Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রবিউল আউয়াল হচ্ছে রাসুল (সা.) এর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা খুৎবা পূর্ব বয়ান

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ৮ অক্টোবর, ২০২১, ৪:৪২ পিএম

পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসের প্রতি মুসলিম জাতির ভিন্ন একটি আবেগ ও ভালোবাসা রয়েছে। রাসুল (সা.) এর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা স্মরণ করিয়ে দেয় রবিউল আউয়াল মাস। শান্তি প্রতিষ্ঠায় রাসুল সা.এর আদর্শ অনুসরণের বিকল্প নেই। আজ জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে নগরীর মসজিদগুলোতে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে। জায়গা সঙ্কুলান না হওয়ায় অনেক মুসল্লিকে মসজিদের বাইরে রাস্তার ওপর জুমার নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় সমজিদের পেশ ইমাম ও ভারপ্রাপ্ত খতিব মুফতি মুহাম্মদ মুহিববুল্লাহিল বাকী আজ জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেন, পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসের প্রতি মুসলিম জাতির ভিন্ন একটি আবেগ ও ভালোবাসা রয়েছে। রাসুল (সা.) এর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা স্মরণ করিয়ে দেয় রবিউল আউয়াল মাস। এ মাসে রাসুলুল্লাহ (সা.)এর শুভাগমন, তাঁর আগমনকে ঘিরে ঘটে যাওয়া বিস্ময়কর মুজিজা, তাঁর অলৌকিক জীবনাদর্শ সবগুলো মুসলিম জাতির অন্তরে ঢেউয়ের মত দুলতে থাকে।
এই কারণেই মুসলিম জাতি এ মাসকে ঘিরে রাসুল (সা.) এর ভালোবাসাকে তাজা করার জন্য মিলাদ মাহফিল, সীরাত মাহফিল, বিভিন্ন সেমিনার সিম্পোজিয়াম এর আয়োজন করে থাকেন। কোরআনে কারীমে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন “তুমি তাদের কাছে আল্লাহ তায়ালার দিনগুলো স্মরণ করিয়ে দাও”। বিভিন্ন ঘটনার কারণে যেই দিনগুলো থেকে কিছু শিক্ষা নেয়া যায় সেই দিনগুলোর কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালার রাসুলের আগমনের দিন ও মাসের চাইতে শিক্ষণীয় দিন, মাস আর কি হতে পারে? এসব অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য হতে হবে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন, রাসুলের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি, রাসুলের আদর্শ গ্রহণ করা। খতিব বলেন, রাসুলের প্রতি ভালোবাসা আর তার সুন্নাত বা আদর্শের প্রতি ভালোবাসার মধ্যে বিভাজন করা যাবে না। রাসুলেপাক (সা.) ইরশাদ করেন যে আমার সুন্নাত, আদর্শকে ভালোবাসবে সে আমাকে ভালোবাসল। যে আমাকে ভালোবাসবে সে আমার সাথে জান্নাতে অবস্থান করবে। এই হাদীস থেকে বুঝা যাচ্ছে যে রাসুল (সা.) কে ভালোবাসা এবং তার আদর্শকে ভালোবাসা একটি আরেকটির পরিপূরক, একটি ছাড়া অন্যটি কল্পনা করা যায় না। রাসুলেপাক (সা.) এর সুন্নত বা আদর্শ গ্রহণ এর মধ্যে তার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার প্রমাণ দিতে পারলেই মুসলিম জাতি সফলকাম হবে। রবিউল আউয়াল মাস মুসলিম জাতিকে সে অকৃত্রিম ভালোবাসার প্রয়োজনীয়তাকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। আল্লাহ যেন আমাদেরকে রাসুল (সা.)এর অকৃত্রিম ভালোবাসা অর্জন করার তৌফিক দান করেন।
মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদ এর খতিব মুফতি আব্দুর রহীম কাসেমী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, বছর ঘুরে আবারও সমাগত পবিত্র মাহে রবিউল আউয়াল। এ মাসে ধরাপৃষ্ঠে আগমন করেন মানবতার মুক্তির দূত হযরত মুহাম্মাদ (সা.)। রাসুল (সা.) আবির্ভাবের মাধ্যমে তদানিন্তন আরব বিশ্বের মারামারি কাটাকাটি, সন্ত্রাসী রাহজানি, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোত্রে গোত্রে বছরের পর বছর যুদ্ধ বিগ্রহ, আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অবক্ষয়সহ সর্ব প্রকার অমানিসার অবসান ঘটে। নির্যাতিত নিপীড়িত নারী জাতি লাভ করে তাদের ন্যায্য অধিকার ও মর্যাদা। নীতি-নৈতিকতাহীন অশান্ত, বিশৃঙ্খল ভঙ্গুর সমাজ পরিণত হয় শান্ত শিষ্ট, সু-শৃঙ্খল সমৃদ্ধশালী, আনন্দময়ী সমাজে। পৌত্তলিকাতর ছোয়ায় পরিপূর্ন অসত্য ও মিথ্যার দেয়াল ভেঙ্গে চৌচির হয়ে একত্বাদের সত্য সুন্দরের আলোয় উদ্ভাসিত হয় গোটা আরব বিশ্ব। এক কথায় প্রিয় নবী (সা.)-এর আবির্ভাবে মানুষের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও সমগ্র বিশ্ব যেন পরিণত হয় আনন্দ হিল্লোল এক বেহেস্তি পরিবেশে। তাইতো আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন : হে নবী (সা.) ! আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি বিশ্বজগতের জন্য শান্তি ও রহমত স্বরূপ । ( সুরা আম্বিয়া, আয়াত নং : ১০৭)। খতিব আরও বলেন, আজকের ঘুনে ধরা অশান্ত, অন্যায় অবিচার ও অত্যাচারে জর্জরিত পচনশীল সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় রাসুল (সা.) এর আদর্শ অনুসরনের বিকল্প নেই। আল্লাহ সকলকে তৌফিক দান করুন। আমীন।
ঢাকা উত্তরা ৩ নং সেক্টর মসজিদ আল- মাগফিরাহ এর খতিব মুফতি ওয়াহিদুল আলম খুৎবার পূর্বে বলেন, প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আধ্যাত্বিক গুণাবলী অর্জন করা অতীব জরুরী। কেয়ামতের দিন যারা পরিশুদ্ধ আত্মা নিয়ে উপস্থিত হতে পারবে, তারাই কেবলমাত্র আল্লাহ তায়ালা কাছে নাজাত পাবে। আর দুনিয়ার জীবনেও প্রকৃত সুখ এবং আত্মার প্রশান্তি নির্ভর করে আত্মশুদ্ধির উপর। শান্তির আসবাবপত্র ও উপকরণ এক জিনিস আর প্রকৃত শান্তি ভিন্ন জিনিস।
খতিব বলেন, আত্মার পবিত্রতার জন্য যে মৌলিক গুণাবলী আবশ্যক তার মধ্যে যুহুদ হল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যুহুদের অর্থ হল দুনিয়া হতে বিমুখ হওয়া, দুনিয়ার মহব্বত হতে আত্মা মুক্ত হওয়া। খতিব বলেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন হে লোক সকল নিশ্চিত জানো যে,আল্লাহ তায়ালার ওয়াদা সত্য, তাই তোমাদেরকে যেন দুনিয়ার এ জীবন ধোকায় না ফেলে। আর আল্লাহ তায়ালার বিষয়ে তোমাদেরকে যেন ঐ ধোঁকাবাজ (শয়তান) ধোকায় ফেলতে না পারে। (সুরা ফাতির আয়াত ৫)। দুনিয়ার মহব্বত ও আল্লাহর মহব্বত এক অন্তরে থাকা অসম্ভব। দুনিয়াতে থাকতে হবে, দুনিয়াকে ব্যবহার করতে হবে কিন্ত দুনিয়া অন্বেষী হওয়া যাবে না।
সাহাবায়ে কেরাম নবী কারীম (সা.) এর সহবতের মাধ্যমে এ শিক্ষা লাভ করে দুনিয়ার ভালোবাসা শতভাগ পরিত্যাগ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সাহাবায়ে কেরামের মত আত্মার পরিশুদ্ধি অর্জনের তৌফিক দান করুন। আমিন।

মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসটি রাসুলুল্লাহ (সা.)এর জন্ম মৃত্যুসহ নানা কারণে বিখ্যাত। মুমিনের অন্তরে রাসুলের (সা.) এর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা ও মহব্বতের যে দরিয়া প্রবাহিত হয় তাতে রবিউল আউয়াল মাসে ঢেউ ওঠে। নবীজীর ভালোবাসার এ জোয়ারে সিক্ত হয় গোটা মুসলিম উম্মাহ। নব উদ্যমে সীরাতুন্নবীর চর্চা শুরু হয় সর্বত্র। সারা বছর নবীজী (সা.) এর অনুসরণ ও অনুকরণ ভুলে গিয়ে শুধু রবিউল আউয়ালে তার প্রতি ভালোবাসা দেখালে পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়া যাবে না। কারণ হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষন আমি তার নিকট তার পিতা, তার সন্তান ও সব মানুষের চেয়ে অধিক প্রিয় না হই। বুখারী, হাদীস নং-১৫। এ ভালোবাসার অর্থ হলো, রাসুল আমাদের জন্য যা নিয়ে এসেছেন তা শক্তভাবে ধারণ করা আর যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা থেকে বিরত থাকা। খতীব আরও বলেন, বিশ্বনবীর পদাঙ্ক অনুসরণেই রয়েছে উভয় জগতের যাবতীয় কল্যাণ। আল্লাহর ভালোবাসা পেতে হলে নবীজীর অনুসরণের বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘হে রাসুল! আপনি বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও তবে তোমরা আমার অনুসরণ করো। তা’ হলেই আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ভালোবাসবেন এবং গোনাহসমূহ মাফ করে দিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল দয়াময়। সূরা আলে ইমরান, ৩১ নং আয়াত। এ কারণে দুনিয়ার প্রতিটি কথা ও কাজে শুধু বিশ্বনবীকে রোল মডেল মেনে তাঁর দেখানো সুন্নাহর পথেই সারা বছর নিজেদের পরিচালিত করতে হবে। সুন্নাত পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ফ্যাশন। সুন্নাহ মোতাবেক জীবনে বরকত ডানা মেলে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয়। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করেন, আমীন। দিনাজপুর গোর এ শহীদ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা রেজাউল করিম আজ জুমা পূর্ব খুৎবার বয়ানে বলেন, উম্মতের একটি বড় দায়িত্ব সম্মান হলো দাওয়াত ইলাল্লাহ। যা নবীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য ছিল। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে আমার সম্প্রদায় তোমরা আল্লাহর দিকে আহবানকারীর কথা মান্য করো। এবং তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করো। তিনি তোমাদের গুনা মার্জনা করবেন এবং তোমাদেরকে কঠিন শাস্তি থেকে রক্ষা করবেন। সূরা কাহাফ ৩১। দায়ী ইলাল্লাহ এর গুনাগুন। ধৈর্যশীল হতে হবে। অত্যান্ত হেকমত পূর্ণভাবে ধৈর্যের সাথে মানুষকে দ্বীনের দাওয়াত দিতে হবে। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, আপনার পালনকর্তা পথে আহবান করুন। জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে উত্তমরুপে। এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন পছন্দ যুক্ত পন্থায়। সূরা নাহল আয়াত ১২৫।

 



 

Show all comments
  • jack ali ৮ অক্টোবর, ২০২১, ৪:৫১ পিএম says : 0
    আমরা ক্রিস্টান দের মত আমাদের নবীর জন্মদিন পালন করি অথচ আল্লাহর কাছ থেকে কোরআন এসেছে নবীর কাছে সারা বিশ্ব শাসন করার জন্য তাহলে সারা বিশ্ব শান্তিতে বসবাস করতে পারব
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ