Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যুদ্ধ নয়, প্রয়োজন শান্তি

ড. মো. কামরুজ্জামান | প্রকাশের সময় : ১২ মার্চ, ২০২২, ১২:০৯ এএম

১৯৯১ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পূর্ব পর্যন্ত ইউক্রেন রাশিয়া প্রজাতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত একটি প্রদেশ ছিল। এটি রাশিয়ার প্রতিবেশী পূর্ব ইউরোপের একটি দেশ। আয়তনের দিক থেকে এটি ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। এর জনসংখ্যা সাড়ে চার কোটির কাছাকাছি। এটি ইউরোপ মহাদেশের অষ্টম জনবহুল দেশ। ইউক্রেনের বৃহত্তম শহর ও রাজধানীর নাম কিয়েভ। ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ থাকা অবস্থায় সেখানে দুটো গ্রুপ ছিল। সে দুটো গ্রুপ এখনও বিদ্যমান রয়েছে। একটা গ্রুপ ইউরোপের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলতে চায়। তারা চায়, ইউক্রেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে যোগদান করুক। আর প্রতিরক্ষার স্বার্থে ন্যাটো সামরিক বাহিনীর সদস্যভুক্ত হোক। ইউক্রেনের পূর্ব ও উত্তর পূর্ব সীমান্তে রাশিয়া অবস্থিত। এ সীমান্তে বসবাসকারী অনেক ইউক্রেনীয় আছে, যারা জাতিগতভাবে রুশ। রুশো ভাষা ও সাহিত্য-সংস্কৃতির সাথে তাদের রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এ সীমান্তবর্তী ইউক্রেনীয়রা চায় রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠতা রাখতে। ইউক্রেনের সাথে রাশিয়ার সংকট অনেক পুরনো। চলমান সংকটের সূত্রপাত হয় ২০১৪ সালে। এসময় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ভিক্তর ইয়ানুকোভিচ। আদর্শিকভাবে তিনি ছিলেন রুশপন্থী। ২০১৪ সালে ইউক্রেনে সরকার বিরোধী প্রচন্ড এক অভ্যুত্থান ঘটে। এতে ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতাচ্যুত হয়ে রাশিয়ায় পালিয়ে যান। তার জায়গায় ক্ষমতায় আসীন হয় রাশিয়া বিরোধী ইউরোপ সমর্থক সরকার। ক্ষমতায় আসীন হয়েই নতুন সরকার রুশ সংস্কৃতির উপর নিয়েধাজ্ঞা জারি করে। রুশ ভাষা নিষিদ্ধসহ রুশবিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রমে পদক্ষেপ নেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রাশিয়া ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ক্রিমিয়া দখল করে। পূর্ব ইউক্রেনের রুশপন্থীরা ইউক্রেনের পশ্চিমাঘেঁষা সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। ঐতিহাসিক এসব কারণে রাশিয়া ইউক্রেনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে মনেপ্রাণে মেনে নিতে পারেনি। রাশিয়া মনে করে, ইউক্রেন তার সমগোত্রীয় ছোট ভাই। সুতরাং সেভাবেই তাদের আচরণ হওয়া উচিত। অন্যদিকে ইউক্রেনীয়রা জাতিতে স্বাধীনচেতা। তাদের স্বতন্ত্র জাতীয়তাবাদ শত শত বছরের চেতনায় সমৃদ্ধ। তাদের স্বাধীনতার চেতনা লেনিনপূর্ব রাশিয়াকেও নানাভাবে ভুগিয়েছিল। বলশেভিক পার্টি ক্ষমতায় আসার অনেক আগেই ইউক্রেন স্বাধীন হওয়ার চেষ্টা করে। ১৯২০ সালে ভ্লাদিমির লেনিন কঠোরভাবে স্বাধীন ইউক্রেন গঠনের প্রচেষ্টাকে দমন করেন।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ রাশিয়া ইউক্রেনের উপর হামলা শুরু করেছে। হামলায় ইতোমধ্যেই ইউক্রেনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমেরিকা ও ইউরোপ প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধে না জড়ালেও শুরু থেকেই তারা ইউক্রেনের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। তারা রাশিয়ার উপর নানাবিধ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। রাশিয়া একটি প্রাচীন পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। সামরিক বাহিনীতে রাশিয়ার রয়েছে ৮ লাখ সৈন্য। বিপরীতে ইউক্রেনের আছে ২ লাখ। রাশিয়ার বিমান বাহিনীতে প্রায় ৫ হাজার সামরিক বিমান রয়েছে। আর ইউক্রেনের রয়েছে মাত্র ৩২০টি। রুশ নৌবহরে রণতরী আছে ১১টি আর ইউক্রেনের আছে ১টি। রাশিয়ার সাঁজোয়া যানের সংখ্যা ৩০ হাজার আর ইউক্রেনের ১২ হাজার। রাশিয়ার অ্যাটাক হেলিকপ্টার আছে ৫৪৪টি আর ইউক্রেনের আছে ৩৪টি। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর ট্যাংক আছে ১২ হাজার ৪২০টি। আর ইউক্রেনের আছে ২ হাজার ৫৯৬টি। রুশ সামরিক যুদ্ধবিমান আছে ৭৭২টি আর ইউক্রেনের আছে ৬৯টি। রাশিয়ার সামরিক জাহাজ আছে ৬০৫টি আর ইউক্রেনের আছে ৩৮টি। রাশিয়ার মোট আয়তন ৬৫,৯২,৮০০ বর্গমাইল, জনসংখ্যা প্রায় ১৫ কোটি। অপরদিকে ইউক্রেনের আয়তন ২৩৩০১৩ বর্গমাইল, জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে চার কোটি। রাশিয়া বিশ্বের সর্ববৃহৎ দেশ, যার রয়েছে পৃথিবীর আবাসযোগ্য জমির এক অষ্টমাংশ। রাশিয়ার হাতে সবচেয়ে বড় অস্ত্র হলো জ্বালানি। ইউরোপ শতকরা ২৫ ভাগ তেল-গ্যাস আমদানি করে থাকে রাশিয়া থেকে। ইউরোপে এ তেল-গ্যাস সরবরাহের পাইপলাইন গেছে ইউক্রেনের ভিতর দিয়ে। এ পাইপলাইন দিয়ে রাশিয়া শতকরা ৪০ ভাগ তেল-গ্যাস রফতানি করে থাকে। এতে বুঝতে বাকি নেই যে, ইউক্রেনকে জোর করেই রাশিয়া তার প্রভাবের বাইরে যেতে দেবে না। তাছাড়া, রাশিয়ার সক্ষমতার তুলনায় ইউক্রেনের অবস্থান যোজন যোজন দূরে। তারপরেও যুদ্ধ চলমান রয়েছে। উভয়পক্ষ আলোচনায় বসলেও যুদ্ধ থেমে নেই।

ইউক্রেন নিয়ে টানাটানির আরো কারণ আছে। প্রাকৃতিক সম্পদে ইউক্রেন রাশিয়া থেকে খুব পিছিয়ে নেই কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইউক্রেন এগিয়ে আছে। ইউরেনিয়াম আকরিক মজুদের দিক থেকে দেশটি প্রথম স্থান দখল করে আছে। টাইটানিয়াম আকরিক মজুদে দেশটি ইউরোপের দ্বিতীয় দেশ হিসেবে প্রসিদ্ধ। আর গোটা বিশ্বে এক্ষেত্রে ইউক্রেনের অবস্থান ১০ম। ম্যাঙ্গানিজ আকরিকের মজুদকারী দেশ হিসেবে বিশ্বে ইউক্রেনের অবস্থান দ্বিতীয়। লৌহ আকরিক ও পারদ আকরিক মজুদেও দ্বিতীয়। কয়লা মজুদের ক্ষেত্রে ইউক্রেনের অবস্থান বিশ্বে সপ্তম। কৃষিতে ইউক্রেনের অবস্থান ইউরোপে প্রথম। এখানে ব্যাপক সূর্যমুখী তেল উৎপাদন হয়। এ তেল রপ্তানিতে ইউক্রেনের অবস্থান বিশ্বে প্রথম। বার্লি উৎপাদনে ইউক্রেন দ্বিতীয় আর এটি রপ্তানিতে বিশ্বে চতুর্থ। বিশ্বের চতুর্থ আলু উৎপাদনকারী দেশ ইউক্রেন আর তৃতীয় ভুট্টায়। সরিষা উৎপাদনে পঞ্চম, মৌমাছি উৎপাদনে পঞ্চম, গম রপ্তানিতে অষ্টম, মুরগীর ডিম উৎপাদনে নবম এবং পানি রপ্তানিতে ১৬তম স্থানে অবস্থান করছে এ ইউক্রেন। ৬০০ মিলিয়ন মানুষের খাদ্য চাহিদা মেটাতে সক্ষমতা রাখে এ ইউক্রেন। এতসব কারণে ইউক্রেন হয়ে পড়েছে রাশিয়া ও আমেরিকার কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ দেশ। ইউক্রেনকে নিয়ে গোটা বিশ্ব এখন দু’ভাগে বিভক্ত। একদিকে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছে আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বেলজিয়াম, কানাডা, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ড, ইতালি, নরওয়ে, পর্তুগাল ও ফ্রান্স আছে ইউক্রেনের পক্ষে। এছাড়া জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়া ইউক্রেনকে সমর্থন করেছে। অন্যদিকে রাশিয়াকে সমর্থন করেছে চীন, আর্মেনিয়া, বেলারুশ, কাজাকিস্তান, কির্জিখিস্তান, তাজাকিস্তান ও আজারবাইজান। পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলো স্বভাবতই রাশিয়ার পক্ষে।

রাশিয়া ইতোমধ্যে ইউক্রেনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে ঢুকে পড়েছে। যুদ্ধ মানেই ক্ষতি, ধ্বংস, আর মৃত্যু। যুদ্ধ বিশ্ববাসীর জন্য কেবলি অশান্তি ডেকে আনে; বয়ে আনে অনিষ্ট। বিশ্বর বর্তমান বয়স ৫ কোটি বছর। বৃহৎ এ সময়কালে বিশ্ব অনেক যুদ্ধ দেখেছে। প্রতিটি যুদ্ধই ছিল নিষ্ঠুরতা আর ভয়াবহতায় ভরা। আধুনিক বিশ্ব দুটি বিশ্বযুদ্ধের তান্ডবলীলা প্রত্যক্ষ করেছে। দুটি বিশ্বযুদ্ধই বিশ্বকে উপহার দিয়েছে অমানবিক নৃশংসতা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল ১৯১৪ সালে। চার বছর ধরে চলা এ যুদ্ধে ৩ থেকে ৪ কোটি মানুষ নিহত হয়েছিল। ৬০ লাখ মানুষ গৃহবন্দী হয়েছিল। ১ কোটির বেশি মানুষ হয়েছিল গৃহহারা। ৩০ লাখ নারী এ যুদ্ধে বিধবা হয়েছিল। ৬০ লক্ষাধিক শিশু এ যুদ্ধে হয়েছিল অনাথ-এতিম। এ যুদ্ধে প্রায় দেড় মিলিয়ন কামানের গোলা ব্যবহার করা হয়েছিল। যুদ্ধের প্রভাবে স্পেন থেকে একটি ইনফুয়েঞ্জা গোটা বিশ্বে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল। যুদ্ধকালীন সময়ে যুদ্ধরত সৈনিকদের সাথে তাদের আত্মীয়স্বজনের প্রায় ১০ লক্ষাধিক চিঠি লেনদেন হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল আরো ব্যাপক। এ যুদ্ধে ৭ থেকে ৮ কোটি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছিল। সমগ্র ইউরোপ বিরান ভূমিতে পরিণত হয়েছিল। ৬০ কোটি মানুষ গৃহহীণ হয়েছিল। খাদ্যহীনতা আর পুষ্টিহীনতায় নিহত হয়েছিল অগনিত মানুষ। পদানত এলাকাগুলোর গ্রাম-গঞ্জ-শহর-বন্দর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। রাস্তাঘাট-রেলপথ ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। বন্দীশিবিরে ৩৬ লাখ যুদ্ধবন্দী নিহত হয়েছিল। ৫৫ লাখ মানুষ ক্ষুধায় মৃত্যুবরণ করেছিল। পরাজিত এলাকার সকল বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়েছিল। ৪ লাখ যুবককে দাসত্ববৃত্তিতে বাধ্য করা হয়েছিল। যুদ্ধের এ ভয়াবহতা সব রাষ্ট্রের মানুষকে ভাবিয়ে তোলে। এ নৃশংসতা বিশ্ববাসীর মনে ভীতির সঞ্চার করে। তারা উপলব্ধি করে যে, মানবজাতিকে বাঁচাতে বিশ্বশান্তি সংঘ প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে তারা তৎকালীন বিশ্বের স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক শান্তি সংঘ প্রতিষ্ঠা করে। আর এ শান্তি সংঘের নাম দেয়া হয় জাতিসংংঘ। কিছু মহৎ উদ্দেশ্য সামনে রেখে ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর যাত্রা শুরু করে এ জাতিসংঘ। প্রতিষ্ঠিত জাতিসংঘের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা করা, বিভিন্ন জাতি ও দেশের মধ্যে সম্প্রীতি স্থাপন করা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সহযোগিতা গড়ে তোলা, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, সকল জাতির মৌলিক অধিকারের প্রতি সম্মান গড়ে তোলা, বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিদ্যমান বিবাদ মীমাংসা করা। এ উদ্দেশ্যগুলো বাস্তবায়নের জন্য জাতিসংঘ সৃষ্টি করেছিল ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ শাখা।

সুতরাং বলা যায় যে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আইন, বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক অগ্রগতি এবং মানবাধিকার বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করাই হলো জাতিসংঘের লক্ষ্য। জাতিসংঘ হলো বিশ্ব নিরাপত্তা ও শান্তির একমাত্র আশ্রয়স্থল। বর্তমানে ১৯৩টি দেশ হলো এ সংঘের সদস্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ তা-বের পর বিশ্বকে শান্তি দেয়ার প্রত্যয় নিয়ে গঠিত হয়েছিল এ জাতিসংঘ। কিন্তু এসব লক্ষ্য থেকে জাতিসংঘ এখন অবস্থান করছে যোজন যোজন দূরে। বর্ণিত লক্ষ্য-উদ্দেশ্য পূরণের ধারে কাছেও নেই এ জাতিসংঘ। জাতিসংঘ পরিণত হয়েছে শক্তিমানদের আজ্ঞাবহ এক বিবৃতিদানকারী প্রতিষ্ঠানে। এ সংঘ প্রতিষ্ঠার পর পরই তারা বৃটেনের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। আমেরিকা ও বৃটেনের প্রত্যক্ষ মদদে জাতিসংঘ ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করে। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের কারণেই ফিলিস্তিনিরা তাদের ভিটেমাটি হারিয়ে উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়। লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনি নিজেদের ভিটে মাটি হারিয়ে বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রের আশ্রয় শিবিরে আজও মানবেতর জীবন যাপন করছে। ফিলিস্তিনিদের জমি জায়গা অবৈধভাবে দখল করে ভিন দেশি ইহুদিরা অট্টালিকা নির্মাণ করেছে। এ নির্মাণ প্রকল্প এখনও পর্যন্ত তারা অব্যাহত রেখেছে।

আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্বের প্রত্যক্ষ ষড়যন্ত্রের কারণে ফিলিস্তিনিরা নিজ দেশে পরবাসী হয়ে আছে। তাদের এ জবর দখলনীতি ১৯৪৮ সাল থেকে শুরু হয়ে বর্তমানেও চলমান রয়েছে। বিগত ৭৩ বছর ধরে ফিলিস্তিনিরা তাদের পৈত্রিকভূমি ফিরে পেতে রক্ত ঝরাচ্ছে। কিন্তু জাতিসংঘ তাদের ন্যায্য দাবি ফিরিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ইউরোপ, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া থেকে ইহুদীদের আগমন ঘটিয়ে এই জাতিসংঘই ইসরাইল নামক একটি অবৈধ রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছে। তাদের ষড়যন্ত্র ইরাকের হাজার বছরের সভ্যতাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তাদের প্রত্যক্ষ হামলায় ১ কোটি বিশ লাখ ইরাকী নিহত হয়েছে। ১৯৯১ সালে পরিচালিত ইরাকী যুদ্ধ এখনও চলমান রয়েছে। একইভাবে বিগত প্রায় দুই যুগ ধরে চলা যুদ্ধে গোটা আফগানিস্তান মাটির সাথে মিশে গিয়েছে। তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ষড়যন্ত্রের কারণে প্রতিটি মুসলিম জনপদ মুসলমানদের রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে। পশ্চিমাদের হিংসার আগুনে এখনও জ¦লছে লিবিয়া, সিরিয়া ও ইয়েমেন।

জাতিসংঘ এখন আমেরিকা এবং পশ্চিমাদের হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছে। আমেরিকার পুতুল হয়ে ওঠা জাতিসংঘকে এখন রাশিয়া, ফ্রান্স, চীনতো দূরের কথা অপেক্ষাকৃত দুর্বল ভারত, কোরিয়া এবং ব্রাজিলও ভয় পায় না। যতই দিন গড়াচ্ছে বিশ্ববাসী বুঝতে পারছে যে, জাতিসংঘ শুধু বিবৃতি প্রদানকারী ইউরোপ-আমেরিকার আজ্ঞাবহ একটি প্রতিষ্ঠান। এ কারণে যুদ্ধমুক্ত বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধে মানুষ নিহত হয়, সভ্যতার অপমৃত্যু ঘটে আর বিপন্ন হয় মানবতা। এমতাবস্থায় সচেতন বিবেকের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে ‘জাতিসংঘের আর কি ই বা দরকার’?

চলমান এ যুদ্ধ বিশ্ববাসীর পাশাপাশি বাংলাদেশের জন্য বড়ো ধরনের ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। কারণ বাংলাদেশে রূপপুরসহ বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করছে রাশিয়া। রাশিয়া আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ায় রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়বে। বাংলাদেশের পোশাক রফতানির নতুন বাজার হচ্ছে রাশিয়া। যুদ্ধকালীন সংকটে সরবরাহ বিলম্বিত হবে। আর এ যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হওয়া মানেই সংকট দীর্ঘ হওয়া। সে কারণেই শান্তিপ্রিয় বিশ্ববাসী যুদ্ধ চায় না, চায় শান্তি।
লেখক: অধ্যাপক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া
[email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন