পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দৈনিক ইনকিলাবের খবরে বলা হয়েছে, নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব সারা দেশ। প্রশাসনের উদাসীনতায় পলিথিন ব্যবসায়ীদের এখন পোয়াবারো। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে পলিথিনের ব্যবসা করার সুযোগ নিয়ে সরকারদলীয় এক শ্রেণীর নেতা হয়েছেন কোটিপতি। অনুসন্ধানের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, পুরান ঢাকায় নিষিদ্ধ পলিথিন কারখানার সংখ্যা বেড়ে দুইশ’ থেকে এখন তিনশ’তে ছাড়িয়ে গেছে। লাভ বেশি বিধায় প্লাস্টিক ব্যবসায়ীরাও ঝুঁকছে পলিথিন ব্যবসার দিকে। নিষিদ্ধ বলে পুরান ঢাকায় পলিথিন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে গড়ে উঠেছে একাধিক শক্তিশালী সিন্ডিকেট। প্রয়োজনে তারা ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। অবৈধ পলিথিন সম্পর্কে রিপোর্ট করতে গিয়েই একটি বেসরকারি টিভি’র দুই সাংবাদিক সম্প্রতি এদের হামলার শিকার হয়েছেন। সন্ত্রাসীরা কেরোসিন ঢেলে সাংবাদিকদের হত্যা করতে চেয়েছিল। এদিকে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বনাঞ্চল কমÑ এশিয়ার এমন দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। দেশটিতে মোট আয়তনের মাত্র ১১ দশমিক ২ শতাংশ বনভূমি রয়েছে। বাংলাদেশের এ অবস্থা সম্পর্কে পরিবেশবিদরা মনে করছেন, গত ৩০/৪০ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সুন্দরবন এলাকায় বনভূমির বিস্তর ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির তুলনায় নতুন করে বন বাড়ানোর কোন পরিকল্পনা নেয়া হয়নি। পরিবেশবিদরা মনে করছেন, বনভূমি ধ্বংস হবার কারণে প্রাকৃতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। সাইক্লোন বা জলোচ্ছ্বাস থেকে বনভূমি আগে যেভাবে জনপদ ও মানুষকে রক্ষা করতো, সেটা এখন কম করতে পারবে। বনভূমির সাথে মানুষের জীবন-জীবিকাও জড়িত। আশঙ্কা করা হচ্ছে বিদ্যমান বনভূমি রক্ষা ও কীভাবে বাড়ানো যায় সে বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করা না গেলে জনসংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে বনভূমি আগের চেয়ে আরো দ্রুত ধ্বংস হবে।
নদ-নদী বেষ্টিত প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের দেশ বলে বাংলাদেশের যে খ্যাতি ছিল আজ তা মানব সৃষ্ট ও বৈরী পরিবেশের কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে। প্রতিবেশীর বৈরীপানি নীতির কারণে দেশের নদ-নদীগুলো নাব্যহীন হয়ে পড়ছে। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে প্রকৃতির উপর। বলা যায়, এক ধরনের মরুকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে পানির অভাবে। এক সময়কার প্রমত্তা নদীগুলো এখন শীর্ণকায় অনেকটা মরাখালে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। সংকট দেখা দিয়েছে কৃষির জন্য পানির। এই বাস্তবতায় নদ-নদী খননের উপর সংশ্লিষ্টমহল জোর দিলেও কার্যত তাতে খুব একটা অগ্রগতি রয়েছে একথা বলা যাবে না। যেটুকু নদ-নদী রয়েছে তাও নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে মানবসৃষ্ট কারণে। অন্যদিকে পনিশূন্যতা ও মানব সৃষ্ট কারণে সুন্দরবনও তার আয়তন হারাতে শুরু করেছে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে শত বিরোধিতা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্টরা তা থেকে বিরত থাকছেন না। সাধারণভাবেও বনভূমি উজাড় হচ্ছে। ফলে শুধু বনই নয়, বরং বনাশ্রয়ীরাও হারাচ্ছে তাদের জীবন-জীবিকা। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর পলিথিন নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও কেন তার উৎপাদন বন্ধ করা যাচ্ছে না সেটা সত্যিই ভাববার। এই পলিথিনের কারণে সারা দেশে পরিবেশ বিপর্যস্ত, ভেঙে পড়েছে ড্রেনেজ ব্যবস্থা, উর্বরতা হারাচ্ছে মাটি, বাতাসে ছড়াচ্ছে বিষ, ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদী, খাল-বিল, পরিচ্ছন্নতা হারাচ্ছে সড়ক গলিপথ। নিয়মানুযায়ী পলিথিন উৎপাদন নিষিদ্ধ হবার কথা থাকলেও এখন দেখা যাচ্ছে শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরেও ৩০টি জেলায় এই মারাত্মক ক্ষতিকর উপাদান উৎপাদিত হচ্ছে। পলিথিনের পাইকারি বিক্রেতারা জানিয়েছেন, পলিথিন কারখানাগুলো এখন প্রকাশ্যেই চলছে। খুচরা বিক্রেতারাও জানিয়েছে , এখন এসব নিয়ে রাখ-ঢাকের কোন প্রয়োজন হয় না। পুরোনো ঢাকায় উৎপাদিত এসব পলিথিন একটি নির্দিষ্ট ট্রান্সপোর্টের মাধ্যমে সারাদেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড.একেএম ফখরুদ্দিন বলেছেন, পলিথিন নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ভবিষ্যতে স্যুয়ারেজ লাইন বন্ধ হয়ে যাবে। নদী মরে যাবে, প্রাণিজ সম্পদ ধ্বংস হবার মাধ্যমে পরিবেশের মহাবিপর্যয় দেখা দিবে।
পরিবেশ ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। প্রকৃতি পরিবেশের উপরই নির্ভর করে মানুষের জীবন। পরিবেশ রক্ষা করার দায়িত্ব মানুষের। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে ইতোমধ্যেই হারিয়ে গেছে অনেক প্রকৃতিবান্ধব প্রাণী। নদ-নদী পানিহীন হবার কারণে হারিয়ে গেছে অনেক প্রজাতির মাছ। বৃক্ষাদি নিধনের ফলে প্রকৃতি হয়ে উঠছে রুক্ষ। দেশের সচেতন মহল পরিবেশ রক্ষায় ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বারবার তাগিদ দিলেও একশ্রেণীর অর্থলোলুপ দুর্নীতিবাজের কারণে ঘটছে তার বিপরীত। যত উন্নয়ন বা যা কিছুর কথাই বলা হোক না কেন যদি পরিবেশ রক্ষা করা না যায় তাহলে কোনকিছুই কাজে আসবে না। অবশ্যই পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশবিভাগের ভূমিকাই মুখ্য। তারা সচেতন সতর্ক এবং দুর্নীতিমুক্ত হলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে বাধ্য। পরিবেশ রক্ষার জন্যই পলিথিনের উৎপাদন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। নদ-নদী খাল-বিলে যাতে পানি থাকে তার ব্যবস্থা করা অতীব প্রয়োজনীয়। বনভূমি উজাড় নয় বরং বনভূমি বৃদ্ধিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া সময়ের দাবি। সবমিলে আমরা মনে করি, সামগ্রিকভাবে পরিবেশ রক্ষায় যা যা করণীয় তার সবটুকুই করা সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে আন্তরিক হবেন- এটাই দেশবাসী আশা করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।