Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বুলগেরিয়ায় সরকার পতনের আশঙ্কা

রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৯ মার্চ, ২০২২, ১২:০৬ এএম

রাশিয়া আর বুলগেরিয়ার সুসম্পর্কের ঐতিহ্য প্রায় দেড়শ বছরের পুরোনো। বুলগেরিয়ার রাজনীতিতে রুশপন্থিদের প্রভাব বরাবরই খুব প্রবল। তবে এখন রাশিয়া-বিরোধীরাও সক্রিয়, সোচ্চার। দুই পক্ষের দ্ব›দ্ব রাশিয়ার দীর্ঘদিনের বন্ধু দেশটির সরকার পতনের আশঙ্কাও জাগাচ্ছে।

১৮৭৭-১৮৭৮ সালের রুশ-অটোমান যুদ্ধের সমাপ্তিকে ‘স্বাধীনতা দিবস’ হিসেবে উৎযাপন করে বুলগেরিয়া। কিন্তু এ বছর ৩ মার্চের উদযাপন আগের মতো অতটা স্বতঃস্ফ‚র্ত একং আনন্দঘন হয়নি। আগের দিন, অর্থাৎ ২ মার্চ উনিশ শতকের ওই ঐতিহাসিক বিজয়ের দিনকে স্মরণ করে ‘মনুমেন্ট অব ফ্রিডম’-এ ফুল দিয়ে যুদ্ধে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রুশ রাষ্ট্রদূত। অন্যদিকে সেদিনই রাশিয়ার হয়ে গোয়েন্দাগিরির অভিযোগে এক বুলগেরীয় জেনারেলকে গ্রেফতার করা হয়। জেনারেলকে গ্রেফতারের আগের দিনটিও অবশ্য রাশিয়া-বুলগেরিয়া সম্পর্কে অস্বস্তি বাড়িয়েছিল। সেদিন ইউক্রেন সঙ্কটের মাঝে রাশিয়ার পক্ষে বিবৃতি দিয়ে বরখাস্ত হন বুলগেরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্তেফান জানেউ। জানেউ শুধু প্রতিরক্ষামন্ত্রীই নন, ন্যাটোর সদস্য দেশ বুলগেরিয়ার সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাও। রাষ্ট্রের এমন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকেও ফেসবুকে রাশিয়ার পক্ষে সরাসরি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন তিনি। পুতিনের মতো করে তিনিও রুশ আগ্রাসনকে স্রেফ ‘বিশেষ অভিযান’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।

এভাবে রাশিয়ার প্রতি ‘দুর্বলতা’ এর আগেও প্রকাশ করেছেন জানেউ। ডিসেম্বরে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বুলগেরিয়ায় ন্যাটোর সৈন্যের উপস্থিতির কড়া সমালোচনা করেছিলেন, তারপর জানুয়ারিতে ইউক্রেন বিষয়ক সব প্রতিবেদনে বুলগেরিয়ার গণমাধ্যম দেশের স্বার্থবিরোধী অবস্থান নিয়েছে- এমন অভিযোগও তুলেছিলেন জানেউ। আগের দুটো স্ট্যাটাস দিয়ে বেঁচে গেলেও এবার আর শেষরক্ষা হয়নি বুলগেরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর। তাকে বরখাস্তের কারণ ব্যাখ্যা করে এক বিবৃতিতে বুলগেরিয়ার প্রধানমন্ত্রী কিরিল পেতকভ বলেছেন, ‘ফেসবুকে নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতি প্রকাশের অধিকার কোনো মন্ত্রীর নেই, জোট সরকারের বোঝা হয়ে থাকার অধিকার এবং ইউক্রেনে যা হচ্ছে তাকে ‘যুদ্ধ’ ছাড়া অন্য কিছু বলার অধিকারও নেই কোনো মন্ত্রীর।’

জানেউর রুশ-ঘেঁষা বিবৃতি অবশ্য বুলগেরিয়ার রাজনীতিতে চমকে ওঠার মতো কোনো ঘটনা নয়। গত ডিসেম্বরে গঠন করা বর্তমান জোট সরকারে রুশপন্থি সমাজতান্ত্রিকদের প্রভাব প্রবল। জোটের আরেক অংশে রয়েছে পশ্চিমাপন্থি সংস্কারবাদীরা। সরকার গঠনের তিন মাসের মধ্যেই এই দুই পক্ষের বিরোধ স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। সরকারের একটি অঙ্ক যখন ইউক্রেনে রাশিয়ার ভ‚মিকার সমালোচনা করছে, ঠিক তখন রাশিয়ার পাশে থাকার অঙ্গীকার জানাচ্ছে আরেকটি অঙ্ক। সম্প্রতি বুলগেরিয়া এবং ইউ পার্লামেন্টে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং রাশিয়ার সরকার নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম আরটি এবং স্পুটনিকের সম্প্রচার বন্ধ করার বিষয়ে যে ভোট হয়েছে, সেখানে দুটি বিষয়েই বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন বুলগেরিয়ার রুশপন্থি সমাজতান্ত্রিকেরা।

বুলগেরিয়ার রাজনীতিতে পশ্চিমাপন্থি এবং রুশপন্থিদের এই পরস্পরবিরোধী অবস্থান দেশের রাজনীতিতে বড় আশঙ্কার সৃষ্টি করছে বলে মনে করেন রুমেনা ফিলিপোভা। রাজধানী সোফিয়ার ইন্সটিটিউট ফর গেøাবাল অ্যানালাইসিস-এর পরিচালক রুমেনা মনে করেন, ‘এই বিরোধ সরকার পতনেরও কারণ হতে পারে।’ ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আরো বলেন, কোভিড স্বাস্থ্যবিধির কঠোর বিরোধিতা করা রিজেনারেশন পার্টির পাশাপাশি পশ্চিমা এবং রুশপন্থি এই দুই পক্ষের বিরোধী অবস্থানের কারণে কিরিল পেতকভের সরকার যে কোনো মুহ‚র্তে ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। সূত্র : ডয়চে ভেলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বুলগেরিয়া


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ