Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পবিত্র মেরাজ হচ্ছে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস খুৎবা পূর্ব বয়ান

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৩:২৮ পিএম

পবিত্র শবে মেরাজের ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, মহান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখা। শিরক থেকে বেঁচে থাকা। আল্লাহর সাথে বান্দার আবদিয়াত তথা দাসত্বের সম্পর্ক আরও মজবুত করা। নামাযের প্রতি যতœবান হওয়া। কেননা এটা মেরাজে লাভ করা উম্মতের জন্য নবীজীর সা. তোহফা। আজ জুমার বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। নগরীর মসজিদগুলোতে মুসল্লিদের উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষীত হয়। অনেককেই রাস্তার ওপর জুমার নামাজ আদায় করতে দেখা যায়।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেম আজ জুমার বয়ানে বলেন, পবিত্র শবে মেরাজের ঘটনা থেকে মুমিন খুঁজে পায় সঠিক পথের দিশা লাভ করে আল্লাহর অপার অনুগ্রহ ও দ্বীনের অবিচলতা। মেরাজের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা প্রিয় রাসূলকে যে মর্যাদা দান করেছেন যা অন্য কোনো নবীকে দান করেনি। এ ঘটনার ফলে মুমিনের ঈমান মজবুত হয় এবং হৃদয়ে বিশ্বনবী (সা.) এর ভালোবাসা সুগভীর হয়। রাসূল (সা.) মেরাজ থেকে ফিরে এসে সূরা বনি ইসরাইলের মাধ্যমে ১৪টি বিষয় উম্মতের সামনে পেশ করেছেন, তা’ হচ্ছে, আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক কোরো না, তাহলে তুমি নিন্দিত ও অসহায় হয়ে পড়বে। আর তোমরা কেবল আল্লাহরই বন্দেগি করো, মা বাবার সাথে উত্তম ব্যবহার করো। তাদের একজন বা উভয়ে বৃদ্ধ অবস্থায় যদি তোমাদের সামনে উপনীত হয় তাহলে তাদের সাথে উহ শব্দটিও বলো না। তাদের ধমক দিও না; বরং তাদের সাথে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা বলো। আর তাদের সামনে ভালোবাসার সাথে বিনয়ী থেকো আর বলো ‘হে আমার প্রতিপালক, তাদের উভয়ের প্রতি রহম করো, যেমন শৈশবে তারা আমাদের লালন পালন করেছেন,’
তোমাদের কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর কাছে তওবা কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চই আল্লাহ তোমাদের মনের খবর জানেন।
আত্মীয় স্বজনকে তাদের হক দান কর আর অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরদের হক আদায় কর। অপব্যয় কোরো না, নিশ্চয়ই অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই, আর শয়তান স্বীয় প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ। হকদারদের হক আদায়ে অপারগ হলে তাদের সাথে ন¤্রভাবে কথা বলো। একেবারে ব্যয়কুণ্ঠ হয়ো না আবার একেবারে মুক্ত হস্তও হয়ো না। তাহলে তুমি তিরস্কৃত, নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে। দারিদ্রের ভয়ে তোমাদের সন্তানদের হত্যা কোরো না। কারণ তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই জীবনোপকরণ দিয়ে থাকি। নিশ্চয়ই তাদের হত্যা করা মহাপাপ। জেনা-ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চই এটি নিকৃষ্ট কাজ ও মন্দ পথ।
কোনো জীবনকে অন্যায়ভাবে হত্যা কোরো না। কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হলে তার উত্তরাধিকারীকে আমি এই অধিকার দিয়েছি, তবে সে যেন প্রতিশোধের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি না করে। এতিমের সম্পদের ধারে কাছেও যেয়ো না। সম্পদের ব্যাপারে তার বয়োপ্রাপ্তি পর্যন্ত অপেক্ষা করো আর অঙ্গীকার পূর্ণ করো। নিশ্চয়ই অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
ওজনে কখনো কম দিয়ো না। সঠিকভাবে দাঁড়িপাল্লায় ওজন করবে। এটা উত্তম; এর পরিনাম শুভ। যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই সেগুলোর পেছনে লেগো না। নিশ্চয়ই চোখ, কান, অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে। পৃথিবীতে দম্ভভরে চলো না। নিশ্চয় তুমি তো ভূপৃষ্ঠকে কখনই বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমান হতে পারবে না। এগুলো সবই মন্দ ও ঘৃণিত কাজ (সূরা বনি ইসরাইল : ২৩-৩৮)।
পেশ ইমাম বলেন, মি’রাজে রাসূলুল্লাহ (সা.) কে তিনটি বস্তুু প্রদান করা হয়। পাঁচ ওয়াক্ত সলাত সূরা বাক্বারাহর শেষ আয়াতগুলি ২৮৫-২৮৬ আয়াত। উম্মতে মুহাম্মাদীর মধ্যে যারা কখনো শিরক করেনি, তাদেরকে ক্ষমা করার সুসংবাদ। মুসলিম, মিশকাত হা ৫৮৬৫। তাছাড়া মেরাজের অন্যতম শিক্ষনীয় বিষয় হলো খারাপকাজ পরিহার করা এবং ভালো কাজ বেশি করে করা।
তাইতো মেরাজের রজনীতে আলাপচারিতার এক পর্যায়ে মহান রব্বুল আলামীন বললেন হে মুহাম্মাদ! আপনি কি জানেন, কি নিয়ে মালা এ আলায় আলোচনা হচ্ছে? আমি বললাম হ্যাঁ, গুনাহের কাফফারা বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। সালাতের পর মসজিদে অবস্থান করাও কাফফারা, জামাতে পায়ে হেঁটে যাওয়া, কষ্টের সময় পরিপূর্ণভাবে উযূ করাও কাফফারা। যে ব্যক্তি এই কাজ করবে তার জীবন হবে কল্যাণময়, আর মৃত্যুও হবে কল্যাণময়। যেই দিন তাঁর মা তাকে ভূমিষ্ঠ করলেন গুনাহর ক্ষেত্রে তাঁর অবস্থা হবে সেই দিনের মত। আমার রব বললেন হে মুহাম্মাদ! সালাত (নামায) শেষে বলবেন হে আল্লাহ্! আপনার কাছে আমি যাঞ্ছা করি ভাল কাজ করা এবং মন্দ কাজ পরিত্যাগের, দরিদ্রদের প্রতি ভালবাসা পোষণের তওফীক। আপনি যখন বান্দাদের বিষয়ে ফেতনা মুসীবতের ইরাদা করবেন তখন আমাকে যেন ফেতনা মুক্ত অবস্থায় উঠায়ে নেন। নবী সালাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন (মালা-এ-আ’লায় আরো আলোচনা হচ্ছে) উচ্চ মর্যদা লাভের বিষয়ে। তা হল, সালামের প্রসার সাধন, আহার প্রদান এবং লোকেরা যখন নিদ্রাভিভূত তখন রাতের নফল সালাতে (তাহাজ্জুদে) নিমগ্ন হওয়া। (তিরমিজী হাদিস নম্বর ৩২৩৩)। মেরাজের রজনীতে জান্নাত জাহান্নামের বিভিন্ন দৃশ্য দেখার একপর্যায়ে এমন এক দল লোকের পাশ দিয়ে নবীজী গমন করেছিলেন। হযরত আনাস ইবনু মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন মে’রাজের রাতে আমি এমন এক কওমের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম যাদের নখগুলো তামার তৈরী এবং তা দিয়ে তারা অনবরত তাদের মুখম-লে ও বুকে আচড় মারছে। আমি বললাম, হে জিবরীল ! এরা কারা? তিনি বললেন, এরা সেসব লোক যারা মানুষের গোশত খেতো অর্থাৎ, মানুষের গীবত করত এবং মানুষের ইজ্জতের উপর হামলা করত।” এবং তাদের মানসম্মানে আঘাত হানতো ।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৮৭৮। সুতরাং গীবত পরিহার করাও মেরাজের শিক্ষা ৷রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়াসাল্লাম বহু হাদীসে গীবতের ভয়াবহতা বর্ণনা করেছেন ইরশাদ হয়েছে “গীবত করা যিনা থেকেও মারাত্মক।” মেশকাত, বায়হাকি। অতএব বুঝা গেল যিনা করলে যে গুনাহ হয় এর চাইতে বেশি গুনাহ হয় গীবত করলে। অপর হাদীসে রাসূলে কারীম (সা.) ইরশাদ করেন,‘সূদের (পাপের) ৭২টি দরজা বাস্তা রয়েছে। তন্মধ্যে নিম্নতম স্তর হচ্ছে স্বীয় মায়ের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া তুল্য পাপ এবং ঊর্ধ্বতম স্তর হ’ল কোন ব্যক্তি তার এক ভাইয়ের মান-সমভ্রমের হানি ঘটান তুল্য পাপ’। (তাবারাণী; সিলসিলা ছহীহাহ হা ১৮৭১) । পবিত্র মাহে রমজান সন্নিকটে। রমজানের প্রাক্কালে মিরাজের তাৎপর্য ও শিক্ষা গ্রহণ করে আমারা রমজানের প্রস্তুতিকে আরও সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করি। তাই আসুন, মিরাজের শিক্ষাকে নিজ জীবনে বাস্তবায়ন করি, অন্যকে বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানাই। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন। আমিন।
মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র সীরাতের গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় ইসরা ও মেরাজ। মুমিনের আবেগ, অনুভূতি, ভক্তি ও বিশ্বাসের সাথে মিশে আছে ইসরা ও মিরাজের সত্যতা। ইসরা অর্থ নৈশভ্রমণ, রাত্রিকালীন ভ্রমণ। মেরাজ অর্থ সিঁড়ি, ঊর্ধ্বলোকে গমন, মই ইত্যাদি। মহাগ্রন্থ আল কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, পবিত্র সেই সত্তা, যিনি নিজ বান্দাকে রাতের একটি অংশে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায় নিয়ে যান, যার চারপাশকে আমি বরকতময় করেছি। তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখানোর জন্য। নিশ্চয়ই তিনি সব কিছু শোনেন এবং সব কিছু জানেন। (সূরা ইসরা: আয়াত নং-১)। বস্তুুত ইসরা হচ্ছে, মক্কা মুকাররমা থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত ভ্রমণকে যা রাতের একটি অংশে সংঘটিত হয়েছিল। আর সেখান থেকে ঊর্ধ্বজগৎ পরিভ্রমণের বিস্তৃত অধ্যায়কে মিরাজ বলে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, অবশ্যই তিনি (হযরত মুহাম্মদ সা.) তাকে (জিবরাঈল আ. কে) আরও একবার দেখেছেন, সিদরাতুল মুনতাহার কাছে। তার পাশেই রয়েছে জান্নাতুল মাওয়া। (সূরা নাজম: আয়াত নং- ১৩-১৫)। ইসরা ও মিরাজের ব্যাপারে কোরআনে সংক্ষেপে এতটুকুই বলা হয়েছে। বিস্তারিত বিবরণ বর্ণিত হয়েছে হাদীসের নির্ভরযোগ্য কিতাবগুলোতে। বিশুদ্ধ মতে ইসরা ও মেরাজ নবুওয়াতের ১১তম বছরের ২৬ রজব দিবাগত রাতে সংঘটিত হয়েছিল নবীজির সা. বয়স তখন ৫১ বছর। ইসরা ও মেরাজ সংঘটিত হয়েছিল সশরীরে জাগ্রত অবস্থায়। এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ হল কাফের, মুশরিক ও মুনাফিকদের অস্বীকৃতি ও অবিশ্বাস। যদি আধ্যাত্মিক বা রূহানী ভাবে কিংবা স্বপ্নযোগে হওয়ার কথা বলা হতো, তাহলে তাদের অবিশ্বাস করার কোনো কারণ ছিল না।
খতিব আরও বলেন, মেরাজের ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, মহান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখা। শিরক থেকে বেঁচে থাকা। আল্লাহর সাথে বান্দার আবদিয়াত তথা দাসত্বের সম্পর্ক আরও মজবুত করা। নামাযের প্রতি যতœবান হওয়া। কেননা এটা মিরাজে লাভ করা উম্মতের জন্য নবীজীর সা. তোহফা। আল্লাহ তায়ালা ও বান্দার হকের প্রতি যতœবান হওয়া এবং গীবত, পরনিন্দা থেকে বেঁচে থাকা। মানুষের সম্ভ্রমহানি না করা। কাউকে অপদস্থ ও লাঞ্ছিত না করা। কারণ এটা অনেক বড় কবীরা গুনাহ। জান্নাতের ব্যাপারে আগ্রহী এবং জাহান্নামের ব্যাপারে ভীত থাকা। হাউজে কাউসারের প্রত্যাশী হওয়া। সব ধরনের গুনাহ, বিশেষ করে মদ ও যেনা থেকে বেঁচে থাকা। যেই পবিত্র ও বরকতময় ভূমিতে নবীজী সা.এর ইসরা ঘটেছে সেই বাইতুল মুকাদ্দাস ও জেরুযালেম আজ বেদখল। সেখানে প্রতিনিয়ত প্রবাহিত হয় আমার মুসলমান ভাইয়ের রক্ত। বাইতুল মুকাদ্দাস দখলমুক্ত করার দৃঢ. প্রত্যয় ও নিয়ত রাখাও ইসরা ও মেরাজের গুরুত্বপূর্ণ একটি শিক্ষা। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করেন, আমিন।
গুলিস্তান ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী আজ জুমার বয়ানে বলেন, ইসরা ও মেরাজের ঘটনা নবী জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। নবীজীর রিসালাতের অনেক বড় মুজিযা আর উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য আল্লাহর দেয়া একটি বড় নিয়ামত। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আল্লাহ তায়ালা যেমন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মান আরো বৃদ্ধি করেছেন, তেমনি তাঁর উচ্চ মর্যদা সম্পর্কে অবগত করেছেন সৃষ্টিজগৎকে। এই ঘটনা যেভাবে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবন ও সীরাতের সাথে সম্পর্কিত, সেভাবে তা ইসলামী আক্বীদা ও বিশ্বাসেরও অংশ। এই ঘটনায় একদিকে উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ও নির্দেশনা, অন্যদিকে সেখানে লুকিয়ে রয়েছে অসংখ্য ইলাহী হিকমত ও রহস্য।
কোরআনে ইরাশাদ হয়েছে, পবিত্র সেই সত্তা, যিনি নিজ বান্দাকে রাতের একটি অংশে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায় নিয়ে যান, যার চারপাশকে আমি বরকতময় করেছি, তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখানোর জন্য। নিশ্চয়ই তিনি সব কিছু শোনেন এবং সব কিছু জানেন। সূরা ইসরা (১৭) : ১। উক্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা রাসূল কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিশেষণ হিসেবে 'আবদিইয়াত' তথা তাঁর দাসত্বের কথা উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা সূরা নাজমে আরো বলেন, বস্তুুত সে তাকে (হযরত জিবরাঈল আ.কে) আরও একবার দেখেছে। সিদরাতুল মুনতাহা (সীমান্তবতী কুলগাছ)-এর কাছে। তারই কাছে অবস্থিত জান্নাতুল মাওয়া। তখন সেই কুল গাছটিকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল সেই জিনিস, যা তাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। (রাসূলের) চোখ বিভ্রান্ত হয়নি এবং সীমালঙ্ঘনও করেনি। সূরা নাজম (৫৩) : ১৩-১৮।
খতিব বলেন, পবিত্র শবে মেরাজের ঘটনা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র সীরাতের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। প্রতিটি মুমিনের ঈমান ও আবেগ জড়িয়ে আছে এর সাথে। তাই এক্ষেত্রে আমাদের কিছু করণীয় আছে। এক্ষেত্রে সর্বপ্রথম যে করণীয় তা হচ্ছে, মেরাজের ব্যাপারে সহীহ আক্বীদা পোষণ করা। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এক রাতে সশরীরে মক্কা থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস এবং সেখান থেকে সাত আসমান, সিদরাতুল মুনতাহা, জান্নাত, জাহান্নাম ভ্রমণ করিয়েছেন; আল্লাহ তায়ালা স্বীয় বড় বড় কিছু কুদরত প্রিয় হাবীবকে দেখাবেন বলে। এটা সীরাতে রাসূলের একটি বড় অধ্যায় এবং নবী জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুজিযা। এটা মুসলমানের অকাট্য মৌলিক আক্বীদার অংশ। অবিচ্ছিন্ন সূত্র পরম্পরায় তা স্বীকৃত ও সুসাব্যস্ত। তাই এক্ষেত্রে স্বচ্ছ বিশ্বাস রাখা জরুরি। মেরাজ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি বিশেষ মুজিযা। আর মুজিযা ওই ঘটনাকেই বলা হয়, যা সাধারণ সক্ষমতার বাইরে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে বিশেষভাবে সংঘটিত হয়। মেরাজের ঘটনা থেকে সরলদাগে যে শিক্ষাগুলো পাওয়া যায় সংক্ষেপে তা’ হচ্ছে, আল্লাহর সত্তার উপর পূর্ণ ও সঠিক বিশ্বাস রাখা। শিরক থেকে বিলকুল বেঁচে থাকা। আল্লাহর সাথে বান্দার আবদিয়াত তথা দাসত্বের সম্পর্ক মজবুত করা। নামাযের প্রতি যতœবান হওয়া। কেননা এটা মেরাজে লাভ করা উম্মতের জন্য নবীজীর তোহফা। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, বান্দা যখন নামায পড়ে তখন সে তার রবের সাথে নিভৃতে আলাপ করে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৪০৫) । সূরা বাকারার শেষ আয়াতগুলোর শিক্ষা ও মর্মগুলো ধারণ করা। এখানে মুমিনের ঈমানের শিরোনামগুলো সংক্ষিপ্তভাবে বলা হয়েছে। আল্লাহর হক ও বান্দার হকের প্রতি যতœশীল হওয়া। গীবত ও পরনিন্দা থেকে বেঁচে থাকা। মানুষের সম্ভ্রমহানি না করা। কাউকে অপদস্থ ও লাঞ্ছিত না করা। এটা অনেক বড় কবীরা গুনাহ। মহান আল্লাহ সবাইকে সকল প্রকার গুন থেকে বেচে থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ