Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বাজার ব্যবস্থাপনায় ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করতে হবে

ড. মো. কামরুজ্জামান | প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০২২, ১২:১৩ এএম

২০১৮ সালের ১৫ মার্চ বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নীতি সংক্রান্ত কমিটি বাংলাদেশকে এ যোগ্যতা অর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। এ ঘোষণার মানে হলো, বাংলাদেশ এখন একটি উন্নয়নশীল দেশ। অর্থাৎ এটি এখন আর গরিব দেশ নয়। সত্য যে, বাংলাদেশে ধনীদের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেেেয়ছে এবং পাচ্ছে। ২০২০ সালের ৩০ মে প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১০ বছরে সম্পদশালীর সংখ্যা বৃদ্ধির হারের দিক দিয়ে বিশে^ বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম। বিশ্লেষকদের মতে, ধনীদের সংখ্যা বৈধভাবে বৃদ্ধি পাওয়া ভালো। তবে ধনীদের আয় যেভাবে বাড়ছে সেভাবে দরিদ্রদের আয় বাড়ছে না। ফলে আয় ব্যবধান বেড়েই চলছে, বেড়ে চলছে ধনবৈষম্য। বাংলাদেশে শীর্ষ সম্পদশালী আছেন ৫০ জন। এর মধ্যে ১০ জন আছেন যারা দেশে সর্বেচ্চ ধনী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে বাংলাদেশে ১০০ কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিক আছে ২৭ জন। আর ৫০ কোটি টাকা বা তার চেয়ে অধিক সম্পদের মালিক আছে ৪৬ জন। অথচ, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। এর মধ্যে উল্লেখিত মুষ্টিমেয় মানুষই উন্নয়নের সুফল ভোগ করছে। আর তাদের অনেকে সরকারের রাজনীতির সাথে জড়িত হয়ে আরো অতিরিক্ত সুযোগ গ্রহণ করছে। এসব ধনীর মধ্যে আরো আছে আমলা ও কামলা। তারাও সরকারের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিয়ে ফুলে ফেঁপে মোটাতাজা হচ্ছে। মূলত এসব ধনী মানুষই উন্নয়নের সুফল ভোগ করে চলেছে। দেশের অন্যান্য সবাই উন্নয়নের সুফল থেকে সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত রয়ে গেছে। উক্ত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ উন্নয়শীল দেশের কাতারে শামিল হলেও অধিকাংশ মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘোরেনি। বর্তমানে বাংলাদেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৩ কোটি ২০ লাখ। আর অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। বৃহত্তর এ দরিদ্র জনগোষ্ঠির কাছে উন্নয়ন শব্দটি হাস্যকর ছাড়া কিছুই না। তারা উন্নয়ন বলতে কিছুই বোঝে না। একজন রিকশাওয়ালার আয় এই বাজারে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার বেশি নয়। একজন বাদাম বিক্রেতার আয় ২০০ থেকে ৩০০ টাকার বেশি নয়। এমনিভাবে একজন মুটে-মজুরের আয়ও এর চেয়ে বেশি নয়। এসব দরিদ্র মানুষের অনেকেই দেশের বিভিন্ন শহরের বস্তিতে বসবাস করে। আবার অনেকে ফুটপাতে জীবন অতিবাহিত করে। এ সমস্ত হতদরিদ্র রাস্তায় আয় করে, রাস্তায় খায় এবং রাস্তায়ই ঘুমায়। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, শুধু ঢাকা শহরের বস্তিতে বসবাসকারী ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যাই ৪০ লাখ। এসব ছিন্নমূল মানুষের জমি-জমা নেই, বাড়ি-ঘর নেই। ভিটে-মাটি বলতে কিছুই নেই। এ সমস্ত মানুষ পান-বিড়ি-সিগারেট ও বাদাম বিক্রি করে সংসার চালায়। দিনে তারা ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করে। তাদের কাছে উন্নয়শীল কথাটা একবারেই অর্থহীন। এছাড়া ঢাকা শহরের ফুটপাতে বসবাসকারী ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। করোনা মহামারী এসব ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি ঘটিয়েছে। এ সমস্ত মানুষের কথা বিবেচনা করে প্রতিবছর ‘বিশ^ বসতি দিবস’ পালিত হয়ে থাকে। বছরের ১২টি মাস এসব মানুষ দারিদ্র্যের সাথে যুদ্ধ করেই বেঁচে থাকে। দিনের ২৪ ঘন্টা তারা বিরামহীন শ্রম বিক্রি করে। মাসের ৩০টি দিনই তারা জীবনযুদ্ধে নিয়োজিত থাকে। বছরের ৩৬৫ দিনের একটি দিনও তারা স্বাচ্ছন্দে কাটাতে পারে না। আনন্দ-বিনোদন বলতে তাদের জীবনে কিছুই নেই। এসব মানুষের কাছে উন্নয়ন শব্দটি একবারেই গুরুত্বহীন। এসব মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সবচেয়ে মৌলিক প্রয়োজন হলো খাদ্য। কিন্ত বর্তমানে এ খাদ্য ঊর্ধ্বগতিতে এসব মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। অস্বাভাবিকভাবে এবং হঠাৎ করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় জনগণের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। তাদের ক্রয়ক্ষমতা না থাকায় সংসারে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। বিশেষজ্ঞদের মতে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। মুনাফালোভী মজুদদাররা অধিক মুনাফা অর্জনের নেশায় দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশে মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা এটাই প্রথম নয়। বিগত কয়েক বছর যাবৎ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির গতি অব্যাহত রয়েছে। তবে যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমান বাজারদর আকাশচুম্বী। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে সরকারের কেউ কেউ আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করছেন।
বর্তমান বাজারে ন্যায়সঙ্গত ও নির্ধারিত মূল্য বলতে এখন আর কিছুই নেই। দফায় দফায় মূল্য বৃদ্ধি পেলেও মানুষের আয় মোটেই বাড়েনি। হতদরিদ্রের আয় সেই ৩০০-৫০০ টাকার মধ্যেই রয়ে গেছে। ফলে সীমিত আয়ে সংসার চালাতে তারা হিমশিম খাচ্ছে। দফায় দফায় বেড়েছে গ্যাস ও তেলের দাম। সরেজমিনে বাজার পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, একটি গ্যাস সিলিন্ডারের বর্তমান মূল্য ১৪০০ টাকা। এক মাস আগেও যার মূল্য ছিল ১ হাজার টাকা। তার কয়েক মাস আগে ছিল ৮০০ টাকা। এক লিটার সোয়াবিনের বর্তমান বাজার মূল্য ১৭০-১৭৫ টাকা। গত সপ্তাহে যার দাম হাকানো হয়েছিল ১৯০ টাকা। ২০২১ সালে এ সোয়াবিনের মূল্য ছিল ১৩০-১৪০ টাকা। এমতাবস্থায় সরকারের পক্ষ্য থেকে বিনা তৈলে রান্নার পরামর্শ এসেছে! বিষয়টি দেশব্যাপী রীতিমতো হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষের জীবনকে অসহায় করে তুলেছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিজনিত নাজুকতা খুবই বিরল ঘটনা। পূর্ব ঘোষণা ও ব্যবস্থা ব্যতীত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে অন্যান্য দেশে সরকারকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। সরকার যদি কাক্সিক্ষত জবাব দিতে না পারে তাহলে সেখানে জনবিক্ষোভ দেখা দেয়। বাংলাদেশে পূর্ব কোনো ঘোষণা ও ব্যবস্থাপনা ছাড়াই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ঘটেই চলেছে। এটা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সরকার নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বললেও বাস্তবে তা যথেষ্ট বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। ফলে দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ার লাগামও টেনে ধরা যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় সাধারণ মানুষের কষ্ট হলেও কালোবাজারি আর মুনাফাখোরদের কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। তারা সুযোগ পেয়ে জনগণের উপর আরো চড়াও হয়েছে। তারা ইচ্ছেমতো পণ্যের দাম হাকিয়ে পকেট ভারি করছে। আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে বারবার। আমাদের উৎপাদিত পণ্য বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না। এই সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা অসাধু উপায়ে ফায়দা লুটে নিচ্ছে। দেশের অসহায় জনগণকে অমানবিক পীড়ায় রেখে অনেক রাজনীতিক ফায়দা হাসিল করে চলেছে। বিগত দুই বছর ধরে করোনা মহামারীর দরুন সাধারণ মানুষ একেবারে অসহায় হয়ে পড়েছে। তারা করোনার সাথে লড়াই করে বড্ডো বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। আর বর্তমানে করোনার চেয়ে ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে লাগামহীন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে থাকায় দরিদ্র মানুষেরা বিপাকে পড়েছে। এসব দরিদ্র মানুষের জন্য সরকার তাই খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে। ভ্রাম্যমাণ এ বিক্রয় কেন্দ্র থেকে সাধারণত এসব গরিব মানুষই কম দামে পণ্য ক্রয় করে থাকে। কিন্তু বর্তমানে সেখানে মধ্যবিত্তরাও যোগদান করেছে। ফলে এবছর ভ্রাম্যমাণ বাজার তথা খোলাট্রাকে ক্রয় বিক্রয়ের লাইন অনেক দীর্ঘ হয়ে পড়েছে। কম দামে পণ্য পেতে অনেক মধ্যবিত্ত এখন টিসিবির লাইনে দাঁড়াচ্ছে। তবে এখানেও মুনাফালোভীরা বসে নেই। এসব মুনাফাখোর ব্যবসায়ীগণ তাদের কর্মচারী দিয়ে লাইন দীর্ঘ করাচ্ছে। টিসিবি থেকে অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের লোকদের দিয়ে পণ্য ক্রয় করাচ্ছে। টিসিবি থেকে কম দামে পণ্য কিনে দোকানে নিয়ে বেশি দামে সেটা বিক্রি করছে। আর এর মাধ্যমে এ চক্রটি লাগামহীন মুনাফা অর্জন করছে। ফলে লাইনে দাঁড়িয়েও অনেক গরিব মানুষ পণ্য ক্রয় করতে পারছেন না। তারা খালি হাতে ফিরে আসছে। মূলত শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কারসাজিতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। সরকার কতিপয় পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বললেও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসছে না। পণ্য ঘাটতির কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কথা বলা হলেও ভরা মৌসুমে সবজির বাজারে রীতিমতো আগুন। এক কেজি সজনে ডাটার বর্তমান মূল্য ৮০০ টাকা! ২০০ টাকা হ্রাস পেয়ে আজ (১৫/০৩/২০২০) সেটার মূল্য ৬০০ টাকা! এক কেজি উস্তের মূল্য ১০০ টাকা। এক কেজি পটলের মূল্য ১০০ টাকা। একটি মাঝারি সাইজের লাউয়ের মূল্য ৫০ থেকে ৬০ টাকা। বুঝাই যাচ্ছে, যে কোনো সময়ের চেয়ে সবজির দাম এখন কয়েকগুণ বেশি। দেশে মোটা চাউলেন দাম এখন ৪২-৪৩ টাকা, যার পূর্ব মূল্য ছিল ৩৭-৩৮ টাকা। মিনিকেট চাউলের দাম ছিল ৬০ টাকা, যার বর্তমান মূল্য ৬৫ টাকা। কাজল লতার দাম ছিল ৫০-৫২ টাকা, যার বর্তমান মূল্য ৫৬-৫৭ টাকা। আটাইশ চাউলের মূল্যও একই অবস্থা। মশুর ডালের কেজি এক মাস আগে ছিল ১০০ টাকা। বর্তমান মূল্য ১৩০ টাকা। এই যখন অবস্থা তখন জাতীয় নেতৃবৃন্দের কথাবার্তা জাতির সাথে তামাশার শামিল বলেই মনে হয়। কারণ এসব নিয়ে নীতি নির্ধারকদের একজন বলেছেন, মানুষের হাতে টাকা আছে তাই তারা বেশি দামে চিকন চাল ক্রয় করছে। আবার কেউ একজন বলে ফেললেন, দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে, তাই বেশি দাম হলেও তাদের কোনো সমস্যা হবে না। আবার কেউ কেউ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য বিরোধীপক্ষকে দোষারোপ করে নিজেদের দায় এড়াতে চাইছেন। পণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণ যখন অতিষ্ঠ তখন নেতাদের কথাবার্তা রীতিমত জাতির সঙ্গে উপহাস ছাড়া কিছুই নয়। সামনে রমজান মাস। প্রতি বছর রমজানে মুনাফাখোর মহাজনেরা পণ্যের দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। অথচ, মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিম বিশ্বের অন্য সকল দেশ রমজান মাসে পণ্যের দাম কমিয়ে দেয়। তাই রমজানকে সামনে রেখে সরকারের এ মুহূর্তে উচিত দ্রুত বাজার ব্যবস্থা মনিটরিং করা। পণ্যের দাম কমিয়ে বাজার ব্যবস্থায় দ্রুত স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা অতীব জরুরি। না হলে যে কোনো সময় জনবিক্ষেভ দেখা দিতে পারে। সম্ভাব্য জনবিক্ষোভ এড়াতে কালবিলম্ব না করে দ্রব্যমূল্য ক্রয়সীমার মধ্যে আনা দরকার। রমজানকে সামনে রেখে দ্রুত পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা এখন সময়ের অপরিহার্য দাবি। বাজার ব্যবস্থাপনা স্থিতিশীল রাখতে ইসলামে বেশ কিছু নির্দেশনা রয়েছে। নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করলে বাজার ব্যবস্থা যেমন স্থিতিশীল হবে, তেমনি দ্রব্যমূল্যও নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে। এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে অনাকাক্সিক্ষত মুদ্রাস্ফীতি রোধ করা যায়। বাজার ব্যবস্থাপনা থেকে অস্থিতিশীলতা দূর করা যায়।
মূলত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রধান কারণ হলো মজুতদারদের পণ্য মজুতদারী। এ ব্যাপারে সরকারকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। মজুতদার উপদেশের মাধ্যমে মজুতদারী বন্ধের আহবান জানাতে হবে। সরকারের আহবান-উপদেশ অমান্য করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে ইসলাম কঠোরভাবে ভূমিকা রাখতে নির্দেশ প্রদান করেছে। মজুদদারদের সম্পর্কে নবীজি (সা.) ঘোষণা করেছেন, ‘মজুদদারের মানসিকতা কতই না ঘৃণ্য! দ্রব্যমূল্য হ্রাসের খবর পেলে মজুততদারের মনের মধ্যে খারাপ লাগে। আর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে তার মনের মধ্যে আনন্দ লাগে! যে ব্যক্তি ৪০ দিন ধরে খাদ্যদ্রব্য মজুদ করে রাখবে, আল্লাহ তা’আলা তাকে কুষ্ঠ রোগ ও অভাব দ্বারা শাস্তি দেবেন।’ (ইবনে মাজা)। সরকার মজুমদারের পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় অংশ রেখে দিয়ে বাকি অংশ বিক্রি করার ব্যবস্থা করবে। সরকারের পক্ষ থেকে তাকে মজুদ করতে নিষেধ করবে। নিষেধ অমান্য করলে ব্যবস্থা নেবে। (আল মুহিত)। মুসলিম আইনবিদদের মতে, মজুদদারের সম্মতি ছাড়াই মজুদকৃত সমুদয় পণ্য রাষ্ট্র বিক্রি করতে পারবে। সরকারকে লক্ষ্য করতে হবে, মধ্যস্বত্বভোগীদের দ্বারা মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে কিনা। কারণ, অনেক সময় মধ্যস্বত্বভোগী কর্তৃক পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এজাতীয় অপতৎপরতা ইসলাম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। সুতরাং বাজারে পণ্য প্রবেশের পূর্বে স্বল্প মূল্যে তা কেনাবেচা ইসলাম কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে। (তিরমিজি)। এজাতীয় ক্রয়-বিক্রয় আমজনতা ও ভোক্তার স্বার্থ নষ্ট করে। অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যও বেড়ে যায়। পণ্য সাধারণত গ্রামে বেশি উৎপাদন হয়। স্বাভাবিক নিয়মে তারাই বাজারে এসে পণ্য বিক্রয় করে থাকে। কিন্তু অধিক মুনাফাখোররা অধিক লাভের আশায় পণ্য বাজারে আসার আগেই তা ক্রয় করে ফেলে। হাদিসে এ ধরনের কাজকে নিষেধ করা হয়েছে। রাসূল সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মূল্যবৃদ্ধির অসৎ উদ্দেশ্যে মুসলমানদের ক্রয়-বিক্রয়ে হস্তক্ষেপ করে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা তাকে আগুনের হাড়ে বসিয়ে শাস্তি দিবেন। (তাবরানি: ৮/২১০)।
ইসলামের নির্দেশনা হলো, সরকারকে অবশ্যই বাজার ব্যবস্থাপনায় আন্তরিকভাবে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। কেউ যেন বাজার অস্থিতিশীল না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাজারব্যবস্থা স্বাভাবিক থাকলে সরকার পণ্যমূল্য নির্ধারণ করে দেবে না। কিন্তু যখন বাজারব্যবস্থা অস্বাভাবিক হয়ে যায়, বাজার ব্যবস্থা অস্থিতিশীল হয়ে যায়, অসাধু সিন্ডিকেট যখন পরস্পরের যোগসাজশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে দেয়, তখন সরকারের উচিত, বাজারে হস্তক্ষেপ করা। এ সময় সরকারের দায়িত্ব হলো, সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া। যাতে বাজার ব্যবস্থাপনা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। (ফাতহুল মুলহিম ১/৩১২)। ইসলাম এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেছে। সরকার যখন দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করতে চাইবে, তখন বাজারের গণ্যমান্য লোকদের একত্র করবে। ক্রেতাদের উপস্থিত করবে। ক্রয়মূল্য এবং বিক্রয়মূল্য শুনবে। এরপর সত্যতা যাচাই করবে। অতঃপর সরকার উৎপাদক, আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ বিবেচনা করবে। ক্রেতা সাধারণের ক্রয়সীমার ক্ষমতা বিবেচনা করবে। অতঃপর মূল্য নির্ধারণ করবে। এমনভাবে নির্ধারণ করবে, যাতে উল্লেখিত সংশ্লিষ্ট সকলের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়। প্রথমত মানুষ হিসেবে, দ্বিতীয়ত মুসলিম হিসেবে ইসলাম নির্দেশিত এ বাজারব্যবস্থাপনা সকলের মেনে চলা উচিত।
লেখক: কলামিস্ট ও অধ্যাপক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
[email protected]



 

Show all comments
  • শোয়েব ২০ মার্চ, ২০২২, ১০:০১ এএম says : 0
    ইসলামেই রয়েছে সকল সমস্যার সমাধান
    Total Reply(0) Reply
  • jack ali ২০ মার্চ, ২০২২, ১২:৩৭ পিএম says : 0
    আল্লাহর আইন দিয়ে দেশ চালালে আপনি যে আর্টিকেল লিখেছেন এত সময় নষ্ট করেছেন এটার কোন দরকার ছিল না ....................
    Total Reply(0) Reply
  • আজিজুল ইসলাম ২০ মার্চ, ২০২২, ১১:০০ পিএম says : 0
    সরকারের উচিত পরামর্শ গুলো গ্রহণ করে বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাজার ব্যবস্থাপনায় ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি
আরও পড়ুন