Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ওষুধের কারণে পেপটিক আলসার

| প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:১২ এএম

বেশ কিছু ওষুধ আছে যেগুলো আমাদের পেটে এসিডিটি ও আলসার তৈরি করে। আমাদের পাকস্থলী এবং ক্ষুদ্রান্তের প্রথম অংশ যেটাকে আমরা ডিওডেনাম বলি সেখানেই এই পেপটিক আলসার গুলো বেশি হয়। বিভিন্ন রকমের ওষুধেই এসব আলসার হতে পারে। যেসব ওষুধ খেলে পেটে আলসার হয় সেসব ওষুধের মধ্যে আছে ঃ

১। নন স্টেরয়েডাল এনটি ইনফ্লামেটরি ড্রাগস। বিভিন্ন ব্যথার ওষুধ এই গ্রুপের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত এই গ্রুপের কিছু ওষুধ আছে, যেমন ঃ ন্যাপ্রোক্সেন, কেটোরোলাক, ডাইক্লোফেনাক, এসিক্লোফেনাক এই জাতীয় ওষুধ। এগুলো বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে পেপটিক আলসার হতে পারে।

২। স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ- আমাদের দেশে এইগুলি খুব বেশি ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন ওষুধের মধ্যে এই উপাদান মিশিয়ে দেয়া হয়। যারা ট্রেডিশনাল চিকিৎসা করেন অর্থাৎ হোমিও, ইউনানিরা অনেক ওষুধের মধ্যে এই ওষুধ মিশিয়ে দেয় বা এটার মধ্যেই তাদের প্রয়োজনীয় উপাদানটা দিতে হয়। এর ফলে এগুলো বেশী ব্যবহার করলে পেপটিক আলসার হতে পারে।

৩। আমাদের রক্ত পাতলা রাখার জন্য ডাক্তাররা বিভিন্ন ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন। স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাক যাতে না হয় তা প্রতিরোধের জন্য এসব ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এসব ওষুধও নিয়মমত ব্যবহার করতে না পারলে পেপটিক আলসার হতে পারে।

৪। হাড় ক্ষয় আমাদের দেশে একটা খুব পরিচিত সমস্যা। যারা স্টেরয়েড বেশী খান তাদের হাড় ক্ষয় হয়ে যেতে পারে। এছাড়া বয়সের সাথেও এর একটা সম্পর্ক আছে। বয়স যত বাড়ে তত হাড় ক্ষয় হয়ে যেতে থাকে। এই হাড় ক্ষয় প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এসব ওষুধ নিয়ম না মেনে গ্রহণ করলে পেপটিক আলসার হতে পারে।

ব্যথার ওষুধ কখনও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া যাবে না। দীর্ঘদিন একটানা ব্যথার ওষুধ খাওয়া কখনোই উচিত নয়। এগুলো দীর্ঘদিন খেয়ে গেলে পেপটিক আলসার সহ নানা রকম জটিলতা তৈরি হতে পারে। আমাদের দেশে অনেকেই ব্যথা হলে নিজে নিজে ব্যথার ওষুধ কিনে খান। এবং অনেকে আছেন যারা দীর্ঘদিন ধরে ব্যথার ওষুধ খেয়ে যাচ্ছেন। এটা ভবিষ্যতে অনেক বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে, কিডনি বিকল হওয়ার ঝুঁকিও এতে বেড়ে যায়। পেপটিক আলসার অনেকসময় জটিল হয়ে খাদ্যনালী ফুটা করে ফেলে যাকে বলে পারফোরেশন এবং এটা একটা ইমার্জেন্সি অবস্থা এবং তাৎক্ষণিক অপারেশন না করলে অনেকসময় রুগীর মৃত্যুও ঘটতে পারে। এছাড়া আলসার থেকে রক্তপাত হয়ে রুগীর রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে। অনেক সময় খাদ্যনালীর আক্রান্তস্থান সরু হয়ে অবস্ট্রাকশন তৈরী হয়। তখন খাওয়ার কিছুক্ষন পরই বারবার বমি হয় এবং পেটে ব্যথা হয়। গলায় আঙ্গুল দিয়ে হলেও বমি না করলে অস্বস্তি হয়।

যে কোন ওষুধ গ্রহণের আগেই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ গ্রহণ করা ঠিক নয়। কোন ওষুটি আপনার জন্য প্রযোজ্য নয়, তা একমাত্র ডাক্তারই বলতে পারবেন। কোন ফার্মাসিস্ট বা দোকানদারের পরামর্শে ওষুধ সেবন করলে তা বিপদজনক হতে পারে। অনেক ট্রেডিশনাল চিকিৎসকও আজকাল তাদের প্যাডে তাদের ডিগ্রিকে এমবিবিএস সমমান লিখে নিজেদের ওষুধ বাদ দিয়ে এলোপ্যাথির ওষুধ প্রেসক্রাইব করে, যা শুধু বিপদজনকই নয়, রুগীর প্রতিও অবিচার।

ডাঃ মোঃ ফজলুল কবির পাভেল



 

Show all comments
  • HM Omar Faruk ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৯:৪১ পিএম says : 0
    মাশাআল্লাহ্ খুব সুন্দর একটি উপদেশ দিয়েছেন। অথচ আমরা এগুলোই করে থাকি, প্রথমিক রোগের জন্য আমরা নিজেরাই ডাক্ততার হয়ে যাই, আমরা নিজেরাই ডাক্তারকে ঔষধের নাম বলে ঔষধ কিনে নিয়ে আসি। সাধারন যেকোনো ব্যাথা, জ্বরের জন্য আমরা "প্যারাসিটামল" গ্রুপের ঔষধ গুলো খেয়ে থাকি, আচ্ছা এতে কি কোনো সমস্যা হবে স্যার?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ওষুধের কারণে পেপটিক আলসার

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
আরও পড়ুন