পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিভিন্ন দেশে নারীরা লাঞ্চিত, অপমানিত ও ঘৃণিত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত তারা ইভটিজিং, ধর্ষণ ও যৌতুকের শিকার হচ্ছে। এর অন্যতম কারণ ধর্মীয় রীতি-নীতি ও স্রষ্টার বিধানের প্রতি উদাসীনতা ও অবজ্ঞা প্রদর্শন। অথচ, ইসলাম এমন সুন্দর নির্মল ব্যবস্থা বিশ্ববাসীকে উপহার দিয়েছে, যাতে নারীর অধিকার সবদিক থেকে অক্ষুণ্ন থাকে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, জ্ঞানপাপী ইসলামবিদ্বেষী বুদ্ধিজীবীরা বলে থাকে, ইসলামে নারীর অধিকার খর্ব করা হয়েছে। তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে নানানভাবে। বস্তুত নারীর অধিকার হরণের উৎসস্থলে আঘাত হেনেছে ইসলাম। মানব সভ্যতার ইতিহাসে সমাজে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে সর্বপ্রথম যিনি সোচ্চার হয়ে উঠেন, মানব জীবনে নারীর অধিকার যিনি পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন, তিনি হলেন বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)। তাঁর বদৌলতে নারী জাতি পেয়েছে মা, স্ত্রী ও কন্যার মর্যাদা। সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, পারিবারিক, ধর্মীয় ও দাম্পত্য জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নারীর যথার্থ অধিকার। ইসলাম প্রদত্ত নারী কতিপয় মৌলিক অধিকার নিম্নে তুলে ধরা হলো।
(ক) জীবন ধারণের অধিকার: পুরুষের যেমন বাঁচার অধিকার আছে, নারীরও তেমনি বাঁচার অধিকার আছে। কন্যা সন্তানকে হত্যা করার অধিকার কারো নাই। জাহেলীযুগে কন্যাকে জীবন্ত কবরস্থ করা হতো। সর্বপ্রথম ইসলামই তার বিরুদ্ধে কঠোর আইন করে তা রোধ করে। হত্যাকে মহাপাপ ঘোষণা করে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের সন্তানকে দারিদ্রের ভয়ে হত্যা করো না। আমি তাদের এবং তোমাদের রিযিক প্রদান করি। নিশ্চয় তাদের হত্যা করা মহাপাপ।’ অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, ‘কিয়ামত দিবসে জীবন্ত কবরস্থ করা কন্যা সন্তানদের জিজ্ঞেস করা হবে, তাকে কোন অপরাধে হত্যা করা হয়েছে।’
(খ) শিক্ষা লাভের অধিকার: নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর ফরজ। বিশ্ব পরিস্থিতির সাথে মিল রেখে নারীদের শিক্ষা ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে হবে। কিন্তু এটা করতে গিয়ে নারীগণ সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত বিধি-বিধান বে-মালুম ভুলে যাওয়ায় আজ তা তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই পর্দা ও শালীন পোশাকের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে নারীদের বলতে হবে। মহান স্রষ্টার নিকট জ্ঞান বৃদ্ধির প্রার্থনার কৌশল বর্ণনায় ঐশীগ্রন্থ আল কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে আমার রব! আমার জ্ঞানের বৃদ্ধি সাধন কর।’ আল্লাহ তায়ালার সমীপে জ্ঞান বৃদ্ধির এ প্রার্থনা নর-নারী সকলের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য।
(গ) সম্ভ্রম রক্ষার অধিকার: শ্লীলতা ও সম্ভ্রম রক্ষার অধিকার ধর্মীয় অধিকার। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে হাবীব! মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে। যা সাধারণত প্রকাশ থাকে তা ব্যতীত তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তাদের বক্ষদেশ যেন কাপড় দ্বারা আবৃত করে।’
(ঘ) ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার: আধুনিক সমাজে অসংখ্য নারী নির্যাতিত, নিপীড়িত, এসিডদগ্ধ, শোষণ ও ধর্ষণের শিকার। বিচারের বাণী আজ নীরবে নিভৃতে কাঁদছে। অথচ, ইসলাম নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার দিয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা যখন মানুষের (নর-নারীর) মধ্যে বিচারকার্য পরিচালনা করবে, তখন ন্যায় পরায়ণতার সাথে তা করবে।’
(ঙ) বিবাহের অধিকার: নারী তার স্বামী নির্বাচনের পূর্ব অধিকার রাখে, যেমনিভাবে পুরুষ রাখে। পছন্দ-অপছন্দের বিষয়ে নারী-পুরুষ উভয়ে সমান অধিকার সংরক্ষণ করে। এ বিষয়ে নবীজি দ্বীপ্ত কণ্ঠে ইরশাদ করেন, ‘কোন বিধবাকে তার সাথে আলোচনা ব্যতিত কোথাও বিয়ে দেয়া যাবে না। আর কোন কুমারীকে তার সম্মতি ব্যতিত বিয়ে দেয়া যাবে না। এক্ষেত্রে তার নীরবতা হলো তার সম্মতির বহিঃপ্রকাশ।’
(চ) সম্পত্তির উত্তরাধিকার: ইসলামই প্রথম নারীকে ভুলুণ্ঠিত অবস্থা থেকে উঠিয়ে মর্যাদার উচ্চ আসনে সমাসীন করেছে এবং পিতা, স্বামী, পুত্র ও মাতার সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারী করে সম্পদ লাভের বিধান করেছে। নারী যত সম্পদশালীই হোক, স্বামীর উপর ওয়াজিব নারীর ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করা। নবীজি ইরশাদ করেন, তোমরা স্ত্রীদের সম্পদ জোর করে গ্রহণ করো না।
(ছ) বিয়েতে মোহর লাভের অধিকার: বিবাহ-বন্ধনে ইসলাম কিছু বিষয়ে পুরুষের তুলনায় নারীকে বেশি গুরত্ব দিয়েছে। যেমন মোহর, যা স্ত্রী চাওয়ামাত্র আদায় করতে স্বামী আইনত বাধ্য। পুরুষের জন্য স্ত্রীর নিকট এ জাতীয় কোনো পাওনা নেই আইনগতভাবে।
(জ) কন্যা সন্তান লালন-পালন: যে ব্যক্তি তার কন্যা সন্তানকে উত্তমভাবে লালন-পালন ও সুশিক্ষা দান করে উপযুক্ত পাত্রে পাত্রস্থ করে, ইসলাম তার জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দেয়। নবীজি ইরশাদ করেন, যার তিনটি কন্যা সন্তান আছে। অতঃপর তাদের লালন-পালন ও সুশিক্ষা দান করেছে। এসব কন্যা পরকালে দোযখ থেকে পরিত্রাণের মাধ্যম হবে। অন্যত্র রয়েছে, যে তার কন্যাকে তুচ্ছ মনে করে না এবং পুত্রকে কন্যার উপর প্রধান্য দেয় না, আল্লাহ তাকে বেহেশত দান করবে।
রাসূলে করিম (সা.) এর জীবদ্দশায় এবং খোলাফায়ে রাশেদার যুগে নারী সম্প্রদায়ের উন্নয়নে মহান আল্লাহর নির্দেশনাবলী অক্ষরে অক্ষরে প্রতিফলিত হয়েছিল, যা নারী জাতির জন্য গৌরবময় ইতিহাস। পরিতাপের বিষয় ইসলাম নারী জাতির মুক্তি ও উন্নয়নে যে অবদান রেখেছে, নারীরা তা অবহিত নয়, তাদের এ অজ্ঞতা তাদের অবহেলিত ও অধিকারবঞ্চিত হওয়ার অন্যতম কারণ। এ অবস্থার নিরসন করতে হলে নারীদের সচেতন হতে হবে, কোরআন-হাদীস অধ্যয়ন ও বুঝতে হবে। তবেই তারা সমাজের কাছ থেকে তাদের ন্যায্য অধিকার আদায় করতে সক্ষম হবে।
লেখক: আরবী প্রভাষক ও এম ফিল গবেষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যলয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।