পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
কুয়াকাটা সাগর সৈকতের আন্দারমানিক মোহনা থেকে রামনাবাদ চ্যানেল পর্যন্ত এলাকায় বিপুল সংখ্যক মরা জেলিফিশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে বলে ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে জানা গেছে। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে ৪০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে, গভীর সমুদ্রে জেগে ওঠা চরবিজয়ের বালির মধ্যেও জেলিফিশ ছড়িয়ে আছে। জেলেদের জালে আটকা পড়ে মারা যাওয়া জেলিফিশ জোয়ারে ভেসে এসে সৈকতে জমা হয়েছে। মরা জেলিফিশ পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এক ধরনের পোকাও তা থেকে জন্মাচ্ছে। এতে সৈকতের পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে উঠেছে। জেলেরা জানিয়েছেন, এবার সমুদ্রে অন্যান্য বারের চেয়ে জেলিফিশ অনেক বেশি সংখ্যায় দেখা যাচ্ছে। মাছ ধরতে জাল ফেলায় তাদের অসুবিধা হচ্ছে। মাছের স্থলে জাল ভরে যাচ্ছে জেলিফিশে। বাধ্য হয়ে তারা জাল ফেলা ছেড়ে দিয়েছে। গত ১৫ দিন ধরে তারা বেকার। এ কারণে তাদের বড় আকারে আর্থিক ক্ষতির শিকার হতে হয়েছে। পরিস্থিতি কার্যত অপরিবর্তীত রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও সৈকত কর্তৃপক্ষের এদিকে নজর নেই। মরা জেলিফিশ সরিয়ে বালিচাপা দেয়া হলে সৈকতের পরিবেশদূষণ দূর হতো বলে মনে করেন পর্যটকরা। সৈকতের এই পরিবেশ পর্যটকদের আগমন ও ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করছে। কী কারণে সাগরের ওই এলাকায় ফেলিফিশের এমন ব্যাপক উপস্থিতি দেখা দিয়েছে, সেটা জানা যায়নি। পর্যবেক্ষকদের প্রশ্ন: সাগরে কি পরিবেশের কোনো বিপর্যয় ঘটেছে? অভিজ্ঞজনের মতে, মরা জেলিফিশের সঙ্গে তাজা জেলিফিশও জোয়ারের পানিতে ভেসে এসে আটকা পড়ছে সৈকতে। এরা তেমন সাঁতার জানে না। ফলে ভাটার সময় নেমে যেতে না পেরে মারা পড়ছে।
স্থলভাগে দূষণ, নদীতে দূষণ, সাগরে দূষণ এখন আর নতুন কোনো ঘটনা নয়। পরিবেশদূষণ স্থল থেকে নদীতে এবং নদী থেকে সাগরে সম্প্রসারিত হয়ে পড়েছে। স্থলভাগের তরল ও কঠিন বর্জ্যরে একটা বড় অংশ নদীতে পতিত হয়। সেই তরল ও কঠিন বর্জ্যরে শেষ ঠিকানা হয় সাগর। সাগর ক্রমাগত দূষিত হয়ে পড়েছে অতিমাত্রায় নদী দূষিত হয়ে পড়ার কারণে। সাগর আরও নানাভাবে দূষিত হচ্ছে। তেলবাহী জাহাজ থেকে তেল পতন, বোমা মেরে মৎস্য শিকার, আনবিক ও ক্ষতিকর সব বর্জ্য নিক্ষেপ, অস্ত্রাদি পরীক্ষা ইত্যাদি সাগরদূষণের বিশেষ বিশেষ কারণ। প্লাস্টিক বর্জ্যও এখন সাগরদূষণের একটা বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য সাগরের মতো বঙ্গোপসাগরও দূষণ কবলিত হয়ে পড়েছে। মাছসহ সমুদ্রপ্রাণীর অস্তিত্ব বিপন্ন দশায় পতিত হয়েছে। মৎস্যক্ষেত্রে মাছের স্বল্পতা, মৎস্য ক্ষেত্রের বিলোপ বা স্থানান্তর কখনো কোনো প্রজাতির মাছের আধিক্য আবার কখনোবা আকাল, ডলফিনের মৃত্যু, মৃত তিমির উপকূলে ভেসে আসা, হঠাৎ বিপুল সংখ্যক কাঁকড়ার সৈকতে উঠে আসা ইত্যাদির পেছনে সাগরদূষণের ভূমিকা রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা বিরূপ প্রভাবও সাগরে পড়ছে। সাগরে উষ্ণতা বৃদ্ধি, পানির উচ্চতা বৃদ্ধির পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের দায় মুখ্য। এটা ঠিক, কুয়াকাটা সৈকত এলাকায় তেমন একটা কলকারখানা নেই, যার বর্জ্য সাগরে পড়তে পারে। জেলিফিশের মৃত্যু ও আধিক্যের এটা কারণ নয়। এর পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে, যা খুঁজে বের করা জরুরি। সাগরের পরিবেশ যে স্বাভাবিক নেই, বরং ক্রমেই চরম হয়ে উঠছে এটা তার প্রমাণ হিসেবে গণ্য হতে পারে। এজন্য সাগরের পরিবেশ নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের সাহায্য নিতে হবে। তারাই তথ্য-উপাত্ত দিয়ে বলে দিতে পারবেন, কেন হঠাৎ জেলিফিশের সংখ্যা ও উপকূলে উপস্থিত বৃদ্ধি পেয়েছি।
সাগরের পরিবেশ নিয়ে আমাদের দেশে সেরকম কাজ হয়নি। পরিবেশসংক্রান্ত মন্ত্রণালয় আছে বটে, তবে পরিবেশ সুরক্ষা ও উন্নয়নে তার ভূমিকা যথেষ্ট নয়। ঢাকা বছরের পর বছর বসবাসের অযোগ্য শহর হিসাবে অখ্যাতি লাভ করে আসছে। একে বস্তির শহর, আবর্জনার শহর বলা হয়। বলা হয় বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, মাটি ও পানিদূষণের দিক দিয়ে বিশ্বের শীর্ষে অবস্থানকারী শহরগুলোর অন্যতম। দেশের অন্যান্য শহরের অবস্থাও ঢাকার চেয়ে খুব একটা ভালো নয়। আর নদীগুলো তো দখল ও দূষণে শেষ হয়ে যাওয়ার পথে। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব হলো সর্বক্ষেত্রে ও পর্যায়ে পরিবেশের ওপর নজর রাখা, পরিবেশদূষণ রোধ করা এবং কাম্য পরিবেশ সুরক্ষা করা। এ ব্যাপারে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী সংস্থারও দায়-দায়িত্ব আছে বৈকি! দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, তাদের কেউই যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। দেশের সাগর নিয়ে গবেষণা বলতে গেলে উপেক্ষিত। কক্সবাজারে বাংলাদেশ সমুদ্রগবেষণা ইন্সটিটিউট নামের একটি প্রতিষ্ঠান আছে। তার কাজ সম্পর্কে দেশের মানুষ তেমন অবহিত নয়। এখনো সাগরসম্পদের জরিপ সম্পন্ন হয়নি। পরিবেশের কথা তো আরো পরে। সাগরকে এভাবে অবহেলায় রাখার আমাদের সুযোগ নেই। সাগরসম্পদ কাজে লাগাতে হলে জরিপ অবশ্যই করতে হবে। সাগরঅর্থনীতির ওপর বিশ্বজুড়ে গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে। আমাদের যাবতীয় তথ্য-পরিসংখ্যান না জানা থাকলে সাগরঅর্থনীতির পরিকল্পনা প্রণয়ন করা সম্ভব নয়। গবেষণাও অসম্ভব। বলার অপেক্ষা রাখে না, সাগরসম্পদ সুরক্ষার জন্য সাগরপরিবেশ সংরক্ষণ অপরিহার্য। বিষয়টি জাতীয় স্বার্থেই অধিকতর গুরুত্ব পাওয়ার দাবি রাখে। এই প্রেক্ষাপটে আমরা আশা করবো। সাগর-পরিবেশের হাল অবস্থা অনুসন্ধান, গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য অবশ্যকীয় উদ্যোগ পদক্ষেপ অবিলম্বে নেয়া হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।