Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আমরা নতুন জীবন ফিরে পেয়েছি...

বেরিয়্যাট্রিক সার্জারি রোগীদের অনুভূতি

প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কিছু দিন আগেও আমার শরীরের ওজন ছিল ১৩৫ কেজি, আমার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে। হার্টের চিকিৎসা নিয়ে ওজন কমানো আমার পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। আমি হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম!

পরে আমার এক বন্ধু ড. সারফরাজের শরণাপন্ন হওয়ায় কথা বলল, তিনি একজন বেরিয়্যাস্ট্রিক সার্জন। বিলিভ ইট অর নটÑ আমার ওজন কমে গিয়ে এখন ৮০ কেজিতে। আসলেই তিনি অনন্য। এভাবেই নিজের সুস্থ, স্বাভাবিক ও কর্মচঞ্চল জীবনের গল্প শোনালেন বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেল দেশ টেলিভিশনের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হাসান।
শুক্রবার রাজধানীর গুলশান ক্লাবে কলকাতার বেলভ্যু হাসপাতালের বিখ্যাত বেরিয়্যাটিক সার্জন ডা. সারফরাজ জলিল বেগ-এর চিকিৎসাসেবা পেয়ে নতুন জীবন ফিরে পেয়েছেন; এ ধরনের বেশ কয়েকজন রোগী সমবেত হয়েছিলেন এ চিকিৎসক দম্পতিকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে। শুধু আরিফ নয়; সবার কণ্ঠেই ছিল এমন কৃতজ্ঞতার বহির্প্রকাশ।
হাবিব নামের ১৭ বছর বয়সী এক কিশোর বলেন, আমি কোনো কাজ করতে পারতাম না। স্কুলের ক্লাস রুম ছিল ৭ তলায়। আমার ক্লাসে উঠতে অনেক সময় পার হয়ে যেত। কিন্তু বেরিয়্যাট্রিক সার্জারির মাধ্যমে ৯৮ দিনের মধ্যে আমার ওজন প্রায় ৩৫ কেজি কমে নিয়ন্ত্রণে চলে আসায় আমি স্থূলজীবনের দুর্বিষহ অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে নতুন জীবন ফিরে পেয়েছি।
ডা. সারফরাজ বলেন, স্থূলতা একটি বৈশ্বিক সমস্যা। পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠী স্থূলতার শিকার। ধনী রাষ্ট্রগুলোতে এমনিতেই এই সমস্যা প্রকট; এমনকি অপেক্ষাকৃত দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোও এই সমস্যা এড়াতে পারছে না। বাংলাদেশের একটি বড় অংশ যেমন পুষ্টিহীনতার শিকার আবার আরেকটি অংশ রয়েছে; যারা অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ এবং জীবনধারার কারণে স্থূলতার শিকার।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১৯৮০ থেকে ২০১৩ সালের ব্যবধানে বাংলাদেশে স্থূলতার হার দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। শহরের পাশাপাশি গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যেও স্থূলতা, ডায়াবেটিক ও হৃদরোগের হার আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে। ফাস্টফুড সংস্কৃতি, অতিরিক্ত ভিডিও গেমস, মোবাইল এবং কম্পিউটার ব্যবস্থার ফলে আমাদের কোমলমতি শিশুদের মাঝেও স্থূলতার প্রবণতা আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে গেছে।
ডা. বেগ জানান, ভারতীয় উপমহাদেশ বিশ্বের ডায়বেটিকপ্রবণ এলাকার মধ্যে অন্যতম। বিভিন্ন কারণে স্থূলতার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। অযৌক্তিকভাবে স্থূল ব্যক্তিদের দোষারোপ করা উচিত নয়। অনেক সময় সমাজ-সচেতনতা এবং রাষ্ট্রব্যবস্থাও এসবের জন্য দায়ী। দেশে পর্যাপ্ত পুষ্টিবিদ, শারীরিক প্রশিক্ষক, লাইফস্টাইল কোচ, যোগব্যায়ামবিদ এবং স্থূলতা নিয়ন্ত্রণে পেশাদারি প্রতিষ্ঠানের অনুপস্থিতির কারণে কেউ চাইলেও শুধু দামি-দামি ওষুধ বা জিমনেসিয়ামের উপর নির্ভর করে স্থূলতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। শুধু খাবার নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যায়াম করে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছেন এমন লোকের সংখ্যা ৫ শতাংশের বেশি নয়।
কলকাতার বেলভূ হাসপাতালের চিকিৎসক সারফরাজ আরো বলেন, যারা অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করছেন এবং চেষ্টা করেও স্থূলতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না; তাদের জন্য একমাত্র বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হচ্ছে পুষ্টি ও জীবনধারার পরিবর্তন এবং বেরিয়্যাট্রিক সার্জারি। বেরিয়্যাট্রিক সার্জারি তীব্র স্থূলতার পাশাপাশি ডায়াবেটিস, ফ্যাটি লিভার, হৃদরোগ, বন্ধ্যাত্ব, বাত, নিদ্রাহীনতা, হারনেসসহ বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতার চিকিৎসায় কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশসহ উন্নত বিশ্বে শতভাগ সাফল্যের সঙ্গে বেরিয়্যাট্রিক সার্জারির মাধ্যমে স্থূল মানুষেরা স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে এসেছে।
সাইফ চন্দন
মিডিয়া কনসালট্যান্ট যোগাযোগ : ০১৯১৪০১০৬৪২



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আমরা নতুন জীবন ফিরে পেয়েছি...
আরও পড়ুন