নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
সামনে পাহাড়সম লক্ষ্য। ম্যাচ বাঁচানোর চ্যালেঞ্জও খুব কঠিন। তার মধ্যে শুরুতেই দুই উইকেট হারানোর ধাক্কা। সেখান থেকে চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় কী দুর্দান্ত ইনিংসটাই না খেললেন বাবর আজম। হয়ে গেলেন দলকে জয়ের সমতুল্য ড্র এনে দেওয়ার নায়ক। অল্পের জন্য যদিও পাওয়া হয়নি ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। তবে পরিস্থিতির দাবি মেটানো ১৯৬ রানের ইনিংসটির মাহাত্ম্য তার কাছে অনেক বেশি।
গতপরশু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে করাচি টেস্টে ৫০৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় শেষ দিনে ৮ উইকেট হাতে নিয়ে পাকিস্তানের দরকার ছিল ৩৩৪ রান। আর মাচ বাঁচাতে কাটিয়ে দিতে হতো ৯০ কিংবা এর বেশি ওভার। আবদুল্লাহ শফিকের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে বাবরের ২২৮ রানের জুটিতে তারা পেয়ে যায় শক্ত ভিত। টেস্ট ইতিহাসে যেখানে ৪১৮ রানের বেশি তাড়া করে জয়ের রেকর্ড নেই, সেখানে বাবর ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের শতরানের জুটিতে একসময় জয়ের সম্ভাবনাও উঁকি দেয়। শেষ ২০ ওভারে তাদের প্রয়োজন ছিল ১৩১ রান, হাতে তখনও ৬ উইকেট। তবে দিনের ১২ ওভার বাকি থাকতে আউট হয়ে যান বাবর। ন্যাথান লায়নের পরের বলে ফিরে যান নতুন ব্যাটসম্যান ফাহিম আশরাফও। তখন উল্টো পরাজয়ের শঙ্কায় পড়ে যায় পাকিস্তান। তবে রিজওয়ানের দারুণ এক সেঞ্চুরিতে শেষ পর্যন্ত ম্যাচ বাঁচাতে পারে স্বাগতিকরা।
টেস্টে দুই বছরের বেশি সময়ের সেঞ্চুরি খরা কাটিয়ে বাবর ৪২৫ বলে খেলেন ১৯৬ রানের ম্যারাথন ইনিংসটি। ১০ ঘণ্টার বেশি সময় ব্যাটিং করা ইনিংসে ২১ চারের পাশে ছক্কা একটি। টেস্ট ইতিহাসে অধিনায়ক হিসেবে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর এটি। একই সঙ্গে চতুর্থ ইনিংসে পাকিস্তানের কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ। চতুর্থ ইনিংসে চারশর বেশি বল খেলা চতুর্থ ব্যাটসম্যানও তিনি।
ম্যাচ শেষে বাবর তুলে ধরলেন তার নিজের কাছে ইনিংসটির গুরুত্ব কতটা। জানালেন রিজওয়ানের সঙ্গে তার ব্যাটিংয়ের পরিকল্পনাও, ‘এই ইনিংসটি আমার কাছে অনেক অর্থপূর্ণ, কারণ এটা দলের প্রয়োজন ছিল। আমরা রান তাড়ার বিষয়ে বাস্তববাদী ছিলাম। চা বিরতি পর্যন্ত আমরা স্বাভাবিক ব্যাটিং করতে চেয়েছিলাম এবং তারপর যদি নিজেদের এমন অবস্থায় পেতাম, যখন আমরা তাড়া করতে পারি, তাহলে করতাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা উইকেট হারিয়ে ফেলি, তাই আমরা রান তাড়া করার কথা ভাবিনি। আমাদের ম্যাচ বাঁচাতে হতো। যদি আমি আরও বেশি সময় থাকতাম তাহলে হয়তো আমরা তাড়া করার চেষ্টা করতাম।’
৬০৩ মিনিট। ৪২৫ বল। ১৯৬ রান। ৫ সেশন। সংখ্যা নয়, মহাকাব্য। করাচিতে মহাকাব্য রচনার পর তার ব্যাটিংয়ের প্রশংসা না হয়ে পারে! ভিভ রিচার্ডস থেকে শুরু করে ওয়াসিম জাফর কিংবা হার্শা ভোগলে- খেলোয়াড়, ধারাভাষ্যকার থেকে শুরু করে সবাই মেতেছেন বাবরের প্রশংসায়। সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইকেল ভন তো ম্যাচ শেষেই বাবরকে সনদ দিয়ে দিয়েছেন, ‘কোনো সংশয় নেই, বাবর আজমই এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে পরিপূর্ণ ব্যাটসম্যান। সব সংস্করণেই দারুণ।’ বাবরের ভালো লাগবে চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী ভারতের সাবেক ব্যাটসম্যান ওয়াসিম জাফরের টুইটও। বাবর আউট হওয়ার সময় অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররাই হাততালিতে অভিনন্দন জানাচ্ছিলেন, এমন ছবি টুইটে দিয়ে জাফর লিখেছেন, ‘কিছু ইনিংস জয় এনে দেয়, কিছু আরও পরিণত করে। শেষটা দীর্ঘমেয়াদে কাজে আসে। মনসিকভাবে আরও পরিণত করার মতো ইনিংস আর ম্যাচ দেখলাম বাবর আজম ও তার সতীর্থদের কাছ থেকে। প্যাট কামিন্স ও তার সতীর্থদেরও বাহবা দিতে হয়, অবিশ্বাস্য কিছু প্রায় করেই ফেলেছিল!’
স্যার ভিভ রিচার্ডস অবশ্য শুধু বাবর নয়, তার পাশাপাশি মোহাম্মদ রিজওয়ানকেও প্রশংসায় ভাসিয়েছেন। বাবর ও রিজওয়ানের একে অন্যকে আলিঙ্গনে বাঁধার একটা ভিডিও দিয়ে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড টুইটে শুধু ‘ওরা দুজন’ লিখে পাশে ভালোবাসার ইমোজি দিয়েছে। সেটি রি-টুইট করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবদন্তি লিখেছেন, ‘প্রতিভার কী দারুণ প্রদর্শনীই না রেখে যাচ্ছেন দুজন! বিশ্ব ক্রিকেটের ভাগ্য যে এমন খেলোয়াড়দের দেখার সুযোগ মিলছে।’
ভারতের জনপ্রিয় ক্রিকেট বিশ্লেষক ও ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে টেস্টেও যে বাবর নিজেকে প্রমাণ করতে শুরু করেছেন, সেটি তুলে ধরেছেন, ‘টেস্ট ক্রিকেটই ছিল একটা দিক, যেখানে বাবর আজমের নিজেকে আরেকটু ওপরে তুলে ধরতে হতো, তা-ই হচ্ছে। যখন সে ক্রিজে নেমেছে, তখনো ৪৮০ রান দরকার ছিল পাকিস্তানের, ১৭০ ওভার বাকি ছিল ইনিংসে। অবিশ্বাস্য জয়ের আশা হয়তো ধীরে ধীরে মিইয়ে গেছে, কিন্তু ওই পরিস্থিতি থেকে ড্রও অসাধারণ ফল। কী দারুণ এক খেলোয়াড়!’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।