভার্চুয়াল জুয়ার সাইট চালাচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্যান্য নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের মধ্যে ভার্চুয়াল জুয়া এখন নতুন এক সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি ও তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ অল্প সময়ে অধিক লাভবান হওয়ার লোভে পড়ে বিভিন্ন জুয়ার সাইটে বিনিয়োগ করে। খেলতে খেলতে একসময় তারা নেশাসক্ত হয়ে পড়ে। হেরে গেলে অর্থ জোগাড় করার জন্য তারা নানা অপরাধে এমনকি খুন-খারাবিতেও জড়িয়ে পড়ছে। সংঘবদ্ধ জুয়াড়িচক্র বিভিন্ন সাইটের মাধ্যমে লোভনীয় অফার দিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করছে। অনেকেই তা না বুঝে অংশগ্রহণ করছে। হারা-জেতার অর্থ ভার্চুয়াল কারেন্সিতে চললেও লেনদেন হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। এতে হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। বিটিআরসি ইতোমধ্যে প্রায় দুই শতাধিক এ ধরনের জুয়ার সাইট বন্ধ করলে এগুলো প্রাইভেট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে চলছে। গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিদেশ থেকে ওয়েব হোস্টিং ক্রয়ের কারনে এসব জুয়ার ওয়োব ও অ্যাপ বন্ধের স্থায়ী কোনো উপায় নেই। নজরে এলে বিটিআরসি’র মাধ্যমে ব্লক করা হলেও ভিন্ন কৌশলে সেগুলো আবার পরিচালিত হয়। তিনি জানিয়েছেন, এই ভার্চুয়াল জুয়ার কারণে পারিবারিক সহিংসতা ও অশান্তি বেড়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে, রিক্সা চালক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পর্যন্ত ভার্চুয়াল জায়ার দিকে ঝুঁকছে। বলা বাহুল্য, যেকোনো ধরনের জুয়া এমন এক নেশা, যা মানুষকে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য করে তোলে। হেরে গেলে এর স্পৃহা আরও বেড়ে যায়। তখন জুয়ার টাকা জোগাড় করার জন্য বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়াসহ খুন, পারিবারিক নির্যাতনে জড়িয়ে পড়ে। পরিবারের কর্তাব্যক্তি পরিবারের প্রতি উদাসীন পড়ে। স্ত্রী-সন্তানের প্রতি হিংস্র আচরণ করে থাকে। নীতি-নৈতিকতা হারিয়ে বেসামাল হয়ে যায়। ইসলামে জুয়াকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। জুয়ার ধারে-কাছে না যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জুয়ায় উপার্জিত অর্থ হারাম। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, অনেকে ইসলামের এই দিকনির্দেশনা জেনেও জুয়ায় আসক্ত হচ্ছে। অর্থ উপার্জনের সহজ মাধ্যম হিসেবে নিচ্ছে। ডিজিটাল মাধ্যমে যুক্ত হওয়ায় জুয়া এখন আধুনিক ও চটকদারভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। আকাশ সংস্কৃতি উন্মুক্ত হওয়ায় বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে জুয়ার আসর চালানো যায়। সংঘবদ্ধ চক্র প্রলুব্ধকর ম্যাসেজ দিয়ে ভার্চুয়াল জগতে বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করছে, ফাঁদে ফেলছে। এতে যারা অংশগ্রহণ করে তাদের জেতার মতো কোনো সুযোগ থাকে না। তারা নিজেরাও বুঝতে পারে না, এই জুয়ার মাধ্যমে তাদের প্রদেয় অর্থ দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
ভার্চুয়াল জুয়া থেকে বিরত থাকার একমাত্র উপায় তরুণ-তরুণী, শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সব শ্রেণীর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা। পরিবারের অভিভাবকদের সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। তারা মোবাইলে বা কম্পিউটারে দীর্ঘসময় ধরে কি কাজ করে, সেদিকে নজরদারি করতে হবে। বিটিআরসিকেও এমন ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে জুয়ার সাইট ব্লক করলেও তা যেন অন্যকোনো উপায়ে চালানো না যায়। এজন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে জুয়া আসক্তদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। সবাইকে সতর্ক করতে হবে। ভার্চুয়াল জুয়ার প্রতারণা সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। সামাজিক আন্দোলন করতে হবে। বিভিন্ন মিডিয়ায় এর কুফল নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।