Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানবী (সা.) মানবাধিকার আইনে ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ১২ মার্চ, ২০২২, ১২:০৯ এএম

ডা. এম, এরশাদুল বারী এ প্রসঙ্গে খুব সুন্দর বলেছেন ঃ ‘‘All the attempts to secure religious freedom werem almost invariably, efforts by members of one religion or behalf of their co-religionists elsewhere Protestan powers generally tried to secure religious freedoms for Protestants in catholic countreies; but not for muslim, Baddhists or Jews’’ অর্থাৎ ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার সকল প্রচেষ্টাই ছিল মূলত একই ধর্মের অনুসারীদের হয়ে তাদের সহ অনুসারীদের প্রচেষ্টা। প্রোটেষ্ট্যান্টরা সাধারণত চেষ্টা করত ক্যাথলিক অধ্যুষিত দেশসমূহে প্রোটেসট্যান্টদের ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা করা। কিন্তু মুসলমান বৌদ্ধ, ইহুদীদের ব্যাপারে এদের কোন মাথাব্যথা ছিল না।

পাশ্চাত্য সভ্যতা প্রকৃতপক্ষে মানুষে মানুষে সমতা নীতিতে বিশ্বাস করে না। বর্তমানে মুখ তারা যত সুন্দর বুলি আওড়াক না কেন আসলে মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করা, তাদের প্রতিপক্ষ মানব সন্তানদেরকে নির্মূল করা, দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা, এদের আজন্ম খায়েশ। পাশ্চাত্য পান্ডিত্যের পুরোধা প্লেটো এরস্টিটল দাসপ্রথাকে শুধু বৈধতা দান করেই ক্ষান্ত হননি, উপরন্তু মানব সমাজে দাসপ্রথার প্রয়োজন আছে বলে মন্তব্য করেছেন। হাজার হাজার বছরব্যাপী সে সমাজে দাসপ্রথা, দাস বাণিজ্য প্রচলিত ছিল। দাস বাণিজ্য (Slave treade) ছিল তাদের একটি লোভনীয়(!) পেশা। নিকট অতীতে ১৮০২ সালে প্রথমে ডেনমার্কে আমরা দাস প্রথা উচ্ছেদের প্রথম পদক্ষেপ লক্ষ্য করি। পরে দাস বাণিজ্যকে রহিত করণার্থে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ১৮০৭ সালে একটি বিল পাস করে। এ আইনটি কেবল ব্রিটেনের জন্য ছিল। ১৮৩৩ সালে অবশ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভূক্ত সকল অঞ্চলে অনুরূপ আইন প্রণয়ন করা হয়। নেপোলিয়ন ১৮১৪ সালে ফ্রান্সে দাস বাণিজ্য বন্ধকরণের জন্য আইন পাস করেন, যদিও এ আইনটি পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যে প্রয়োগ করা সম্ভব হয়নি। সংবিধানের ১৩শ’ সংশোধনীর মাধ্যমে আব্রাহাম লিংকন ১৮৬৫ সালে আমেরিকায় দাসপ্রথা রহিত করেন। আর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দাসপ্রথা উচ্ছেদের প্রথম পদক্ষেপ হল ১৮১৫ সালের ভিয়েনা কংগ্রেস যেখানে কেবল নীতিগতভাবে দাসপ্রথা উচ্ছেদের কথা বলা হয়, কিন্তু এ নীতি বাস্তবায়নের দিন-ক্ষণ ঠিক করা হয়নি। এক্ষেত্রে একটি মন্তব্য প্রনিধানযোগ্য ঃ ‘‘The Intentions of the Great five were some what less than purely humanitarion; their aims were to restablish the political balance and destroy the growing economic power of spain which thrived on slave trade in latin America! অর্থাৎ বৃহৎ পাঁচটি শক্তির অভিপ্রায় বিশুদ্ধ মানবিকতার চেয়ে অনেকটা কম ছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক ভারসাম্য পুন:প্রতিষ্ঠা করা এবং ল্যাটিন আমেরিকায় দাস ব্যবসা করে উন্নতি লাভ করা, স্পেনের বর্দ্ধনশীল অর্থনৈতিক শক্তিকে ধ্বংস করা।’’ সুতরাং এটি পরিষ্কার হল যে, দাসদেরকে ভালবেসে নয়, বরং বৃহৎ শক্তিগুলো রাজনৈতিক স্বার্থের দাসপ্রথা উচ্ছেদের জন্য এগিয়ে আসে।
হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমনের পূর্বে পৃথিবীতে এবং তাঁর আগমনের পরও ইসলাম ভিন্ন অপর কোন ব্যবস্থায় যুদ্ধবন্দীদের প্রতি মানবিক আচরণ করা হয়নি, যুদ্ধাহতদের প্রতি কেউ সহানুভূতি প্রদর্শন করেনি। অবশ্য পাশ্চাত্যের সমাজ ও আইন ব্যবস্থা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, ঊনবিংশ শতকে এবং বিংশ শতকের প্রথম দিকে যুদ্ধবন্দী ও যুদ্ধাহতদের প্রতি সামান্য নজর দেয়া শুরু হয়। সেনাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে যারা যুদ্ধে আহত হয় তাদের জন্য ১৮৬৪ সালের জেনেভা কনভেনশনের মাধ্যমে কিছু নীতি প্রণয়ন করা হয়। ১৮৬৮ সালের সেইন্ট পেটার্সবার্গ ঘোষণার মাধ্যমে কতিপয় বিস্ফোরক ও দাহ্য বুলেটের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। যুদ্ধবন্দী ও যুদ্ধাহতদের স্বার্থে পশ্চিম বিশ্বে আরও যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়, সেগুলো হল ১৮৯৯ ও ১৯০৭ সালের হেগ কনভেনশন, ১৯৪৯ সালের ১২ আগস্ট জেনেভায় স্বাক্ষরিত ৪টি কনভেনশন ইত্যাদি। কিন্তু এতকিছুর পরও বাস্তবে আমরা কি দেখতে পাচ্ছি? বসনিয়া হার্জেগোভিনা, চেচনিয়া, কাশ্মীরসহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধবন্দী আর যুদ্ধাহত মুসলিমদের আর্তচিৎকারে আল্লাহর আরশ পর্যন্ত কেঁপে উঠেছে। তাছাড়া শুধু মুসলিম বলে নয় সকল যুদ্ধবন্দী আর যুদ্ধাহতদের প্রতিই এরা বড় নিষ্ঠুর। যুদ্ধবন্দীদের গায়ের চর্বি দিয়ে জার্মানীতে সাবান বানানোর লোমহর্ষক কাহিনী কারও অবিদিত নয়। আসলে যুদ্ধবন্দী ও যুদ্ধাহতদের এরা মানুষই মনে করে না।
নিজ দেশের সংখ্যালঘুদের প্রতি যারা সর্বদা অমানবিক আচরণ করত, সেই সকল শক্তিধর রাষ্ট্র তার ধর্ম, ভাষা বা সংস্কৃতির অনুসারী অপর দেশের সংখ্যালঘুদের স্বার্থ উদ্ধারে সবসময় সচেষ্ট থাকত। যা হোক এ রকম পক্ষপাতমূলক আচরণের পথপরিক্রমায় ১৯১৯ সালে ভার্সাই-এ অনুষ্ঠিত শান্তি সম্মেলনে প্রথম সংখ্যালঘুদের অধিকারের কথা বলা হয়। পাশ্চাত্য সমাজ ব্যবস্থায় বিশ শতকের প্রথম দিকে প্রতিষ্ঠিত জাতিপুঞ্জের চুক্তির ২৩নং অনুচ্ছেদে প্রথম শ্রমিকের অধিকারের ব্যাপারে বলা হয়। ১৯১৯ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা গঠিত হয় যার উদ্দেশ্য হল শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা করা।
জাতিসংঘ এবং মানবাধিকারের ধারণা আন্তর্জাতিকীকরণ ঃ এটি প্রায়শ:ই বলা হয়ে থাকে। ‘‘The Charter of the United Nations Organistaitons has internationalised the idea of human rights’’ অর্থাৎ জাতিসংঘ সনদ মানবাধিকারের ধারণার আন্তর্জাতিকরণ করেছে।’’ অবশ্য পাশ্চাত্য সমাজে মানবাধিকার আইনের ক্রমবিকাশ আলোচনা করলে যে কেউ এ বক্তব্যের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করবেন। কিন্তু আসলে কি তাই? মনাবাধিকারের ধারণার আন্তর্জাতিকীকরণ কি হয়েছে মাত্র সেদিন- ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর কিংবা ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বরে? মুসলিম বিশ্বে মানবাধিকার আইনের ক্রমবিকাশ ভাষা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় রাহমাতুল্লিল আলামীন হযরত মুহম্মদ (সা.) এর অবদান আলোচনা করলে এসবের সদুত্তর পাওয়া যাবে।



 

Show all comments

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ