পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে সংসদ সদস্যদের সভাপতি অন্তর্ভুক্তির বিরুদ্ধে দেয়া হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছে আপীল বিভাগ। ইতিপূর্বে গত ১লা জুন বিশেষ কমিটির মাধ্যমে বেসরকারী স্কুল-কলেজ পরিচালনা এবং মানোন্নয়নের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের সভাপতি হওয়া সংক্রান্ত আইনের ধারা বাতিল করে একটি রায় দিয়েছিল হাইকোর্ট। এই রায়ের বিরুদ্ধে আনীত রিট পিটিশনটি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত আপীল বিভাগের বেঞ্চ খারিজ করে দেয়ায় বিশেষ কমিটির বিধান এবং এমপিদের সভাপতি মনোনীত হওয়ার পথ স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেল। এই রায়ের মধ্য দিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেননকে সভাপতি করে গঠিত বহুল আলোচিত ভিকারুননিসা নুন স্কুল এন্ড কলেজের বিশেষ ব্যবস্থাপনা কমিটিও বাতিল হয়ে গেল। এখন থেকে সারাদেশে সব বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিদেরকে ভোটের মাধ্যমে সরাসরি নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক ঐক্য ফোরামের নেতৃবৃন্দ এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। অন্যদিকে রীট মামলার পক্ষের আইনজীবী এই রায়কে একটি ঐতিহাসিক রায় হিসেবে উল্লেখ করে এর মধ্য দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির সুযোগ অনেকাংশে বন্ধ হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে নতুনভাবে ঢেলে সাজাতে সরকারের পরিকল্পনা ও শিক্ষামন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কোন কমতি নেই। তথাপি দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা ও রাজনৈতিক দলবাজির গ্যাঁড়াকল থেকে মুক্ত করা সম্ভব হচ্ছেনা। এসব সামাজিক-রাজনৈতিক প্রতিকূল বাস্তবতায় কখনো কখনো শিক্ষামন্ত্রীকেও অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে দেখা গেছে। আইনের দুর্বলতা তথা রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের বিশেষ কমিটির বিধান এবং সারাদেশে এমপিদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে পদ দখলের সুযোগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্থানীয় দলীয় ক্যাডার ও প্রভাবশালী মহলের দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে। ভর্তি বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য, দলবাজি ও স্বজনপ্রীতির কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রকৃত মেধাবীরা সুযোগ বঞ্চিত হওয়ায় কাক্সিক্ষত মানোন্নয়নে সাফল্য পাচ্ছেনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। বিশেষত, বেসরকারী মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় রাজনৈতিক আধিপত্য এবং সামাজিক কোন্দলের শিকার হয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে নানাভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। স্থানীয় এমপিরা পদাধিকারবলে একই সঙ্গে অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সভাপতি নিয়োজিত থাকায় কোন প্রতিষ্ঠানের দিকেই যথেষ্ট মনোযোগ বা সময় দিতে পারেন না। অতএব, এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কর্মকা- এমপি’র রাজনৈতিক কর্মী ও ক্যাডারদের নিয়ন্ত্রণেই পরিচালিত হচ্ছে। বেশীরভাগ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষার্থী ভর্তি, অবকাঠামো উন্নয়নসহ প্রতিষ্ঠানের সব কর্মকা-ে বছরে কোটি কোটি টাকার লুটপাট ও ভাগ-বাটোয়ারার আখড়ায় পরিণত হচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে দলবাজ শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠান প্রধানরা রাজনৈতিক ছত্রছায়া নিয়ে প্রতিষ্ঠানকে দীর্ঘস্থায়ী মামলাবাজির মধ্যে ঠেলে দিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সাধারণ অভিভাবক ও শিক্ষানুরাগী মহলের অংশগ্রহণের নিয়মিত কমিটি গঠনে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করতে দেখা যায়।
আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থায় বিরাজমান আজকের বিশৃঙ্খলা, সামাজিক-রাজনৈতিক অবক্ষয়, দুর্নীতি, লুটপাট ও দুর্বৃত্তায়নের যে বিষবৃক্ষ বেড়ে উঠেছে, তার শেকড় প্রোথিত রয়েছে আমাদের চলমান শিক্ষাব্যবস্থায়। রাষ্ট্র, সরকার, আমলাতন্ত্র ও রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে উন্নত, গতিশীল, দুর্নীতিমুক্ত ও জনবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে হলে প্রথমেই শিক্ষা ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত ও যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। শুধুমাত্র ম্যানেজিং কমিটিতে এমপিদের মনোনয়ন বা বিশেষ কমিটি গঠনের সুযোগ রহিত করলেই এই সমস্যার সমাধান হবেনা। শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রকৃত মেধাবী ও যোগ্যতর সুশিক্ষিত ব্যক্তিদের নিয়োগ প্রক্রিয়া অবারিত করতে হবে। শিক্ষাবোর্ড ও অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে স্থানীয় শিক্ষাপ্রশাসন পর্যন্ত প্রশাসনিক কর্মকা-ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা ও সরকারী দলের আস্থাভাজন অযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়ে শিক্ষাব্যবস্থাকে একটি জটিল আবর্তে নিক্ষেপ করা হয়েছে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে এই জটিল আবর্ত থেকে বের করে আনতে ও শিক্ষার মানোন্নয়নের প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে দলনিরপেক্ষ ও নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দলবাজি, রাজনৈতিক সন্ত্রাস এবং মামলাবাজির ধারা বন্ধ করতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক, স্থানীয় প্রশাসন ও সামাজিক সমন্বয় ছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়। পরিচালনা পর্ষদে এমপিদের মনোনয়ন রহিত করা হলেও সরকারী দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা যেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অযাচিত হস্তক্ষেপ করতে না পারে সে বিষয়ে সরকারের বিশেষ নজরদারি ও নির্দেশনা থাকতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।