২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
বিশ্বে এখন মৃত্যুর অন্যতম কারণ স্ট্রোক। স্ট্রোকের সম্পূর্ণ চিকিৎসায় এবং রোগীকে পুরোপুরি নিরাময়ে স্ট্রোক-পরবর্তী পুনর্বাসন অত্যন্ত জরুরি। আসুন আমরা জেনে নেই স্ট্রোক কেন হয়? ও স্ট্রোক-পরবর্তী পুনর্বাসন চিকিৎসা কি?
প্রশ্ন : স্ট্রোক বলতে আসলে আমরা কী বুঝি? এটি কেন হয়?
উত্তর : স্ট্রোক খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি মস্তিস্কের রোগ। মৃত্যুর কারণ হিসেবে বিশ্বে এটি তৃতীয়। আমরা যেমন হার্ট অ্যাটাক বলি, তেমনি মস্তিষ্কের অ্যাটাক হয়, হঠাৎ করে থেমে যাচ্ছে, এটিকে আমরা স্ট্রোক বলি। আর স্ট্রোক দুটো কারণে হয়ে থাকে। একটি হলো- ইসকেমিক স্ট্রোক, মস্তিষ্কের ভেতরে যে রক্তনালিগুলো রয়েছে, সেগুলোর ভেতরে যখন রক্ত চলাচল ব্যাহত হয় তখন এটিকে আমরা ইসকেমিক স্ট্রোক বলি।
আরেকটি হলো- হেমোরেজিক স্ট্রোক। আমাদের রক্তনালিগুলো কোথাও একটু সমস্যা হলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। যে এলাকায় ক্ষরণ হলো সেখানে কিছু উপসর্গ দেখা যায়।
প্রশ্ন : স্ট্রোকের চিকিৎসা বা ব্যবস্থাপনা সম্বন্ধে একটু জানতে চাই।
উত্তর : স্ট্রোকের পরপর অ্যাকিউট একটি অবস্থা হয় এবং গুরুতর মেডিকেল অবস্থা হয়। এ সময় যতদূর সম্ভব বিশেষায়িত হাসপাতালে যেতে হবে। বিশেষ করে এ সময়ে তা (রোগীর) সঞ্চালনকে ঠিক রাখা জরুরি। অনেক রোগীকে আমরা দেখি, রক্ত সঞ্চালন কম হওয়ার কারণে শ্বাস নিতে পারছে না। অ্যাকিউট অবস্থায় তাকে সিসিইউ, আইসিইউ এগুলোতেও রাখতে হয়। স্ট্রোক-পরবর্তীকালে হয়তো দেখা যায়, হাতপায়ে দুর্বলতা চলে আসে। যেটাকে অনেক সময় প্যারালাইসিস বলে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, মুখ একপাশে বাঁকা হয়ে গেছে।
প্রশ্ন : এই প্যারালাইসিস বা সাময়িক অক্ষমতা থেকে মুক্ত রাখতে আপনারা পুনর্বাসনে কী করেন?
উত্তর : হাতপায়ের অক্ষমতা ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য ফিজিওথেরাপি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, বিশেষ করে হেমোরেজিক স্ট্রোকের ক্ষেত্রে। হেমোরেজিক স্ট্রোকের কারণে ক্ষতিটা দীর্ঘ সময় হয়। ইসকেমিক স্ট্রোকের উন্নতি খুবই ভালো। আমরা অভিজ্ঞতায় দেখেছি, রোগী যদি খুব দ্রুত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার আওতাধীন হয়, ৯৫ ভাগই আগের জীবনে ফিরে আসতে পারে। অসুস্থ অবস্থার একজন মানুষকে আগের মতো পরিস্থিতিতে নিয়ে আসাকেই আমরা পুনর্বাসন বলি।
প্রশ্ন : এটি করতে আপনাদের কত সময় লাগে এবং এই সময় নির্ধারণ হয় কিসের ওপর?
উত্তর : নির্ভর করে রোগীর অ্যাটাকের জটিলতার ওপর, তার শারীরিক লক্ষণের ওপর। বিশেষ করে দেখা যায় আমরা কিছু রোগী পাই, যাদের হাতপায়ের শক্তি সম্পূর্ণ চলে যায়নি। অল্প অল্প শক্তি রয়েছে। একে আমরা হেমিপেরেসিস বলি। এর জন্য সঠিকভাবে প্রথম থেকেই ফিজিওথেরাপি শুরু করলে এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে আবার আগের অবস্থায় চলে আসে। আমরা কিছু রোগী এমন পেয়েছি, প্রায় দুই সপ্তাহের মধ্যে সে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছে। আর যদি সঠিকভাবে ফিজিওথেরাপি না হয়, তাহলে সমস্যা হয়। আমাদের দেশে রোগীদের একটি প্রবণতা রয়েছে। চিকিৎসক হয়তো পরামর্শ দিয়েছে, তবে ওই রোগী ভাবছেন এ রকম যে, বাসায় কিছু ব্যায়াম করে নিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। এতে কখনোই সমস্যার সমাধান হয় না।
প্রশ্ন : তার মানে আপনি কি বলতে যাচ্ছেন, একটি সেন্টার বা হাসপাতালে থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসাটা নিতে?
উত্তর : হ্যাঁ, বিশেষ করে এ চিকিৎসা চলাকালীন, স্ট্রোক-পরবর্তীকালেই যদি আমরা তাদের পাই, তাহলে সকাল-দুপুর-রাত তিনবার করে ফিজিওথেরাপি দেই। পাশাপাশি কিছু ব্যায়াম করানো হলে খুব দ্রুত রোগী সেরে ওঠে।
প্রশ্ন : তাহলে শুরু করতে হবে কখন থেকে?
উত্তর : ইসকেমিক স্ট্রোকের ক্ষেত্রে আমরা রোগীটিকে বোঝার পর থেকেই ফিজিওথেরাপি শুরু করতে পারব। কারণ, ওই সময় তার মস্তিষ্কে এমনিতেই রক্ত চলাচল কম হচ্ছে। আমরা যখন তার কিছুটা শারীরিক ব্যায়াম করাব, এতে সারা শরীরেই রক্ত চলাচল যেমন বাড়বে, মস্তিষ্কের রক্ত চলাচলও তেমনি বাড়বে।
আর হেমোরেজিক স্ট্রোকের ক্ষেত্রে আমরা যেটা করি, সেটি হলো জটিলতা বুঝে তাকে প্রথমে ওই স্থিতিশীল অবস্থায় আসা পর্যন্ত কখনো এক সপ্তাহ বা কখনো দুই সপ্তাহ পর থেকে ফিজিওথেরাপি দেয়া শুরু করি। নয়তো তার মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল তো এমনিতেই বেশি হচ্ছে, সেটি যেন ব্যায়ামের কারণে আরো বেশি না হয়ে যায়। সে জন্য রোগীর অবস্থার ওপর নির্ভর করে ফিজিওথেরাপি শুরু করতে হবে।
প্রশ্ন : কেমন সারা পাচ্ছেন তাদের, যারা এখনকার সময়ে স্ট্রোক-পরবর্তী চিকিৎসা নিচ্ছে?
উত্তর : এখন মানুষের মধ্যে সচেতনতা অনেক বেড়েছে। আগে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা সম্বন্ধে অনেকের ধারণাই ছিল না। এখন অনেক রোগী সরাসরি ফিজিওথেরাপির জন্য আসছে। স্ট্রোকের চিকিৎসার জন্য যে ফিজিওথেরাপি সংযুক্ত, সেটি সম্বন্ধে ধারণা ছিল না। তবে এখন সামাজিক মাধ্যমে এ বিষয়ে কথা হচ্ছে। আমরা যে ফিজিওথেরাপিস্ট রয়েছি, তাদের সংখ্যাও আগে কম ছিল, তবে এখন বেড়েছে। আমাদের কাছে রেফারেল রোগী বেশি আসে। বিশেষ করে একজন রোগী যখন সুস্থ হয় তখন আরেকজনকে বলে, ওষুধের পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি নিলে দ্রুত সেরে ওঠা যাবে। এ জন্য এখন অনেক রোগীই আমরা পাই। জরুরি অবস্থা কাটিয়ে ওঠার পরই ফিজিওথেরাপির জন্য চলে আসে।
প্রশ্ন : পুনর্বাসনের জন্য আপনারা কত দিন হাসপাতালে থাকার পরামর্শ দেন? বাসায় চলে গেলে কি কোনো পরামর্শ থাকে?
উত্তর : অবশ্যই। বিশেষ করে কিছু কিছু ব্যায়াম তাদের বাসায়ই করতে হয়। এগুলো আমরাই শিখিয়ে দেই। পাশাপাশি রোগীকে ফলোআপের জন্য আসতে বলি। তাদের প্রাত্যহিক জীবনযাপনে কিছু বিষয় থাকে, এগুলো একটু মেনে চলতে হবে। পাশাপাশি এই ব্যায়ামগুলো নিয়মিত করার পর আমাদের সঙ্গে দেখা করতে হবে। দেখতে হবে পেশিশক্তির কতটুকু উন্নতি হলো। যদি কোনো সমস্যা থাকে, এর ভারসাম্য রক্ষার জন্য নির্দিষ্ট গাইডলাইন দেয়া হয় তাদের। বিশেষ করে রোগীর অবস্থা বুঝে ভিন্ন ভিন্ন ফিজিওথেরাপি দেয়া হয়।
প্রশ্ন : প্রধানত আপনারা কী করেন আগের অবস্থায় ফিরে আসতে?
উত্তর : যেহেতু এটি মস্তিষ্ক সংক্রান্ত, মস্তিষ্ক থেকেই পুরো সঞ্চালন হয়, তাই এর জন্য চিকিৎসা দেয়া হয়। এই যে আমি কথা বলছি, তার জন্যও একটি এলাকা রয়েছে, ম্পিচ এলাকা বলি। আমরা যে হাতটা নাড়াচ্ছি, এর জন্যও একটি এলাকা কাজ করছে। একে মোটর এলাকা বলি। তাই মস্তিষ্কের যে অংশটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যার জন্য তার হাতপায়ের অক্ষমতা, এটাকে সারিয়ে তোলার জন্য কাজ করি। মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে যেমন ওষুধ দেয়া হচ্ছে, তেমনি হাতপায়ের দুর্বল পেশির জন্য ফিজিওথেরাপিতে ইলেকট্রোথেরাপি আছে। যেখানে আমরা ইলেকট্রিক্যাল কিছু যন্ত্র ব্যবহার করে থাকি যেন তার স্নায়ুগুলো কাজ করে। একে ইলেকট্রিক্যাল স্টিমুলেশন থেরাপি বলি। এরপর ম্যানুয়াল কিছু ব্যায়াম আছে, যাকে থেরাপিউটিক ব্যায়াম বলি; রোগ অনুযায়ী ব্যায়ামগুলো ভিন্ন ভিন্ন। আসলে পেশির সঙ্গে সঙ্গে স্নায়ুর ওপরও কাজ করা হয়।
প্রশ্ন : ফলোআপের জন্য রোগীরা আপনাদের কাছে এলে কী দেখেন?
উত্তর : এ সময়, বিশেষ করে তার পেশি শক্তিগুলো কেমন আছে, সেটি দেখি। যেহেতু এটি দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা, একজন রোগীর জন্য ছয় মাস ধরে তো আর হাসপাতালে থাকা সম্ভব হয় না। আমরা হয়তো দুই-তিন মাস রাখার পর যখন দেখি ৯০ ভাগের বেশি সেরে গেছে, তখন তাকে ছেড়ে দিই। পাশাপাশি বললাম, কিছু ব্যায়াম আপনি বাসায় করেন। এই ব্যায়ামগুলো সঠিকভাবে করলে তার উন্নতি হওয়ার কথা। তবে দেখা যায়, অনেকে আর বাসায় গিয়ে ঠিকমতো করে না।
প্রশ্ন : সে ক্ষেত্রে কি সমস্যাটি আবার হওয়ার আশঙ্কা থাকে?
উত্তর : একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সে এগোচ্ছে। যদি সে সেখানে থেমে যায়, তাকে আবার পেছনে ফিরে আসতে হয়। যেটা হয়তো কেবল দুই-তিন সপ্তাহ নিয়মিত করলে সম্পূর্ণ ঠিক হয়ে যেত। তবে এ ক্ষেত্রে দেখা যায় তাকে আবার নতুন করে দুই মাস করতে হচ্ছে। তখন জটিলতা বেড়ে যায়।
প্রশ্ন : জটিলতার দিকে যাই। যদি চিকিৎসা না নেয়া হয়, কী ধরনের জটিলতা হতে পারে?
উত্তর : জটিলতা অনেক হয়। আমরা দেখি, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে ফিজিওথেরাপি সম্বন্ধে সচেতনতা খুবই কম। এ রকম অনেক রোগী দেখি আমরা হাতটা বাঁকা, পা ‘সি’-এর মতো আকৃতি নিয়ে থাকে। সারা জীবন এভাবে তাকে চলতে হয়। আবার অনেকের ধারণা রয়েছে, ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা দিয়েও কাজ হয় না। তারা সঠিকভাবে চিকিৎসা না নেয়ার কারণে এটি হয়। সম্পূর্ণ কোর্স করলে তারা সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে।
এম ইয়াসিন আলী।
প্রধান পরামর্শক ও ফিজিওথেরাপিস্ট,
ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল
বাড়ি ১২/১, রোড ৪/এ, ধানমন্ডি, ঢাকা।
মোবাঃ ০১৭১৭-০৮৪২০২।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।