পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ডব্লিউএইচও/ইউনিসেফের নতুন একটি প্রতিবেদনের জরিপে অংশগ্রহণকারী বাবা-মা ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের অর্ধেকের বেশি (৫১ শতাংশ) বলেছেন, তারা ফর্মুলা দুধ তৈরিকারক কোম্পানিগুলোর লক্ষ্যকেন্দ্রিক বিপণন কার্যক্রমের শিকার হয়েছেন এবং কোম্পানিগুলোর বেশির ভাগই শিশুদের খাওয়ানোর রীতির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড লঙ্ঘন করছে।
‘ফর্মুলা দুধের বিপণন কীভাবে শিশুকে খাওয়ানোর বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি বাংলাদেশসহ আটটি দেশে বাবা-মা, অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের ভিত্তিতে করা হয়েছে। এটি পদ্ধতিগত ও অনৈতিক বিপণন কৌশল ব্যবহার করে বিস্ময়কর ৫৫ বিলিয়ন ডলারের ফর্মুলা-দুধ শিল্প কীভাবে শিশুকে খাওয়ানোর ক্ষেত্রে বাবা-মায়েদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে তা উন্মোচন করেছে।
বাংলাদেশে ৬৫ শতাংশ নারী তাদের শিশু ও নবজাতকদের পাঁচ মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ খাওয়ান, যা জরিপ করা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ হার। যদিও অন্য দেশের নারীদের তুলনায় বাংলাদেশের নারীরা ফর্মুলা দুধের প্রথাগত বিপণনের শিকার কম হন, এই ধরনের বিপণন কার্যক্রম এতটাই শক্তিশালী যে, চিকিৎসক ও অনেক স্বাস্থ্যকর্মী পর্যন্ত মায়ের দুধকে অপর্যাপ্ত বলে মনে করেন। ফলস্বরূপ, বাংলাদেশে প্রসব-পরবর্তী অবস্থায় প্রায় ৬০ শতাংশ নারীকেই ফর্মুলা দুধ ব্যবহারের পরামর্শ দেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। যদিও এই নারীদের ৯৮ শতাংশের মাঝেই তাদের শিশুকে শুধু মায়ের দুধ খাওয়ানোর প্রবল ইচ্ছা রয়েছে, মাত্র ৬৫ শতাংশ নারী নবজাতকদের শুধু মায়ের দুধ খাওয়ান।
ইউনিসেফ বাংলাদেশের উপ প্রতিনিধি ভীরা মেন্ডনকা বলেন, “বাংলাদেশের সিংহভাগ নারী শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়াতে চান। তবে তারা প্রায়শই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সমর্থন পান না। ফর্মুলা দুধ বিপণনের বার্তাগুলো ভয় ও সন্দেহের বীজ বপন করে। মুনাফা নয়, বিজ্ঞান ভিত্তিক তথ্য নিশ্চিত করার মাধ্যমে মায়েদের এই অবস্থা কাটিয়ে ওঠা যেতে পারে।”
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এই খাতের বিপণন কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে অনিয়ন্ত্রিত এবং আক্রমণাত্মক অনলাইন টার্গেটিং; স্পনসরড পরামর্শ প্রদানকারী নেটওয়ার্ক ও হেল্পলাইন; প্রচার ও উপহার এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে প্রশিক্ষণ ও সুপারিশসমূহকে প্রভাবিত করার চর্চা। বাবা-মা এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা যে বার্তাগুলো পান তা প্রায়শই বিভ্রান্তিকর, বৈজ্ঞানিকভাবে অপ্রমাণিত এবং এগুলো মায়ের দুধের বিকল্প খাদ্যের বিপণনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিয়ম (কোড) লঙ্ঘন করে। অথচ কোডটি শিশুখাদ্য তৈরিকারকদের আক্রমণাত্মক বিপণন কার্যক্রম থেকে মায়েদের রক্ষা করতে ১৯৮১ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিষদে পাস হওয়া একটি যুগান্তকারী জনস্বাস্থ্য চুক্তি।
নবজাতক ও ছোট শিশুদের মায়ের দুধ খাওয়ানোর এবং ব্রেস্ট মিল্ক সাবস্টিটিউট (বিএমএস) কোড পর্যবেক্ষণ বিষয়ে ডব্লিউএইচও-এর নির্দেশিকা সুস্পষ্ট। এটি নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক যে, ফরমুলা দুধের বাজারজাতকরণ এবং বিপণনের কারণে মায়েরা যেন মায়ের দুধ খাওয়ানো থেকে নিরুৎসাহিত না হয়। বিএমএসের আগ্রাসী সামাজিক মিডিয়া বিপণনকে মোকাবেলা করার প্রয়োজন আরও জরুরি। ক্রমবর্ধমান আগ্রাসী বিপণন, বিশেষ করে এই মহামারীর সময়ে, মায়ের দুধের বিকল্পের নিরাপত্তার বিষয়ে মিথ্যা দাবি থেকে পরিবারগুলোকে রক্ষা করার জন্য বাংলাদেশ জাতীয় আইনের শক্তিশালী প্রয়োগ এবং পর্যবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে,” বলেন বাংলাদেশে ডব্লিউএইচওর প্রতিনিধি ড. বারদান জাং রানা।
বাংলাদেশ, চীন, মেক্সিকো, মরক্কো, নাইজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাজ্য ও ভিয়েতনামের শহরগুলোতে ৮ হাজার ৫০০ জন বাবা-মা ও অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং ৩০০ জন স্বাস্থ্যকর্মীর ওপর পরিচালিত জরিপের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে যত নারী জরিপে অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের মধ্যে ৮৪ শতাংশ, ভিয়েতনামে জরিপে অংশগ্রহণকারী নারীদের ৯২ শতাংশ এবং চীনে জরিপে অংশগ্রহণকারী নারীদের ৯৭ শতাংশ এমন ফর্মুলা দুধের বিপণন ব্যবস্থার শিকার হয়েছেন, যা তাদের ফর্মুলা খাবার বেছে নেওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিয়েছে।
ডব্লিউএইচওর মহাসচিব ড. টেড্রস আধানম ঘেব্রেইয়েসুস বলেন, “এই প্রতিবেদন খুব স্পষ্টভাবে দেখায় যে, ফর্মুলা দুধের বিপণন এখনও অগ্রহণযোগ্যভাবে ব্যাপক, বিভ্রান্তিকর এবং আক্রমণাত্মক। শিশুদের স্বাস্থ্য রক্ষায় সুযোগসন্ধানী বিপণনের বিরুদ্ধে জরুরিভিত্তিতে নীতিমালা গ্রহণ ও প্রয়োগ করা আবশ্যক।”
জরিপে অন্তর্ভুক্ত সবগুলো দেশের নারীরাই তাদের শিশুদের শুধু মায়ের দুধ খাওয়ানোর বিষয়ে তীব্র ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, যার হার মরক্কোর ৪৯ শতাংশ থেকে বাংলাদেশে ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত। তা সত্ত্বেও কীভাবে বিভ্রান্তিকর বিপণন বার্তাগুলোর অব্যাহত প্রবাহ শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানো এবং মায়ের দুধ সম্পর্কে অলীক ধারণাগুলোকে জোরালো করছে এবং সফলভাবে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর বিষয়ে নিজেদের সামর্থ্য সম্পর্কে নারীদের আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে তা বিশদভাব দেখিয়েছে এই প্রতিবেদন। এই অলীক ধারণাগুলোর মধ্যে রয়েছে: জন্মের পর প্রথম দিনগুলোতে ফর্মুলা খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা, শিশুর পুষ্টির জন্য বুকের দুধের অপর্যাপ্ততা, নির্দিষ্ট ফর্মুলা খাদ্যের উপাদানগুলো শিশুর বিকাশ বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়- এটা প্রমাণিত, এই ধারণা যে ফর্মুলা খাবার শিশুর পেট দীর্ঘ সময় ধরে ভরা রাখে এবং বুকের দুধের গুণমান সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমে যায়।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেন, “আমরা জানি যে, শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানো শিশু ও মা উভয়ের জন্যই সর্বোত্তম। আর ফর্মুলা খাবার সম্পর্কে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর বার্তাগুলো শিশুদের মায়ের দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বাধা তৈরি করে। শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর জন্য আমাদের দৃঢ় নীতিমালা, আইন ও বিনিয়োগ প্রয়োজন, যাতে নারীরা অনৈতিক বিপণন কার্যক্রম থেকে সুরক্ষিত থাকে এবং তাদের পরিবার গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও সমর্থন পায়।”
জন্মের প্রথম ঘণ্টায় মায়ের দুধ খাওয়ানো, এরপর ছয় মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানো এবং এর ধারাবাহিকতায় দুই বছর বা তার বেশি সময় ধরে মায়ের দুধ খাওয়ানো হলে তা শীর্ণকায় হয়ে যাওয়া বা স্থূলতায় আক্রান্ত হওয়াসহ সব ধরনের অপুষ্টির বিরুদ্ধে শিশুদের শরীরে একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলে। মায়ের দুধ খাওয়া হলে তা শিশুদের প্রথম টিকা হিসেবেও কাজ করে, যা তাদের শৈশবকালীন অনেক সাধারণ অসুস্থতা থেকে রক্ষা করে। এটি নারীদের ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস, স্থূলতা এবং কিছু ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমায়। তা সত্ত্বেও বিশ্বব্যাপী ৬ মাসের কম বয়সী শিশুদের মাত্র ৪৪ শতাংশকে শুধু মায়ের দুধ খাওয়ানো হয়। গত দুই দশকে বিশ্বব্যাপী শিশুদের মায়ের দুধ খাওয়ানোর হার খুব সামান্যই বেড়েছে, অন্যদিকে প্রায় একই সময়ে ফর্মুলা দুধের বিক্রি দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে- সবগুলো দেশেই বিপুল সংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রচারমূলক উপহার, বিনামূল্যের নমুনা, গবেষণার জন্য তহবিল, অর্থের বিনিময়ে মিটিং, ইভেন্ট ও সম্মেলন আয়োজন এবং এমনকি কমিশন প্রদানের মাধ্যমে নতুন মায়েদের ফর্মুলা খাদ্যের প্রতি ঝুঁকতে পরামর্শ দেওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করা হয়েছে, যা শিশুকে খাওয়ানোর বিষয়ে বাবা-মায়েদের সিদ্ধান্তকে সরাসরি প্রভাবিত করে। জরিপে অংশ নেওয়া এক তৃতীয়াংশেরও বেশি নারী বলেছেন যে, একজন স্বাস্থ্যকর্মী তাদের কাছে একটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের ফর্মুলা খাবারের বিষয়ে সুপারিশ করেছিলেন।
এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার জন্য ডব্লিউএইচও, ইউনিসেফ ও সহযোগীরা সরকার, স্বাস্থ্যকর্মী ও শিশু খাদ্য তৈরি খাতের প্রতি আক্রমণাত্মক উপায়ে ফর্মুলা দুধ বিপণন বন্ধ করতে এবং এ সংশ্লিষ্ট কোড বা নীতিমালা সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন ও মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
• পুষ্টি ও স্বাস্থ্য বিষয়ে ফর্মুলা দুধ উৎপাদন খাতের দাবি নিষিদ্ধ করাসহ আন্তর্জাতিক বিধিমালার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ফর্মুলা দুধ উৎপাদন খাতের প্রচারণা ঠেকাতে আইন পাস, পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োগ করা।
• আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পর্যাপ্ত সবেতন মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং শিশুকে ভালোভাবে মায়ের দুধ খাওয়াতে সহায়তা করতে নীতিমালা ও প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগ করা।
• বৈশ্বিকভাবে বিধিমালা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিষদের অধ্যাদেশ সম্পূর্ণ মেনে চলার বিষয়ে প্রকাশ্যে প্রতিশ্রুতি প্রদানে এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো।
• নবজাতক ও ছোট শিশুদের জন্য খাবার বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বৃত্তি, পুরস্কার, অনুদান, মিটিং, বা ইভেন্টের মতো স্পন্সরশিপ গ্রহণে স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।