পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার সিগ্ধ আক্তার ও তার টিমের চার সদস্যের বিরুদ্ধে এক ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে নির্যাতন ও টাকা আদায়ের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত কমিটি এই পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে। পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি (ডিসিপ্লিন) মোহা. আবদুল আলীম মাহমুদ পত্রিকান্তরে এ বিষয়ে জানিয়েছেন, ব্যবসায়ী একেএম আক্কাসের আনীত অভিযোগের তদন্ত শেষে আইজিপি’র কাছে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। এতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সহকারী কমিশনার সিগ্ধ আক্তার ও তার টিমের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। সিগ্ধ আক্তার সরাসরি টাকা নেননি। সরাসরি টাকা নিয়েছেন এএসআই আশরাফ। আমরা তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছি। ব্যবসায়ী একেএম আক্কাস তাকে গ্রেফতার করে সাত দিন ডিবি অফিসে আটকে রাখা, নির্যাতন চালানো, ইয়াবা বা অস্ত্র ব্যবসায়ী বানিয়ে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া এবং ৮০ লাখ টাকা দাবির যে বিবরণ দিয়েছেন, তার বিস্তারিত উল্লেখের প্রয়োজন নেই। পত্রিকাতেই তা প্রকাশিত হয়েছে। ডিবি পুলিশের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা ও সদস্য কী করতে পারে, এই ঘটনা তার একটি বড় নজির। অবশ্যই একমাত্র নজির নয়। এ রকম ঘটনা অনেক দিন ধরেই ঘটছে। এ ধরনের বহু ঘটনার খবর পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত ঘটনার চেয়ে অপ্রকাশিত ঘটনা যে আরও বেশী হবে, তা বলাই বাহুল্য। এমনটা ভাবাই স্বাভাবিক, আরও ঝামেলার ভয়ে অনেকে চুপচাপ থাকাকেই শ্রেয় মনে করেছেন। তারা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ যেমন করেননি, তেমনি পত্র-পত্রিকাকেও এড়িয়ে গেছেন। ব্যবসায়ী একেএম আক্কাস যদি পুলিশ সদর দফতরে অভিযোগ না করতেন এবং তার এই গ্রেফতার ও ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের ঘটনা পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত না হতো, তাহলে এ ঘটনাও অজানা থেকে যেতো।
ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। ভীতি প্রদর্শন, হয়রানী, রাস্তাঘাট থেকে যখন তখন তুলে নেয়া, আটকে রাখা, টাকা আদায়, ক্রসফায়ারের নামে হত্যা ইত্যাদি বিভিন্ন রকম অভিযোগ তার বিরুদ্ধে রয়েছে। ডিবির একশ্রেণীর কর্মকর্তা ও সদস্য এমন একটা ‘স্বরাজ’ পেয়ে গেছেন যে, কোনো কিছুকেই তারা তোয়াক্কা করেন না। তাদের অনাচার, অপকর্ম, জুলুম, নির্যাতন, চাঁদাবাজি, ক্ষমতার অপব্যবহার এতদূর পর্যন্ত পৌঁছেছে যে, মানুষ ডিবি’র নাম শুনলে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। পুলিশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা ডিবি, যার কাজ সুনির্দিষ্ট ও বিধিবদ্ধ। মূলত, পুলিশের সার্বিক কাজে সহায়তা করাই এর কাজ। অথচ এই শাখাটির নামে এমন কিছু কাজ করা হচ্ছে, যাতে মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত ও অতীষ্ঠ। অসৎ ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও সদস্যরা তাদের অপকর্ম ও অপরাধের মাধ্যমে একদিকে যেমন এর ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ করছেন, অন্যদিকে মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করছেন। এমতাবস্থায়, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও সরকারকে ডিবি’র বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। এই শাখাটির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। এর কাছ থেকে যদি উপযুক্ত সেবা পেতে হয়, তাহলে অসৎ, দুর্নীতিবাজ ও ব্ল্যাকমেইলারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সৎ, নিষ্ঠাবান, আন্তরিক ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও সদস্যদের সেখানে সমাবেশ ঘটাতে হবে।
সার্বিকভাবে পুলিশের ভাবমর্যাদা যথাযথ অবস্থানে নেই। ডিবিই শুধু নয়, অন্যান্য শাখার কর্মকর্তা ও সদস্যদের বিরুদ্ধেও ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগগুলোর মধ্যে মিলও রয়েছে। গ্রেফতার বাণিজ্য, নির্যাতন, ঘুষ, চাঁদাবাজি, তুলে নেয়া, গুম, খুন প্রভৃতি এমন কোনো গুরুতর অভিযোগ নেই যা পুলিশের বিরুদ্ধে নেই। ক’দিন আগে ঝিনাইদহের কালিগঞ্জে এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রকে বিনা অপরাধে গ্রেফতার করে নির্যাতন চালানো হয় এবং ঘুষ আদায় করা হয়। বিষয়টি ব্যাপকভাবে জানাজানি হলে নির্যাতনকারী-ঘুষখোর পুলিশ কর্মকর্তা ক্ষমা চেয়ে ঘুষের টাকা ফেরত দিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। কিছুদিন আগে এক বিচারপতির স্ত্রীর কাছে ঘুষ চেয়ে এসবি’র এক এএসআই ধরা পড়েছে। এমন ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। আইন-শৃঙ্খলা সুরক্ষা ও নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই পুলিশের প্রধান কাজ। অথচ এক শ্রেণীর পুলিশ তাদের এই পবিত্র পেশাকে অর্থ উপার্জন ও যাচ্ছেতাই করার হাতিয়ারে পরিণত করছেন। নৈতিক মানের অবক্ষয়, নিয়োগ-দুর্নীতি, দলীয়করণ প্রভৃতি কারণে পুলিশ তার জনবান্ধব পরিচিতি থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, পুলিশে সৎ, দায়িত্বশীল, দক্ষ, যোগ্য ব্যক্তির অভাব নেই। তারা কোণঠাসা হয়ে আছেন। পুলিশের সুনাম, কৃতিত্ব যা কিছু আছে, সেটা তাদের কারণেই। পুলিশকে যে কোনোমূল্যে জনবান্ধব করে তুলতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে পুলিশ কর্তৃপক্ষ ও সরকারকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।