২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
আমাদের পঞ্চেন্দ্রিয়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে শ্রবণের জন্য কর্ণ বা কান। কান দিয়ে আমরা শুনি অথচ এটার গুরুত্ব দিই কম এবং এই কানে শোনার যন্ত্রের যত্নে বরাবরই আমরা উদাসীন। এর ফলে বধিরতা পর্যন্ত হতে পারে। কানের যত্ন সবারই নেওয়া উচিত। তবে শিশু, বৃদ্ধ ও গর্ভবতী মহিলাদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। বিশ্বে শতকরা ৫ ভাগের বেশি মানুষের কোনো না কোনো মাত্রায় শ্রবণহীনতা রয়েছে।
সমীক্ষায় দেখা যায়, আমাদের দেশের প্রায় ৯ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ বধিরতায় ভুগে থাকেন। একটুখানি সচেতন হলেই এড়ানো যায় কানের অনেক রোগ। সচেতনতা হচ্ছে যেকোন রোগ প্রতিরোধের প্রাথমিক পদক্ষেপ। শ্রবণশক্তি হ্রাস রোধ এবং বিশ্বজুড়ে শ্রবণশক্তির যত্ন কীভাবে নেওয়া যায়, সে সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছরের ৩ মার্চ বিশ্ব শ্রবণ দিবস পালন করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে ২০০৭ সালের এই দিনে প্রথমবারের মতো পালিত হয় বিশ্ব শ্রবণ দিবস। প্রতিবছরই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) একটি নতুন স্লোগান ঘোষণা করে। এবারের ২০২২ সালের স্লোগান বা থিম হচ্ছে :- “টু হিয়ার ফর লাইফ, লিসেন উইথ কেয়ার”... অর্থাৎ “শোনায় চাই সযতন; শুনতে চাইলে আজীবন”!
এই থিমের তাৎপর্য হচ্ছে আমরা মনে করি বর্তমানে ভালো শুনতে পাচ্ছি বলে কোন সমস্যাই হচ্ছে না বা হবে না। কিন্তু শব্দ দূষণজনিত বেশ কিছু কাজ আমরা প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছি সেগুলোর কিছু দীর্ঘমেয়াদী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে এবং যার ফলে আমাদের কানের হেয়ার সেল ধ্বংস হয়ে শ্রবণের স্থায়ী ভাবে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেমন: ঘন্টার পর ঘন্টা হেডফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার কিংবা মাইক / সাউন্ডবক্সে অতিরিক্ত সাউন্ড দিয়ে গান শোনার অভ্যাস কিংবা কলকারখানায় লাগাতার উচ্চ শব্দের মধ্যে কাজ করা, কানের এবং শ্রবণশক্তির জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। চিকিৎসকদের গবেষনা বলছে ৮৫ ডেসিবেলের বেশি শব্দ যদি কেউ লাগাতার শুনতে থাকে, তাহলে ধীরে ধীরে তার শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্থ হতে থাকে। এইসকল অভ্যাস থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত এবং সতর্ক হওয়ার জন্য এবারের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে। চোখে যেমন কম দেখা স্বাভাবিক, তেমনই কানে কম শোনাও অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু কানে কম শোনার সমস্যা নিয়ে আমাদের সমাজে প্রায়শই হিনমন্যতায় ভূগতে লক্ষ্য করা যায়। শ্রবণশক্তি হ্রাস ঠেকাতে/কানে কম শোনা রোধ করতে যথাযথ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। এ জন্য যা করতে পারি তা হল:
১) গর্ভকালীন অবস্থায় মায়ের যত্ন নেওয়া এবং সময়মতো রুবেলা, বসন্ত, হাম ইত্যাদির টিকাগুলো দেওয়া। এ সময় অটোটক্সিক বা শ্রবণে ক্ষতিকারক ওষুধ গ্রহণে বিরত থাকা। সকল টিকাদান কর্মসূচি জোরদার করা।
২) শিশুর বেড়ে উঠার অন্যতম প্রধান উপাদান শুনতে পাওয়া। “শোনা”-শিশুর কথা বলা, সামাজিক যোগাযোগ এবং শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। শিশুটির দাঁত ওঠা, হাঁটা-চলার পাশাপাশি শব্দের প্রতি সাড়া দিচ্ছে কি না সেদিকে নজর রাখা উচিত। সাধারণত জন্মের পর ৩ মাস বয়সে আপনার শিশু ঘাড় ঘুরাতে পারবে এবং আপনার কথার উত্তরে হাসতে পারবে। ৬-১২ মাসের মধ্যে আপনার শিশু ভাঙা ভাঙাভাবে তার কথা বলতে শুরু করবে। ১৫-১৮ মাসের মধ্যে আপনার শিশু সহজ কয়েকটি কথা বলতে পারবে। এগুলো যদি না হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে পিতা-মাতা একটু চিন্তিত হয়ে পড়তেই পারেন। এছাড়া কানে কম শুনলে শিশুও হতাশ, মনমরা হয়ে থাকবে। যদি স্বাভাবিক নিয়মে এইগুলো বাচ্চার বেড়ে উঠার মধ্যে দেখা না যায়, তখন অবশ্যই দ্রুত নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিবেন।
৩) গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘ সময় উচ্চ ভলিউমে গান শোনা শ্রবণশক্তি কমিয়ে দেয়; তরুণ প্রজন্মের জন্য যা অশনি সংকেত। তাই অবশ্যই হেডফোনে গান শোনার সময় বিরতি দিয়ে এবং ভলিউম কমিয়ে গান শোনা উচিত।
৪) একনাগাড়ে জোরালো শব্দের কারণে অন্তঃকর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে শ্রবণ শক্তি হ্রাস পেতে পারে। তাই উচ্চশব্দের কলকারখানার শ্রমিকদের ক্ষেত্রে স্ক্রিনিং সহ বিশেষ নজর দেয়া সময়ের দাবি। গাড়িচালকদের অযথা হর্ন বাজানো থেকে বিরত থাকা উচিত। অপ্রয়োজনীয় শব্দ দূষণরোধে প্রয়োজনে আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা উচিত।
৫) কানে কম শোনার যন্ত্র/হিয়ারিং এইড সহজলভ্য করা এবং এই বিষয়ে সচেতনতা তৈরী করতে হবে। পাশাপাশি সকল সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কানের শ্রবণশক্তি পরীক্ষা / অডিওলজী টেস্ট এর ব্যবস্থা সহজলভ্য করার মাধ্যমে শ্রবণ শক্তি কমে যাওয়া রোধ সম্ভব। কারো ইতোমধ্যে শুনতে পাওয়ার শক্তি কতটুকু ক্ষতি হয়েছে তা জানতে অডিওগ্রাম নামে পরিচিত হেয়ারিং টেস্ট সম্পর্কে জনমনে ধারণা দিতে হবে। কারণ যারা শ্রবণশক্তি হারিয়েছেন তারা প্রাথমিক সনাক্তকরণ এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে উপকৃত হতে পারেন।
৬) যদি হঠাৎ করেই কেউ কানে কম শোনার সমস্যায় আক্রান্ত হন তাহলে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা উচিত। যত দ্রুত “সাডেন হিয়ারিং লস”- এর রোগী তার চিকিৎসকের কাছে যাবেন তত দ্রুত আরোগ্য লাভ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
মনে রাখতে হবে কানে কম শোনা বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে একটি প্রচলিত সমস্যা। আর তাই কানে কম শোনার সঠিক কারণ নির্ণয় এবং সমস্যা প্রতিরোধের জন্য সচেতনতা বাড়ানোর কোন “বিকল্প নেই। তাই বলছি-
“বাড়ছে বধির অজান্তে,
কানের যত্নের প্রতি অনীহায়।
শ্রবণশক্তি হারালে একবার ,
ফিরবে না আর বহু চেষ্টায়।”
ডাঃ মোঃ আব্দুল হাফিজ (শাফী)
নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ এবং হেড-নেক সার্জন,
সিওমেক হাসপাতাল, সিলেট ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।