Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১০ মার্চ, ২০২২, ১২:০৪ এএম

পণ্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে দুরূহ করে তুলেছে। মানুষের এই ক্রমবর্ধমান দুর্ভোগে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বিনিয়োগ এবং আর্থিক খাতে। বিশেষত অবসরপ্রাপ্ত ও কর্মহীন মানুষের মধ্যে যারা তাদের পারিবারিক পুঁজির সবটুকু দিয়ে কেনা সঞ্চয়পত্রের আয় দিয়ে সংসার নির্বাহ করতে সচেষ্ট, তারা এখন চরম অনিশ্চয়তায় ঘুরপাক খাচ্ছে। এমনিতেই দেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। করোনাকালীন পরিস্থিতি এ অবস্থাকে আরো নাজুক করে তুলেছিল। এখন করোনাত্তোর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বাস্তবতা এবং জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে দেশের মানুষের জীবনযাত্রার উপর বড় আঘাত হয়ে দেখা দিচ্ছে। উপরন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞা, জ্বালানি সরবরাহ লাইনে প্রতিবন্ধকতার কারণে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির আঘাত আমাদের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত মানুষের জীবনযাত্রাকে আরো কঠিন করে তুলেছে। মানুষ তাদের সঞ্চয় ভেঙ্গে খেতে শুরু করেছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারী সময়ে জাতীয় সঞ্চয়পত্র বিক্রির হার পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। ২০২০-২১ অর্থ বছরে যেখানে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল ২৫ হাজার ৭০২ কোটি টাকা, সেখানে চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা ১২ হাজার ১৭৬ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়ার পেছনে মানুষের কর্মসংস্থানের সংকট এবং জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধির কথাই বলছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

মূল্যস্ফীতিসহ চলমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় শুধু সঞ্চয়পত্র বিক্রিই কমেনি, সেই সাথে দেশের ব্যাংকগুলোতে আমানত কমে যাওয়ার বাস্তবতাও দেখা যাচ্ছে। গতকাল একটি সহযোগী দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর প্রান্তিকের তিনমাসে দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে আমানত কমেছে অর্ধলক্ষ কোটি টাকার বেশি। গত অর্থবছরের এ সময়ে যেখানে ব্যাংকিং সেক্টরে আমানতের স্থিতি ছিল ১৪ লাখ৬২ হাজার ১৯ কোটি টাকা, সেখানে চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ ব্যাংকে আমানত দাড়িয়েছে ১৪ লাখ ৯ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এ সময়ে ব্যাংকিং খাত থেকে ৫২ হাজার ৮৪ কোটি টাকা উধাও হয়ে গেছে। অনেকে বলছেন, করোনার কারণে বিনিয়োগ ও বিদেশে অর্থ পাচারের সুযোগ কমে যাওয়ায় আগের অর্থ বছরে ব্যাংকে আমানত বেড়েছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমানত কমে যাওয়া স্বাভাবিক। দেশের চলমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় সঞ্চয়পত্র বিক্রি অর্ধেকের বেশি কমে যাওয়া এবং ব্যাংকে আমানত হ্রাস পাওয়ার প্রকৃত কারণ অনেকটাই স্পষ্ট ও দৃশ্যমান। আর্থিক ও বিনিয়োগ খাতের আরেকটি পরিমাপক হচ্ছে শেয়ার বাজারের স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি। গত এক সপ্তাহে কার্যদিবসের পুরো সময়টাতেই শেয়ারবাজারে দরপতন ও লেনদেন কমেছে। বলা যায়, অর্থনীতির সব সেক্টরেই এখন পতনের ধারা দেখা যাচ্ছে।

দেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক বাস্তবতায় কোটি কোটি মানুষ এখন সংকটে নিপতিত। দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বলে জাহির করা জলেও সম্পদের পাচার এবং অসম বন্টন দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে অস্তিত্বের সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। পরিসংখ্যানের সূচকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিপরীতে কোটি কোটি মানুষের আয় কমে যাওয়া এবং আর্থিক খাতগুলোতে নেতিবাচক প্রবণতা ঠেকাতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এহেন বাস্তবতায় দেশে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিসর বৃদ্ধির তেমন কোনো উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে সরকারের অর্থনৈতিক সক্ষমতাও ক্রমে হ্রাস পাচ্ছে। বিশ্ববাজারে যখন তেলের মূল্য কমছিল তখনো আমাদের দেশে তেলের মূল্য বাড়ানো হয়েছিল। এখন জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির আগেই নিত্যপণ্যের মূল্য বেড়ে চলেছে। এ জন্য করোনাকালীন সংকট ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত দেয়া হলেও নিত্যপণ্যের অনিয়ন্ত্রিত মূল্য স্ফীতিকে বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। লাখ লাখ পরিবারকে স্বল্প মূলধন দিয়ে সঞ্চয়পত্র থেকে পাওয়া আয় দিয়ে সংসার চালাতে হয়। সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমিয়ে দেয়া এবং পণ্যমূণ্যের লাগামহীন বৃদ্ধির কারণে এসব পরিবার তাদের সঞ্চয় ভেঙ্গে এবং ব্যাংকে গচ্ছিত আমানতের টাকা তুলে সংসার চালাতে বাধ্য হচ্ছে। কোনো সম্ভাবনাময় অর্থনীতিতে এটি কোনো সুখকর চিত্র নয়। এ অবস্থায় গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির যে কোনো পদক্ষেপ থেকে সরকারকে বিরত থাকতে হবে। বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ পরিবেশ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পাশাপাশি বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সংকট দূর করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। অর্থনৈতিক দুর্দিনে সরকারকে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে
আরও পড়ুন