Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিজেপি সরকারের পক্ষেই রায় দিলো হাইকোর্ট

হিজাব বিতর্ক সুপ্রিম কোর্টে যাবার চিন্তাভাবনা ছাত্রীদের ষ আদালতের রায় হতাশাজনক : মেহবুবা মুফতি পোশাক বাছাইয়ের অধিকারের সাথে প্রতারণা : ওমর আব্দুল্লাহ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৬ মার্চ, ২০২২, ১২:০২ এএম

ইসলাম ধর্মাচারণে হিজাব অপরিহার্য নয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের হিজাব পরা নিয়ে তৈরি হওয়া যাবতীয় বিতর্কের এ রায় দিয়েছে কর্ণাটক হাইকোর্ট। শিক্ষাঙ্গনে হিজাব নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে যেসব আবেদন জমা পড়েছিল, গতকাল মঙ্গলবার তা খারিজ করে দিয়েছে আদালত।

কর্ণাটক সরকার গত ৫ ফেব্রæয়ারি একটি নির্দেশিকা জারি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব পরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। তারপর থেকেই সে রাজ্যে হিজাব ইস্যুতে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিশেষ করে উদুপি জেলায় বিক্ষোভের জেরে স্কুল-কলেজগুলো রীতিমতো রণক্ষেত্রের রূপ ধারণ করেছিল। লাগাতার প্রতিবাদের জেরে বেশ কয়েকদিন স্কুল-কলেজ বন্ধও রাখতে হয় কর্ণাটক সরকারকে।

সরকারের সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন করেন কয়েকজন মুসলিম শিক্ষার্থী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধ করা যাবে না, এ মর্মেই একাধিক মামলা করা হয়েছিল। সরব হয় বিরোধী দলগুলোও। সেই মামলাতেই গতকাল কর্ণাটক হাইকোর্ট রায় দিয়েছে যে, হিজাব ইসলামে বাধ্যতামূলক নয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ড্রেস কোড থাকতেই পারে। হিজাব বিতর্কে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, তার ব্যক্তিগত মতামত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় পোশাক নয়, ইউনিফর্ম পরাই বাঞ্ছনীয়। তবে সেসময় বিষয়টি কর্ণাটক হাই কোর্টের বিচারাধীন। আদালত যা সিদ্ধান্ত নেবে, তা তিনি মেনে নেবেন। এবার দেখা গেল, কর্ণাটকের বিজেপি সরকারের পক্ষেই রায় দিল হাইকোর্ট।

প্রসঙ্গত, কর্ণাটকের হিজাব বিতর্ক ভারতের গন্ডিও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই, বিখ্যাত ফুটবলার পল পোগবা পর্যন্ত এই ইস্যুতে মুখ খুলেছিলেন। এমনকি হিজাব বিতর্কে ভারতের সমালোচনা করে আমেরিকাও।

এদিকে হিজাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার কর্ণাটক হাইকোর্টের সিদ্ধান্তকে গভীর হতাশাজনক বলে ব্যাখ্যা করেছেন জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি। গতকাল তিনি বলেন, এটা শুধু ধর্মের বিষয় নয়, নির্বাচন করার স্বাধীনতাও, যা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।

পিডিপি সভাপতি মেহবুবা মুফতি টুইটারে লিখেছেন ‘হিজাব নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার জন্য কর্ণাটক হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত গভীরভাবে হতাশাজনক। একদিকে আমরা মহিলাদের ক্ষমতায়নের কথা বলি, তবুও আমরা তাদের একটি সাধারণ পছন্দের অধিকারকে অস্বীকার করছি। এটি কেবল ধর্মের বিষয় নয়, বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা’।

এদিন ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লাহ বলেন, এটি একটি ‘প্রতারণা’ যে, আদালত একজন মহিলার পোশাক বেছে নেওয়ার মৌলিক অধিকারকে সমর্থন করেনি। তিনি এদিন বলেন, ‘কর্নাটক হাইকোর্টের রায়ে খুবই হতাশ। হিজাব সম্পর্কে আপনি যা ভাবুন না কেন, এটি একজন মহিলার অধিকার, যে তিনি কীভাবে পোশাক পরতে চান। আদালত তা করেনি। এই মৌলিক অধিকার বজায় রাখা নিয়ে প্রতারণা করা হচ্ছে’।

উদুপির এক প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্রীদের একাংশ ক্যাম্পাসে হিজাব পরার অধিকারের দাবি তুলেছিলেন। যার পাল্টা একাংশের ছাত্র গেরুয়া শাল পরে আসা শুরু করে। এরপরই বিষয়টি একটি বড় বিতর্কের আকার নিয়েছিল। ধীরে ধীরে এ বিতর্ক রাজ্যের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায়, বেশ কয়েকদিন কর্নাটকের সব স্কুল-কলেজ-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিল রাজ্য সরকার। এদিন হাইকোর্টের রায়ের আগেও কর্ণাটকে বন্ধ রাখা হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।

প্রধান বিচারপতি রিতু রাজ অবস্থির নেতৃত্বে কর্ণাটক হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার সকালে হিজাব ইস্যুতে রায় ঘোষণা করে। দিনের প্রথমার্ধে বিষয়টি তালিকাভুক্ত করা হয়। বিচারপতি কৃষ্ণ এস. দীক্ষিত এবং বিচারপতি খাজি জাইবুন্নেসা মহিউদ্দীনকে নিয়ে গঠিত তিন বিচারপতির বেঞ্চ যুক্তিতর্ক ও পাল্টা যুক্তি শোনার পর বিষয়টি আগে রায়ের জন্য সংরক্ষণ করেছিল।

রায় ঘোষণা হলেও এখানেই হিজাব বিতর্কের ইতি হচ্ছে না। আবেদনকারীরা এবার সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথা ভাবছেন। অন্যদিকে, স্বাভাবিকভাবেই এ রায়ে খুশি কর্নাটকের বিজেপি সরকার।
কর্নাটক হাইকোর্টে ধাক্কা খাওয়ার পর আবেদনকারীরা জানিয়েছেন, হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ আদেশ বের হওয়ার পর তারা সেই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যাবেন। তাদের পক্ষের আইনজীবী শাহুল বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন। বিস্তারিত আদেশ এলে প্রথমে তা বিশ্লেষণ করা হবে। তারপর যাওয়া হবে সুপ্রিম কোর্টে।

আর, কর্নাটকের অ্যাডভোকেট জেনারেল, প্রভুলিং নাভাদগি বলেন, রাজ্য সরকারের আদেশে বলা হয়েছিল, সাম্য, অখÐতা এবং জনশৃঙ্খলাকে বিঘিœত করে এমন পোশাক পরা নিষিদ্ধ। সরকারি আদেশে কোথাও হিজাবের বিষয়ে কোনো কথা বলা ছিল না। তাই সরকারি আদেশটি প্রকৃতিগতভাবে নির্দোষ। সেটি আবেদনকারীদের ধর্মীয় অধিকারকে খর্ব করে না।

কর্ণাটক হাইকোর্টের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী। তিনি সকলের কাছে রাষ্ট্র ও দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলার আবেদন করেছেন। আবেদন করেছেন, যাতে সকলে উচ্চ আদালতের আদেশ মেনে শান্তি বজায় রাখেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের মৌলিক কাজ হল পড়াশুনা করা। তাই এসব বাদ দিয়ে তাদের পড়াশুনা করা উচিত এবং ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত।

কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাইও শান্তি ও স¤প্রীতি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন। সকলে যাতে এই রায় মেনে নেয়, সেই আবেদন করছেন। তিনি বলেন, ‘আদালতের আদেশ আমাদের মানতেই হবে। এটা আমাদের শিশুদের ভবিষ্যতের বিষয়, শিক্ষার থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়’। কর্নাটক বিজেপির মুখপাত্র মালবিকা অবিনাশও শিক্ষার্থীদের অবিলম্বে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। সূত্র : টাইমস নাউ, এশিয়ানেট নিউজ।



 

Show all comments
  • সফিক আহমেদ ১৬ মার্চ, ২০২২, ৪:৫৬ এএম says : 0
    ভারতের কোর্টের কাছ থেকে এর চেয়ে ভালো কিছু প্রত্যাশা করা যায় না
    Total Reply(0) Reply
  • Nayeemul ১৬ মার্চ, ২০২২, ৬:০৫ এএম says : 0
    বিচারকের মাথায় মগজ আছে নাকি গোবরে ভরা সন্দেহ আছে। অবাক হওয়ার কিছু নেই যে ................. বিচারক।
    Total Reply(0) Reply
  • Yousman Ali ১৬ মার্চ, ২০২২, ৯:১৭ এএম says : 0
    No nevar
    Total Reply(0) Reply
  • jack ali ১৬ মার্চ, ২০২২, ৬:০১ পিএম says : 0
    Pigs are trillion trillion better then Hindu Kafirs. O'Allah help us and protect us from all these Kafirs and from Taghut, Munafiq.. Ameen
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ