পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। বিশেষ করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে এবং সরকারবিরোধী গণআন্দোলন গড়ে তুলতে সকল বিরোধী দলগুলোকে পাশে চায় দলটি। ন্যূনতম ইস্যুতেও যাদের সাথে চিন্তার মিল আছে তাদেরকে সাথে নিয়ে জোট কিংবা পৃথকভাবে যুগপৎ আন্দোলনের পরিকল্পনা করছেন বিএনপি নেতারা। আর এজন্য সরকারের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। অনানুষ্ঠানিক এসব বৈঠকে দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের কথা শুনছেন বিএনপি নেতারা। জোট কিংবা যুগপৎ আন্দোলন কিভাবে হবে, আন্দোলনের প্রাথমিক রূপরেখাও তুলে ধরছেন তারা। পাশাপাশি এসব বৈঠকে ওইসব দলগুলো বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরছেন। প্রত্যেক দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপির হাইকমান্ড এসব প্রস্তাবনা পর্যালোচনা করে জোট গঠনের চূড়ান্ত রুপরেখা তৈরি করবেন।
গতকাল পর্যন্ত আলোচনায় বেশিরভাগ দলই বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে, নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে একমত পোষণ করে জোটের পরিবর্তে যুগপৎ আন্দোলনের পক্ষে সম্মত বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব জানা গেছে। সেই দাবি আদায়ে সরকারবিরোধী সকল রাজনৈতিক দলকে নিয়ে বৃহৎ জোট গঠনেই এখন মনোযোগ বিএনপির। বিশেষত বাম ব্লকের দলগুলোকে নিয়ে নতুন রাজনৈতিক মোর্চা গঠন, ইসলামী দলগুলো, ঐক্যফ্রন্ট বা তার বাইরে থাকা দলগুলোকে নিয়ে পৃথক মোর্চা এবং বিদ্যমান ২০ দলীয় জোটকে সম্প্রসারণসহ একাধিক বিকল্প নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বিএনপিতে।
এক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে কিছু দলের আপত্তির কথা উঠে আসলেও দলটির বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তবে জোটগত নয়, যুগপৎ আন্দোলনে দলটিকে পাশে রাখতে চায় বিএনপি।
এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে চলমান এই আলোচনা অব্যাহত রেখে আগামী মাস থেকেই রাজপথের ফের কর্মসূচি নিয়ে নামার কথা জানিয়েছেন বিএনপির একাধিক নেতা। এসব কর্মসূচিতে পুরনো শরীকদের পাশাপাশি নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোন কোনটিকে দেখা যেতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা। করোনার বিধিনিষেধ জারির পর থেকে বিএনপিসহ সরকারি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি স্থগিত ছিল। সম্প্রতি তা উঠে যাওয়ায় আবারও নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে চায় বিএনপি। তারা আপাতত তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে সারা দেশে বিক্ষোভ, মানববন্ধনসহ বেশকিছু কর্মসূচির একটি খসড়া তৈরি করেছে। যা স্থায়ী কমিটির সভায় চূড়ান্ত হবে। কর্মসূচি দু-এক দিনের মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে জানানোর কথা রয়েছে। অন্যদলগুলোও রাজপথে নামার জন্য কর্মসূচি চূড়ান্ত করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি লিবারেল ডেমোক্রেটি পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নার সাথে ইতোমধ্যে বৈঠক করেছেন বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা। এরমধ্যে গত রোববার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এলডিপি সভাপতির বাসায় যান। এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান ও এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদও ছিলেন। বৈঠকে দুই দলের মধ্যে অতীতের কিছু ভুল বোঝাবুঝি ও দূরত্বের অবসান ঘটে। একই সঙ্গে আগামীদিনে একসঙ্গে পথ চলার বিষয়ে দুদলের নেতারাই অঙ্গীকার করেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, চলমান এই দুর্বিষহ অবস্থা শুধু বিএনপির নেতাকর্মী নয়, পুরো দেশবাসীকে কষ্ট দিচ্ছে। জনগণের ভোটাধিকার থেকে শুরু করে সকল নাগরিক অধিকার ক্ষুন্ন করা হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা বৃহত্তর ঐক্য গড়তে চাই। ইতোমধ্যে অনেক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আনুষ্ঠানিভাবে আমরা শিগগিরই সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করব।
বিএনপির সাথে বৈঠকের বিষয়ে কর্নেল অলি আহমদ বলেন, বিএনপির মহাসচিবসহ কয়েকজন নেতা আমার বাসায় এসেছিলেন। তাদের সঙ্গে দেশের রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি বাস্তবায়ন দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। এর চেয়ে এখনই জাতীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন করা উচিৎ। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিগত এক যুগের বেশি সময় ধরে দেশের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান দলীয়করণ করেছে। তাই নিরপেক্ষ সরকারের দাবি বাস্তবায়ন হলেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। তাই সবার আগে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করতে হবে। এজন্য দরকার জাতীয় সরকার।
এরআগে গত শুক্রবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে মাহমুদুর রহমান মান্নার রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। বৈঠকে আগামী আন্দোলন, নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তি, সারাদেশে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা, প্রশাসন ও বিচারবিভাগের দলীয়করণ প্রসঙ্গ বিষয়ে এই দুই নেতা আলোচনা করেন।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে শুধু রাজনৈতিক দল নয়, সকল সংগঠন ও ব্যাক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ন্যায়ের পক্ষে আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। এজন্য বড় দল হিসেবে বিএনপিকে ভূমিকা পালন করতে হবে।
এর আগে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক হয়। দলটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বিএনপির নেতাদের সঙ্গে তাদের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে তারা তাদের অবস্থান তুলে ধরেছেন। যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে কথা বলেছেন। তবে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি কিংবা বাম জোটের অন্যান্য দলগুলোর সাথেও বিএনপির বৈঠক হয়নি। এসব দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে তারা তাদের জোটের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
তিনি বলেন, ন্যূনতম ইস্যুতে বিরোধী দলগুলোকে জনগণ রাজপথে দেখতে চায়। বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধীদলগুলোর সাথে যেহেতু চিন্তার মিল আছে সেক্ষেত্রে আলোচনা ইতিবাচক ফলাফলের দিকে যেতে পারে।
এছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাথে বিএনপির নেতাদের যোগাযোগ হলেও বৈঠকের দিনক্ষণ নির্ধারিত হয়নি। একইভাবে গণফোরামের সঙ্গেও বিএনপির যোগাযোগ হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান এসব দলের সাথে বৈঠক করবেন। এখন তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন। দেশে আসার পরই এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। এসব দলের বাইরে গণসংহতি আন্দোলন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদ, ডান-বামসহ ২০ দলীয় অন্যান্য শরিক দলগুলোর সাথেও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করছে বিএনপি।
বৈঠকে অংশগ্রহণকারী বেশিরভাগ দল বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ না হয়ে যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে বলছেন। বিশেষত বাম ঘরানার দলগুলো এই প্রস্তাবনা তুলে ধরছে। এ দলগুলোর শীর্ষ নেতারা জানান, তাদের বৈঠকগুলো হƒদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বৈঠকে বিএনপি নেতারা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান জানান। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায় করাই হচ্ছে এ আন্দোলনের মূল লক্ষ্য।
তারা জানান, বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনকালীন জোট গঠন করার বিষয়ে আলোচনা চলছে। এটা কোনো নির্বাচনকালীন জোট নয়। এরপরও তারা তাদের পক্ষ থেকে বেশ কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরেছেন। এরমধ্যে- তারা কোনো দলকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য জোট গঠন করতে ইচ্ছুক নয়। ভবিষ্যতে যারাই ক্ষমতায় আসবে তাদেরকে দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে কাজ করতে হবে। এজন্য বিএনপিকে সুষ্পষ্টভাবে কিছু বিষয়ে ঘোষণা দিতে হবে। এরমধ্যে সংবিধানের কিছু ধারা পরিবর্তন করতে হবে, বিচারবিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে, দুদক-নির্বাচন কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো বেশি শক্তিশালী করতে হবে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয়করণ করা যাবে না। এরকম আরো বেশ কিছু বিষয়ে শর্তারোপ করা হচ্ছে।
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যখন বেশকিছু ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আলোচনা হচ্ছে তখন জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সাথে বিএনপি যোগাযোগ করেছিল কিনা বা তারা কি চিন্তা করছে জানতে চাইলে দলটির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, আমরা নিজেরাই তো জোট করছি। অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে জোট করবো না। আমাদের দল ৩০০ আসনের প্রার্থী ঠিক করার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে। তবে যখন যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে তখন সেই দলের সঙ্গে আমরা থাকবো বলেও জানান জাপা মহাসচিব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।