পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির বিবেচনায় সরকারি চাকরিজীবীদের বিশেষ ভাতা বা নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করা উচিত বলে অনেকে মনে করেন। সর্বশেষ ২০১৫ সালে নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর করা হয়েছিলো। দেখতে দেখতে কেটে গেছে প্রায় আট বছর। মুদ্রাস্ফীতির সাথে বেতন কাঠামো সমন্বয় করার কথা বলা হলেও তা আজও কার্যকর হয়নি। কথার কথাই থেকে গেছে। এছাড়া ২০১৫ সালে ঘোষিত বেতন কাঠামোতে বিদ্যমান সরকারি চাকুরেদের বেতন কাঠামোর বৈষম্য নিরসনে সরকারি উদ্যোগ আজও আলোর মুখ দেখেনি। সরকারি চাকরিজীবীরা আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুন একটি বেতন কাঠামোর জন্য সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে দেন-দরবার চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এছাড়া প্রত্যাশিত নতুন বেতন কাঠামোতে যেন কোনো ধরনের বৈষম্য না থাকে সে বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। না হলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ বেড়ে যেতে পারে, যা নির্বাচনের বছরে সরকারের জন্য সুখকর নাও হতে পারে। একাধিক সূত্র মতে জানা যায়, ইতোমধ্যে সরকার অর্থ বিভাগকে একটি নির্দেশনা দিয়েছেন। এর আগে সরকার বেতন বৈষম্য নিরসনের জন্য ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছিলো। কমিটি গত দুই বছরে দৃশ্যমান কোনো কাজ করছে মর্মে প্রতীয়মান হয়নি। বেতন বৈষম্য নিরসনের সরকারি উদ্যোগটি কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে। ফলে বেতন বৈষম্যও দূর করা সম্ভবপর হয়নি।
তাই মূল্যস্ফীতির চাপ ও জীবনযাত্রার ব্যয় আমলে নিয়ে নির্বাচনের আগে সরকার নতুন একটি বেতন কাঠামো দেবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করে। সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদের সময়সীমা শেষ হতে আরও দুই বছরের মতো বাকি আছে। সে হিসেবে আগামী বছরের শেষ দিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। যদিও নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক ময়দানের প্রধান বিরোধীদল বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই প্রক্রিয়া থেকে নিজেদেরকে সরিয়ে রেখেছে। বিএনপি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে রাজপথে সক্রিয় হবার চেষ্টা করছে। নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত না হলে নির্বাচন বয়কট করার পূর্ব ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন দলটি। সরকারি দল অবশ্য সংবিধানের দোহায় দিয়ে বিরোধীদের এমন দাবি নাকচ করে দিয়েছে। এদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে আবারও সব পক্ষকে অনুকূলে রাখতে চায় সরকার। গত ১৩ বছরে টেকসই উন্নয়নে কতটা এগিয়েছে বাংলাদেশ এ নিয়ে সরকারের মধ্যে তৃপ্তির ঢেকুর থাকলেও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি, অর্থপাচার, দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থান নিয়ে রয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
এমনিতেই টানা দুই বছরের করোনা মহামারিতে চাকরি হারিয়ে বহু মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। এ সময় আয় কমেছে প্রায় ৭০ ভাগ মানুষের। অন্যদিকে বাকি ৩০ ভাগের মধ্যে অন্তত ১০ ভাগের আয় বেড়েছে বহুগুণ। এতে দেশে আয় বৈষম্য প্রকট হয়েছে, যা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির জীবন-জীবিকাকে চরম সংকটের মুখে দাঁড় করিয়েছে। আয়-ব্যায়ের হিসাব মিলাতে গিয়ে সাধারণ মানুষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলে সরকারি চাকুরেদের ভাতা বা বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। অবশ্য ২০১৫ সালে জাতীয় বেতনস্কেলে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য যে পরিমাণ বেতন বাড়ানো হয়েছে তা এর আগে আর কখনও হয়নি। এটা ঠিক, গত পাঁচ বছরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। একই সঙ্গে নিত্য প্রয়োজনীয় প্রতিটি জিনিসপত্রের দামও বেড়েছে কয়েকগুণ। জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে লিটার প্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধির ফলে পরিবহন ভাড়া বেড়েছে। কৃষিপণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। ফলে কৃষি ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এদিকে গত দুই বছরে ভোজ্যতেলের দাম ৮ দফায় বৃদ্ধি করা হয়েছে। সিএনজি ও এলএনজি’র দামও বৃদ্ধি করা হয়েছে। গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কথা জোরেসোরে শোনা যাচ্ছে। মানুষ কোনভাবেই তাদের আয়ের সাথে ব্যয়ের সমন্বয় করতে পারছে না। করোনার কারণে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় অনেকগুণ বেড়েছে। স্বভাবতই সরকারি চাকরিজীবীরা আশা করে যে, সরকার নতুন বেতন কাঠামো দেবে।
জানা গেছে, গতবছরের ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সচিবালয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতি সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য তিনটি ‘বিশেষ ইনক্রিমেন্ট’ ও ‘নবম বেতন কমিশন’ গঠনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আবেদন করেছে। পরিপ্রেক্ষিতে গতবছরের ৩ অক্টোবর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এবিষয়ে অবশ্য দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে, সরকারি চাকরিজীবীদের চেয়ে বেসরকারি চাকরিজীবীদের সংখ্যা অনেক বেশি। অন্তত ৫/৬ কোটি মানুষ বেসরকারি পর্যায়ে চাকরিতে নিয়োযিত আছে। এই সঙ্গে আছে, ছোট-খাটো ব্যবসায়ী। করোনাকারণে তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপন্নতার শিকার হয়েছে। তারা অনকেই চাকরি হারিয়েছে, অনেকের বেতন কমেছে, অনেকের ব্যবসা-বাণিজ্য লাটে উঠেছে। সরকারি কর্মচারীদের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে বটে, তবে চাকরি যায়নি, বেতন কমেনি। বেসরকারি কর্মচাররীদের ক্ষেত্রে এর অন্যথা হয়েছে। কাজেই কোটি কোটি বেসরকারি কর্মজীবীর জন্যও বেতন বৃদ্ধি, নতুন বেতন স্কেল বা বিশেষ ভাতা প্রদানের পাশাপাশি কর্মসংস্থান বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া অপরিহার্য।
লেখক: প্রফেসর, আইবিএ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।